হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নূর সৃষ্টি

        হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ আনসারী হতে বর্ণিত। জাবির (রাঃ) বলেন- একদা আমি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম-হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। আমার পিতা মাতা আপনার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ হউক, আপনি আমাকে এ সংবাদটি বলে দিন যে, আল্লাহ তায়ালা সর্ব প্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেছিলেন? উত্তরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ফরমালেন-হে জাবির। আল্লাহ। তায়ালা সমস্ত কিছু সৃষ্টির পূর্বে তার নিজের নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা এই নূরকে এমন শক্তি দান করলেন যে, সে নূর আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর ইচ্ছায় যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারত। ঐ সময় লাওহ, কলম, বেহেশত, দোজখ, ফেরেশতা, আকাশ ও পৃথিবী এবং সূর্য, মানব ও দানব ইত্যাদি কিছুই ছিলনা।

        এক হাদীসে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বর্ণনা করেন-"হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির চৌদ্দ হাজার বৎসর পূর্বে আমি আমার প্রভুর দরবারে একটি নূর ছিলাম।"

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নূর হতে সকল সৃষ্টির অস্তিত্ব

        হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নূর সৃষ্টির পর মহান আল্লাহ তায়ালা মাখলুকাত সৃষ্টি করতে ইচ্ছা পোষন করলেন, এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নূর মোবারককে চার ভাগে বিভক্ত করে প্রথম ভাগ হতে কলম, দ্বিতীয় ভাগ হতে লাওহে মাহফুজ তৃতীয় ভাগ হতে আরশ মুয়াল্লাহ সৃষ্টি করলেন, এবং চতুর্থ ভাগকে পুনরায় চারভাগে ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা আরশ বহনকারী ফেরেশতা দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা সিংহাসন তৃতীয় ভাগ দ্বারা অবশিষ্ট অন্যান্ন সকল ফেরেশতা তৈরী করলেন। এরপর এই চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করলেন, প্রথম ভাগ দ্বারা সমস্ত আসমান দ্বিতীয় ভাগ হতে সমস্তা জমিন তৃতীয় ভাগ হতে বেহেশত ও দোজখ সৃষ্টি করলেন। পুনরায় আল্লাহ তায়ালা নূরের অবশিষ্ট চতুর্থ ভাগকে চার অংশে বিভক্ত করলেন। প্রথম অংশ থেকে মুমিন বান্দার চোখের জ্যুতি দ্বিতীয় অংশ হতে মুমিন বান্দার কলবের জ্যুতি তৃতীয় অংশ হতে তাওহীদ বা একত্ববাদের নূর বা কালেমায়ে তাইয়্যেবাহ সৃষ্টি করলেন।

হযরত আদম (আঃ) এর পৃষ্টে নূর স্থাপন

        আল্লাহ তায়ালার হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে ঐ নূরে মুহাম্মদী তার পিঠে রেখে দিলেন, এতে আদম (আঃ) এর অনলে উক্ত নূর চমকিতে শুরু করল। পুনরায় আল্লাহ তায়ালা উক্ত নূরকে তার বাদশাহী সিংহাসনে উঠালেন এবং উক্ত সিংহাসন ফেরেশতাদের কাঁধে রেখে তাদের প্রতি আদেশ জারি করলেন, তখন ফেরেশতাগণ উক্ত নূরকে আসমানের মধ্যে নিয়ে ঘুরে বেড়ালেন। এতে আল্লাহ তায়ালা তার হাবীবকে নিজের আশ্চার্য আশ্চার্য কুদরাতের নিদর্শন সমূহ দেখালেন। আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নূর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নূর হতে আদমের নূর তৈয়ার করলেন এবং আদমের মাটি হতে হুজুর পাকের শরীর মোবারক সৃষ্টি করলেন। তারপর আদমের পিঠে নূরে মুহাম্মদী রেখে দিলেন। এ নূরকে দুই নয়নে অবলোকন করার জন্য আদমের পিছনে ফেরেশতাগণ কাতার বেধে দাড়ায়ে গেলেন এবং নয়ন ভরে প্রিয় নবীর নূর দেখতে লাগলেন। এ দেখে হযরত আদম (আঃ) বললেন হে আল্লাহ। এই ফেলেশতাদের কি হয়েছে তারা কেন আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে?

            উত্তরে আল্লাহ বললেন- হে আদম! এ ফেরেশতারা আমার হাবীবের নূর দেখছে?

        একথা শুনে হযরত আদম (আঃ) বললেন- হে মাবুদ! মেহের বাণি করে উক্ত নূরকে আমার সামনে এনে দিন, তখন আল্লাহ তায়ালা ঐ নূরকে আদমের পৃষ্ট হতে এনে কপালে রেখে দিলেন। এবং ফেরেশতাদের কাতার আদমের সম্মুখে এসে দাড়াল। হযরত আদম (আঃ) নূরের আশেক হয়ে নিজে নূর দেখার অভিপ্রায় আল্লাহ তায়ালার নিকট আরজ করলেন- হে আমার প্রতিপালক এই নূরকে দয়া করে এমন স্থানে রাখুন যেন এই নূর দেখে নিজেকে ধন্য করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আদমের দোয়া কবুল করে সেই নূরকে আদম (আঃ) এর তর্জনী আঙ্গুলে নামীয়ে রাখলেন, আদম (আঃ) ঐ আঙ্গুলটি উপরের দিকে উঠায়ে স্বচক্ষে নূর দেখে উক্ত নূরের উপর ঈমান এনে বললেন- অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যাতীত কোন উপাস্য নাই এবং এটাও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার রাসূল।

        হযরত আদম (আঃ) আবার বিনয়ের সাথে বললেন- হে আল্লাহ! এ নূর হতে আর কিছু নূর অবশিষ্ট আছে কি? আল্লাহ তায়ালা ফরমালেন হ্যাঁ, তার ছাহাবাদের নূর বাকী আছে।

        আদম (আঃ) আরজ করলেন- আয় আল্লাহ! অবশিষ্ঠ নূরগুলিকে আমার কী আঙ্গুল গুলিতে এনে স্থাপন করুন, সে সময় আল্লাহ তায়ালা হযরত আবু বকর (রাঃ) নূরকে মধ্যমা আঙ্গুলে হযরত ওমরের (রাঃ) নূরকে অনামিকা আঙ্গুলে হযরত ওসমান (রাঃ) নূরকে কনিষ্টা আঙ্গুলে এবং হযরত আলী (রাঃ) এর নূরকে বৃদ্ধা আঙ্গুলে সংস্থাপন করে দিলেন। অতঃপর হযরত আদম (সাঃ) যখন পৃথিবীতে নেমে আসলেন তখন উক্ত নূরগুলি পুনরায় আদমের পিঠে চলে গেল, প্রথমে যেভাবে ছিল সেভাবেই রইল।

Post a Comment

0 Comments