পরনিন্দার অর্থ এবং সীমা

        পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখবে, তোমার ভ্রাতা যা' ভালবাসে না, তা' অন্যের নিকট তার অসাক্ষাতে বললে পরনিন্দা হয়। তুমি যা' বলেছ তা' যদি নিন্দিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে, তার ফল একই হয়। অর্থাৎ তা'সে নিজ কানে শুনে দুঃখিত হয়। তুমি যদি অন্যের শরীর, বংশ, পোশাক-পরিচ্ছদ, গৃহ, পশু, ধর্ম, সংসার, চাল-চলন বা কথাবার্তার ত্রুটি ধরে কিছু বল, তাকেই গীবত বা পরনিন্দা বলা যায়।

         শরীর সম্বন্ধীয় নিন্দাঃ তুমি যদি কারও সম্বন্ধে বল, সে ঢেংগা, সে খাট, সে বেঁটে, সে কাল বা তার সম্পর্কে এরূপ কোন কথা বল, যা সে শুনলে মনোঃকষ্ট পায়, তবে তা' গীবত বা পর- নিন্দারূপে গণ্য হয়। 

        বংশ সম্বন্ধীয় নিন্দাঃ যদি তুমি বল, অমুকের পিতা বাজে লোক, সে হিন্দু, সে গুনাহগার, সে নীচ বংশীয়, সে জোলা বা ক্ষৌরকার অথবা এমন কোন শব্দ ব্যবহার কর, যা' সে নিজ কানে শ্রবণ করলে মনে দুঃখ পায় তবে তোমার পরনিন্দা করা হবে।

        স্বভাব সম্বন্ধীয় নিন্দাঃ যদি তুমি বল, তার স্বভাব উত্তম নয়। সে কৃপণ, সে অহংকারী, তার মধ্যে রিয়া আছে, সে অত্যন্ত ক্রোধপরায়ণ, সে কাপুরুষ, বা সে দুর্বলচিত্ত পুরুষ ইত্যাদি। তবে তা' পরনিন্দা হবে।

        কর্ম সম্বন্ধীয় নিন্দাঃ ধর্ম সম্পর্কিত কারও কর্ম সম্বন্ধে যদি তুমি বল যে, সে চোর, সে মিথ্যাবাদী, সে মদখোর, সে বিশ্বাসঘাতক, সে অত্যাচারী, সে নামাযে অমনোযোগী, যাকাতে অমনোযোগী, সে উত্তমরূপে নামাযে রকু সিজদাহ করে না, সে অপবিত্রতা থেকে সতর্ক থাকে না, সে তার পিতা-মাতার অবাধ্য, সে উপযুক্ত লোককে যাকাত দেয় না, সে যাকাত ন্যায় মতে বণ্টন করে দেয় না, সে গীবত ও অন্যান্য দোষ থেকে তার রোযাকে রক্ষা করে না ইত্যাদি কথা বললে তা' পরনিন্দা হবে।

        পরিচ্ছদ সম্বন্ধীয় নিন্দাঃ যদি তুমি বল যে, অমুকের জামার আস্তিন ঢিলা, তার কাপড়ের আঁচল লম্বা, তার পোশাক-পরিচ্ছদ সৌখিন, তার লুঙ্গী অপ্রশস্ত, বা তার পোশাক পরিচ্ছদ অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন। তবে তা' পরনিন্দারূপে গণ্য হবে।

         ধর্মসম্বন্ধীয় নিন্দাঃ একদল আলিম বলে যে ধর্মসম্বন্ধীয় কোন পরনিন্দা নেই। কেননা আল্লাহ যার নিন্দা করেছেন, সে তারই নিন্দা করে। যদি কেউ কাউকে পাপী বলে উল্লেখ করে এবং তজ্জন্য তাকে নিন্দা করে তা' নিম্নোক্ত প্রমাণ অনুসারে জায়েয হবে বলে বলা হয়। হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট একজন স্ত্রীলোকের কথা উল্লেখ করে বলা হল যে, সে অধিক নামায পড়ে ও রোযা আদায় করে। কিন্তু সে তার রসনার দ্বারা তার প্রতিবেশীগণকে কষ্ট দেয়। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, উক্ত রমণী দোযখে যাবে। অন্য সময় হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট আর এক রমণীর কথা বলা হল যে, সে কৃপণ। তখন তিনি বললেন, তা' ভাল নয় বরং মন্দ। যদি এরূপ কথা বলা নিষিদ্ধ হত, তাহলে হুযুরে পাক (দঃ) অবশ্যই তা' বলতে নিষেধ করতেন। 

        উপরোক্ত মতটি বিশুদ্ধ নয়। কেননা আাহাবীগণ হুযুরে পাক (দঃ)-এর সামনে যে সর্ব শোলের তথা উল্লেখ করতেন তাদের উদ্দেশ্য তাদেরকে হীন করা নয় এবং একমাত্র হয়রে পাক (সঃ)-এর দরবার ব্যতীত অন্য কোনস্থানে তাঁরা তা' উল্লেখ করতেন না। তার প্রমাণ ইজন্য বা সম্মিলিত মত। তা' এই যে, যদি কারও অসাক্ষাতে এমন কথা বলা হয়, যা সে ভালবাসে না, তবে তা' পরনিন্দা হবে। কেননা, তা' হুযুরে পাক (দঃ) এর হাদীসের অন্তর্ণত। এখন ওখা প্রকৃত সত্য হলেও গীবতের মধ্যে গণ্য হবে এবং এরূপ লোক তার প্রস্তুকে অমান্য করে এবং তার প্রাতার মাংস ভক্ষণ করে। তার প্রমাণ হুযুরে পাক (দঃ) এর নিম্নোক্ত হাদীস।

        একদা হুযুরে পাক (দঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা গীবত বা পরনিন্দা কাকে বলে তা' জান কিং ছাহাবীগণ আরজ করলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই এ ব্যাপারে অধিক অবণর্ত। তিনি বললেন, তোমার মুসলমান ভ্রাতা যা পছন্দ করে না তা' উল্লেখ করলেই পরনিন্দ্য হবে। কত্বরে পাক (দঃ)কে আরজ করা হল, যদি আমি যা' বলি তা' যদি আমার ভ্রাতার মধ্যে ফৌজ্বল থাকে? তিনি বললেন, যদি তার মধ্যে তা' মৌজুদ থাকে তবুও তা' তোমার নিপা বলে গণ্য হবে। যদি তার মধ্যে তা' না থাকে তবে তা' অপবাদরূপে বিবেচিত হবে। হযরত মুসার ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেছেন, হয়রে পাক (দঃ) এর নিকট একটি লোকের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। ছাহাবীগণ বললেন, সে বড়ই অনুপযুক্ত লোক। তখন তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের ভ্রাতার নিন্দা করেছ। ছাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ। তার মধ্যে যে দোষ আছে আমরা তাই বলেছি। তখন তিনি বললেন, যদি তোমরা এমন কথা বলতে, যা তার মধ্যে নেই তবে তা' অপবাদ হত।

        একদা হযরত আয়েশা (রাঃ) হুযুরে পাক (দঃ)এর নিকট একটি রমণীকে বেঁটে বলে উল্লেখ করেছিলেন। তখন তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, তুমি পরনিন্দ্য করেছ। হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন, অন্য লোক সম্বন্ধে মন্দ আলোচনা তিন প্রকার। (১) গীবত (পরনিন্দা) (২) অপবাদ এবং (৩) এফক অর্থাৎ মিথ্যা ভাষণ। পবিত্র কুরআনের মধ্যে এসব দোষের বিষয় উল্লেখ আছে। যে দোষ যার মধ্যে আছে তা' বলার নামই পরনিন্দা। আর যে দোষ যার মধ্যে নেই তা' প্রচারের নামই অপবাদ। আর যার সম্বন্ধে যে দোষের কথা তোমার নিকট পৌঁছে সত্য-মিথ্যা বিচার করে না দেখে তা' তোমার বলার নামই এফক অর্থাৎ মিথ্যা ভাষণ।

         হযরত ইবনে সীরীন (রহঃ) এক ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, সে বলেছিল, "ঐ লোকটি কাল।" তখন তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। তুমি তার নিন্দা করেছ বলে আমি মনে করি। হযরত ইবনে সীরীন (রহঃ) হযরত ইব্রাহীম নাখয়ীর কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, তিনি তাকে টেরা চক্ষুবিশিষ্ট লোক না বলে তিনি তার চোখের উপর হস্ত রেখেছিলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নিন্দা করো না। আমি একদা একজন স্ত্রীলোককে হুযুরে পাক (দঃ) এর সামনে বলেছিলাম তার দীর্ঘ আঁচল আছে।

Post a Comment

0 Comments