কবরের আযাব কেমন হয়

      মুমিনের কবরঃ

        মুমিনকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন তার কবর সতুর গজ প্রশস্ত করে দেওয়া হয় এবং মখমলের বিছানা বিছিয়ে তাতে সুগন্ধি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ঈমান এবং কুরআনের জ্যোতিতে কবরকে আলোকিত করে দেওয়া হয়। তারপর তাকে নতুন জামাইর মতো শুইয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘুম থেকে তাকে এসে এখন জাগ্রত করবে শুধুই তার প্রেমাস্পদ।

    কাফেরের কবরঃ

        পক্ষান্তরে কাফেরের কবর এতই সংকীর্ণ করে দেওয়া হবে যে, তার এক পার্শ্বের পাঁজরগুলো অন্য পার্শ্বে প্রবিষ্ট হয়ে যায়। উটের গর্দানের ন্যায় বড় বড় সাপ তার ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয়। সাপগুলো তার গোশত ভক্ষণ করতে থাকে। উপরন্তু বোবা ও বধির ফেরেশতাগণ তাকে হাতুড়ি দ্বারা পিটাতে থাকে। শুধু তাই নয়, তাকে সকাল-বিকাল আগুনেও পোড়ানো হয়।

   কবর আযাব থেকে মুক্তিদায়ক আটটি কাজঃ

        হযরত ইমাম ফকীহ আবুল লায়ছ সমরকন্দী (রহ) বলেন: কবরের আযাব থেকে পরিত্রাণের জন্য চারটি বিষয়ের ওপর আমল করা এবং অন্য চারটি বিষয় হতে বিরত থাকা আবশ্যক। যে চারটি বিষয়ের ওপর আমল করা আবশ্যক, সেগুলো হলো এই:

    (১) রীতিমত নামায আদায় করা।

    (২) অধিক পরিমাণে সদকা বা দান-খয়রাত করা।

    (৩) কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত করা। এবং

    (৪) অধিক পরিমাণে তাসবীহ পাঠ করা।

    এ চারটি কাজের ফলে কবর আলোকিত ও প্রশস্ত হয়। আর যে চারটি কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক, সে গুলো হলো এই:

    (১) মিথ্যা কথা বলা।

    (২) খেয়ানত বা অপরের সম্পদ আত্মসাৎ করা।

    (৩) প্রস্রাবের ছিটা। হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেন: তোমরা পেশাবের ছিটা হতে দূরে থাক। কারণ, সাধারণত কবরের আযাব পেশাবের ছিটার কারণেই হয়ে থাকে।

    (৪) চোগলখুরী করা।

    আল্লাহ তা'আলার অপছন্দনীয় চারটি কাজঃ

    (১) নামাযে খেলাধুলা করা। অর্থাৎ অমনোযোগী হওয়া।

    (২) কুরআনুল কারীম তেলাওয়াতের সময় অহেতুক কথাবার্তা বলা।

    (৩) রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা। এবং

    (৪) কবরস্থানে হাস্য।

    একটি চমৎকার উক্তিঃ

        হযরত মুহাম্মদ বিন সিমাক (রহ) কবরস্থানের প্রতি লক্ষ্য করে বলেন: এই কবরস্থানের নিরবতা ও কবরের সমতা যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে। কারণ এখানে কত লোকই না শোকার্ত ও অস্থির রয়েছে। কবরবাসীদের মধ্যেও অনেক তারতম্য রয়েছে। সুতরাং বুদ্ধিমান সেই, যে কবরে যাওয়ার পূর্বেই তার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

    একটি শিক্ষণীয় ঘটনাঃ

        হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)-এর নিকট কিছু লোক এসে বললো: আমাদের এক বন্ধুর ইনতিকাল হয়েছে। আমরা তাকে দাফন করার জন্য যখন কবর খনন করলাম, তখন তাতে একটি কালো সাপ দৃষ্টিগোচর হলো।

        তাই দ্বিতীয় বার এবং তৃতীয় বারও কবর খনন করলাম। কিন্তু প্রতি বারই সাপ দৃষ্টিগোচর হলো। এখন আমরা কী করব, বলুন। জবাব দিলেন ইবনে আব্বাস (রা)। বললেন : তন্মধ্যে যে কোন একটিতে দাফন করে দাও। পৃথিবীর যে কোন স্থানেই কবর খনন করো না কেন, সর্বত্রই এই সাপ দেখতে পাবে। কারণ, নিশ্চয়ই এটা তার কোন না কোন আমলেরই ফলাফল।

        তারপর গিয়ে তাকে তন্মধ্যে একটি সমাধিতে দাফন করা হলো। ফেরার সময় এ বিষয়ে মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করা হলে স্ত্রী বললো: সে খাদ্য দ্রব্যের ব্যবসা করতো। ব্যবসার মাল থেকে সে প্রতিদিনই খাবারের জন্য কিছু রেখে দিত। আর ঐ পরিমাণ পাথর কণা বা কাঠের গুড়ো ইত্যাদি তাতে মিশিয়ে নিতো। আমার মনে হয় সাপটা এরই ফলাফল।

     মাটির আহ্বানঃ

    মাটি দৈনিক পাঁচবার উচ্চস্বরে আহ্বান করে বলে:

    (১) হে মানুষ। তোমরা আজ আমার পিঠের ওপর চলাচল করছো। অবশ্যই একদিন তোমাদেরকে আমার পেটে আসতে হবে

    (২) হে মানুষ। তোমরা আজ আমার পিঠের ওপর বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য আহার করছো। অবশ্যই একদিন আমার পেটে কীট-পতঙ্গ তোমাদেরকে খাবে।

    (৩) হে মানুষ! তোমরা আজ আমার পিঠের ওপর আনন্দ উপভোগ করছো। কিন্তু মৃত্যুর পর কালই তোমরা আমার পেটে এসে চিন্তিত হবে।

    (৪) হে মানুষ! তোমরা আজ আমার পিটের ওপর হাসছো। কিন্তু মনে রেখ, কালই আমার পেটে এসে তোমরা কাঁদবে।

    (৫) হে মানুষ। তোমরা আজ আমার পিঠের ওপর অবস্থান করে গুনাহ করছো। কিন্তু একথা ভুলে যেও না যে, কালই আমার পেটে এসে এই গুনাহের শাস্তি তোমাদেরকে ভোগ করতে হবে।

    শিক্ষণীয় ঘটনাঃ

        হযরত উমর ইবনে দীনার (রহ) বলেন: মদীনায় বাস করতো এক ব্যক্তি। পাশেরই কোন এক মহল্লায় বাস করতো তার বোন। ঘটনাক্রমে তার বোনের ইনতিকাল হলো। তাকে যথারীতি দাফনও করা হলো। দাফন করে বাড়ী ফেরার পর স্মরণ হলো যে, টাকার থলেটা কবরে পড়ে গেছে। তাই আরেকজন লোককে সাথে নিয়ে সে গেল কবরস্থানে। কিছুটা খনন করে থলেটা পাওয়া গেল। তখন সে সাথীকে বললো, আরেকটু খনন করো, দেখি বোনের অবস্থা কী হচ্ছে। তারপর খনন করলো আরো কিছু। দেখা গেল তখন, কবরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সাথে সাথে সে কবরটি বন্ধ করে দিল। এল মায়ের কাছে। খুলে বললো পুরো ঘটনা। কিন্তু এ বিষয়ে মা কোন প্রকার মন্তব্য করতে সম্মত হলো না। শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের অনুরোধের পর অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে মা বললো তোমার বোন নামায পড়তো বিলম্বে। অযু করতো কোন রকম। আর রাতে যখন সবাই শুয়ে যেত, তখন সে দরজায় কান পেতে অন্যের কথা শুনতো। উদ্দেশ্য অন্যের কাছে যেন তা বলে দিতে পারে। আমার তো মনে হয় একারণেই তার শাস্তি হচ্ছে।

    মৃত ব্যক্তির চিৎকার ও ফরিয়াদঃ

        হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেন: প্রতিটি মৃত ব্যক্তিই (কবরে) চিৎকার করে। শুধু মানুষ ছাড়া আর সকল প্রাণীই তা শুনতে পারে। মানুষ যদি তা শুনতো তাহলে বেহুঁশ হয়ে যেত। মৃত ব্যক্তি যদি সে নেককার হয়ে থাকে, তাহলে সে তার বাহককে বলে: তোমরা আমাকে যেখানে নেওয়া হবে, সেখানে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও। কারণ, যদি তোমরা তা প্রত্যক্ষ করতে, তাহলে নিজেরাই তোমরা খুব তাড়াতাড়ি করতে। পক্ষান্তরে মৃত ব্যক্তি যদি গুনাহগার হয়, তাহলে বলতে থাকে যে, তোমরা তাড়াহুড়া করো না।

        কারণ, আমাকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যদি তোমরা সেই স্থানটা দেখতে, তাহলে কিছুতেই আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে না। মৃতকে কবরস্থ করার পর দুজন ফেরেস্তা আসে। তারা দুজনই কালো রঙের নীল চোখবিশিষ্ট। মৃত ব্যক্তি যদি নেককার হয়, তাহলে মাথার দিক হতে নামায তাদেরকে বাধা দিয়ে বলে: তোমরা এদিক হতে এসো না। কারণ, এই কবরের ভয়েই সে রাতের বেলা নামাযে মশগুল থাকতো। মাতা-পিতার খেদমত পায়ের দিক হতে এসে বাধা প্রদান করবে।

        দুনিয়ার জীবন তো মাত্র সামান্য কয়েক দিনের জন্যে। এখন জীবিত ও সুস্থ থাকাকালে কবর ও হাশরের জন্য কিছু সঞ্চয় করার সুযোগ আছে। মৃত্যুর পর কবরে গিয়ে মানুষ আর কোন কিছুই করতে পারে না। এমনকি মৃত্যুর পর একবার কালেমায়ে শাহাদত বা কোন তাসবীহ পড়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করবে, কিন্তু অনুমতি পাবে না। প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার জীবন হলো আসল পুঁজির ন্যায়। পুঁজি থাকা অবস্থায় মানুষ সবকিছুই করতে পারে। পুঁজি শেষ হয়ে গেলে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য অসম্ভব হয়ে পড়ে, ঠিক তেমনি জীবন প্রদীপ নিভে গেলেও

        আর কোন আমল করা সম্ভব হয় না। তাই আজ মেহনত করে কিছু কামাই করা উচিত। অথচ মানুষ উদাসীন। তারা কাল আমল করতে চাইবে, কিন্তু সময় তখন হাতছাড়া হয়ে যাবে। আল্লাহপাক বলেন: হে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরা। শিক্ষা গ্রহণ করো।

Post a Comment

0 Comments