কানকথার পরিচয় ও শ্রোতার কর্তবা

        পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ, নারীমাহ বা কানকথার অর্থ হল, কোন লোকের কথ কথা অন্য লোকের কানে পৌঁছে দেয়া। যথাঃ অমুক ব্যক্তি তোমার সম্বন্ধে এই কথা বলছে। কূটনামী এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এর সীমা আরও বিস্তৃত। যা' সে ভালবাসে না, তাও সে অন্য ব্যক্তির কানে লাগিয়ে দেয়। যার নিকট বলা হয় এবং যার কথা বলা হয়, উভয়েই তা' অপছন্দ করে। তৃতীয় ব্যক্তিও তা' পছন্দ করে না। চাই তা বাক্য, লিখনী, ইশারা, ইঙ্গিত যে কোন ভাবে প্রকাশ করা হোক। চোগলীর পরিচয় শুপ্ত রহস্য প্রকাশ করা এবং গোপন পর্দা ছিন্ন করা, যার প্রকাশ সে ভালবাসে না। কোনব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির কাজকর্ম দেখে ঘৃণা করে, তার পক্ষে নীরব থাকাই উচিত, তবে যদি তা' প্রকাশ করলে কোন মুসলমানের উপকার হয় অথবা কোন পাপ বিদূরীত করা যায়, তা' প্রকাশ করায় দোষ নেই। যথাঃ কোন ব্যক্তি কারও ধন অপহৃত হতে দেখলে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া কর্তব্য। তাতে মালের মালিককে রক্ষা করা হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের মাল গোপন করে রাখে তা' দেখে অন্য কেউ প্রকাশ করে দিলে তা' চোগলী বা নামী হবে। যদি কারও দোষ প্রকাশ করা হয় তা' পরনিন্দা ও কূটনামী এই দুটো পাপের কাজ হবে। যার কথা বলা যায় তার প্রতি মন্দ ইচ্ছে থেকে কূটনামীর উৎপত্তি হয় অথবা যার নিকট বলা হয় তার প্রতি ভালবাসা প্রকাশ হতে কুটনামীর উদয় হয়। অথবা অন্যের আলোচনা-সমালোচনা দ্বারা মনে সান্ত্বনা লাভের জন্য কুটনামী করা হয়। যে ব্যক্তি কূটনামী করে সে এরূপ বলে, অমক ব্যক্তি তোমার সম্বন্ধে এই এই কথা বলেছে, অথবা তোমার ব্যাপারে এই এই কার্য করেছে অথবা সে তোমার স্বার্থ নষ্ট করবার, জন্য চেষ্টা করতেছে অথবা তোমার শত্রুর মন ভারী করতেছে অথবা তোমার প্রকৃত অবস্থা বিকৃত করে বর্ণনা করতেছে।

         শ্রোতার কর্তব্যঃ এসব অবস্থায় শ্রোতা হিসাবে তোমাকে ছয়টি বিধান পালন করতে হবে। 

        (১) কুটনামীকারীকে বিশ্বাস করবে না। কেননা সে ফাসেক, পাপী এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণ- যোগ্য নয়। আল্লাতায়ালা বলেন, হে মু'মিনগণ। যদি কোন মহাপাপী তোমাদের নিকট কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তার সত্যতা পরীক্ষা করবে, যেন অজ্ঞতা লোকের বিপদ না ঘটাও।

         (২) কুটনামীকারীকে কুটনামী করা থেকে বারণ করবে। তাকে উপদেশ দেবে এবং তাকে বুঝিয়ে দেবে যে, এরূপ কথা লাগানো মহাপাপ। আল্লাহতায়ালা বলেন, সৎকার্যে আদেশ দেবে এবং অসৎ কার্যে নিষেধ করবে।

        (৩) আল্লাহর উদ্দেশ্যে এইরূপ লোককে আন্তরিক ঘৃণা নিকট ঘৃণিত। করবে। কেননা এইরূপ লোক আল্লাহর যাকে আল্লাহ ঘৃণা করেন, তাকে ঘৃণা করা ওয়াজিব।

        (৪) কোন অনুপস্থিত মুসলমান ভ্রাতার বিরুদ্ধে কোন মন্দ ধারণা করবে না। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেন, "ইজতানিবু কাছীরাম মিনাজজান্নি ইন্না বা'দ্বাজ জান্নি ইছমুন"। অর্থাৎ অধিকাংশ ধারণা পরিত্যাগ কর। কতক ধারণা পাপ স্বরূপ।

        (৫) উক্ত সংবাদের সত্যতা যাচাই রবার জন্য কোন গুপ্ত সন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না এবং কোন তর্কে লিপ্ত হবে না। কেননা আল্লাহতায়ালা গোয়েন্দাগিরী নিষেধ করেছেন।

        (৬) কুটনামীকারীকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছে তুমি তোমার জন্য তাতে রাজী হবে না। তার কুটনামী প্রকাশ করবে এবং বলবে না যে, অমুক ব্যক্তি আমাকে এই কথা বলেছে। কেননা তাতে তুমিও চোগলখোর এবং পরনিন্দুক হবে।

        বর্ণিত আছে যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীযের নিকট এক ব্যক্তি এসে অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিছু বলতেছিল। তখন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয তাকে বললেন, যদি তুমি চাও তোমার ব্যাপার আমি পরীক্ষা করে দেখব। যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক, তাহলে তুমি আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াত অনুসারে মহাপাপী। "যদি তোমাদের নিকট কোন মহাপাপী কোন সংবাদ নিয়ে আসে তবে পরীক্ষা করে দেখবে।" যদি তুমি সত্য বলে থাক তাহলে তুমি আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াত অনুসারে চোগলখোর, যারা কানে কানে কথা বলে। যথাঃ "অপবাদকারী, কুৎসা প্রচারকারী"। আর যদি চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। সে বলল, হে আমীরুল মু'মিনীন। আমি ক্ষমা চাই। আমি আর কখনও একাজ করব না।

        বর্ণিত আছে যে, জনৈক বিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট তার এক বন্ধু দেখা করতে এসে তার অন্য এক বন্ধুর মন্দ সংবাদ দিল। তখন উক্ত বিজ্ঞ ব্যক্তি বলল, তুমি বহুদিন পর আমার সাথে দেখা করতে এসেছ বটে কিন্তু তিনটি পাপ নিয়ে আজ আমার নিকট এসেছ। যথাঃ (১) আমার এক বন্ধুর বিরুদ্ধে আমার অসন্তুষ্টি উৎপাদন করেছ। (২) আমার শান্ত মনকে চঞ্চল করে দিয়েছ। (৩) তোমাকে আমার নিকট মন্দ লোক বলে প্রতিপন্ন করেছ।

        বর্ণিত আছে যে, খলীফা সোলায়মান ইবনে আবদুল মালেক একদা দরবারে উপবিষ্ট থাকাকালীন তাঁর নিকট একব্যক্তি উপস্থিত হল। তখন খলীফার নিকট হযরত জুহরীও উপস্থিত ছিলেন। খলীফা সোলায়মান আগন্তুক ব্যক্তিকে বললেন, আমি শুনতে পেলাম তুমি আমার সম্বন্ধে এই কথা রটনা করেছ। লোকটি বলল, কখনই আমি তা' করিনি। সোলায়মান বললেন, যে আমাকে সংবাদ দিয়েছে সে সত্যবাদী। তখন জুহরী বললেন, কুটনামীকারী কখনও সত্যবাদী হতে পারে না। তাঁর কথা শুনে খলীফা বললেন, তুমি সত্য কথা বলেছ। তারপর তিনি ঐ লোকটিকে বলে দিলেন, যাও তুমি নিরাপদে চলে যেতে পার।

         হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তোমার নিকট অন্যের কুটনামী করে, সে তোমার কুটনামীও অন্যের নিকট করে। এতে দেখা যাচ্ছে যে, কুটনামীকারীর প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করা উচিত। তার কথায় বিশ্বাস করা উচিত নয়। তার সততাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার প্রতি কেন ক্রোধ হবে না, যখন সে মিথ্যা, পরনিন্দা, বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বাস ভঙ্গ, ছলচাতুরী, ঈর্ষা, মুনাফিকী এবং লোকের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি এবং প্রবঞ্চনার আশ্রয় গ্রহণ করে। আল্লাহ যা' সংযোগ করবার আদেশ দিয়েছেন, সে তা' কর্তন করবার চেষ্টা করে এবং দুনিয়ায় অত্যাচার করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং অন্যায় ভাবে দেশদ্রোহী হয় তাদের পন্থা এরূপ। কুটনামীকারী তন্মধ্যে অন্যতম। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, লোকগণ যে ব্যক্তির অনিষ্টের ভয় করে সে তাদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট। কূটনামীকারী তাদের দলের অন্তর্গত। তিনি আরও বলেছেন, আত্মীয়তার বন্ধন কর্তনকারী বেহেশতে যাবে না। আরজ করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ। সে বন্ধন কর্তনকারী কে? তিনি বললেন, যে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করায় এবং কুটনামী করে বেড়ায়।

        হযরত আলী (রাঃ)এর নিকট একদা এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির কুটনামী করেছিল। হযরত আলী (রাঃ) তাকে বললেন, ভ্রাতা। তুমি যা বললে, তা' আমি অনুসন্ধান করব। যদি তুমি সত্য কথা বলে থাক, তোমাকে আমরা ঘৃণা করব। আর যদি মিথ্যা কথা বলে থাক, তবে তোমাকে শাস্তি দেব। যদি তুমি ক্ষমা চাও, তোমাকে ক্ষমা করে দেব। লোকটি বলল, হে আমীরুল মুমিনীন। আমাকে ক্ষমা করে দিন।

        কথিত আছে যে, মুহাম্মদ ইবনে কা'বকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মু'মিনের কোন স্বভাব তার


পক্ষে অনিষ্টকর। তিনি বললেন, অধিক কথা বলা, গোপন কথা প্রকাশ করা এবং প্রত্যেকের কথা বিশ্বাস করা। এক ব্যক্তি আমীর আবদুল্লাহ ইবনে আমেরকে জিজ্ঞেস করল, আমি শুনেছি যে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে বলেছে যে, আমি আপনার নামী করেছি। তিনি বললেন, হাঁ সে তাহা বলেছে। সে বলল, সে কি বলেছে তা' আমি জানতে চাই। আমি আপনার নিকট তার মিথ্যা কথা প্রকাশ করব। আমীর বললেন, আমার রসনা দ্বারা আমি নিজেকে তিরস্কার করা ভালবাসি না। তবে সে যা' বলেছে, তা' যে আমি বিশ্বাস করিনি, এটাই যথেষ্ট। আমি তোমা থেকে বন্ধন ছিন্ন করতে চাই না।

        কোন ধার্মিক লোকের নিকট অপবাদের উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, মানুষের কি হয়েছে যে, তাদের প্রত্যেকেই সত্যের প্রশংসা করে বটে, কিন্তু তারা চোগলখোরীকে উত্তম মনে করে?

        হযরত মাছআব ইবনে জোবায়ের (রহঃ) বলেছেন, অপবাদের কথা বিশ্বাস করা অপবাদের চেয়ে অধিক মন্দ। কেননা অপবাদ পথ দেখিয়ে দেয় কিন্তু অপবাদ বিশ্বাস করায় অনুমতি দেয়া হয়। যে ব্যক্তি কোন বস্তুর পথ দেখিয়ে দেয়, সে ঐ ব্যক্তির সমান নয়, যে তা' স্বীকার করে ও অনুমতি দেয়। সুতরাং চোগলখোর এবং অপবাদকারী থেকে সতর্ক থাকবে যদি সে সত্য কথা বলে, সে তার সত্য কথার মধ্যেও ঘৃণার যোগ্য হয়, কেননা সে সম্মান রক্ষা করে না এবং গুপ্ত কথা গোপন রাখে না। যার নিকট চোগলখোরী করা হয়, সে তার চোগলখোরীকে ভয় করলে তাকে অপবাদ বলে।

         হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, চোগলখোর কখনই হালালজাদাহ অর্থাৎ বৈধজাত নয়। একদা খলীফা সোলায়মান ইবনে আবদুল মালেকের নিকট একব্যক্তি গিয়ে তার সাথে কথা বলার অনুমতি চেয়ে বলল, আমীরুল মুমিনীন, আমি আপনার নিকট একটা কথা বলব। তা' শ্রবণ করুন। যদি তা শুনতে ঘৃণা করলেন তবু সহ্য করে শুনবেন। কেননা তার পশ্চাতে এমন বিষয় লোক আপনার কুটনামী আসবে, যা আপনি ভালবাসেন। খলীফা বললেন, বল। সে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন। কতক করেছে তারা তাদের ধর্মের বিনিময়ে আপনার সংসার ক্রয় করছে এবং তাদের প্রভুকে অসন্তুষ্ট করে আপনার সন্তুষ্টি অর্জন করেছে। তারা আল্লাহর বিষয়ে এবং তাদের আপনাকে ভয় করে এবং আপনার। বিষয়ে । আল্লাহকে ভয় করে না। সুতরাং আল্লাহ আপনাকে যে আমানত দিয়েছেন, তাদেরকে তজ্জন্য বিশ্বাস করবেন না এবং আল্লাহ আপ রক্ষা করবার ভার দিয়েছেন, তা' তাদের হস্তে সমর্পণ করবেন না। কেননা তারা লোকের মধ্যে অনিষ্ট বিস্তার করবে, আমানত নষ্ট করে ফেলবে, সম্মান নষ্ট করবে এবং তাদের আত্মীয় স্বজনের দ্বারা আপনাকে ফাংস করবে। তাদের অস্ত্র বিদ্রোহ ও কুটনামী, তাদের অবলম্বন পরনিন্দা এবং অপবাদ। তাদের দোষের জন্য আপনি দায়ী এবং আপনার দোষের জন্য তার। দায়ী নয়। আপনার পরকাল নষ্ট করে তাদের সংসার মঙ্গলময় হবে না। কেননা সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট প্রবঞ্চনা ঐ লোকের যে অন্যের সংসারের বিনিময়ে তার আখেরাত বিক্রয় করে।

         একব্যক্তি যিয়াদ আজমের ব্যাপারে খলীফা সোলায়মানের নিকট কুটনামী করলে তিনি তাদের জন্য দরবারে ডেকে পাঠালেন। উভয় দরবারে উপস্থিত হবার পর যিয়াদ ব্যক্তির নিকট অগ্রসর হয়ে বললঃ 

এমন মন্দ স্বভাব তোমার!

বিশ্বাসে মেরে লাথি

দূর করে দাও এভাবে নিজের

পরম সঙ্গী সাথী?

মানব সমাজে বাস করে ভ্রাতঃ

এ কাজ করো না আর

যে কাজে কোনই নেই প্রশংসা

শুধু ঘৃণা কুড়ানো সার।

        এক ব্যক্তি আমর ইবনে ওবায়েদ (রহঃ) কে বলল যে, একটি লোক তার গৃহে বসে সদা সর্বদা আপনাকে মন্দ বলে। আমর তা' শুনে লোকটিকে বললেন, ওহে। এটা বড়ই আশ্চর্য যে, তুমি তার বন্ধুত্বের এবং প্রতিবেশীত্বের কর্তব্য ভুলে গেছ। তুমি তার কথা আমার নিকট প্রকাশ করে আমি যা ভালবাসি না তেমন কাজটিই আমার নিকট এসে করলে। যাই হোক, আমি তাকে একথা জানাব যে, মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই নির্দ্ধারিত। কবর আমাদের সবারই এক অবস্থা করবে এবং আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকেরই বিচার করবেন। তিনি মহা বিচারক। এক কুটনা প্রকৃতির একটি লোক একবার হযরত ইবাদাতের নিকট একখানা চিঠি লিখল, জনাব। আপনার তত্ত্বাবধানে একটি ইয়াতিম বালক আছে। আপনি তার লালন পালন করছেন। তার ধন সম্পত্তি রয়েছে। আপনি তা' থেকে কিছু গ্রহণ করতে পারেন। তিনি চিঠিখানা পাঠ করে তার অপর পৃষ্ঠে জবাব লিখলেন, কুট পরামর্শ সত্য হলেও বড়ই গর্হিত কার্য। যদি তুমি তোমার এ পরামর্শ উপদেশ হিসাবে মনে কর, তবে জানবে, এ ক্ষেত্রে তোমার ক্ষতি তোমার উপকার অপেক্ষা উত্তম। ধ্বংসকর বিষয় গোপনে গ্রহণ করা থেকে আমরা আল্লাহর নিকট। আশ্রয় চাই। জেনে রাখ, যদি তোমার বৃদ্ধ বয়স না হত, তবে তোমার একাজের জন্য অবশ্যই আমি তোমার সম্মুখীন হতাম, সুতরাং তোমাকে লিখেই জানাচ্ছি ওহে। তুমি নিজেকে অভিশপ্তের অপবাদ থেকে রক্ষা কর। আল্লাহতায়ালা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উত্তম রূপে পরিজ্ঞাত। তিনি মৃতের উপর রহম করুন এবং ইয়াতিমকে ক্ষমতা দিন ও তার ধন সম্পদ বৃদ্ধি করুন, আর কটনামীকারী ও চোগলখোরদের উপর তাঁর অভিসম্পাত।

        হাকীম লোকমান তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়েছিলেন, হে বৎস। আমি তোমাকে এমন কতগুলো উপদেশ দিচ্ছি যা' তুমি মজবুতভাবে ধরে রাখলে প্রভুত্ব হতে বঞ্চিত হবে না। নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সব লোকের সাথেই উত্তম ব্যবহার করবে। সম্মানিত ও অসম্মানিত কোন লোকের সাথেই তোমার অজ্ঞতা প্রকাশ করবে না। স্বীয় বন্ধু-বান্ধবগণকে রক্ষা করবার চেষ্টা করবে। আত্মীয়বর্গের সাথে বন্ধন অক্ষুন্ন রাখবে। চোগলখোর ও কুটনামীকারী লোকদের প্রবঞ্চনা থেকে তাদেরকে নিরাপদ রাখবে। যে তোমার অনিষ্ট ও ক্ষতি করতে চায় তার থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। তুমি তোমার বন্ধুবর্গের অনুপস্থিতিতে তাদেরকে মন্দ বলবে না এবং তারাও যেন তোমাকে মন্দ না বলে।

        জনৈক বুযর্গ বলেছেন, চোগলখোরের এবং কূটনামীকারীদের চোগলখুরী ও কূটনামের ভিত্তি মিথ্যা, ঈর্ষা এবং মুনাফিকী। জনৈক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন, চোগলখোর তোমার নিকট যা' বলে তা' যদি সত্য হয় তবে নিশ্চয়ই সে তোমাকে তিরস্কার করতে সক্ষম হয় এবং যার কথা বলা হয় সে তোমার করুণা পাবার যোগ্য হয়। কেননা সে তোমার তিরস্কার নিয়ে তোমার সম্মুখীন হবে না। মোটকথা চোগলখুরীর পাপ বড়ই কঠিন। সুতরাং এথেকে প্রত্যেকেরই রক্ষা পাওয়া উচিত।

         হযরত হাম্মাদ ইবনে সালমাহ বলেছেন, একব্যক্তি একটি দাস বিক্রয় করেছিল। সে ক্রেতাকে বলল, দাসটির মধ্যে কোন দোষ নেই। তবে তার একটিমাত্র কূটনামীর দোষ আছে। ক্রেতা বলল, তাতে কিছু হবে না। আমি খুশী আছি। একথা বলে ক্রেতা তাকে ক্রয় করে নিয়ে গেল। তারপর কিছুদিন চলে গেল। অতঃপর একদিন উক্ত দাস তার প্রভু-পত্নীকে বলল, আমার প্রভু আপনাকে ভালবাসে না। তিনি একটি ক্রীতদাসী ক্রয় করতে চান। আমি আপনাকে একটি তদবীর বলে দিচ্ছি। যখন তিনি নিদ্রা যাবেন তখন একখানি কাঁচি দিয়ে তার দাঁড়ি থেকে কয়েকগাছি কেশ যদি আপনি আমাকে এনে দিতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে এমন একটি তাবীজ বানিয়ে দেব যে তিনি আপনাকে আলবাসতে শুরু করবেন। এরপর দাস তার প্রভুর নিকট গিয়ে বলল, আপনার স্ত্রী আপনাকে ভাল না বেসে অন্য পুরুষের প্রণয়াবদ্ধ হয়েছে এবং সে সুযোগ পেলে আপনাকে হত্যা করতে পারে; সুতরাং আপনার সতর্ক থাকা উচিত। অতঃপর একদা রাত্রে গৃহস্বামী শয্যায় শায়িত আছেন এমন; সময় তার স্ত্রী কাঁচি হাতে নিয়ে তার দাড়ি থেকে কেশ কেটে লওয়ার জন্য যেই মাত্র হস্ত প্রসারিত করল অমনি স্বামী হস্ত বাড়িয়ে তাকে ধরে ফেলল এবং তার হাতে কাঁচি দেখতে পেল। সাথে সাথে সে তার স্ত্রীকে হত্যা করে ফেলল, এ সংবাদ ঐ স্ত্রীলোকের আত্মীয়-স্বজন শুনতে পেয়ে দ্রুত চলে এসে তার গৃহস্বামীকে হত্যা করল। এর ফলে স্বামী-স্ত্রী উভয় গোত্রের লোকদের মধ্যে ভীষ ব্যহত নিকট বিবাদ-বিসম্বাদ শুরু হয়ে গেল। কূটনামীর এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে আমরা আল্লাহ তাওফীক প্রার্থনা করছি।

Post a Comment

0 Comments