চিকিৎসকের সাথে কেমন পর্দা করতে হয়

 হিজড়াদের সাথে পর্দা

        হিজড়ারাও মানুষ হিসেবে গণ্য। ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য মানুষের মতই। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে পর্দা করতে বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর হাদীস তার প্রমাণ বহন করে।

         হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সকল পুরুষদেরকে অভিশাপ প্রদান করেছেন, যারা নিজেরা (পুরুষত্ব নষ্ট করে) হিজড়া হয়ে যায়। এমনিভাবে ঐ সকল মহিলাদেরকে ও অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের সুরত ধারণ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেন যে, এদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও। (সহীহ বুখারী)

            আলোচ্য হাদীসে যেসব মহিলা বা পুরুষ আল্লাহপ্রদত্ত স্বাভাবিক শারীরিক আকার গঠনকে পরিবর্তন করে ভিন্ন আকার-আকৃতি, লিবাস, পোশাক গ্রহণ করে তাদের প্রতি এ অভিসম্পাতের কথা বলা হয়েছে। জন্মগতভাবে যারা হিজড়া তাদের কথা ভিন্ন। কেননা এটা তাদের ইচ্ছার বাইরে তাদের পথ অবলম্বন করে, যেমন চুল লম্বা করে, পুরুষত্ব শেষ করে দিয়ে মেয়ে হয়ে যায়, অথবা মেয়েলী পোশাক পরিধান করে মেয়ে সাজে, হাদীসের দৃষ্টিতে এরা অবশ্যই অভিশপ্ত। এ জাতীয় লোকদেরকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া কঠোভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এদের সাথে পর্দা করা আবশ্যক।

        হাদীসের শেষাংশে বলা হয়েছে- آخر جوهن بيوتكم

        অর্থ: তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও।

        উপরের বাক্যে ব্যবহৃত সর্বনামটি যদিও পুংলিঙ্গের জন্য ব্যবহার হয়েছে কিন্তু এখানে মহিলা পুরুষ উভয়কেই বুঝানো উদ্দেশ্য। এভাবে পুংলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করে উভয়কে বুঝানো আরবি ব্যকারণ অনুযায়ী অশুদ্ধ। তখন অর্থ এ দাঁড়াবে যে, যে সকল পুরুষ হিজড়া হয়ে গিয়েছে তাদের যেমন ঘরে আসার অনুমতি দেয়া নিষেধ তেমনি যেসব মহিলা পুরুষ সেজেছে তাদেরকেও ঘরে আসতে দেয়া

        অনুচিত। কেননা এদের আনাগোনা এবং চলাফেরা, লিবাস, পোশাক দেখে সরলমনা মহিলারা প্রভাবিত হার তাদের ব্যক্তিত্ব ও স্বভাব চরিত্রের জন্যে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং বুঝা গেল, যদি কোন পুরষ জন্মগত কোন কারণবশতঃ তাদের পুরুষত্ব হারিয়ে ফেলে তবু মহিলাদের জন্য তার সম্মুখে আসা জায়েয নয়। কাজেই হিজড়া অন্ডকোষ কর্তিত বা পুরুষাঙ্গ কর্তিত পুরুষের সাথে অনুরূপ বয়োবৃদ্ধ সকলের সাথে নারীদের পর্দা করা অত্যাবশ্যক।

চিকিৎসকের সাথে পর্দা

        চিকিৎসা ও পরিচর্যার সময় পর্দার ব্যাপারে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এ সম্পর্কে হযরত জাবের (রা) এর নিম্নোক্ত হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য। 

        অর্থ: হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। মু'মিন জননী হযরত উম্মে সালামা (রা) রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে রক্ত মোচন করানোর অনুমতি চাইলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ ভাইবাকে আদেশ দিলেন যে, তাকে রক্তমোচন করিয়ে দাও।

        ঘনটাটি বর্ণনা করার পর হযরত জাবের (রা) বলেন যে, আবূ তাইবা (যিনি রক্ত মোচন করলেন) আমার মনে হয় তিনি হযরত উম্মে সালামার দুধ ভাই ছিলেন অথবা নাবালেগ ছিলেন। (মুসলিম শরীফ)

        উপরিউক্ত হাদীসটির মাধ্যমে বুঝা যায় যে, চিকিৎসার ব্যাপারেও মহিলাদের পর্দার দিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। কেননা যদি চিকিৎসার ক্ষেত্রে পর্দার প্রয়োজন না হতো তবে মু'মিন জননীর (রা) রক্ত মোচন করানোর ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত জাবির (রা)-এর একথা বলার কোন প্রয়োজন ছিল না যে, আবূ তাইবা (রা) তাঁর দুধভাই অথবা নাবালেগ ছেলে ছিলেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আজ আমাদের সমাজে যারা পর্দার দিকে লক্ষ্য রাখে, তারাও পরিবারে চিকিৎসার সময় পর্দার প্রতি যত্ন নেয়ার প্রয়োজন উপলব্ধি করে না। আলোচ্য হাদীস দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, মহিলাদের চিকিৎসার জন্যে প্রথমতঃ কোন মাহরাম ব্যক্তি তালাশ করা উচিত। যদি না পাওয়া যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে গায়রে মাহরাম ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করানো যেতে পারে। কিন্তু ইসলামের একটি মূলনীতির প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

তা হলোঃالضرورة تُقَدِرُ بِقَدْرِ الضُّرُورَةِ 

অর্থঃ অপরিহার্য দরকারে কোন নিষিদ্ধ বিষয় কেবল প্রয়োজন পরিমাণই শিখিল করা যেতে পারে ।

        কাজেই একান্ত অপরাগতায় গনি গায়রে মাহরাম চিকিৎসককে শরীরের কোন অংগ যেখারেই হয়, তাহলে যতটুকু দেখানো প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই যেখাতে পারবে। যেমন চিকিৎসার জন্যে যদি শিরা দেখ্য বা অবস্থা বলার দ্বারা কাজ শেষ হয়ে যায় তবে এর বেশি দেখানোর বা স্পর্শ করার অনুমতি নেই। তেধনি যদি শরীরের অন্য কোন স্থানে জখম থাকে, তবে শুধু জখমের জায়গাটি চিকিৎসককে দেখাতে পারবে। আয় যদি চোখ, নাক, দাঁত ইত্যাদি দেখাতে হয়, তত্ত্ব সম্পূর্ণ খোলা জায়েয নেই। আরো লক্ষণীয় যে, প্রয়োজন অনুপাতে ডাক্তারকে যে অংশ দেখানো হচ্ছে সে অংশ ডাক্তার ব্যতীত অন্য কারো দেখার অনুমতি দেই। হ্যা যদি এমন অংগ হয় যে, যা মাহরাম পুরুষদের অবলোকন জায়েয আছে, তবে মাহরাম আত্মীয়গণকে দেখাতে পারবে। উপরের নির্দেশ পুরুষদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও সমানভাবে প্রযোজ্য। একজন পুরষ নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত কোন অঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা কোন কারণে দেখানোর দরকার হলে শুধু ভজটুকুই দেখাত পারে যতটুকু দেখানো প্রয়োজন। কিন্তু উপস্থিত অন্য লোকদের জন্য এমন স্পর্শকাতর স্থানগুলো দেখা হারাম।

অন্ধের সাথে পর্দা

        অন্ধ বলে তার সাথে যেভাবে ইচ্ছা দেখা করা যেতে পারে এ অনুমতি ইসলাম কাউকে দেয়নি। সে শুধুই অন্ধ। কিন্তু তার অনুভূতি, শ্রবণশক্তি রূপ, যৌবন সবই অক্ষুণ্ণ থাকা অবস্থায় তার সাথে দেখা করতে হলে ইসলামের বিধি-বিধান অবশ্যই আপনাদের মেনে চলতে হবে। এ সম্পর্কে উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমাহ (রা) বলেন-সালামাহ (রা) বর্ণনা করেন যে, কোন একদিন আমি এবং হযরত মাইমুনা (রা) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। এ সময় অন্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা) উপস্থিত ছিলেন। আমরা দু'জন তার সামনে থেকে পর্দা করার ইচ্ছা করলাম না এবং নিজ নিজ স্থানে বসে রইলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার থেকে পর্দা করো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। ইনি অন্ধ নন কি? ইনি তো আমাদের দেখছেন না। উত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেল, তোমরা দুজন কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না? (আহমদ, তিরমিযী)

        আলোচ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, মহিলাদেরকেও যথাসম্ভব পুরুষদের দিকে তাকানো হতে বেঁচে থাকতে হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (বা) পূতঃপবিত্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। একই সাথে অন্ধও ছিলেন। অন্যদিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদ্বয়ও পূতঃপবিত্র

        চরিত্রের অধিকারিণী ছিলেন। তারপরেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে হযরত আব্দুল্লাহ (রা) থেকে পর্দা করার আদেশ দেন যেন তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ না করা হয়। যেখানে কুদৃষ্টির বিন্দুমাত্র শংকা ছিল না সেক্ষেত্রেও যদি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তাহলে বর্তমানে অসংখ্য ফিতনার যুগে মহিলাদেরকে অন্য পুরুষের দিকে উকি মেরে তাকানোর কীভাবে অনুমতি দেয় যায়। যদি প্রয়োজনবোধে কারো প্রতি তাকানোর দরকার পড়ে তবে আলাদা কথা। কিন্তু স্বেচ্ছায় পুরুষ মহিলা একে অন্যের দিকে তাকানো নিষেধ।

        বর্তমানে বিয়ে শাদীতে হাজারো পর্দা বিঘ্নিত হচ্ছে। পাত্রীর বিদায়ের সময় বরকে সালাম জানানোর জন্যে অন্দর মহলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীসহ উপস্থিত সকল মহিলা বরকে দেখতে আসে এবং আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীসহ উপস্থিত সকল মহিলা বরকে দেখতে থাকে। অন্যদিকে শ্যালক-শ্যালিকার ঠাট্টার কোন শেষ থাকে না। এভাবে একজন মুবক-যুবতী নারীর আড্ডায় উপস্থিত থাকা কীভাবে জায়েয হতে পারে? সুতরাং এসব ক্ষেত্রে পর্দা অবশ্যই পালন করতে হবে। যদি কেউ অন্ধও হয়।

Post a Comment

0 Comments