নারীর সতর কেমন হবে

        মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জী পর্যন্ত ব্যতীত সমস্ত শরীরই নারীর সতর। স্বামী ছাড়া পিতা, ভ্রাতা ইত্যাদি সহ সকল নিকটাত্মীয় পুরুষের নিকটই এই সতর খোলা রাখা হারাম।

         বালিকা সাবালিকা হলে তার দেহের মুখমণ্ডল ও কব্জী পর্যন্ত হাত দু'টো ব্যতীত শরীরের কোন অংশই দৃষ্টিগোচর হওয়া উচিত নয়। (আবু দাউদ)

         রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্যালিকা হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা) একদা এমন পাতলা বস্ত্র পরিধান করে তাঁর সামনে আসলেন যে কাপড়ের ভেতর দিয়ে তাঁর দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা যাচ্ছিল। তৎক্ষণাৎ তিনি চক্ষু ফিরিয়ে নিয়ে বলেন:

        "হে আসমা! বালেগা হওয়ার পর এটি এবং এটি ব্যতীত দেহের কোন অংশ অপরকে দেখানো বৈধ নয়।" এই বলে তিনি তাঁর মুখমণ্ডল এবং হাতের কজীর দিকে ইংগিত করেন।

        হযরত আয়েশা (রা) বলেন: "আমি একবার বেশভূষাসহ আমার ভ্রাতুপুত্র আবদুল্লাহ ইবনে তুফায়েলের সামনে এলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহা অপছন্দ করেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর বাসুল। সে তো আমার ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি তখন বলেন, মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় ব্যতীত দেহের কোন অংশ প্রকাশ করা বালেগার জন্য বৈধ নয়। এই বলে তিনি তাঁর কজীর উপর এমনভাবে হাত রাখলেন যাতে কজীর মধ্যস্থল ও তাঁর হাত রাখার স্থান হতে মাত্র একমুষ্টি স্থান বাকী রইল।"

        রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "আল্লাহ পাকের লা'নত সেই সব নারীর ওপর, যারা কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ থাকে। যারা এমন পাতলা বস্ত্র পরিধান করে যে, এর ভেতর দিয়ে দেহের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ দেখা যায়, তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই একথা বলা হয়েছে।

        হযরত উমর (রা) বলেন: নারীদেরকে এমন আট-সাঁট কাপড় পরিধান করতে দেবে না যাতে শরীরের গঠন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

        কোন রকম যৌন আকর্ষণ এখন আর নেই, এমন বৃদ্ধা নারীর জন্য সতরের নির্দেশ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ হে নবী পত্নিগণ। তোমরা অন্য নারীদের ন্যায় নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে নরপুরুষের সঙ্গে কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে যার অন্তরে ব্যধি আছে, সে প্রলুদ্ধ হয়। তোমরা সদালাপ করবে। আর তোমরা ঘরে অবস্থান। করবে এবং অজ্ঞতার যুগের ন্যায় রূপ-যৌবনের প্রদর্শনী করে বেড়াবে না। (আল আহযাব: ৩২-৩৩)

        এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণ আধ্যাত্মিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে কত উচ্চ স্থান অর্জন করেছিলেন, এটি ধারণা করাও দুঃসাধ্য। তদুপরি তাঁরা হলেন সমস্ত উম্মতের জননী। এমতাবস্থায় তাঁদের প্রতি কারও প্রলুদ্ধ হওয়া কল্পনাতীত। তথাপি তাদেরকে সম্বোধন করেই নির্দেশগুলি জারী করা হয়েছে। এতেই বুঝা যায়, জগতের নারীদের পক্ষে এগুলো পালন করে চলা কত জরুরী। আর নির্দেশগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সহধর্মিণীদেরকে লক্ষ্য করে প্রদত্ত হয়ে থাকলেও সকল নারীর প্রতিই প্রযোজ্য হবে।

        আয়াতে নারীদেরকে গৃহে অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হলেও প্রয়োজনে তারা বাইরে যাবে না, নির্দেশের মর্ম তা নয়। বাইরে যাওয়া আবশ্যক হলে বাইরে যাবে; কিন্তু যত্র-অত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে না এবং পুরুষের সমাবেশে মিশে যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

قد اذن الله لكن أن تَخْرُجْنَ لِحَوَائِجِكن .

        অর্থাৎ, "মহান আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।" (বুখারী মুসলিম)

        তবে তিনি এটাও বলেন। وبيوتهن خير لهن :

        অর্থাৎ, "তাদের জন্য তাদের গৃহে অবস্থানই মঙ্গলজনক।

        নামাযের ন্যায় ইবাদতের জন্যও নারীদেরকে জামা'আতে শামিল হওয়ার নিমিত্তে উৎসাহিত করা হয়নি।

        হযরত উম্মে হুমাইদ সাঈদিয়া (রা) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল। আমার ইচ্ছে হয় আপনার সাথে নামায পড়তে। তিনি বলেন: আমি জানি। কিন্তু তোমার নিজের গৃহে নামায পড়া অপেক্ষা তোমার কামরায় নামায পড়া উত্তম।

        তোমার মহল্লার মসজিদে নামায পড়া অপেক্ষা তোমার বাড়ীতে নামায পড়া উত্তম এবং জামে মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে তোমার মহল্লার মসজিদে নামায় পড়া উত্তম। (সুনানে আহমদ, তিরমিযী)।

        নারীর নিজ কামরায় নামায পড়া অপেক্ষা নিভৃত কক্ষে নামায পড়া উন্ন এবং নিভৃত কক্ষ অপেক্ষা গোপন কামরায় নামায পড়া উত্তম। (আবু দাউদ) 

        রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন।

خير مساجد النساء قعر قعر بيوقهن. 

        অর্থ্যাৎ, "গৃহের কোণই নারীদের জন্য সর্বোত্তম মসজিদ।” (সুনানে আহমদ) এর অর্থ হলো গৃহের কোণে নামায আদায় করলেই নারীদের জন্য মসজিদে জামা'আতে নামায পড়ার নেকী মিলবে।

         আলোচ্য আয়াত থেকে বুঝা যায় নারী গৃহেই অবস্থান করবে এবং এটিই তার কর্মক্ষেত্র। কিন্তু বিশেষ কারণে সে গৃহের বাইরে বের হতে পারবে। বিনা প্রয়োজনে সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য বের হতে পারবে না। প্রয়োজনে বের হতে হলে। নারীর অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলো হলোঃ

    ১. দূরের রাস্তা হলে কোন মুহাররাম পুরুষকে সঙ্গে নিতে হবে।

    ২. সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করা এবং অলংকারাদির ঝনঝনানি শোনানো যাবেনা।

     ৩. এমন পাতলা পোশাক পরিধান করা যাবে না যার মধ্য দিয়ে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা যায়। গোটা দেহ চাঁদর দিয়ে ঢেকে নিতে হবে।

     ৪. পরিধেয় বস্ত্র এমন আঁট সাট হবে না যাতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্পষ্ট হয়।

    ৫. কারও সাথে কথা বলতে হলে কোমল কন্ঠে কথা বলবে না। 

    ৬. অমুসলমান ও পুরুষের পোশাক পরিধান করতে পারবে না।

     ৭. আল্লাহ ভীতি ও লজ্জা সর্বদা অন্তরে থাকতে হবে।

     ৮. প্রয়োজন শেষ হলে দ্রুত নিজ গৃহে ফিরে আসতে হবে।

Post a Comment

0 Comments