রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন-
-'যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে দু'রাকাত নামায এমনভাবে আদায় করল যে, পার্থিব কোন বিষয় সম্পর্কে নামাযের মধ্যে কোন চিন্তা করল না, সে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যাবে।'
অন্য সূত্রে আরও বাড়িয়ে বর্ণিত হয়েছে-
وَلَمْ يَسْهُ فِيهِمَا غَفَرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ -
-উপরোক্ত দুরাকাতে সে কোনরূপ ভুল-ত্রুটি করেনি, (এ ওযু ও নামাযের উসিলায়) আল্লাহ্ তা'আলা তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দিবেন।
হাদীস শরীফে আরো আছে, 'আমি কি তোমাদের বলব কি তা'আলা তোমাদের গুনাহ মাফ করে মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন? তবে শুন, তা হচ্ছে কষ্ট-ক্লিষ্ট অবস্থায়ও পরিপূর্ণ ওযু করা, মসজিদে বেশি বেশি হাজির হওয়া; এক নামাযের পর পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষা করা-এ হচ্ছে রেবাত। কথাটা রাসূলুল্লাহ (ছঃ) তিন বার উচ্চারণ করেছেন। অর্থাৎ জেহাদে সীমান্ত প্রহরার যে মর্যাদা, নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকার মর্যাদা তাই।
নবী করীম (ছঃ) ওযুর অঙ্গসমূহ একবার করে ধুয়ে বলেছেন, কমপক্ষে একবার না ধৌত করলে এ ওযু দ্বারা নামায কবুল হবে না। (অতঃপর) দু'বার করে ধুয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি দু'বার করে ধুবে, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে দ্বিগুণ সওয়াব দান করবেন। (অতঃপর) ওযুর প্রতিটি অঙ্গ তিন তিন বার ধুয়ে বলেছেন, 'এ হচ্ছে আমার, আমার পূর্বেকার আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং পরম করুণাময়ের পরম বন্ধু হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ওষু।
হাদীস শরীফে আছে, ওযুর সময় যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ করবে, আল্লাহ্ তা'আলা তার সমগ্র দেহ গুনাহ থেকে পবিত্র করে দিবেন। আর যে স্মরণ করবে না, আল্লাহ্ তা'আলা কেবল তার ওযুর অঙ্গগুলো পবিত্র করবেন।
হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে, 'যে ব্যক্তি ওষু অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও আবার ওষু করবে, আল্লাহ্ তা'আলা তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখে দিবেন।'
আরও বর্ণিত হয়েছে, 'ওযুর উপর ওযু অর্থ নূরের উপর নূর।'
বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এসব উক্তি উম্মতকে নতুন ওযুর জন্য অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশেই করেছেন।
নবী করীম (ছঃ) আরও বলেন, 'যখন কোন মুসলমান বান্দা ওযু এবং কুলি করে, তখন তার গুনাহসমূহ মুখ থেকে বের হয়ে যায়, যখন নাক ধৌত করে তখন তার গুনাহসমূহ নাক থেকে, যখন চেহারা ধৌত করে তখন চেহারা থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি তার দুচোখের পাতার নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে দুহাত ধৌত করে তখন দুহাত থেকেও গুনাহসূহ বের হয়ে যায়। এমনকি দুহাতের নখসমূহের নীচ থেকেও বের হয়ে যায়। এরপর সে মাথা মাসেহ করলে তার মাথা থেকে গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। এমনকি তার দু'কান থেকেও বের হয়ে যায়, তার দু'পায়ের নখসমূহের নীচ থেকেও বের হয়ে যায়। অতঃপর মসজিদের দিকে গমন ও নামায হয় তার জন্য অতিরিক্ত (অধিক সওয়াবের কারণ)।'
বর্ণিত আছেঃ ওষু অবস্থায় থাকা ব্যক্তি রোযাদারের ন্যায়। রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করার পর আকাশের দিকে দৃষ্টি উঠিয়ে পড়বে-
أشهد أن لا إلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ محمدًا عبده ورسوله -
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে; যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে যেতে পারবে।
হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, 'সত্যিকার ওযূ তোমা থেকে শয়তানকে দূরে সরিয়ে রাখবে।' মুজাহিদ (রঃ) বলেন, 'তোমরা ওযু অবস্থায় আল্লাহর যিকির ও এস্তেগফার করতে করতে নিদ্রা যাও। কেননা, রূহ যে অবস্থায় কবজ করা হবে, (কেয়ামতের দিন) তাকে সে অবস্থায়ই উঠানো হবে।'
বর্ণিত আছে, হযরত ওমর (রাঃ) এক সাহাবীকে কাবা শরীফের গেলাফ আনার জন্য মিসর প্রেরণ করেছিলেন। পথিমধ্যে শ্যাম দেশে তিনি এক দরবেশ ব্যক্তির বাড়ির সন্নিকটে অবস্থান করেন। দরবেশ ছিলেন একজন জবরদস্ত বিজ্ঞ আলেম। তাই সাহাবী কিছু জ্ঞানের কথা জানার জন্য তার বাড়িতে গমন করেন। দরজায় আওয়াজ দেয়ার পর দরবেশ যথেষ্ট দেরী করে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। সাহাবী তার থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণের পর দরজা খোলায় বিলম্বের কারণ জিজ্ঞেস করেন। জওয়াবে দরবেশ বললেন, আপনি খলীফার। নিকট থেকে রাজকীয় প্রভাব ও শান-শওকত নিয়ে এসেছেন, তা দেখে আমি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেছি এবং দরজাতেই আপনাকে থামিয়ে দিয়েছি। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা হযরত মূসা (আ.)-কে বলেছেন, যদি তুমি কারো প্রভাব ও জাঁকজমকে ভয় পাও তবে তাড়াতাড়ি ওয় করে নিবে এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে ওযু করার নির্দেশ দেবে। কেননা, যে ব্যক্তি ওষু করে নেয়, আমি তাকে নিরাপত্তা দেই। দরবেশ বললেন, 'এ জন্যই আমি দরজা বন্ধ রেখেছি এবং নিজে ওযু করেছি, পরিবার-পরিজনকে ওযু করতে বলেছি, আর আমি নামাযও পড়েছি। ফলে আমরা সকলেই আল্লাহর নিরাপত্তায় আশ্রিত হওয়ার পর আপনার জন্য দরজা খুলেছি।'
0 Comments