হযরত হাফসা (রা) জীবনী

        পরিচয়ঃ     উম্মুল মু'মেনীন হযরত হাফসা (রা) হলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর কন্যা। তাঁর মাতার নাম যয়নৰ বিনতে মাউন। তিনি রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চতুর্থ সহধর্মিনী ছিলেন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৃতীয় হিজরী সনে হযরত হাফসা (রা)কে বিয়ে করেন।

        ইসলাম গ্রহণঃ    তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পূর্বে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নবুয়তের ৬ষ্ঠ বর্ষে স্বীয় পিতা হযরত ওমর (রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন।

        প্রথম বিয়েঃ    উন্মুল মু'মেনীন হযরত হাফসা (রা) মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর অতিশয় স্নেহের কন্যা ছিলেন। যখন হযরত হাফসা (রা) যৌবনে পদার্পণ করেন, পিতা-মাতা তাঁদের প্রাণাধিক কন্যাকে যোগ্য পাত্রের নিকট সমর্পণ করার জন্য আত্মনিয়োগ করেন। প্রথমে কুরাইশ বংশের খুনাইস ইবনে হোযাফা নামক এক সাহাবীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। নব-দম্পত্তি পরমানন্দে তাঁদের সংসার যাত্রা শুরু করেন। হযরত হাফসা (রা) স্বামীর সাথে মদিনায় হিজরত করেন।

        প্রথম স্বামীর ইন্তেকালঃ    দ্বিতীয় হিজরী সনে মক্কার বিধর্মীদের সাথে মুসলমানদের বদর যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। হযরত হাফসা (রা)-এর স্বামী খুনাইস এ যুদ্ধে মুজাহিদদের সাথে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যুদ্ধে অত্যন্ত বীরত্ব প্রদর্শন করে বহু শত্রুর ভবলীলা সাঙ্গ করে অবশেষে শত্রু পক্ষের এক অতর্কিত আক্রমণে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে তাঁর গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। হযরত হাফসা (রা)-এর স্বামী খুনাইসের রক্তমাখা দেহ অবলোকন করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি আহত স্বামীর সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু হযরত খুনাইস হযরত হাফসা (রা)-এর কোলে মাতা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ ঘরে হযরত হাফসা (রা)-এর কোন সন্তান-সন্ততি হয় নি।

        রাসূলের সাথে বিয়েঃ    হাফসা (রা) যখন বিধবা হলেন তখন তিনি যুবতী এবং পরমা সুন্দরী। তাই তাঁকে পুনরায় বিয়ে দেয়ার জন্য হযরত ওমর (রা) চেষ্টা শুরু করেন। তিনি তাঁর পছন্দমত কয়েকটি পাত্রের নিকটই প্রস্তাব পাঠালেন। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোন সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। হযরত ওমর (রা)-এর কন্যা হযরত হাফসা (রা)-কে বিয়ে করতে ইচ্ছুক পাত্রের অভাব ছিল না। কিন্তু তাদের একটিও হযরত ওমর (রা)-এর পছন্দমত ছিল না। এদিকে হযরত ওসমান (রাঃ)-এর স্ত্রী রাসূলের কন্যা হযরত রোকেয়া (রা) ইন্তেকাল করেন। তখন হযরত ওমর (রা) হযরত ওসমান (রা)-এ নিকট তাঁর কন্যার বিবাহের পয়গাম পেশ করেন। কিন্তু হযরত ওসমান (রা) এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। অবশেষে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাফসার সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। এ শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয় তৃতীয় হিজরীতে উহুদ যুদ্ধের পরের দিন। রাসূলের ঔরসে তাঁর কোন সন্তান জন্মেনি।

        হযরত হাফসা (রা) ছিলেন তীক্ষ্ণবুদ্ধির অধিকারীনী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ইবাদাত গুজার এবং ধর্মপরায়ণ রমনী। তিনি রাতে নামায আদায় করতেন আর দিনে রোযা রাখতেন। তিনি সাধারণত নির্লিপ্ত জীবনযাপন করতেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যান্য সহধর্মিনীদের ন্যায় খায়বার যুদ্ধের গণীমতের অংশ পেয়েছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইনতিকালের পর কোষাগার হতে প্রায় এক হাজার দিরহাম ভাতা লাভ করেন। কুরআন সংগ্রহে তাঁর ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়।

        হাদীসের খিদমতঃ    হযরত হাফসা (রা) সর্বমোট ৬০টি হাদীস বর্ণনা করেন। তাঁর থেকে অবদুল্লাহ ইবনে ওমর, হামযা ইবনে আবদুল্লাহ, তারেসা ইবনে ওয়াহাব, আবদুর রহমান ইবনে হারেস, সাফীয়্যা বিনতে আবু ওবায়দা, উম্মে মোবাশশার আনসারিয়া প্রমুখ সাহাবী হাদীস বর্ণনা করেন।

        ইন্তেকালঃ    হযরত হাফসা (রা) হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর শাসনামলে ৪৫ হিজরীতে ইনতিকাল করেন। এ সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। মদিনার তৎকালীন শাসনকর্তা মারওয়ান ইবনুল হাকাম তাঁর নামাযে জানাযার ইমামতি করেন। হযরত হামযা ও হযরত আবদুল্লাহ তাঁকে কবরে নামান। জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়।

Post a Comment

0 Comments