উম্মে সালামার (রা) সন্তান সন্ততি ও মর্যাদা

    সন্তান সন্ততিঃ

        উম্মে সালামার সকল ছেলে-মেয়ে প্রথম স্বামীর। রাসূলুল্লাহর (সা) ঘরে তাঁর কোন সন্তান হয়নি।

        ১। সালামাঃ হাবশায় জন্মগ্রহণ করেন। মদীনায় হিজরতের সময় তিনি কোলে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত হামযার (রা) মেয়ে উমামাকে এ সালামার সাথে বিয়ে দেন।

    ২। 'উমর: রাসূলুল্লাহর (সা) ওফাতের সময় তার বয়স ছিল নয় বছর। ডাকনাম ছিল আবু হাম্স। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের খিলাফতের সময় মদীনায় মারা যান। এই 'উমরের তত্ত্বাবধানে রাসুলুল্লাহর (সা) সাথে তাঁর মা উম্মে সালামার বিয়ে সম্পন্ন হয়। হযরত 'আলীর (রা) খিলাফতকালে তিনি ফারেস ও বাহরাইনের শাসক নিযুক্ত হন।

    ৩। দুররা: সহীহ বুখারীতে তার উল্লেখ এসেছে। একদিন হযরত উম্মে হাবীবা (রা) রাসূলুল্লাহকে (সা) বললেন, আমি শুনেছি আপনি নাকি দুররাকে বিয়ে করতে চান? রাসূল (সা) বললেনঃ তা কি করে হয়? আমি তাকে লালন-পালন না করলেও সে আমার জন্য কোনভাবেই হালাল ছিল না, কারণ সে আমার দুধ ভাইয়ের মেয়ে।

    ৪। যয়নাব: তাঁর প্রথম নাম ছিল 'বাররা'। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) রাখেন যয়নাব। তাঁর এই সন্তানগণের সকলেই ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবির মর্যাদা লাভ করেছিলেন।

        চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যঃ

        উম্মে সালামার (রা) গোটা জীবনই ছিল তাকওয়ার এক বাস্তব চিত্রঃ দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও চাকচিক্যের প্রতি খুব কমই দৃষ্টি দিতেন। একবার তিনি একটি হার গলায় পরেন। হারটিতে সামান্য সোনা ছিল। রাসুল (সা) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করায় তা খুলে ফেলেন। উম্মে সালামা (রা) নিজে যেমন দানশীল ছিলেন তেমনি অন্যকেও দানশীলতার প্রতি উৎসাহ দিতেন। একবার কয়েকজন অভাবী মানুষ তাঁর গৃহে এসে সাহায্য প্রার্থনা করে। উম্মুল হুসাইন তাঁর কাছে বসা ছিলেন, তিনি তাদের ধমক দিলেন। কিন্তু উম্মে সালামা তাঁকে থামান এবং বলেন, আমাদের এমন করার আদেশ নেই। তারপর তিনি দাসীকে নির্দেশ দেন, তাদেরকে কিছু দিয়ে বিদেয় করো। যদি কিছু না থাকে তাহলে একটি খোরমা তাদের হাতে দাও।

        অন্যের আরাম-আয়েশের প্রতি তিনি খুবই সতর্ক থাকতেন। যতদূর সম্ভব ভালো কাজে কার্পণ্য করতেন না। রাসূলুল্লাহর (সা) প্রতি ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে তাঁর দেহের একটি পশম তিনি নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন। সহীহ বুখারীতে এসেছে, তার কাছে রূপার একটি পাত্র ছিল, তাতে তিনি পশম মুবারক সংরক্ষণ করেছিলেন। সাহাবীদের কেউ কোন দুঃখবেদনা পেলে একপেয়ালা পানি এনে তাঁর সামনে রাখতেন, তিনি পশম মুবারকটি সেই পানির মধ্যে ডুবিয়ে দিতেন। সেই পানির বরকতে তাঁর সকল দুঃখকষ্ট দূর হয়ে যেত।

        হযরত রাসূলে কারীম (সা) যেদিন উম্মে সালামার (রা) ঘরে রাত কাটাতেন, জায়নামাজের সামনে বিছানা করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা) নামাজ আদায় করতেন, আর তিনি সেই বিছানায় শুয়ে থাকতেন। রাসূলুল্লাহর (সা) আরাম-আয়েশের প্রতি তিনি এতই সতর্ক ছিলেন যে, নিজের দাস সাফীনাকে এই শর্তে মুক্ত করে দেন যে, যতদিন রাসূলুল্লাহ (সা) জীবিত থাকেন তাঁর সেবা করতে হবে।

        একবার উম্মে সালামা (রা) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)। এর কী কারণ যে, কুরআনে আমাদের (মেয়েদের) উল্লেখ নেই? এ প্রশ্নের পর রাসূল (সা) মসজিদের মিম্বারে উঠে দাঁড়ান এবং তিলাওয়াত করেনঃ নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ইমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাজতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হিফজাতকারী নারী আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও জিকিরকারী নারী- তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।' (আহযাবঃ ৩৫)

        উম্মে সালামার (রা) মর্যাদাঃ

        রাসূলুল্লাহর (সা) বিবিগণের মধ্যে মহত্ব ও মর্যাদায় আয়েশার (রা) পরেই উম্মে সালামার স্থান। ইবনে হাজার বলেন: উম্মে সালামা অনুপম সৌন্দর্য পূর্ণ প্রজ্ঞা ও সঠিক সিদ্ধান্তের গুণে গুণান্বিতা ছিলেন। তিনি আবু সালামা, ফাতিমাতুয যাহরা এবং খোদ রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

        উম্মে সালামা (রা) খুব সুন্দর করে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারতেন। একবার কোন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে জানতে চান রাসূল (সা) কিরায়াত পড়তেন কেমন করে? তিনি বললেনঃ এক একটি আয়াত পৃথক পৃথক করে পড়তেন। তারপর তিনি নিজেই কিছু আয়াত পাঠ করে শুনিয়ে দেন।

        হযরত উম্মে সালামা (রা) রাসূলাল্লাহর (সা) দিন-রাতের অনেক দু'আ ও ওজীফা বর্ণনা করেছেন। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা) ফজরের নামাযের পর এই দু'আ পাঠ করতেন। হে আল্লাহ। আমি আপনার কাছে চাই পবিত্র রিযক, কল্যাণকর জ্ঞন কবুলকৃত কর্ম। রাসূল (সা) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন, বিসমিল্লাহ, তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি। হে আল্লাহ: আমরা পদঙ্খলন, পথভ্রষ্ঠতা, অত্যাচার করা, অত্যাচারিত হওয়া করার কারও উপর বাড়াবাড়ি করা অথবা আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

        রাসূল (সা) প্রায়ই বলতেনঃ হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী। আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দিন।

        রাসূল (সা) আরও বলতেন: প্রভু হে। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন আমার প্রতি সদয় হোন এবং আমাকে সোজা পথ দেখান।

        হাদীসের খিদমতঃ

        হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) সর্বমোট ৩৭৮টি হাদীস বর্ণনা করেন। তাঁর থেকে তাঁর সন্তান ওমর, যয়নব এবং আমের, মুস'আব ইবনে আবদুল্লাহ, বানান, আবদুল্লাহ ইবনে রাফে, নাফে, সকীনা ইবনে সকীনা, আবু কাসীর, সুফীয়া বিনতে শায়বা, হিন্দ বিনতে হারেস, কোবায়ছা বিনতে ঘুরাইব, আবদুর রহমান ইবনে হারেস, আবু উসমান আব্দী, আবু ওয়ায়েদ সাহল ইবনুল মুসাইয়্যেব, সুলাইমান ইবনে ইয়াসার প্রমুখ রাবী হাদীস বর্ণনা করেন।

        ইন্তেকালঃ

        তাঁর মৃত্যুসন নিয়ে মতভেদ আছে। আল-ওয়াকিদীর মতে; হিজরী ৫৯ সনের শাওয়াল মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং হযরত আবু হুরায়রা (রা) তাঁর জানাযার নামায পড়ান। ইবনে হিব্বান বলেন, হিজরী-৬১ সনের শেষ দিকে হুসাইন ইবনে আলীর (রা) শাহাদাতের পরে তিনি ইনতিকাল করেন। আবু খায়সামার মতে, ৬০ হিজরীর শেষের দিকে ইয়াযীদ ইবনে মু'য়াবিয়ার খিলাফতকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

        মৃত্যুর সময় উম্মে সালামার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। আবু হুরায়রা (রা) তাঁর জানাযার নামায পড়ান। মদীনার জান্নাতুল বাকী গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

Post a Comment

0 Comments