নামাজের শর্তগুলির বিবরণ
১। শরীর নাজাছাতে হকিকিয়া হইতে ও হাদাছ (নাজাছাতে হুকমি) হইতে পাক থাকা।
২। কাপড়ে বা পরিধেয় বস্তু, যথা-টুপি, মোজা ও জামা পাক হওয়া।
৩। নামাজের স্থান পাক হওয়া।
ওজু ও গোছলের কারণ উপস্থিত হইলে, ওজু ও গোছল করিয়া লওয়া ফরজ। শরীরে বা কাপড়ে নাজাছাতে গলিজা "দেরহামে শরয়ি" অপেক্ষা অধিক লাগিলে, উহা ধৌত করিয়া পাক করিয়া লওয়া ফরজ। নাজাছাতে খফিফা-এক চতুর্থাংশ লাগিয়া গেলে, ধৌত করিয়া পাক করিয়া লওয়া ফরজ।
নামাজীর দুই পায়ের স্থান পাক হওয়া ফরজ। ছেজদার স্থান পাক হওয়া ফরজ। যদি কেহ নাপাক স্থানে ছেজদা করে, তবে নামাজ বাতীল হইবে।
ছেজদা করাকালে দুই হাত ও দুই জানুর স্থান নাপাক থাকিলে, সমধিক ছহিহ মতে নামাজ বাতীল হইবে। যদি নাপাক স্থানে হাত রাখিয়া উহার উপর ছেজদা করে, তবে নামাজ বাতীল হইবে। এইরূপ নাপাক স্থানে আস্তিন রাখিয়া উহার উপর ছেজদা করিলে নামাজ বাতীল হইবে। যদি বিছানার এক পার্শ্বে নাজাছাত থাকে, আর অন্য পাক পার্শ্বে নামাজ পড়ে, তবে নামাজ জায়েজ হইবে। যদি এরূপ পুরু কাপড় নাপাকীর উপর বিছাইয়া দেয় যে, উহা দ্বারা 'ছতর' ঢাকিয়া নামাজ জায়েজ হইতে পারে, আর যদি উহার উপর নামাজ পড়ে, তবে নামাজ জায়েজ হইতে পারে। আর যদি এরূপ পাতলা হয় যে, উহা দ্বারা ছতরে-আওরত (গুপ্তাঙ্গ) ঢাকা যাইতে না পারে, তবে এইরূপ কাপড় নাপাকীর উপর বিছাইয়া নামাজ পড়িলে, নামাজ বাতীল হইবে।
যদি কোন কাঁচের জিনিষ নাপাকীর উপর বিছাইয়া নামাজ পড়ে এবং নাপাকী নজরে পড়ে, তবে নামাজ জায়েজ হইবে।
৪। গুপ্তাঙ্গ ঢাকা ফরজ, ইহা একটি শর্ত। পুরুষ লোকের পক্ষে নাভীর নীচে হইতে দুই জানুর নিম্নদেশ পর্যন্ত ঢাকা ফরজ। আজাদ স্ত্রীলোকের নিম্নলিখিত পাঁচটি স্থান ব্যতীত সমস্ত শরীর নামাজের সময় ঢাকা ফরজ।
(১) তাহার চেহারা নামাজের সময় ঢাকা ফরজ নহে, কিন্তু নামাজের বাহিরে ফাছাদের আশঙ্কায় বেগানা পুরুষদিগের সম্মুখে যুবতী স্ত্রীলোকের চেহারা খুলিয়া রাখা জায়েজ নহে। (২/৩) দুই হাতের তালু ঢাকা ফরজ নহে, কিন্তু দুই কব্জার পৃষ্ঠদেশ ঢাকা ফরজ কিনা, ইহাতে মতভেদ হইয়াছে, জাহেরে রেওয়ায়েতে উহা ঢাকা ফরজ। মোখতালেফাতে কাজিখানে আছে, উহা ঢাকা ফরজ নহে, মনুয়ার টীকা, হুলইয়া, মুহিত, শরহে-জামে' ছগির ও শারাম্বালিয়ার এমদাদে এই মত সমর্থন করা হইয়াছে। কাজেই এস্থলে এহতিয়াতের জন্য ঢাকা উচিত।
(৪/৫) দুই পায়ের পৃষ্ঠদেশ ঢাকা ফরজ নহে, কিন্তু দুই পায়ের তালু ঢাকা ফরজ কিনা, ইহাতে মতভেদ হইয়াছে, সমধিক ছহিহ মতে উহা ঢাকা ফরজ।
পাতলা কাপড় পড়িয়া নামাজ পড়িলে, যদি শরীর দেখা যায়, উহাতে নামাজ জায়েজ হইবে না। পাতলা চাদরে স্ত্রীলোকের চুলের কালো আভা দেখা গেলে, উহাতে নামাজ বাতীল হইবে। স্ত্রীলোকের যে চুল ঝুলিয়া থাকে, উহার এক চতুর্থাংশ তিন তছবিহ, পরিমাণ সময় খোলা থাকিলে, উহাতে নামাজ বাতীল হইবে।
অন্যান্য লোকের দৃষ্টিপাত হইতে নিজের গুপ্তাঙ্গ ঢাকিয়া নামাজ পড়া ফরজ, কিন্তু যদি কাহারও লম্বা পিরহান থাকে ও উহার গলা খোলা থাকে, এজন্য গুপ্তাঙ্গের উপর নিজের দৃষ্টি পড়ে, তবে নামাজ জায়েজ হইবে, কিন্তু উক্ত অবস্থায় স্বেচ্ছায় উহার দিকে নজর করিলে, মকরূহ তাহরিমী হইবে।
উলঙ্গ ব্যক্তির পক্ষে দাঁড়াইয়া ইশারাতে রুকু ও ছেজদা করিয়া নামাজ পড়া জায়েজ হইবে কি না, ইহাতে মতভেদ হইয়াছে।
জাহেদী ও মোলতাকোল বেহারের মতে উহা জায়েজ হইবে, বাহারোর রায়েক ও হুলইয়ার মতে নাজায়েজ।
৫। নিয়ত করা ফরজ, ইহা একটি শর্ত। নিয়তের অর্থ, মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করা। মৌখিক নিয়ত গ্রহণীয় নহে। যদি কেহ মনে মনে জোহরের নিয়ত করে এবং মুখে আছরের কথা বলিয়া ফেলে, তবে জোহরের নামাজ আদায় হইয়া যাইবে। নিয়তের নিম্ন দরজা এই যে, যদি কেহ নিয়ত করার সময় তাহাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তুমি কোন্ নামাজ পড়িতেছ? তবে যেন তৎক্ষণাৎ বিনা চিন্তায় বলিতে পারে যে, এই নামাজ পড়িতেছে, আর যদি একটু চিন্তা করিয়া উত্তর দেয়, তবে তাহার নামাজ হইবে না। মৌখিক নিয়ত করা মোস্তাহাব। আরবীতে নিয়ত করা জরুরি নহে, বাংলা, ফার্সি, বা অন্য ভাষায় নিয়ত করিলেও চলিতে পারে। অমুক নামাজের নিয়ত করিলাম, বলিলেও জায়েজ হইতে পারে। আর অমুক নামাজ পড়িতেছি বলিলেও চলে।
0 Comments