তায়াম্মামের দুইটি রোকন আছে:-
১। দুইবার মৃত্তিকায় দুই হাত মারা।
২। যা মুখ ও দুই হাত সম্পূর্ণরূপে মছহ করা।
কেহ কেহ বলেন, দুই হাত মছহ করা এক রোকন। মুখ মছহ্ করা অন্য রোকন।
তায়াম্মামের নয়টি শর্ত আছে:-
১। পানির অভাব হওয়া কিংবা পানি ব্যবহারে অক্ষম হওয়া।
২। তায়াম্মোমকারীর মুছলমান হওয়া।
৩। নিয়ত করা।
৪। মৃত্তিকাজাত বস্তুর উপর তায়াম্মোম করা।
৫। উক্ত বস্তু পাক হওয়া।
৬। যদি তথায় পানি থাকার ধারণা হয়, তবে পানির চেষ্টা করা।
৭। দুই হাত এবং মুখ সম্পূর্ণরূপে মছহ করা।
৮। হাতের অধিকাংশ, অতি কম তিন অঙ্গুলি দ্বারা মছহ করা।
৯। হায়েজ ইত্যাদির তুল্য ওজর রহিত হওয়া।
তায়াম্মাম ওয়াজেব হওয়ার আটটি শর্ত আছে:-
১। তায়াম্মোমকারীর বুদ্ধিমান হওয়া।
২। তাহার বালেগ হওয়া।
৩। মুছলমান হওয়া।
৪। হাদাছ (ওজু ও গোছলের কারণ) বর্তমান থাকা।
৫। হায়েজ অবস্থায় না থাকা।
৬। নেফাছ অবস্থায় না থাকা।
৭। ওয়াক্ত সঙ্কীর্ণ হওয়া।
৮। যে বস্তু দ্বারা তায়াম্মাম করা জায়েজ হয়, উহা ব্যবহার করিতে সক্ষম হওয়া।
তায়াম্মামের তেরটি ছুন্নত আছে:-
১। মাটিতে দুই হাত মারিবার সময় 'বিছমিল্লাহ' পড়া।
২। দুই হাতের তালুকে মাটির উপর মারা। সমধিক ছহিহ মতে কব্জার পৃষ্ঠদেশকে মারাও ছুন্নত।
৩। তালুদ্বয়কে মাটির উপর রাখিয়া অগ্রের দিকে টানিয়া লওয়া।
৪। তালুদ্বয়কে অগ্রের দিকে টানিয়া লওয়ার পরে পশ্চাতের দিকে টানিয়া লওয়া।
৫। তালুদ্বয়কে মৃত্তিকা হইতে উঠাইয়া লওয়ার পরে ঝাড়িয়া ফেলা। যদি পাথরের উপর হাত মারা হয়, তবে হাত ঝাড়িয়া ফেলা ছুন্নত নহে।
৬। মাটিতে দুই হাত রাখার সময় অঙ্গুলিগুলিকে ফাঁক ফাঁক করিয়া রাখা।
৭। প্রথমে মুখ মছহ করা, তৎপরে দুই হাত মছহ্ করা।
৮। মুখ মছহ করার পরে অবিলম্বে মাটিতে দুই হাত মারিয়া দুই হাত মছহ্ করা।
৯। প্রথমে ডাহিন হাত মছহ করা, তৎপরে বাম হাত মছহ করা।
১০। খাছ করিয়া মাটির উপর হাত মারা।
১১। নিম্নলিখিত খাছ নিয়মে মছহ করা।
১২। দাড়ি খেলাল করা।
১৩। তায়াম্মোমের পূর্বে মেছওয়াক করা।
তায়াম্মাম করার ধারা
তায়াম্মোমে দুইবার দুই হাত মাটিতে মারিবে, মুখ মছহ্ করার জন্য একবার দুই হাত মাটিতে মারিতে হইবে, কনুই অবধি হাত মছহ্ করার জন্য দ্বিতীয়বার মাটিতে দুই হাত মারিতে হইবে। প্রথমে দুই হাত টানিয়া লইবে, তৎপরে উক্ত হস্তদ্বয় ঝাড়িয়া ফেলিবে এবং উক্ত হস্তদ্বয় দ্বারা নিজের চেহারা মছহ্ করিবে তৎপরে নিম্নের তালুদ্বয়কে দ্বিতীয়বার মাটিতে মারিয়া সম্মুখের দিকে টানিয়া পুনরায় পশ্চাতের দিকে টানিবে, তৎপরে তালুদ্বয়কে ঝাড়িয়া কনুই অবধি দুই হাতের পৃষ্ঠ ও পেট মছহ্ করিবে।
বাম হাতের কনিষ্ঠা, অনামিকা, মধ্যমা ও তর্জনী এই চারি অঙ্গুলি দ্বারা ডাহিন হাতের পৃষ্ঠদেশকে অঙ্গুলিগুলির অগ্রভাগ হইতে কনুই অবধি মছহ্ করিবে। তৎপরে বাম হাতের দ্বারা ডাহিন হাতের পেটকে কনুই হইতে কব্জা পর্যন্ত মছহ করিবে। তৎপরে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পেট দ্বারা ডাহিন হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পৃষ্ঠদেশকে মছহ্ করিবে। উক্ত প্রকারে ডাহিন হাতের অঙ্গুলি ও তালু দ্বারা বাম হাত মছহ্ক রিবে। ইহা শামী, বাহরোর-রায়েক, আলমগিরি ইত্যাদিতে আছে।
শারহে বেকায়াতে আছে:-
বাম হাতের কনিষ্ঠা অনামিকা ও মধ্যমা এই তিন অঙ্গুলি ও তালুর কিছু অংশ দ্বারা ডাহিন হাতের পৃষ্ঠদেশকে অঙ্গুলিগুলির অগ্রভাগ হইতে টানিয়া কনুই অবধি মছহ্ করিবে। তৎপরে বাম হাতের তর্জনী (শাহাদত) ও বৃদ্ধা অঙ্গুলি এবং অবশিষ্ট তালু দ্বারা ডাহিন হাতের পেটকে (কনুই হইতে) অঙ্গুলিগুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত মছহ্ করিবে। এইরূপ ডাহিন হাত দ্বারা বাম হাত মছহ করিবে। উভয় মতই গ্রহণীয়। পাকির পবিত্রতার কিংবা নামাজ মোবাহ হওয়ার, অথবা হাদাছ কিংবা নাপাকি দূর করার, অথবা এরূপ আসল এবাদতের নিয়ত করিবে, যাহা পাকি ব্যতীত ছহিহ হইতে পারে না।
জানাজা কিংবা তেলাওয়াতে-ছেজদার নিয়তে তায়াম্মাম করিলে, উহাতে ফরজ নামাজ জায়েজ হইবে।
পানি অভাবে জানাজা নামাজের নিয়তে তায়াম্মাম করিলে, উহাতে ফরজ নামাজ জায়েজ হইবে। আর পানি থাকা সত্বেও জানাজা নামাজ ফওত হওয়ার আশঙ্কার উক্ত নামাজের নিয়তে তায়াম্মাম করিলে, তদ্দ্বারা ফরজ নামাজ পাঠ ও কোরান স্পর্শ করা জায়েজ হইবে না। অবশ্য নাপাক অবস্থায় ওজরে তৎকালে তায়াম্মাম করিলে, কোরান পাঠ জায়েজ হইবে।
মছজেদে দাখিল হওয়ার, মৌখিক বা কোরান শরীফ দেখিয়া পড়ার, উহা স্পর্শ করার, গোর জিয়ারতের, মৃত দাফনের, মছজিদ হইতে বাহির হওয়ার, কোরান লেখার, পীড়িতের সেবা করার, আজান ও একামত দেওয়ার, মুছলমান হওয়ার ও ছালামের জওয়াব দেওয়ার নিয়তে তায়াম্মাম করিলে, তদ্দ্বারা নামাজ পড়া জায়েজ হইবে না।
কোন বে-ওজু ব্যক্তি কোরআন শরীফ পড়ার নিয়তে তায়াম্মাম করিলে, উহাতে নামাজ জায়েজ হইবে না, কিন্তু কোন নাপাক ব্যক্তি ওজরে উহা পড়ার নিয়তে তায়াম্মাম করিলে, উহাতে নামাজ জায়েজ হইবে।
পীড়িত ব্যক্তিকে তায়াম্মোম করাইয়া দিলে, পীড়িত ব্যক্তির নিজের তায়াম্মাম করার নিয়ত করিতে হইবে।
যাহার দুই হাতের কব্জা কাটিয়া গিয়াছে, সেই ব্যক্তি দুই হস্তের অবশিষ্টাংশ মছহ্ করিবে। দুই হাত কাটা গিয়া থাকিলে, কাটা স্থানকে মছহ্ করিবে। কনুই এর উপর পর্যন্ত কাটা গিয়া থাকিলে, হাত মছহ করিতে হইবে না।
দুই হাত অবশ হইয়া থাকিলে, নিজের হাতকে জমির উপর এবং চেহারাকে প্রাচীরের উপর ঘর্ষণ করিবে।
হাতে আংটি বা কোন গহনা থাকিলে, উহা খুলিয়া ফেলিতে হইবে। দুই চক্ষের উপরিভাগ, ভ্রূ-দ্বয়ের নিম্নভাগ ও নাসিকাদ্বয়ের নতি মছহ্ না করিলে, তায়াম্মোম জায়েজ হইবে না। যদি অঙ্গুলিগুলির মধ্যে মাটি পৌঁছিয়া না থাকে, তবে খেলাল করা ওয়াজেব হইবে। চেহারার সীমার মধ্যে যে চামড়া দেখা যায় এবং যে দাড়ি উৎপন্ন হইয়াছে, উহা মছহ্ না করিলে তায়াম্মাম জায়েজ হইবে না। হাতের এক বা দুই অঙ্গুলি দ্বারা মছহ করিলে উহা জায়েজ হইবে না।
প্রথমবারে যে স্থানে হাত মারিয়াছে, দ্বিতীয়বার ঠিক সেই স্থানে হাত মারিলে, তায়াম্মাম জায়েজ হইবে।
মৃত্তিকা, বালু, চুণ, সুরমা, হরিতাল, সূরকি, লবণাক্ত জমি, লালমটি, গন্ধক, ফিরুজা পাথর, কালমাটি, সাদামাটি, সবুজমাটি, এলোমাটি, পাকা ইট, পাহাড়ী লবণ, ভিজামাটি, কর্দম, মেটে খোলা, ধূলি মিশ্রিত পাথর, ধূলিশূন্য পাথর, ধূলি ইত্যাদি জাতীয় বস্তুর উপর তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে।
সোনা, রূপা, তামা, লোহা, শিশা, রাং ইত্যাদি খনিজ পদার্থের উপর, গম ইত্যাদি ফল শস্যের উপর, তৃণ, লতা, কাষ্ঠ ইত্যাদির ভষ্মের উপর, ঘাস ও কাষ্ঠের উপর, পানি হইতে উৎপন্ন লবনের উপর, শিলা ও বরফের উপর তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে না।
0 Comments