জানা উচিত, জুমআর দিন একটি মহান দিন। আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে ইসলামকে মাহাত্ম্য দান করেছেন এবং একে মুসলমানের বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلوةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ .
অর্থাৎ, মুমিনগণ, যখন জুমআর দিন নামাযের জন্যে আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরের দিকে ত্বরা করবে এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রাখবে।
এ আয়াতে দুনিয়ার কাজকর্মে মশগুল হওয়া এবং জুমআয় যাওয়ার পরিপন্থী সকল কাজ-কারবার হারাম করা হয়েছে।
রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
ان الله عز وجل فرض عليكم الجمعة في يومي هذا في مقامي هذا .
অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর জুমআ ফরয করেছেন আমার এদিনে ও এ স্থানে। এক রেওয়ায়েতে এরশাদ হয়েছেঃ
من ترك الجمعة ثلاثا من غير عذر طبع الله على قلبه .
অর্থাৎ, যেব্যক্তি বিনা ওযরে তিন বার জুমআ তরক করে, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন।
এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলল: অমুক ব্যক্তি মারা গেছে। সে জুমআ ও জামাআতে উপস্থিত হত না। এখন তার অবস্থা কি হবে? তিনি বললেন: সে দোযখী। লোকটি একমাস পর্যন্ত তাঁর কাছে এসে এ প্রশ্নই করল এবং তিনি উত্তর দিলেন, সে দোযখী। হাদীসে আছে, ইহুদী ও খ্রীস্টানদেরকে জুমআর দিন দেয়া হলে তারা এতে বিরোধ করল। তাই তাদেরকে এ থেকে বঞ্চিত করে আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। এ উম্মতের জন্যে একে ঈদ করা হয়েছে। হযরত আনাস (রাঃ)-এর রেওয়ায়েতে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আমার কাছে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করলেন। তাঁর হাতে একটি উজ্জ্বল আয়না ছিল। তিনি বললেন: এটা জুমআ। যা আল্লাহ তাআলা আপনাকে দান করেছেন, যাতে আপনার এবং আপনার উম্মতের জন্যে এটা ঈদ হয়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: জুমআ দিয়ে আমাদের কি উপকার হবে? তিনি বললেন: এতে একটি সর্বোৎকৃষ্ট মুহূর্ত আছে। যেব্যক্তি এ মুহূর্তে নিজের কল্যাণের জন্যে দোয়া করবে, যদি সেই কল্যাণ তার নসীবে না থাকে, তবে তার তুলনায় অনেক বেশী তার জন্য সঞ্চিত রাখবেন। অথবা কেউ এ মুহূর্তে কোন বালা মসিবত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলে যদি সেই বালা মসিবত তার নসীবে লেখা থাকে, তবে আল্লাহ তাআলা বালা-মুসিবত অপেক্ষা বড় বালা-মসিবত থেকেও তাকে রক্ষা করবেন। আমাদের কাছে এদিন সকল দিনের সর্দার। আমরা একে আখেরাতে يوم المزيد বৃদ্ধির দিন বলব। আমি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন: আপনার পরওয়ারদেগার জান্নাতে একটি শুভ্র ও মেশকের চেয়ে অধিক সুগন্ধিযুক্ত উপত্যকা নির্দিষ্ট করেছেন। জুমআর দিন হলে তিনি ইল্লিয়্যীন থেকে তথায় তাঁর সিংহাসনে অবতরণ করবেন এবং মানুষের জন্যে দ্যুতি বিকিরণ করবেন, যাতে তারা তাঁকে দেখতে পায়। এক হাদীসে আছে, যে সর্বোত্তম দিনের উপর সূর্য উদিত হয়েছে, তা হচ্ছে জুমআর দিন। এদিনে হযরত আদম (আঃ) সৃজিত হয়েছেন। এদিনেই তাঁকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে। এদিনেই তাঁকে পৃথিবীতে নামানো হয়েছে। এদিনেই তাঁর তওবা কবুল হয়েছে। এদিনেই তাঁর ওফাত হয়েছে। এদিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এদিন আল্লাহর কাছে বৃদ্ধির দিন। আকাশে ফেরেশতারা একে তা-ই বলে। এদিনেই জান্নাতে খোদায়ী দীদার হবে।
হাদীসে আছে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জুমআর দিনে ছয় লক্ষ বান্দাকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। হযরত আনাসের রেওয়ায়েতে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: যখন জুমআর দিন সহি-সালামত থাকে, তখন অন্য দিনও সহি-সালামত থাকে। তিনি আরও বলেছেন: প্রত্যহ সূর্য যখন আকাশের মাঝখানে থাকে, তখন দোযখ উত্তপ্ত করা হয়। তখন নামায পড়ো না; কিন্তু জুমআর দিন সবটুকুই নামাযের সময়। এদিনে দোযখ উত্তপ্ত করা হয় না। হযরত কা'ব বলেন: আল্লাহ তাআলা শহরসমূহের মধ্যে মক্কা মোয়াযযমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, মাসসমূহের মধ্যে রমযানকে, দিনসমূহের মধ্যে জুমআকে এবং রাত্রিসমূহের মধ্যে শবে কদরকে ফযীলত দিয়েছেন। কথিত আছে, পক্ষীসমূহ এবং ইতর কীট-পতঙ্গ জুমআর দিনে পরস্পরে সাক্ষাৎ করে এবং বলে: সালাম, সালাম, এটা ভাল দিন। রসূলে করীম (সাঃ) বলেন: যেব্যক্তি জুমআর দিন মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে শহীদের সওয়াব লেখেন এবং কবরের আযাব থেকে তাকে মুক্তি দেন।
0 Comments