হুযুর আকরাম (স) মোহরে নবুয়ত

        হুযুর আকরাম (স) এর পৃষ্ঠ মোবারকে দুই বাহুমূলের মধ্যস্থলে অর্থাৎ ঘাড়ের নীচে শেষ নবীর চিহ্ন জ্ঞাপক মোহরাঙ্কিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। এর আকার, বং সময় সময় পরিবর্তিত হত। কখনও সবুজ উজ্জ্বল নূরানী, কখনও রক্তিম আভাযুক্ত, কখনও বা শুভ্র উজ্জ্বল নূরানী দৃষ্ট হত। উহাতে "মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" )محمد الرسوالله( অঙ্কিত ছিল। কখনও বা "অগ্রসর হও, তুমি সাহায্য প্রাপ্ত )سرانت منصور( অঙ্কিত দৃষ্ট হত।

         সকলের পক্ষে তা প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হয়নি। তিনি সাধারণতঃ সর্বদা পুত পবিত্র দেহখানি বস্ত্রাবৃত রাখতেন। দর্শন করার জন্য কাউকে অধীর ও বেকারার দেখলে তিনি পৃষ্ঠ মোবারক অনাবৃত করে দর্শনের সুযোগ সৃষ্টি করতেন। কোন কোন সাহাবী একে কবুতরের ডিমের আকৃতি বিশিষ্ট লাল রঙের মাংস পিণ্ড বলে বর্ণনা করেছেন। উক্ত মাংস পিণ্ডের চতুর্দিকে লোমের একটা কুণ্ডলী ছিল।

        মোহরে নবুয়তের আকার ও রং সম্বন্ধে বর্ণনাকারীগণের বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এ সম্বন্ধে মোহাদ্দেস ইমাম করতবী বলেন যে, মোহরে নবুয়তের আকৃতি ও রঙ সর্বদাই পরিবর্তিত হত। কাজেই দর্শনের সময় যিনি যেমন দেখেছেন, সে রকমই বর্ণনা করেছেন। বর্ণনা কালে কেউ অতিরঞ্জিত করেন নি কিংবা কিছু গোপনও করেন নি। মোহরে নবুয়ত এর বাহ্যিক আকৃতি-প্রকৃতি সম্বন্ধেই বিবরণ পাওয়া যায়। এর অন্তরালে রয়েছে আল্লাহ্ তা'আলার মহান কুদরতের এক অব্যক্ত রহস্য যা কেবলমাত্র মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (স)-এর জন্যই সুনির্ধারিত ছিল। অন্য কোন নবী কিংবা রাসূলের মোহরে নবুয়ত লাভ করার সৌভাগ্য হয়নি।

সালমান ফারসীর মোহরে নবুয়ত দর্শন

        বিশিষ্ট সাহাবী হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রায় ৩৫০ বৎসর হায়াত পেয়েছিলেন। তিনি সারা জীবন সত্যের সন্ধানে ইয়াহুদী ও ইসায়ী পাদ্রীগণের সাহচর্যে ছিলেন। আখেরী নবী (স)-এর আলামতসমূহ পাদ্রীগণের মুখে শ্রবণ করেছিলেন। পাদ্রীগণের উপদেশ অনুসারে তিনি আখেরী নবীর আবির্ভাবের অপেক্ষায় আরব ভূমিতে অবস্থান করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (স)-এর আবির্ভাব হলে তিনি মদিনা শরীফে আগমন করেন। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান পাদ্রীগণের নিকট হতে প্রাপ্ত নিশানাসমূহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (স)-এর মধ্যে আছে কিনা তা তিনি খুটিয়ে খুটিয়ে পরখ করতে থাকেন। সমস্ত নিশানা মিলে যায়। বাকী থাকে মোহরে নবুয়ত। হযরত সালমান ফারসী (রা) মোহরে নবুয়ত প্রত্যক্ষ করার মানসে রাসূলুল্লাহ (স) এর পশ্চাৎ দিকে ঘুরতে থাকেন। আল্লাহর হাবিব (স) সালমান ফারসীর মনোবাঞ্ছা বুঝতে পেরে  পবিত্র পৃষ্ঠ মোবারক উন্মুক্ত করে দিলেন। সালমান ফারসী প্রাণভরে দেখতে লাগলেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে মোহরে নবুয়ত চুম্বন করতে লাগলেন এবং অঝোর নয়নে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলেন। প্রায় দুইশত বৎসর অক্লান্ত পরিশ্রম করে অমানুষিক দুঃখ-কষ্ট ও অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে যে রত্নের সন্ধানে দেশ-দেশান্তরে ঘুরেছেন, আজ সেই মহামূল্যবান রত্নের সন্ধান তিনি পেয়েছেন। রাসুলুল্লাহ্ (স) ডাকলেন, "সালমান, সম্মুখে এস," সালমান সম্মুখে আসলেন এবং সতা-সুন্দর ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় লাভ করলেন।

        বর্ণিত আছে যে, ওফাতের সময় মোহরে নবুয়ত অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। হযরত ওমর (রা) ও কতিপয় সাহাবী শোকে মুহ্যমান হয়ে যখন ওফাত সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন তখন হযরত আসমা (রা) মোহরে নবুয়ত অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে দেখিয়ে ওফাত নিশ্চিত করেন।

Post a Comment

0 Comments