ইমামের করণীয়


        প্রকাশ থাকে যে, নামাযের পূর্বে কেরাআত ও আরকানের মধ্যে এবং সালামের পরে ইমামের কিছু কিছু করণীয় রয়েছে। নামাযের পূর্বে ইমামের করণীয় ছয়টি:

        (১) যারা তাঁকে পছন্দ করে না, সে তাদের ইমামতি করবে না। যদি কতক লোক নাপছন্দ করে এবং কতক পছন্দ করে, তবে সংখ্যাধিক্যের অভিমত কার্যকর হবে। কিন্তু সংখ্যালঘু লোক সৎ ও দ্বীনদার হলে তাদের কথাই ধর্তব্য হওয়া উত্তম। হাদীসে আছে, তিন ব্যক্তির নামাষ তাদের মাথার উপরে উঠে না। এক, পলাতক গোলাম; দুই, যে মহিলার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট এবং তিন, এমন লোকদের ইমাম, যারা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট। মুসল্লীদের অসন্তুষ্টির সাথে ইমামতি করা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি তখনও নিষিদ্ধ যখন মুক্তাদীদের মধ্যে কেউ বেশী আলেম ও কারী হয়। হাঁ, যদি সে ইমামতি না করে, তবে অন্য লোক আগে যেতে পারে। এসব ব্যাপার না থাকলে মুসল্লীরা আগে যেতে বললে আগে চলে যাবে। একে অপরকে ইমামতি করতে বলা মাকরূহ। কথিত আছে, তকবীর হয়ে যাওয়ার পর কিছু লোক ইমামতি করার জন্যে একে অপরকে বলার কারণে তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেয়া হয়। সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত আছে, তাঁরা ইমামতি একে অপরের উপর ন্যস্ত করতেন। এর কারণ ছিল এই, তাঁরা ইমামতির জন্যে যোগ্যতম ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতেন অথবা নিজের জন্যে ভুলের আশংকা এবং মানুষের নামাযের ক্ষতিপূরণ দানের ভয় করতেন। কেননা, ইমাম মুক্তাদীদের নামাযের জন্যে দায়ী হয়ে থাকে। আরেক কারণ ছিল, তাঁদের মধ্যে যেব্যক্তি ইমামতিতে অভ্যস্ত ছিলেন না, তাঁর অন্তর মুক্তাদীদের কাছে শরমের কারণে অন্য চিন্তায় ব্যাপৃত হয়ে যেত; বিশেষতঃ সরবে কেরাআত পড়ার অবস্থায়। ফলে নামাযে এখলাস থাকত না।

        (২) কাউকে আযান ও ইমামতির মধ্যে কোন একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হলে তার উচিত ইমামতি গ্রহণ করা। কেননা, উভয়টি ফযীলতের কাজ হলেও একই ব্যক্তির জন্য উভয় কাজ করা মাকরূহ। ইমাম ও মুয়াযযিন ভিন্ন ভিন্ন লোক হওয়া উচত। উভয়টি যখন একত্রিত করা যায় না, তখন ইমামতিই উত্তম। কেউ কেউ আযান উত্তম বলেছেন। আমরা এর ফযীলত ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। আযান উত্তম হওয়ার আরেক কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন-

الامام ضامن والمؤذن مؤتمن

    অর্থাৎ, ইমাম জামানতদার এবং মুয়াযযিন আমানতদার।

        এতে জানা গেল, ইমামতির মধ্যে জামানতের আশংকা আছে। আরও এরশাদ হয়েছে-

الامام امير فاذا ركع فاركعوا واذا سجد فاسجدوا 

    অর্থাৎ, ইমাম শাসক, যখন সে রুকু করে তোমরা রুকু কর এবং যখন সে সেজদা করে তখন তোমরা সেজদা কর।

        হাদীসে আরও আছে- যদি ইমাম নামায পূর্ণ করে, তবে সওয়াব সে এবং মুক্তাদী সকলেই পাবে। আর যদি অপূর্ণ নামায পড়ে, তবে শাস্তি তারই হবে- মুক্তাদীদের নয়। এজন্যই রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

اللهم ارشد الائمة واغفر للمؤذنين

        অর্থাৎ, হে আল্লাহ! ইমামদেরকে সৎপথ দেখান এবং মুয়াযিনদেরকে ক্ষমা করুন।

        অতএব মাগফেরাত তলব কারা উচিত। কেননা, সৎপথ প্রার্থনাও মাগফেরাতের জন্যেই হয়।

        এক হাদীসে আছে, যেব্যক্তি এক মসজিদে সাত বছর ইমামতি করে তাঁর জন্যে জান্নাত ওয়াজিব। আর যে চল্লিশ বছর আযান দেয়, সে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণিত আছে, এতদসত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম ইমামতি একে অপরের উপর ন্যস্ত করতেন। বিশুদ্ধ উক্তি হচ্ছে, ইমামতি উত্তম। কেননা, রসূলে করীম (সাঃ), হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (রাঃ) স্থায়ীভাবে ইমামতি করেছেন। এটা ঠিক, এতে জামানতের আশংকা আছে; কিন্তু ফযীলতও আশংকার সাথেই হয়ে থাকে। যেমন শাসক ও খলীফা হওয়া উত্তম। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: ন্যায়পরায়ণ শাসকের একদিন সত্তর বছরের এবাদত থেকে উত্তম। বলাবাহুল্য, এটাও আশংকামুক্ত নয়। ইমামতি উত্তম বিধায় ইমামের অধিক আলেম হওয়া ওয়াজিব। রসূলে করীম (সাঃ) বলেন: ইমাম তোমাদের শাফায়াতকারী হবে। সুতরাং তোমরা নামায সাফ করতে চাইলে তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিকে ইমাম বানাও।

        জনৈক মনীষী বলেন: পয়গম্বরগণের পর আলেমদের চেয়ে উত্তম কেউ নেই। আলেমগণের পর ইমামগণের চেয়ে উত্তম কেউ নেই। কেননা, এ তিনটি পক্ষই আল্লাহ তাআলা ও তাঁর মখলুকের মধ্যে মাধ্যম। পয়গম্বরগণ নবুওয়তের কারণে; আলেমগণ এলেমের কারণে এবং ইমামগণ দ্বীনের প্রধান স্তম্ভ নামাযের কারণে এবং সাহাবায়ে কেরাম হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর খেলাফতকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্যে একেই প্রমাণস্বরূপ উত্থাপন করেন। তাঁরা বলেছিলেন: নামায ধর্মের স্তম্ভ। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যাঁকে আমাদের দ্বীনের জন্যে পছন্দ করেছিলেন, তাঁকেই আমরা আমাদের দুনিয়ার জন্যে পছন্দ করলাম। সাহাবায়ে কেরাম হযরত বেলালকে খেলাফতের জন্যে পছন্দ করেননি এবং এই যুক্তি দেননি যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে আযানের জন্যে পছন্দ করেছিলেন। আযান উত্তম। তাই তাঁকেই খেলাফতের জন্যে পছন্দ করে নেই।

        বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে আরজ করলঃ আমাকে এমন আমল বলে দিন, যদ্দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বললেন: তুমি মুয়াযযিন হয়ে যাও। সে বলল: এটা আমা দ্বারা হবে না। তিনি বললেন: তবে ইমাম হয়ে যাও। সে বলল: এটাও সম্ভব নয়। তিনি বললেন: তবে ইমামের পেছনে নামায পড়। এ হাদীসে অগ্রে আযানের কথা বলার কারণে আযানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্ভবতঃ মনে করেছিলেন, লোকটি ইমামতি করতে রাজি হবে না। কেননা, আযান তার ইচ্ছাধীন কাজ। ইমামতি অন্যরা নিযুক্ত করলে এবং আগে বাড়িয়ে দিলে হয়। তাই প্রথমে মুয়াযযিন হতে বলেছেন।

        (৩) ইমাম নামাযের সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখবে এবং আউয়াল ওয়াক্তে নামায পড়বে। কেননা, আউয়াল ওয়াক্তের ফযীলত শেষ ওয়াক্তের উপর এমন, যেমন পরকালের ফযীলত ইহকালের উপর। হাদীসে আছে, বান্দা শেষ ওয়াক্তে নামায পড়ে, এতে তার নামায ফউত হয় না; কিন্তু আউয়াল ওয়াক্ত তার জন্যে পৃথিবী ও পৃথিবীস্থ সবকিছু থেকে উত্তম ছিল। জামাআত বড় হবে- এই আশায় নামায দেরীতে আদায় করা উচিত নয়; বরং আউয়াল ওয়াক্তের ফযীলত হাসিলে তৎপর হওয়া উচিত। নামাযে লম্বা সূরা পাঠ করবে। এটা জামাআত বড় হওয়ার তুলনায় উত্তম। মনীষীগণ দুব্যক্তি এসে গেলে জামাআতের জন্যে তৃতীয় জনের অপেক্ষা করতেন না এবং জানাযায় চার জন এসে গেলে পঞ্চম জনের অপেক্ষা করতেন না। একবার সফরে ফজরের নামাযে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওযুর *. কারণে বিলম্ব হয়ে গেলে তাঁর জন্যে অপেক্ষা করা হয়নি। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ)-কে ইমাম করে দেয়া হলে তিনি নামায পড়লেন। রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জামাআতের সাথে এক রাকআত ফউত হয়ে যায়। তিনি তা পড়ার জন্যে দন্ডায়মান হলেন। বর্ণনাকারী বলেন: এ ঘটনার জন্যে আমরা মনে মনে ভীত ছিলাম। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তোমরা ঠিকই করেছ এবং ভবিষ্যতেও তাই করবে। একবার যোহরের নামাযে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দেরী হয়ে গেলে মুসল্লীরা হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে সামনে বাড়িয়ে দিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন আগমন করলেন, তখন সকলেই নামাযে ছিল, তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুয়াযযিন ইমামের জন্যে অপেক্ষা করবে- ইমাম মুয়াযযিনের জন্যে নয়। ইমাম এসে গেলে অন্য কারও জন্যে অপেক্ষা করা যাবে না।

        (৪) ইমাম এখলাসের সাথে ইমামতি করবে এবং নামাযের সকল শর্তে আল্লাহ তাআলার আমানত আদায় করবে। এখলাস এই, ইমামতির জন্যে কোন পারিশ্রমিক নেবে না। রসূলুল্লাহ (সাঃ) ওসমান ইবনে আবুল আছ সকফীকে আমীর নিযুক্ত করে বললেন: এমন ব্যক্তিকে মুয়াযযিন করবে, যে আযানের জন্যে পারিশ্রমিক না নেয়। আযান নামাযের সহায়ক উপায়। এর জন্য যখন পারিশ্রমিক না নিতে বলেছেন, তখন নামাযের জন্যে আরও উত্তমরূপে না নেয়া উচিত। ইমাম যদি মসজিদের জন্যে ওয়াকফকৃত আমদানী থেকে নিজের ভরণ-পোষণ নিয়ে নেয় অথবা বাদশাহের কাছ থেকে অথবা জনগণের কাছ থেকে কিছু পায়, তবে এটা নেয়া হারাম নয়, কিন্তু মাকরূহ। তারাবীহর ইমামতির জন্যে পারিশ্রমিক নেয়া ফরয নামাযের ইমামতির জন্যে নেয়া অপেক্ষা অধিক মাকরূহ। এ পারিশ্রমিক ইমাম নিজের নিয়মিত উপস্থিতি এবং মসজিদের সাজসরঞ্জাম দেখাশোনা করার বিনিময়ে মনে করে নেবে- নামাযের বিনিময় নয়। আমানত হল, অন্তরে পাপাচার, কবীরা গোনাহ ও সগীরা গোনাহ থেকে পবিত্র থাকা। ইমামতির দায়িত্ব পালনকারীকে এসব বিষয় থেকে যথাসাধ্য বেঁচে থাকা উচিত। কেননা, সে মানুষের শাফায়াতকারী ও তাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য পেশকারী হয়ে থাকে। কাজেই তাদের মধ্যে তাঁর উত্তম ব্যক্তি হওয়া উচিত। এমনিভাবে বেওযু হওয়া থেকে এবং নাপাকী থেকে পাক হতে হবে। কেননা, এসব বিষয় সম্পর্কে অন্য কেউ অবগত হয় না। সুতরাং নামাযের মধ্যে বেওযু হওয়ার কথা স্মরণ হলে অথবা ওযু নষ্ট হয়ে গেলে লজ্জা করবে না; বরং নিকটে দন্ডায়মান ব্যক্তির হাত ধরে তাকে খলীফা করে দেবে। নামায চলাকালে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নাপাকীর কথা স্মরণ হলে তিনি খলীফা নিযুক্ত করে দেন এবং গোসল করে পুনরায় নামাযে শরীক হন। সুফিয়ান সওরী বলেন: প্রত্যেক সৎ অসৎ ব্যক্তির পেছনে নামায পড়ে নাও; কিন্তু পাঁচ ব্যক্তির পেছনে নামায পড়ো না-

        (১) যে সর্বদা মদ্যপান করে, (২) প্রকাশ্য পাপাচারী, (৩) পিতামাতার নাফরমান, (৪) বেদআতী এবং (৫) পলাতক গোলাম। (৫) কাতার সোজা না হওয়া পর্যন্ত এবং ডানে-বামে না দেখা পর্যন্ত ইমাম নিয়ত বাঁধবে না। কাতারসমুহে কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে ইমাম তা ঠিক করে নিতে বলবে। আগেকার মনীষীগণ কাঁধে কাঁধ মিলাতেন এবং পরস্পরের হাঁটু মিলিয়ে নিতেন। মুয়াযযিন একামতের জন্যে এতটুকু অপেক্ষা করবে, যেন আহারকারী আহার শেষ করে নেয় এবং কেউ প্রস্রাব-পায়খানায় থেকে থাকলে তা থেকে ফারেগ হয়ে যায়। কারণ, রসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রস্রাব-পায়খানার চাপের মুখে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।

        (৬) ইমাম তকবীরে তাহরীমা ও সকল তকবীর সজোরে বলবে এবং মুক্তাদী এমনভাবে বলবে যেন নিজে শুনে। ইমাম তকবীর বলার পরে মুক্তাদী তকবীর বলবে; অর্থাৎ, ইমামের তকবীর শেষ হলে মুক্তাদী তকবীর শুরু করবে। একাকী নামায পড়ার সময় ইমামতির নিয়ত করে দাঁড়াবে, যাতে সওয়াব পাওয়া যায়। যদি ইমামতির নিয়ত না করে এবং লোকেরা এসে তাঁর এক্তেদার নিয়ত করে, তবে সকলের নামায হয়ে যাবে এবং মুক্তাদীরা জামাআতের সওয়াবও পাবে; কিন্তু ইমাম ইমামতির সওয়াব পাবে না।

        কেরাআতের মধ্যে ইমামকে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন- (১) শুরুর দোয়া, আউযু বিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ আস্তে পড়তে হবে। আলহামদু ও অন্য সূরা ফজরের উভয় রাকআতে এবং মাগরিব ও এশার প্রথম দু'রাকআতে সজোরে পড়বে। একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তিও এমনিভাবে পড়বে।

(২) সূরা পাঠ করার পর রুকুর পূর্বে ইমাম সামান্য বিরতি দেবে, যাতে কেরাআত রুকুর তকবীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। কেরাআত তকবীরের সাথে মিলিয়ে দিতে হাদীসে নিষেধ আছে।

ফজরের নামাযে মাসানী থেকে দুটি সূরা পড়বে- যাতে একশ' আয়াতের কম থাকে। ফজরের নামাযে দীর্ঘ কেরাআত পড়া সুন্নত। কোন কোন আলেম সূরার অংশবিশেষ পাঠ করা মাকরূহ লেখেছেন। এটা তখন যখন কোন সূরার প্রথমাংশ পড়ে ছেড়ে দেয়। অথচ হাদীসে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সূরা ইউনুসের কিছু অংশ পাঠ করেছেন। যখন মূসা (আঃ) ও ফেরআউনের আলোচনা এসেছে, তখন রুকুতে চলে গেছেন। বেলাল বিভিন্ন সূরা থেকে পাঠ করেন। তাঁকে এর কারণে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন: আমি উৎকৃষ্টকে উৎকৃষ্টের সাথে মিলিয়ে পড়ি। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, বেশ তাই কর। যোহরের নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল ত্রিশ আয়াত পর্যন্ত, আছরে এর অর্ধেক এবং মাগরিবে মুফাসসালের শেষ আয়াতসমূহ অথবা শেষ সূরাসমূহ পাঠ করবে। রসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বশেষ যে মাগরিবের নামায পড়েছিলেন, তাতে সূরা মুরসালাত পাঠ করেন। এর পর ওফাত পর্যন্ত তিনি নামায পড়েননি। সারকথা, সংক্ষিপ্ত কেরাআত পাঠ করা উত্তম; বিশেষতঃ যখন জামাআত খুব বড় হয়। এ সম্পর্কে রসূলে করীম (সাঃ) বলেন: যখন তোমাদের কেউ লোকজনকে নামায পড়ায়, তখন সংক্ষিপ্ত কেরাআত পড়বে। কেননা, তাদের মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও কাজের লোক থাকে। একাকী পড়লে যত ইচ্ছা লম্বা কেরাআত পড়বে। হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) এক জনগোষ্ঠীকে এশার নামায পড়াতেন। একদিন তিনি তাতে সূরা বাকারা পাঠ করলেন। এক ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিয়ে আলাদা পড়ে নিল। লোকেরা বলাবলি করল, লোকটি মোনাফেক হয়ে গেছে। লোকটি রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে অভিযোগ পেশ করলে তিনি মুয়ায ইবনে জাবালকে শাসিয়ে বললেন: তুমি কি মানুষকে বিপদে ফেলতে এবং ধর্মচ্যুত করতে চাও? তুমি সূরা আ'লা, সূরা তারেক ও সূরা যুহা পাঠ কর।

        নামাযের রোকনসমূহের মধ্যে ইমাম রুকু ও সেজদা হালকা করবে এবং তিন বারের বেশী তসবীহ পড়বে না। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন: আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামাযের চেয়ে পূর্ণাঙ্গ নামায আর কারও দেখিনি। এ নামায হালকাও হত এবং পূর্ণরূপে আদায় হত। বর্ণিত আছে, হযরত আনাস (রাঃ) হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজের পেছনে নামায পড়লেন যখন তিনি মদীনার গভর্নর ছিলেন। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন: আমি এই যুবকের নামাযকে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামাযের সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ পেয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন: আমরা ওমর ইবনে আবদুল আজীজের পেছনে দশ দশ বার তসবীহ বলতাম। এটা ভাল; কিন্তু জামাআত বড় হলে তিন বার বলা উত্তম। জামাআতে কেবল দ্বীনদার সাধক শ্রেণীর লোক থাকলে দশ বার বলায় ক্ষতি নেই। মুক্তাদীরা ইমামের আগে কোন কিছু করবে না; বরং রুকু ও সেজদায় তাঁর পশ্চাতে যাবে। ইমামের মাথা মাটিতে না পৌঁছা পর্যন্ত মুক্তাদী সেজদার জন্যে নত হবে না। সাহাবায়ে কেরাম রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এক্তেদা এভাবেই করতেন। ইমাম রুকুতে ভালরূপে না যাওয়া পর্যন্ত মুক্তাদী রুকুর জন্যে নত হবে না। সালাম ফেরানোর সময় ইমাম উভয় সালামে মুসল্লী ও ফেরেশতাদের নিয়ত করবে। ফরয নামায পড়ার স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র নফল নামায পড়বে। রসূলুল্লাহ (সাঃ), হযরত আবু বকর ও ওমর (রাঃ) এরূপই করেছেন। হাদীসে আছে- রসূলুল্লাহ (সাঃ) সালামের পর নিম্নোক্ত দোয়া বলা পর্যন্ত বসে থাকতেন-

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَ الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ .

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইমামতির এসব নিয়ম-নীতি পালন করার তওফীক দিন।

Post a Comment

0 Comments