নামাযের ফযীলত


        যত এবাদত আছে তন্মধ্যে নামায যেহেতু শ্রেষ্ঠ এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবাদত, তাই পবিত্র কোরআনের রীতি অনুসারে পুনরায় নামাযের আলোচনা করা হচ্ছে।

        নবী করীম (ছঃ) বলেছেন-

ما أعطى عَبْدٌ عَطَاء خَيْرًا مِنْ أَنْ يُؤْذَنَ لَهُ فِي ركَعَتَيْنِ يُصَلِّيْهِمَا .

        -'দু'রাকাত নামায পড়ার তওফীক হওয়া বান্দার উপর (আল্লাহ্ তা'আলার) সবচেয়ে বড় এহসান।'

         মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রঃ) বলেন, 'আমাকে যদি জান্নাত ও দু'রাকাত নামায এ দু'য়ের যে কোন একটি গ্রহণ করার এখতিয়ার প্রদান করা হয়; তবে আমি দু'রাকাত নামাযই গ্রহণ করব। কেননা, এতে রয়েছে আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টি, আর জান্নাতপ্রাপ্তিতে রয়েছে আমার সন্তুষ্টি।' 

        বর্ণিত আছে, যখন আল্লাহ্ তা'আলা সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেন, তখন ফেরেশতা দ্বারা তা পূর্ণ করে দিয়েছেন। তারা সকলেই আল্লাহ্ তা'আলার এবাদতে মগ্ন। কেউ এক মুহূর্তের জন্যও এবাদত থেকে আনমনা হয় না।

        আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেক আসমানের ফেরেশতাদের জন্য পৃথক পৃথক এবাদত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং এক আকাশের ফেরেশতাগণ দণ্ডায়মান অবস্থায় এবাদতরত রয়েছেন; এভাবে তাঁরা কেয়ামতের শিঙ্গা ফুঁক দেয়া পর্যন্ত থাকবেন। অপর আকাশের ফেরেশতাগণ। রুকু অবস্থায় রয়েছেন, অপর এক আকাশের ফেরেশতাগণ সেজদায় পড়ে রয়েছেন। অনুরূপ আরেক আকাশের ফেরেশতাগণ স্ব স্ব ডানা বিছিয়ে আল্লাহর মহত্ত্ব ও অসীম গুণাবলী প্রকাশে রত রয়েছেন। ইল্লিয়‍্যীন ও আরশের ফেরেশতাগণ আরশে মো'আল্লার চারপাশে তওয়াফরত রয়েছেন। এমতাবস্থায় তারা আল্লাহর গুণ-কীর্তন, তসবীহ-তাহলীল ও দুনিয়াবাসীর জন্য। মাগফেরাতের দোআয় নিমগ্ন রয়েছেন। আল্লাহ্ তা'আলাই মুসলমানদের ইয্যত সম্মানের জন্য উপরোক্ত সর্ববিধ এবাদত এক নামাযে একত্র করে দিয়েছেন। অধিকন্তু মুসলমানদের নামাযে কোরআন মজীদ তেলাওয়াতের বিধান বর্ধিত করেছেন। এর কৃতজ্ঞতা ও হক আদায়ের জন্য যাবতীয় শর্ত, নিয়ম-নীতি অনুযায়ী পবিত্র কোরআনের বিধানাবলী বাস্তবায়নের হুকুম করেছেন। যেমন পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে-

الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلوةَ وَمِمَّا رزَقْنَهُمْ يُنْفِقُونَ .

         -'ওই মোনেনরা এমন যে, তারা ঈমান আনে অদৃশ্য বস্তুসমূহের প্রতি এবং নামায কায়েম করে, আর আমি তাদের যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।' -সূরা বাকারা: ৩

        আরও এরশাদ হয়েছে- وَأَقِيمُوا الصلوة .

        'এবং তোমরা নামায কায়েম কর।' -সূরা মুযযাম্মিল: ২০ 

        অন্যত্র এরশাদ হয়েছে-- وَأَقِمِ الصَّلوة

        'এবং আপনি নামায কায়েম করুন।' -সূরা হুদ: ১১৪ 

      পবিত্র কোরআনে যেখানেই নামাযের উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানেই নামায কায়েমের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু মোনাফেকদের প্রসঙ্গে নামাযের বিষয় এভাবে উল্লিখিত হয়েছে-

فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ * الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ -

         'অতএব, বড় সর্বনাশ সেসব নামাযীর জন্য, যারা নিজেদের নামায ভুলে তাকে।' -সূরা মাউন। ৪-৫

        যারা মোনাফেক তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে, তারা নামায ভুলে থাকে। পক্ষান্তরে যারা প্রকৃত মোমেন তাদের নামায কায়েমকারী বলা হয়েছে। এর তাৎপর্য হল, নামায অনেকেই পড়ে, কিন্তু নামায কায়েমকারীর সংখ্যা খুবই কম। উদাসীনতা অবহেলাভরে নামায আদায়কারী কেবল প্রথানুরূপ আমল করে যায়, তারা আদৌ চিন্তা করে না, আমার নামায আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে কি-না।

        নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে অনেক নামাযী এমন রয়েছে, যাদের নামাযের মাত্র এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ বা এক পঞ্চমাংশ বা এক ষষ্ঠাংশ, এভাবে এক দশমাংশ পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন-আমলনামায় লেখা হয়।' অর্থাৎ নামাযের মধ্যে যে ক্ষুদ্রাংশটুকুতে আল্লাহ্ তা'আলার দিকে মনোযোগ থাকে, কেবল সেটুকুই কবুল হওয়ার যোগ্য।

        রাসূলুল্লাহ (ছঃ) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি গভীর মনোযোগের সাথে দু'রাকাত নামায আদায় করে সে সদ্যপ্রসূত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়।

        প্রকৃতপক্ষে যখন একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার ধ্যানে নিজেকে নিমজ্জিত করে নামায পড়া হয়, তখনই সে নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হতে পারে। যদি এরূপ না হয় তবে তার দৃষ্টান্ত হবে এরূপ-বাদশাহর দরবারে কেউ অপরাধের ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে সে যদি বাদশাহর সামনে এদিকে সেদিক তাকায় অথবা অন্যমনস্ক হয়ে থাকে, তবে বাদশাহ তার প্রার্থনা কতটুকু কবুল করবেন? বাদশাহর প্রতি তার ধ্যান ও মনোযোগ যতটুকু, তার আবেদন এবং প্রার্থনাও ঠিক ততটুকু কবুল করা হবে। নামাযের ব্যাপারও ঠিক তদ্রূপ। অন্যমনস্ক হয়ে অবহেলাভরে নামায পড়লে তা আল্লাহর দরবারে কখনও গৃহীত হবে না।

         মনে রেখো, নামাযের দৃষ্টান্ত হল ওলিমার মত; বাদশাহ লোকদের ওলিমার দাওয়াত দিচ্ছেন। রাজকীয় দাওয়াত, আয়োজনও তদ্রূপ, নানা প্রকার সুস্বাদু খাদ্য পানীয় দ্রবোর সমাহার। অনুরূপ আল্লাহ্ তা'আলা লোকদের নামাযের দিকে ডাকছেন এবং এতে রয়েছে সব ধরনের আমল ও যিকির। কাজেই নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত করা মূলতঃ সর্ববির এবাদতের আস্বাদ গ্রহণ করা। মনে কর, নামাযর আমলসমূহ সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্যাদি আর বিকির বা তসবীহসমূহ সুমিষ্ট পানীয় বস্তু।

        বর্ণিত আছে, নামাযর মধ্যে বার হাজার গুণ-বিশেষণ রয়েছে এবং তৎসমুদয় ম্যার বারটি। গুণ বিশেষণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাজেই যার নামাযের প্রতি আসক্তি আছে এবং বার হাজার গুণাবলী সম্বলিত নামায পড়তে চায়, সে যেন এ বারটি গুণ বিশেষণের প্রতি খেয়াল রাখে। এভাবে নামায পড়লে সে নামাযই হবে কামেল মোকাম্মাল নামায। তন্মধ্যে ছয়টি নামায শুরুর পূর্বের সাথে আর ছয়টি নামাযর অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। প্রথমোক্ত ছয়টি বৈশিষ্ট্য হল-

        ১. এলেম: নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, এলেমসহ স্বল্প আমলও মূর্খতাসহ অনেক আমলের চেয়ে উত্তম।

        ২. ওযুঃ নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, ওযু ছাড়া নামায হয় না। ৩. পোশাক: আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন-

       ৩ পোশাক ঃ আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন

خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ .

        -'প্রত্যেকবার মসজিদে উপস্থিত হওয়াকালে নিজেদের পোশাক পরিধান করে নাও।'  -সূরা আরাফ: ৩১

        - ৪. সময়: আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন

إن الصَّلوةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا

        - 'নিশ্চয়ই নামায মোমেনদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরয।' -সূরা নেসাঃ ১০৩

        ৫. কেবলা: আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন-

 قَوْلِ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُم قولوا وجوهكم شطره .

        -'আপনার চেহারা মসজিদে হারাম (কাবা)-এর দিকে ফিরিয়ে নিন। আর তোমরা যেখানেই থাক স্বীয় চেহারা ওইদিকেই ফিরাও।' -সূরা বাকারা: ১৪৪

        ৬. নিয়ত: রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, 'প্রত্যেক আমলই নিয়তের উপর নির্ভর করে। কাজেই যার নিয়ত যেমন হবে, তার আমলও তদ্রূপ হবে।

        অপর ছয়টি বৈশিষ্ট্য নামাযের আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত।

        ১. তাকবীর : হাদীস শরীফে আছে, 'তাকবীর হচ্ছে নামাযর তাহরীমা।' অর্থাৎ 'আল্লাহু আকবার' দ্বারা নামায শুরু হয় এবং নামায ছাড়া অন্যান্য কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আর সালাম দ্বারা নামাযের সমাপ্তি হয়ে অন্যান্য কাজের জন্য অনুমতিপ্রাপ্তি হয়।

        ২. কেয়াম বা দাঁড়ানোঃ

         আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন-

        وقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ -

         -'আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও অত্যন্ত বিনয়ীভাবে।' -সূরা বাকারা: ২৩৮

        ৩. সূরা ফাতেহাঃ আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন-

فاقره را ما تيسر من القرآن  -

সুতরাং তোমরা কোরআনের যতটুকু পড়তে পার পড়।' -সূরা মুযযাম্মিল: ২০

        ৪. রুকু: আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন-

واركَعُوا مَعَ الرَّكِمِينَ .

        -আর তোমরা রুকু কর রুকুকারীদের সাথে।' -সূরা বাকারা: ৪৩

        ৫. সেজদা: আল্লাহ্। তা'আলা এরশ এরশাদ করেন-

واسجدوا -

            'তোমরা সেজদা কর।' -সূরা ফুচ্ছিলাতঃ ৩৭

       ৬. নামাজের  বৈঠক:

         রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, নামাযরত ব্যক্তি শেষ সেজদার পর তাশাহহুদ পারিমার সময় বসলেই তার নামায পূর্ণ হয়ে গেল।

        উল্লিখিত বারটি বৈশিষ্ট্য তখনই পূর্ণতা লাভ করে যখন সেগুলো এখলাস নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন হয়। । নামাযের প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্য আদায়ের সময় এখলাস নিষ্ঠার প্রতি পরিপূর্ণ গুরুত্ব দেয়া হলে তা মোহরযুক্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন-

فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ -

        -'আপনি নিষ্ঠা আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর এবাদত করতে থাকুন।' -সূরা যুমার : ২ একই সাথে নামাযের পরিপূর্ণতার জন্য তিন প্রকার এলেম অর্জন করাও অপরিহার্য। ১. নামাযের ফরয ও সুন্নতসমূহ জানা। ২. ওযুর ফরয ও সুন্নতসমূহ জানা। ৩. শয়তানের ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে জানা এবং হিম্মতের সাথে তা প্রতিহত করা।

        তিনটি বিষয় দ্বারা ওযুর পূর্ণতা অর্জিত হয়। ১. হিংসা বিদ্বেষ ও ধোকা-প্রতারণা থেকে স্বীয় মনকে পবিত্র করা। ২. দেহকে পাপচার থেকে পবিত্র করা। ৩. পানি অপচয় না করে উত্তমরূপে ওযু করা।

        পোশাক: তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখলে নামাযে ব্যবহৃত পোশাকের পবিত্রতা অর্জিত হয়।

        ১. হালাল উপার্জন দ্বারা পোশাক তৈরি করা, ২. নাপাকী থেকে পবিত্র হওয়া, ৩. পোশাক সুন্নত মোতাবেক হওয়া, ৪. অহংকার ও লোক-দেখানোর জন্য না হওয়া। 

        নামাযের সময়ের হেফাযতও তিন প্রকারে হয়। যথা : ১. দৃষ্টি সর্বদা চাঁদ, সূর্য ও তারকার প্রতি রাখা (বর্তমানে ঘড়ির প্রতি লক্ষ্য রাখলেই নামাযের নির্দিষ্ট সময় জানা যায়)। ২. কান সর্বদা আযানের অপেক্ষায় রাখা। ৩. নামাযর ওয়াক্তের দিকে মনোযোগ রাখা। 

        কেবলারোখ হওয়ার শর্তও তিনটি। যথাঃ ১. চেহারা কেবলার দিকে রাখা। ২. মন আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন রাখা। ৩. আল্লাহর সামনে খুশু-খুযুসহ বিনয়াবনত থাকা।

        নিয়তের পূর্ণতার জন্য তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। ১. যে নামায পড়বে শুরুতেই তার খেয়াল করতে হবে। ২. অন্তরে এ খেয়াল রাখতে হবে, আমি আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান এবং তিনি আমাকে দেখছেন। ৩. নামাযরত অবস্থায় মনে রাখতে হবে, আল্লাহ্আমার মনের খবর জানেন। শয়তান যেন পার্থিব চিন্তা-কলহের কুমন্ত্রণায় ফেলে ওয়াসওয়াসাগ্রস্ত না করতে পারে। 

        তাকবীর বা 'আল্লাহু আকবার' বলা পূর্ণ হওয়ার শর্তও তিনটি। যথা : ১. বিশুদ্ধ উচ্চারণে তাকবীর বলা, ২. উভয় হাত কান বরাবর উঠানো, ৩. তাকবীরের সময় অন্তত যেন নামাযে উপস্থিত থাকে, এ সময় আল্লাহর বড়ত্ব মহত্ত্বের ধ্যান করা।

        নামাযে কেয়াম বা দাঁড়ানো অবস্থায় তিনটি বিষয়ের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ৯. চোখের দৃষ্টি সেজদার স্থানে নিবদ্ধ থাকা। ২. মন আল্লাহ্ তা'আলার ধ্যানে মগ্ন রাখা। ৩. ডানে-বামে না তাকানো।

        কেরাআতের পরিপূর্ণতার জন্য তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। ধীরস্থিরতা ও শান্তি স্বস্তি সহকারে সহীহ শুদ্ধভাবে সূরা ফাতেহা পড়বে। ২. তেলাওয়াতের সময় অর্থের প্রতি মনোযোগ সহকারে ধ্যান করবে। ৩. নামাযে যা পড়বে বাস্তব জীবনে সে অনুযায়ী আমল করবে।

        রুকূর পরিপূর্ণতার জন্য তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য। ১. পৃষ্ঠদেশ বরাবর সোজা রাখবে, একদিক উঁচু অপরদিক নীচু যেন না হয়। ২. উভয় হাত হাঁটুর উপর এমনভাবে রাখবে যেন হাতের অঙ্গুলিসমূহ ফাঁক ফাঁক থাকে। ৩. শান্তভাবে রুকু করবে এবং তসবীহ পড়ার সময় আল্লাহর মহত্ত্বের ধ্যান করবে।

         সেজদার শর্তও তিনটি। ১. সেজদার সময় দু'হাত দু'কান বরাবর থাকবে। ২, উভয় হাত ভূমি থেকে আলাদা থাকবে। ৩. প্রশস্ত মনে সেজদা করবে এবং আল্লাহর মহত্ত্ব মর্যাদা প্রকাশার্থ সেজদার তসবীহ পাঠ করবে।

        নামাযের বৈঠক পরিপূর্ণতার বৈশিষ্ট্য তিনটি। যথাঃ ১. বাম পায়ের পাতার উপর বসবে এবং ডান পা সোজা খাড়া করে রাখবে। ২. তাশাহহুদ পড়বে এবং তাতে আল্লাহর মহত্ত্বের। ধ্যান করবে। নিজের জন্য এবং সব মোমেনের জন্য দোয়া করবে। ৩. নামায পূর্ণ হওয়ার পর সালাম ফেরাবে।

         সালামের পূর্ণতা লাভের উপায় হচ্ছে, গভীর আন্তরিকতা ও উপলব্ধি নিয়ে সালাম ফেরাবে। ডান দিকের ফেরেশতা এবং উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ করে সালাম ফেরাবে। বাম দিকে সালাম ফেরাতেও উক্তরূপ নিয়ত করবে। সালাম ফেরানোর সময় দৃষ্টি দু'কাঁধ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখবে।

        এখলাসের পরিপূর্ণতার জন্য তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য। যথা: ১. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামায পড়বে, ২. একথা বিশ্বাস করবে, নামায এবং সব নেক কাজের তওফীক একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলারই প্রদত্ত; এতে কারো নিজের কৃতিত্ব বলতে কিছুই নেই। ৩. পঠিত নামায সংরক্ষণে সর্বদা সচেষ্ট সতর্ক থাকবে যেন নিজের কোন ত্রুটির কারণে নামায নষ্ট না হয়ে যায়; বরং পরকালে যেন এ নামায উপকারে আসে। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেছেন-

مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ .

        -'যে ব্যক্তি নেক আমল নিয়ে এসেছে।' -সূরা কাসাস : ৮৪

        উক্ত আয়াতে : مَنْ عَمِلَ بِالْحَسَنَةِ )যে ব্যক্তি নেক আমল করেছে) বলা হয়নি। কাজেই আল্লাহ্র সমীপে নামায নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য এর হেফযত অত্যন্ত জরুরী।

Post a Comment

0 Comments