তায়াম্মাম করা কখন জায়েজ হইবে

         নিম্নোক্ত ওজরগুলির জন্য তায়াম্মাম করা জায়েজ হইবে

    (১) যে ব্যক্তি পানি হইতে ৪৮০০ হাত দূরে থাকে, শহরের মধ্যে থাকুক, আর উহার বাহিরে থাকুক, মোছাফের হউক, আর মোকিম হউক, তাহার পক্ষে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে। আর উহা অপেক্ষা কম দূরে পানি থাকিলে, উহা জায়েজ হইবে না।

        যদি তথায় পৌঁছিতে পৌঁছিতে নামাজের ওয়াক্ত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা হয়, তবে তায়াম্মাম করিয়া নামাজ পড়িয়া লইবে এবং পানির নিকট উপস্থিত হইয়া ওজু করিয়া, নামাজ দোহ্রাইয়া লইবে।

        (২) যদি লক্ষণ কিংবা পরীক্ষা দ্বারা অথবা কোন পরহেজগার মুসলমান চিকিৎসকের কথায় দৃঢ় ধারণা হয় যে, পানি ব্যবহার করিলে, অথবা ওজুর জন্য নড়িলে চড়িলে, পীড়া বৃদ্ধি হইবে, কিংবা পীড়া উপশমে দেরী হইবে, তবে তায়াম্মাম করা জায়েজ হইবে। যদি এইরূপ আশঙ্কা না থাকে, কিন্তু সে ওজু করিতে অক্ষম হয়, এবং তথায় তাহাকে ওজু করাইয়া দিবার কোন লোক না থাকে, তবে তায়াম্মোম জায়েজ হইবে। যদি কোন নাপাক ব্যক্তির অধিকাংশ শরীরে কিংবা বে- ওজু ব্যক্তির ওজুর অধিকাংশ অঙ্গে জখম কিংবা বসন্ত (চিচাক) যাকে, তবে তায়াম্মাম করিবে। আর যদি অধিকাংশ শরীর বা অঙ্গ সুস্থ থাকে, আর অল্লাংশে জখম ও বসন্ত থাকে, তবে সুস্থ শরীর ও অঙ্গটি ধৌত করিবে, জখমি অংশে মছহ করিবে, যদি ক্ষতিকর না হয়। আর যদি মছহ্ করিলে ক্ষতি হয়, তবে উহার উপর পটি বাঁধিয়া উক্ত পটিতেই মছহ করিবে।

        যদি শেষোক্ত ক্ষেত্রে সুস্থ শরীর বা অঙ্গ ধৌত করিলে, জখমি অংশে পানি গড়াইয়া পড়ে, তবে এক্ষেত্রে তায়াম্মোম করিবে।

        অর্দ্ধেকাংশ শরীরে বা অঙ্গে জখম বা বসন্ত হইলে, কেহ কেহ বলেন, সুস্থ অংশ ধৌত করিবে এবং জখমি অংশ মছহ্ করিবে, আর কেহ কেহ বলেন, তায়াম্মোম করিবে। ওজুর চারটি অঙ্গের মধ্যে তিনটি অঙ্গে জখম হইলে, তায়াম্মোম করিবে। মস্তক, চেহারা ও দুই হাতে জখম থাকিলে, যদিও পরিমাণে জখমের মাত্রা অধিকতর না হয়, তবুও তায়াম্মাম করা জায়েজ হইবে।

        যদি দুই হাতে জখম থাকে, এক্ষেত্রে, যদি চেহারা ও দুই পা পানিতে দাখিল করা সম্ভব হয়, তবে তাহাই করিবে, নচেৎ তায়াম্মোম করিবে।

        (৩) যদি নাপাক ব্যক্তি শহরে বা শহরের বাহিরে গোছল করিলে, অতিরিক্ত শীতের জন্য তাহার মৃত্যু কিংবা পীড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা হয়, আর সে ব্যক্তি পানি গরম করিতে কিংবা হাম্মামের বেতন দিতে অক্ষম হয়, তবে তাহার পক্ষে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে।

        (৪) যদি পানির নিকট কোন হিংস্র জন্তু বা শত্রু থাকে, যাহাতে প্রাণ বিনাশ হইতে বা অর্থ লুণ্ঠন হইতে পারে, কিংবা সর্প দংশনের বা অগ্নিতে দগ্ধ হওয়ার আশংকা থাকে, তবে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে। এইরূপ যদি পানির নিকট কোন ডাকাত কিংবা অত্যাচারী লোক থাকে এবং তথায় গেলে, অত্যাচার গ্রস্ত হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা হয় কিংবা পানির নিকট কোন ফাছেক (অসৎ) লোক থাকে এবং তথায় কোন স্ত্রীলোক বা দাড়িহীন বালক গেলে, সম্ভ্রম নষ্ট বা অসৎ ক্রীড়ার আশঙ্কা হয় অথবা ওজু করিলে, তাহার নিজের অর্থ, আসবাব- পত্র কিংবা অন্যের গচ্ছিত অর্থ চুরি হওয়ার আশঙ্কা হয়, তবে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে।

        যদি কেহ কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় পানি না পায়, তবে তায়াম্মোম করতঃ নামাজ পড়িবে এবং সুযোগ মত ওজু করিয়া নামাজ দোহরাইয়া লইবে।

    (৫) কাহারও নিকট পানি আছে, কিন্তু উহা দ্বারা ওজু করিলে, নজে বা তাহার পালিত পশু অথবা দলভূক্ত কোন সঙ্গী পিপাসাযুক্ত হইতে পারে, তবে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে।

    যদি কাহারও নিকট পানি থাকে, কিন্তু সে ব্যক্তির রুটি (বা ভাত) প্রস্তুত করার আবশ্যক হয়, তবে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে, কিন্তু সালুন তরকারী প্রস্তুত করার জন্য হইলে, উহা জায়েজ হইবে না, কিন্তু নাপাক কাপড় ধৌত করিয়া ওজুর জন্য তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে।

    (৬) যদি কোন মোছাফের কুঁঙার নিকট উপস্থিত হইয়া পানি উঠাইবার ডোল (বালতি) না পায়, তবে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে। এইরূপ যদি ডোল থাকে, কিন্তু রশি, রুমাল, চাদর ইত্যাদি না থাকে, যাহা দ্বারা পানি উঠান যায়, তবে তায়াম্মোম জায়েজ হইবে। যদি ডোল, রশি বা কাপড় নাপাক হয়, তবে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে।

    (৭) যদি ওজু করিতে গেলে, জানাজা নামাজের এক তকবীর না পাওয়ার ধারণা হয়, তবে তায়াম্মোম জায়েজ হইবে। এক তকবীর পাওয়ার সম্ভাবনা হইলে, উহা জায়েজ হইবে না। এইরূপ ওলির পক্ষে উহা জায়েজ হইবে না। সুলতান কিংবা কাজী উপস্থিত থাকিলে, তাঁহাদের তায়াম্মাম করা জায়েজ হইবে না।

        এইরূপ বাদশাহ্ ও কাজী উপস্থিত থাকিলে, বাদশাহর পক্ষে উহা জায়েজ হইবে না, কিন্তু কাজীর উক্ত নামাজ ফওত হওয়ার আশঙ্কা  হইলে, উহা জায়েজ হইবে। এইরূপ বাদশাহ্ কাজীর উপস্থিতিতে, ওলির নামাজ ফওত হওয়ার ফওত হওয়ার আশঙ্কা হইলে, তাহার পক্ষে উহা জায়েজ হইবে।

    (৮) যদি কোন মোক্তাদী ওজু করিতে গেলে, ঈদের নামাজের কিছুই পাইবে না, এইরূপ ধারণা করে, তবে তায়াম্মোম জায়েজ হইবে। যদি কোন এমাম কিংবা মোক্তাদী এইরূপ ধারণা করেন যে, যদি তিনি ওজু করিতে যায়, তবে ঈদের নামাজের ওয়াক্ত ফওত হইয়া যাইবে, তবে তায়াম্মোম জায়েজ হইবে।

        যদি এমাম কিংবা মোক্তাদীর নামাজ আরম্ভ করার পরে ওজু নষ্ট হইয়া যায়, ওজু করিতে গেলে, সূর্য্য গড়িয়া যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তবে তায়াম্মোম করা জায়েজ হইবে।

        (৯) যদি ওজু করিতে গেলে, চন্দ্রগ্রহণ কিংবা সূর্য্যগ্রহণের নামাজ ফওত হওয়ার আশঙ্কা হয়, তবে উহা জায়েজ হইবে।

        (১০) পানি থাকা সত্বেও নিদ্রা যাইবার, ছালাম করার ও ছালামের জওয়াব দেওয়ার জন্য উহা জায়েজ হইবে।

        (১১) পানি অভাবে কোরআন শরীফ পড়িবার, উহা স্পর্শ করিবার, মছজিদে দাখিল হইবার, কোরআন শরীফ লিখিবার, কোরআন শরীফ শিক্ষা দেওয়ার, গোর জিয়ারত করার ইত্যাদি বিষয়ের জন্য উহা জায়েজ হইবে।

তায়াম্মাম বাতিলকারী বিষয়গুলি

        (১) যদি ওজুর পরিবর্তে তায়াম্মাম করিয়া থাকে, তবে যে যে বিষয়ে ওজু নষ্ট হইয়া যায়, সেই সেই বিষয়ে উক্ত তায়াম্মাম নষ্ট হইয়া যাইবে। আর যদি গোছলের জন্য তায়াম্মোম করিয়া থাকে, তবে যে যে বিষয়ে গোছল নষ্ট হইয়া যায়, সেই সেই বিষয়ে উক্ত তায়াম্মাম নষ্ট হইয়া যাইবে। আর যদি ওজু ও গোছল এই উভয়ের জন্য তায়াম্মোম করিয়া থাকে, তৎপরে ওজু নষ্টকারী কোন বিষয় পাওয়া যায়, তবে ওজুর তায়াম্মোম নষ্ট হইবে, কিন্তু গোছলের তায়াম্মোম নষ্ট হইবে না, উক্ত ক্ষেত্রে ওজুর পরিমাণ পানি পাইলে, ওজু করিয়া লইবে।

        (২) ওজু ও গোছলের পরিমাণ পানি পাইলে, ওজু ও গোছলের তায়াম্মাম নষ্ট হইয়া যাইবে।

        (৩) যে ওজরে তায়াম্মাম মোবাহ হইয়াছিল, সেই ওজর দূর হইয়া গেলে, তায়াম্মাম বাতিল হইয়া যাইবে।

Post a Comment

0 Comments