বিশ্বনবী (সঃ) মহান আল্লাহ পাকের কুদরতে অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর (সঃ) সর্বোচ্চ পদমর্যাদা লাভের বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন-
(১) তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে সর্ব প্রথম সৃষ্ট। আর পার্থিব জগতে আগমণ কারী হিসেবে সর্বশেষ নবী। যেমন-স্বয়ং তিনি (সঃ) ঘোষণা করেছেন- كنت أول الشاعر في الطلب وَأَجْرُهُمْ فِي البعث )অর্থাৎ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমি সর্ব প্রথম মানব, আর পার্থিব জগতে নবী রূপে আগমণের দিক থেকে সর্ব শেষ নবী)
লাওহ ও কলমের অদৃশ্য জ্ঞান তাঁকে (সঃ) প্রদান করা হয়েছে। আর কাউকেই নয়। যেমন-
وَمِنْ عُلُومِكَ عِلْمُ اللهَوْمِ وَالْقَلَمِ
তাঁর (সঃ) এলেম সমূহের মধ্যে রয়েছে লাওহ ও কুলমের অদৃশ্য ইলেম।
রাসূল (স) বলেন- اوثبت علم الاولين والآخرين আমাকে আগে পরের সব এলেম দান করা হয়েছে ।
(২) বিশেষতঃ "লাওহে মাহফুজে" তাঁর (সঃ) নাম মুবারক লেখা রয়েছে। محمد رسول الله "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" (সঃ) হিসেবে।
(৩) মহান আল্লাহ পাক স্বীয় হাবীব (সঃ)-কে উর্দ্ধজগতে অরোহণ করে বেহেশত ও দোযখ প্রদশর্ন করায়েছেন। যেমন পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
"হে নবী। নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রত্যক্ষ দর্শী হিসেবে প্রেরণ করেছি যাতে আপনি আপনার উম্মতদেরকে সুভসংবাদ প্রদান করবেন এবং ভীতি প্রদর্শন করবেন। অর্থাৎ যারা ভাল কাজ করবে তাদেরকে বেহেশতের শুভসংবাদ দিবেন। আর যারা অন্যায় ও গর্হিত কাজ করবে তাদেরকে দোযখের ভয় দেখাবেন।
(৪) আকাশ জগতে সমগ্র পার্থিব জগত প্রদর্শন করানো। যেমন- "তিবরাণী" শরীফে হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
রাসূলে খোদা (সঃ) বলেন-মহান আল্লাহ পাক আমাকে দেখাবার জন্য সমগ্র পার্থিব জগতকে উম্মোচণ করে এমন ভাবে আমার সম্মুখে তুলে ধরলেন, কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুই যেন আমি দেখতে পাই। আমার মনে হয়- আমি যেন আমার হাতের তালুতে তা দেখতে পাচ্ছি।
উপরের আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হচ্ছে যে মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব মুহাম্মদ (সঃ)-কে অসামান্য ক্ষমতা ও মর্যাদার অধিকারী করেছেন। যা অপরের পক্ষে সম্ভব হয় নাই।
সৃষ্টির সেরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির সেরা হলেন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তিনি হলেন সর্ব প্রথম সৃষ্টি। যেমন হুজুরে পাক (সঃ) বলেন-"আল্লাহ পাক পরওয়ারদেগার সর্ব প্রথম আমি মুহাম্মদ এর "নূর"কে সৃষ্ট করেছেন। এ-তে বুঝা যায় যে আল্লাহ পাকের সকল সৃষ্টির মূলে হলেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর নূর। আল্লাহ পাক তাঁর জাত ও স্বত্তার সাথে সম্পর্কিত করে আমাদের প্রিয় নবী (সঃ)-এর নূরকে "নূরে মোহাম্মদী" আখ্যায়িত করেছেন। যেমন- হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে-
كنتُ كَيْرًا مُخْفِيًا فَأَحْبَبْتُ أَنْ أَعْرَفَ فَخَلَّتْ خَلْقًا فَسُيِّبَتَهُ محمداً - (الحديث)
উপরোল্লিখিত হাদীসে মহান আল্লাহ পাক বলেন- "আমি একটি গোপন ভাণ্ডার ছিলাম। আমি পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা করলাম। তাই সর্ব প্রথম আমি এমন এক মাখলুক সৃষ্টি করলাম। যার নাম আমি "মুহাম্মদ" রাখলাম।" এ বিস্তারিত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে মহান আল্লাহ পাক তাঁর সকল সৃষ্টির প্রথম সেরা সৃষ্টি হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর নূরকে সৃষ্টি করার পর সে নূর থেকে যাবতীয় মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেন। তাই মহানবী (সঃ) হলেন সকল সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি।
كُنتُ أَوَّلُ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرُهُمْ فِي الْبَعْثِ .
অর্থাৎ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমিই সর্ব প্রথম মানব আর পার্থিব জগতে নবী রূপে প্রেরিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমিই সর্ব শেষ নবী। অর্থাৎ আমার পরে আর কোন নবী রাসূলের আগমণ ঘটবেনা।
ঈমান ও ইসলামের ক্ষেত্রেও তিনি (সঃ)-ই হলেন সর্বপ্রথম। যেমন-হুজুরে পাক (সঃ)-এরশাদ করেন-
أَنَا أَوَّلُ مَنْ أَمَنَ بِاللَّهِ وَبِذَا لِلَّهِ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
অর্থাৎ আমি হলাম আল্লাহ পাকের সত্তার উপর সর্ব প্রথম ঈমান আনয়নকারী। এ জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। এবং আমি-ই হলাম সর্ব প্রথম মুসলমান।
তদ্রূপ অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। হুজুরে পাক (সঃ) বলেন- যখন কাল কিয়ামতে সকল মানুষ স্ব-স্ব কবর থেকে হাসরের ময়দানের দিকে যাওয়ার জন্য উঠবে, তখন সকলের পূর্বে আমি কবর থেকে উঠব। কাল ক্বিয়ামতে সর্বপ্রথম আমি মহান আল্লাহ পাকের সিজদায় মাথা অবনত করব। শাফায়াতের দ্বার সর্ব প্রথম আমার জন্য খোলা হবে। এবং সর্ব প্রথম আমি-ই বেহেশতে প্রবেশ কারী হব। এ ধরনের আরো অনেক হাদীস রয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সৃষ্টি কুলের সেরা সৃষ্টি হলেন-আমাদের প্রিয় নবী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর "নূর" সকল সৃষ্টির মূল বা আসল। তাঁর নূর সমগ্র জগতকে আলোকিত করে রেখেছে। তাঁর আবির্ভাবের মত কারো আবির্ভাব নেই। দূর ও নিকট সকল বস্তু সম্পর্কে তাঁর খবর রয়েছে। তিনি (সঃ) লাওহে মাহফুজের ইলম সম্পর্কে পরিজ্ঞাত,, মহান আল্লাহ পাকের সকল "আসমায়ে হুসনা" সকল সেফাত ও গুনাবলী, সকল ক্রিয়া কলাপ, যাহেরী ও বাতেনী সকল প্রকার ইলম সম্পর্কে আল্লাহ পাকের ইচ্ছানুসারে পরিজ্ঞাত। যেমন- হুজুরে পাক (সঃ) বলেন আমাকে পূর্বাপর সব ইলম প্রদান করা হয়েছে। তাই তিনি আল্লাহ পাক কর্তৃক প্রদত্ত সকল ইলমের ভাণ্ডার।
0 Comments