ওজু নষ্টকারী বিষয়গুলি কি কি

 ওজু নষ্টকারী বিষয়গুলি

    ১। মলমূত্র নির্গত হইলে, ওজু নষ্ট হয়।

    ২। মজি ও ওদী বাহির হইলে, ওজু নষ্ট হয়। স্ত্রীলোকের সহিত কামভাবে ক্রীড়া কৌতুক করাকালে লিঙ্গ হইতে যে তরল পানি বাহির হয়, উহাকে 'মজি' বলা হয়। প্রস্রাবের পরে যে গাঢ় পানি বাহির হয়, উহাকে 'ওদী' বলা হয়।

    ৩। মলদ্বার হইতে যে বায়ু নির্গত হয়, উহাতে ওজু নষ্ট হয়।

    ৪। মলদ্বার কিংবা স্ত্রীলোকের যোনি অথবা পুরুষলোকের লিঙ্গ হইতে পাথর কিংবা ক্রিমি বাহির হইলে, উহাতে ওজু নষ্ট হয়।

    ৫। ওজু ও গোছলে যে স্থান ধৌত করা ওয়াজেব কিংবা মোস্তাহাব, এইরূপ স্থান হইতে রক্ত বা পুঁজ বহির্গত হইয়া পড়িলে, ওজু নষ্ট হইবে।

    ৬। মস্তক হইতে রক্ত নির্গত হইয়া কর্ণের ছিদ্র পর্যন্ত গড়াইয়া আসিলে, ওজু নষ্ট হইবে।

    ৭। নাসিকার যে নিম্ন অংশ কোমল (নরম) সেই অংশে রক্ত পৌঁছিলে, সকলের মতে ওজু নষ্ট হইবে। নাসিকার যে উপরি অংশ কঠিন, সেই অংশে রক্ত পৌঁছিলে, 'গাওয়াতোল বায়ান' ও 'এনায়া' কেতাবের মতে, ওজু নষ্ট হইবে, ইহা 'শামী' ও বাহারোর রায়েকের' সমর্থিত মত।

    ৮। থুথু মিশ্রিত রক্ত, মুখের রক্ত হইলে, যদি রক্ত থুথু অপেক্ষা অধিক হয় কিংবা থুথুর সমান হয়, তবে সকলের মতে ওজু নষ্ট হইবে। আর উক্ত রক্ত থুথু অপেক্ষা কম হইলে, সকলের মতে ওজু নষ্ট হইবে না। এইরূপ থুথু মিশ্রিত রক্ত উদরের রক্ত হইলে, যদি উহা থুথু অপেক্ষা অধিক কিংবা থুথুর সমান হয়, তবে সকলের মতে ওজু নষ্ট হইবে। আর থুথু অপেক্ষা কম হইলে, কতকের মতে ওজু নষ্ট হইবে না। আর কতকের মতে ওজু নষ্ট হইবে। এস্থলে এহতিয়াতের জন্য ওজু নষ্ট হওয়ার মত গ্রহণ করা উচিত।

    ৯। মুখপূর্ণ পিত্ত, খাদ্য বস্তু কিংবা পানি বমন করিলে, ওজু নষ্ট হইয়া যায়। যদি খাদ্য বস্তু বা পানি, পাকস্থলীতে পৌঁছিবার পরে বমন হইয়া যায়, তবে ঐ ব্যবস্থা হইবে। আর যদি খাদ্য বস্তু, পানি কিংবা দুগ্ধ কণ্ঠনালীতে থাকে, তখনও পাকস্থলীতে পৌঁছে নাই, তবে উহা বমন হইয়া গেলে, সকলের মতে ওজু নষ্ট হইবে না।

    ১০। যে জমাট রক্ত মস্তক হইতে নির্গত হইয়া মুখ দিয়া বাহির হয়, উহাতে সকলের মতে ওজু নষ্ট হয় না। যদি উহা তরল হয়, তবে সকলের মতে ওজু নষ্ট হইবে। যদি মুখপূর্ণ জমাট রক্ত, উদর হইতে উঠিয়া বমন হইয়া যায়, তবে ওজু নষ্ট হইবে। আর যদি মূখপূর্ণ না হয়, তবে উহাতে ওজু নষ্ট হইবে না। আর যদি প্রবাহিত রক্ত, উদর হইতে উঠিয়া বমন হইয়া যায়, তবে এমাম আজমের মতে উহা মুখপূর্ণ হউক, আর নাই হউক, ইহাতে ওজু নষ্ট হইবে। ইহাই ছহিহ্ মত। যদি মুখপূর্ণ শ্লেষ্মা বমন করে, তবে উহা মস্তক হইতে নামিয়া আসুক, আর উদর হইতে উঠুক, উহাতে ওজু নষ্ট হইবে না।

        আর যদি খাদ্য মিশ্রিত কফ বমন করে, তবে অধিকাংশের হিসাব অনুযায়ী ব্যবস্থা করিতে হইবে। এক্ষেত্রে খাদ্য সামগ্রী অধিকাংশ হইলে, যদি উহা মুখপূর্ণ হয়, তবে ওজু নষ্ট হইবে। আর কফ অধিকাংশ হইলে, এমাম আজম ও এমাম মোহাম্মদের মতে ওজু নষ্ট হইবে না। আর যদি উভয়টি সমান হয়, তবে প্রত্যেকটিকে পৃথক ধরিয়া লইতে হইবে। এক্ষেত্রে খাদ্য সামগ্রী মুখপূর্ণ হইলে, ওজু নষ্ট হইবে নচেৎ না।

        যদি খাদ্য বস্তু, পিত্ত বা পানি অল্প অল্প বারংবার বমন হয়, এক্ষেত্রে একই কারণে বা বেগ-ধারণে কয়েকবার বমন হইলে, দেখিতে হইবে যে, তৎসমস্তগুলি একত্রিত করিলে' মুখপূর্ণ বলিয়া অনুমিত হয় কিনা, প্রথম ক্ষেত্রে অর্থাৎ মুখপূর্ণ বলিয়া অনুমিত হইলে, অজু নষ্ট হইবে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ওজু নষ্ট হইবে না। এইরূপ ভিন্ন ভিন্ন কারণে বা বেগ-ধারণে কয়েকবার অল্প অল্প বমন হইলে, উহাতে ওজু নষ্ট হইবে না। ইহাই ছহিহ মত।

    ১১। কাৎ হইয়া, চিৎ হইয়া, উপুড় হইয়া, এক নিতম্বের উপর ঠেশ দিয়া, এক কনুই-এর উপর ভর দিয়া নিদ্রা গেলে, ওজু নষ্ট হইবে। এইরূপ পীড়িত ব্যক্তি কাৎ হইয়া শুইয়া নামাজ পড়িতে পড়িতে নিদ্রা গেলে, ওজু নষ্ট হইবে। বসিয়া, দাঁড়াইয়া নিদ্রা গেলে ওজু নষ্ট হইবে না। কোন বস্তু হেলান দিয়া নিদ্রা গেলে, যদি উহা টানিয়া লইলে, সে জমিতে পড়িয়া যায়, এক্ষেত্রে যদি তাহার মলদ্বার স্থানচুাত হইয়া থাকে, তবে সকলের মতে ওজু নষ্ট হইবে। আর উহা স্থানচ্যুত না হইলে; ওজু নষ্ট না হওয়া সমধিক ছহিহ্ মত। নামাজে দাঁড়াইয়া কিংবা রুকু অবস্থায় নিদ্রা গেলে, ওজু নষ্ট হইবে না।

    নামাজে ছুন্নতের নিয়মানুসারে সেজদায় গিয়া নিদ্রা গেলে, ওজু নষ্ট হইবে না। ছুন্নতের নিয়মের বিপরীত ছেজদা করিলে, ছহিহ্ মতে ওজু নষ্ট হইবে। পেটকে উভয় উরু হইতে এবং বাহু-দ্বয়কে উভয় পার্শ্বদেশ হইতে পৃথক রাখিয়া ছেজদা করাই ছুন্নত নিয়ম। যদি পেটকে উভয় উরুর সহিত মিলাইয়া এবং উভয় হাতকে বিছানায় বিছাইয়া ছেজদা করে, তবে ইহা ছুন্নতের বিপরীত বুঝিতে হইবে।

    ১২। কোন পীড়া বা যাতনায় পড়িয়া অচৈতন্য হইয়া গেলে, ওজু নষ্ট হইয়া যায়।

    ১৩। উন্মাদ হইলে, ওজু নষ্ট হইয়া যায়।

    ১৪। নেশাতে মাতাল হইলে, ওজু নষ্ট হইয়া যায়। যখন সে সোজাভাবে চলিতে না পারে এবং এদিক ওদিক ঢলিয়া পড়ে এবং অধিকাংশ কথা প্রলাপ বলিতে থাকে, তখন উহাকে মাতাল ধরিতে হইবে।

    ১৫। যে নামাজে রুকু, ছেজদা আছে, এইরূপ নামাজে উচ্চ হাসি (কাহ্ক্বাহ) করিলে, নামাজ ও ওজু বাতিল হয়। নামাজের বাহিরে উচ্চ হাসি করিলে, ওজু নষ্ট হয় না। নামাজের মধ্যে মৃদু হাসি (জেহক) করিলে, নামাজ বাতীল হয়, কিন্তু ওজু বাতীল হয় না। যে হাসি নিজে শুনিতে পায়, কিন্তু সভাস্থ লোকেরা শুনিতে পায় না, ইহাকে মৃদু হাসি বলা হইবে। মুচকিয়া হাস্য করিলে, নিজেও শুনিতে পায় না এবং অন্যেরাও শুনিতে পায় না, নামাজের মধ্যে উহা করিলে, নামাজ ও ওজু কিছুই বাতীল হইবে না।

        তেলাওয়াতের ছেজদা ও জানাজার নামাজে উচ্চ হাস্য করিলে, উক্ত ছেজদা ও জানাজার নামাজ বাতীল হইবে, কিন্তু ওজু নষ্ট হইবে না। নাবালেগ ব্যক্তি নামাজে উচ্চ হাস্য করিলে, নামাজ বাতীল হইবে, কিন্তু ওজু নষ্ট হইবে না।

    ১৬। স্ত্রী-পুরুষের অথবা দুই পুরুষের কিংবা দুইটি স্ত্রীলোকের লিঙ্গে লিঙ্গে কামভাবে স্পর্শ করিলে, উভয়েরই ওজু নষ্ট হইবে।

Post a Comment

0 Comments