কী কী কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়


নামাজ নষ্টকারী বিষয়গুলি

        ১। স্বেচ্ছায় কিংবা ভ্রমবশতঃ কথা বলিলে, নামাজ বাতীল হয়। এইরূপ সে নামাজে ছিল, ইহা ভুলিয়া গিয়া কথা বলিয়া ফেলিল কিংবা নিদ্রাবস্থায় কথা বলিয়া ফেলিলে অথবা সে জানিত না যে, কথা বলিলে, নামাজ ফাছেদ হয়, এইহেতু সে কথা বলিয়া ফেলিল কিংবা কোরআন পড়ার বা জেকের করার ইচ্ছা করিয়াছিল কিংবা কেহ তাহাকে কথা বলিতে বল প্রয়োগ করিল, এজন্য কথা বলিয়া ফেলিল, এই সমস্ত অবস্থাতে নামাজ বাতীল হইবে। দুই অক্ষরের কথা হইলে, যেরূপ নামাজ নষ্ট হইয়া যায়, সেইরূপ যদি এক অক্ষরের অর্থ বুঝা যায়, তাহাতেও নামাজ নষ্ট হইবে, 

    ২। কোন মানুষকে ছালাম করিলে, নামাজ ফছেদ হইবে।

    ৩। ভ্রমবশতঃ কাহারও ছালামের মৌখিক জওয়াব দিলে, নামাজ বাতীল হইবে। যদি ছালামের নিয়তে মোছাফাহা করে, তাহাতেও নামাজ ফাছেদ হইবে।

    ৪। বিনা ওজর ও বিনা সঙ্গত কারণে গলা খাঁক্রাইলে, যদি দুইটি অক্ষর সৃষ্টি হইয়া যায়, তবে উহাতে নামাজ ফাছেদ হইবে।

        আর কাশির জন্য বাধ্য হইয়া গলা খাঁকরাইলে কিংবা আওয়াজকে পরিষ্কার করার উদ্যেশ্যে অথবা এমামের ভ্রম সংশোধন উদ্দ্যেশ্যে বা সে নিজে নামাজে আছে, ইহা-অবগত করান উদ্দ্যেশ্যে, গলা খাঁক্রাইলে, নামাজ নষ্ট হইবে না।

    ৫। মানুষের কথার তুল্য কোন দোওয়া করিলে, নামাজ ফাছেদ হয়, যে দোওয়া কোরআন ও হাদিসে নাই এবং উহা বান্দাগণের নিকট তলব করা হয়, উহাকে মানুষের কথার তুল্য বলা হইয়াছে, যথা- খোদা তুমি আমাকে লবণ দাও, তৈল দাও, এইরূপ দোওয়াতে নামাজ বাতীল হইয়া যায়।

    ৬। কোন বেদনা কিংবা বিপদের জন্য আহ্, ওহ, ওফ, তোফ, করিলে, নামাজ বাতীল হইয়া যায়, কিন্তু কোন পীড়িত ব্যক্তি সহ্য করিতে অক্ষম হইয়া যদি বলিয়া ফেলে, তবে নামাজ নষ্ট হইবে না। এইরূপ বেহেস্ত দোজখের ভয়ে কাঁদিয়া ফেলিলে, নামাজ নষ্ট হইবে না। হাঁচির জওয়াবে 'ইয়ারহামোকাল্লাহ্' বলিলে নামাজ নষ্ট হইবে।

    ৭। মন্দ সংবাদ শুনিয়া 'ইন্না লিল্লাহে অইন্না ইলাইহে রাজেউন' বলিলে, নামাজ ফাছেদ হয়।

    ৮। সুসংবাদ শুনিয়া 'আলহামদো লিল্লাহ্' বলিলে ও আশ্চর্য্য- জনক বিষয় শুনিয়া "ছোবহানাল্লাহ্” কিংবা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ" অথবা 'আল্লাহো আকবার' বলিলে, নামাজ বাতীল হইবে।

    ৯।যদি নিজের এমাম ব্যতীত অন্যের কেরাতে লোকক্কা দেয়, তবে লোকমা দাতার এবং লোক্কা গ্রহীতার নামাজ ফাছেদ হইবে। নিজের এমামের নামাজে লোক্কা দিলে, দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের নামাজ নষ্ট হইবে না।

    ১০। পানাহার করিলে, নামাজ ফাছেদ হয়, ভ্রমবশতঃ একটি তিল খাইলে; কিম্বা এক বিন্দু পানি পান করিলে, নামাজ বাতীল হইয়া যায়, কিন্তু যদি নামাজীর দাঁতের মধ্যে ছোলা অপেক্ষা ক্ষুদ্র কোন বস্তু লাগিয়া থাকে, তবে উহা গিলিয়া ফেলিলে নামাজ নষ্ট হইবে না।

    ১১। কোরআন শরীফ দেখিয়া নামাজ পড়িলে, নামাজা নষ্ট হইয়া যায়। কিন্তু কোন হাফেজ উহা দেখিয়া পড়িলে, তাহার নামাজ নষ্ট হইবে না।

    ১২। বেশী আমল করিলে, নামাজ নষ্ট হইয়া যায়, যে কার্য্য করিলে, কোন দর্শক দূর হইতে ধারণা করে যে, সে ব্যক্তি নামাজ পড়িতেছে না, এইরূপ কার্য্যকে বেশী আমল বলা হইয়া থাকে। ইহাই সমধিক ছহিহ্ মত। নামাজের মধ্যে দুই হাত দ্বারা কোন কার্য্য করিলে, উহা বেশী আমলের মধ্যে গণ্য হইবে। ইহাতে নামাজ নষ্ট হইয়া যাইবে।

    ১৩। কোন নাপাক বস্তুর উপর ছেজদা করিলে, কিংবা উহার উপর দুই হাত ও হাঁটু রাখিলে, নামাজ বাতীল হইয়া যাইবে।

    ১৪। তিন তছবিহ্ পরিমাণ কোন গুপ্তাঙ্গের এক চতুর্থাংশ নামাজের মধ্যে খোলা থাকিলে কিংবা নামাজ নষ্টকারী পরিমাণ নাপাকি শরীরে লাগিয়া গেলে অথবা নাপাক স্থানে দাঁড়াইয়া থাকিলে, কিংবা স্ত্রীলোকদের সারিতে গিয়া দাঁড়াইলে, অথবা এমামের অগ্রে দাঁড়াইয়া থাকিলে, নামাজ বাতীল হইয়া যাইবে।

    ১৫। বিনা ওজরে স্বেচ্ছায় বক্ষকে কেবলার দিক হইতে অন্য দিকে ফিরাইলে, নামাজ বাতীল হইয়া যাইবে। আর অন্য কেহ ধাক্কা দিয়া তাহার বক্ষকে কেবলার দিক হইতে অন্য দিকে ফিরাইয়া দিলে এবং তিন তছবিহ পরিমাণ অন্যদিকে বুক থাকিলে, নামাজ ফাছেদ হইবে।

    ১৬। যদি পশ্চিম দিকে মুখ করিয়া এক সারি পরিমাণ গমন করে, তৎপরে এক রোকন পরিমাণ দেরী করে, তৎপরে একসারি পরিমাণ চলে, তৎপরে এক রোকন পরিমাণ দাঁড়াইয়া থাকে, এরূপ যতবার করুক, মছজেদ হইতে বাহির না হওয়া পর্যন্ত নামাজ ফাছেদ হইবে না। আর ময়দানে দুই সারি পর্যন্ত চলিলে, নামাজ ফাছেদ হইবে না, আর তিন সারি পর্যন্ত চলিলে, নামাজ ফাছেদ হইবে। আর যদি একইবারে দুই সারি পর্যন্ত চলে, তবে নামাজ ফাছেদ হইবে।

    ১৭। যদি কেহ নামাজীকে ধাক্কা দেয় কিংবা কোন চতুষ্পদ জন্তু তাহাকে টানিয়া লইয়া যায়, ইহাতে সে কয়েক কদম সরিয়া যাইতে বাধ্য হয়, কিংবা তাহাকে উঠাইয়া চতুষ্পদের উপর বসাইয়া দেয়, অথবা নামাজের স্থান হইতে বাহির করিয়া দেয়, তবে নামাজ ফাছেদ হইবে।

    ১৮। মনে মনে কোফরের নিয়ত করিলে কিংবা মরিয়া গেলে, নামাজ ফাছেদ হইবে। ১৯/২০। উন্মাদ ও অচৈতন্য হইয়া গেলে, নামাজ নষ্ট হইবে। ২১। কোন একটি রোকন তরক করিয়া উহার কাজা না করিলে, কিংবা বিনা ওজরে কোন শর্ত তরক করিলে, নামাজ নষ্ট হইবে। ২২। কোন একটি রোকন এমামের পূর্বে আদায় করিয়া এমামের সহিত শরিক না হইলে, যথা- কেহ এমামের পূর্বে রুকু করিয়া মস্তক উঠাইল, কিন্তু তৎপরে এমামের সঙ্গে কিংবা পরে রুকু করিল না এবং এমামের সঙ্গে ছালাম ফিরাইল, তবে নামাজ ফাছেদ হইবে।

    ২৩। ওজু ও গোছলের কোন কারণ উপস্থিত হইলে, নামাজ ফাছেদ হয়।

    ২৪। শেষ বৈঠকের পরে নামাজের মধ্যের ছেজদা ও তেলাওয়াতের ছেজদা মনে পড়িলে, উহা আদায় করিয়া পুনরায় শেষ বৈঠক না করিলে, নামাজ ফাছেদ হইয়া যাইবে।

    ২৫। কোন একটি রোকন নিদ্রিত অবস্থায় আদায় করিয়া উহা না দোহরাইলে, নামাজ ফাছেদ হইয়া যাইবে।

    ২৬। মছবুকের এমাম, শেষ বৈঠকের পরে ছালামের পূর্বে উচ্চ শব্দে হাসিলে, মছবুকের নামাজ ফাছেদ হইবে।

    ২৭। 'আল্লাহো আব্বার' শব্দের প্রথমে 'আ'-কে বেশী টানিয়া পড়িলে, কিংবা 'আকবার শব্দের 'বার'-কে বেশী টানিয়া পড়িলে, নামাজ ফাছেদ হইবে।

    ২৮। ছেজদার সময় দুই পা মাটি হইতে উঁচু করিয়া তুলিলে, নামাজ ফাছেদ হয়।

Post a Comment

0 Comments