মেঘ, ঝিল, ঝরণা, কূপ, নদী, খাল, বিল ও সমুদ্রের পানিতে ওজু গোছল জায়েজ হইবে। বরফ বিন্দু বিন্দু গলিয়া গেলে, শিলাবৃষ্টি হইয়া গলিয়া গেলে, শিশির বিন্দু একত্রিত হইলে কিংবা জমাট পানি গলিয়া গেলে, উহাতে ওজু গোছল জায়েজ হইবে।
কোন বৃক্ষ বা ফল চাপিয়া রস বাহির করিলে, কলা গাছ কিংবা তরমুজ চাপিয়া রস বাহির করিলে, আঙ্গুরের রস বাহির হইলে, খোর্মা পানিতে ভিজাইলে, গোলাপ ফুলের রস বাহির করিলে, তদ্দ্বারা ওজু জায়েজ হইবে না।
পানিতে মৃত্তিকা, কর্দম অথবা চুণ পড়িয়া উহার গুণ পরিবর্তন হইয়া গেলে, যদি তরল থাকে ও পানির অংশ বেশী থাকে, তবে ওজু জায়েজ হইবে। কর্দমের ন্যায় গাড় হইলে, ওজু জায়েজ হইবে না। দুগ্ধ মিশ্রিত পানির রং কিংবা স্বাদ পরিবর্তন হইলে, উহাতে ওজু জায়েজ হইবে না।
ওজু গোছলে ব্যবহৃত পানিকে 'মোস্তা'মাল' পানি বলা হয়। এই পানি কোন পানিতে পড়িলে, যদি মোস্তা'মাল পানি বেশী কিংবা সমান হয়, তবে উহাতে ওজু গোছল জায়েজ হইবে না। কম হইলে, জায়েজ হইবে।
জারি পানিতে কোন নাপাক বস্তু পড়িলে, যদি উক্ত বস্তুর রং কিংবা গন্ধ অথবা স্বাদ, এই তিন গুণের কোন একটি গুণ পানিতে প্রকাশিত না হয়, তবে উক্ত পানি দ্বারা ওজু গোছল জায়েজ হইবে। আর কোন গুণ প্রকাশ পাইলে, উহা নাপাক হইয়া যাইবে। যে পানিকে লোকে জারি পানি ধারণা করে, উহাই জারি পানি বলিয়া গণ্য হইবে।
মছজেদের হাওজ কিংবা হাম্মামের এক দিক হইতে পানি প্রবেশ করে এবং অন্য দিক হইতে বাহির হইয়া যায়, উহা জারি পানি।
আবদ্ধ পানি অধিক পরিমাণ হইলে, উহাতে কোন নাপাক বস্তু পড়িয়া উহার তিন গুণের একটি গুণ যতক্ষণ পরিবর্তন করিয়া না ফেলে, ততক্ষণ উহা পাক বলিয়া ধর্তব্য হইবে এবং উহাতে ওজু গোছল জায়েজ হইবে; কিন্তু যে স্থানে মৃতজীব কিংবা দৃশ্যমান কোন নাপাকি পড়ে, উক্ত স্থানটির পানি নাপাক হইয়া যাইবে। এইরূপ স্থানের চারিদিক হইতে চারি চারি হাত পানি ত্যাগ করিয়া অথবা ওজুকারীর মনে যতদূর অবধি উক্ত নাপাকি না পৌঁছিবার অনুমান বলবৎ হয়, ততদূরে ওজু করিবে।
অদৃশ্য নাপাকি হইলে, সেই স্থানটি নাপাক হইবে কি না, ইহাতে মতভেদ হইয়াছে, কাজেই সেই স্থানটি ত্যাগ করিয়া ওজু করা এহতিয়াত।
ওজুকারীর ধারণায় যে জলাশয়ের পানি এত অধিক হয় যে, একদিকে নাপাক বস্তু পড়িলে, অন্যদিকে পৌঁছিতে পারে না; তাহাকেই অধিক পরিমাণ পানি বা বড় জলাশয় বলা যাইবে।
যে জলাশয়ের একদিকের পানি নাড়াইলে, অন্যদিকের পানি আন্দোলিত না হয়; তাহাকেও বড় জলাশয় বলা যাইবে।
যে জলাশয়ের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ দশ দশ হাত করিয়া থাকে; উহাকেও বড় জলাশয় বলা যাইবে।
বড় জলাশয়ের গভীরতা এইরূপ হওয়া জরুরি যে, যদি গণ্ডুষ করিয়া পানি উঠাইবার সময় মাটি প্রকাশ হইয়া না পড়ে; তবে ওজু গোছল জায়েজ হইবে। আর মাটি প্রকাশ হইয়া পড়িলে; উহাতে ওজু করিবে না। অল্প পরিমাণ পানিতে নাপাক বস্তু পড়িলে; উহার তিন গুণের এক গুণ পরিবর্তন না হইলেও উহা নাপাক হইয়া যাইবে।
বৃক্ষের পাতা পড়িয়া পানির তিনটি গুণ নষ্ট হইয়া গেলে; যদি উহার তরলতা বাকী থাকে; তবে উহাতে ওজু জায়েজ হইবে। আর তরলতা বাকী না থাকিলে; ওজু জায়েজ হইবে না।
অল্প পানিতে রক্তবিহীন কীট, যথা-বোলতা, বৃশ্চিক, মশা ও মক্ষিকা মরিলে; উক্ত পানি নাপাক হইবে না। এইরূপ মৎস্য, কাঁকড়া ও ব্যাঙের ন্যায় যে প্রাণী পানিতে জন্মগ্রহণ করে; উহা অল্প পানিতে মরিলে, উক্ত পানি নাপাক হইবে না।
ছোট আঁটুল কিংবা জোঁক উহাতে মরিলে, পানি নাপাক হইবে না। যে বড় আঁটুল ও জোঁকে প্রবাহিত রক্ত আছে; উহা পানিতে মরিলে, সমধিক ছহিহ্ মতে পানি নাপাক হইয়া যাইবে।
যে জঙ্গলী ব্যাঙের মধ্যে কিংবা স্থলচর সর্পের মধ্যে প্রবাহিত রক্ত আছে; উহা পানিতে মরিলে; পানি নাপাক হইয়া যাইবে।
যদি ব্যাঙ পানিতে মরিয়া পচিয়া ছিন্ন ভিন্ন হইয়া যায়; তবে উক্ত পানিতে ওজু জায়েজ হইলেও উক্ত পানি পান করা মকরূহ্ তাহরিমি।
যে প্রাণী, জমিতে জন্মগ্রহণ করে; কিন্তু পানিতে বাস করে, যেরূপ হাঁস, চিনাহাঁস; উহা পানিতে মরিলে, পানি নাপাক হইবে।
0 Comments