এতিমের অর্থ ভোগকারীর অবস্থা

        মহানবী (সঃ) আরো একটু সামনে এগিয়ে একদল লোক দেখতে পেলেন। তারা উটের মতো লম্বা। একদল ফেরেশতা তাদের চেহারায় আগুন নিক্ষেপ করছে আর গরম সীসা তাদের গলায় ঢালছে। মুখের সীসা তাদের গুহ্যদার দিয়ে সাথে সাথে বেরিয়ে আসছে। তারা এ শাস্তির যন্ত্রণায় গলা ছেড়ে চিৎকার করে কাঁদছে। পুনঃ পুনঃ এ কঠোর শাস্তি তাদের প্রতি প্রযোজ্য। হচ্ছে।

        মহানবী (সঃ)-এ নির্মম শাস্তি দেখে বিচলিত কণ্ঠে সাথী জিব্রাইলকে জিজ্ঞাসা করলেন- "ভাই, এদের এমন নির্মম নৃশংস শাস্তি দেয়ার কারণ কি? এদের শাস্তি দেখে তো আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি।"

        হযরত জিব্রাইল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে উত্তর দিলেন-"এরা অনাথের অর্থ ভক্ষণকারী। নানা ছল-চাতুরী করে তারা ইয়াতিমদের মাল আত্মসাৎ করেছে। তাদের বাড়ি-ঘর ছাড়া করেছে এবং সর্বশান্ত করে ছেড়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে হুসিয়ারী করে দিয়ে বলেন-

إنَّمَا يَا كُلُوْنَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا.

        যারা এরূপ করে অর্থাৎ এতিমদের মাল ভক্ষণ করে তারা তাদের উদরকে বা পেটকে অগ্নি দ্বারা পরিপূর্ণ করছে। যারা আল্লাহর বাণীকে উপেক্ষা করেছে আজ তাদের উদরে অগ্নিপূর্ণ করা হয়েছে।

অভিশপ্ত শয়তান

        মহানবী (সঃ) বোরাকে আরও সামনে এগিয়ে চলছেন, হঠাৎ তার সামনে একটি বিকট মৃতি প্রতিভাত হলো। সে আগুনের পাথর নিক্ষেপ করে চলেছিল। তার সম্যক পরিচয় জানবার জন্য হযরত জিব্রাইল আমিনকে মহানবী (সঃ) বললেন-"ভাই জিব্রাইল! এই মূর্তিটি কিসের? যে আগুনের পাথর-ইবা নিক্ষেপ করছে কেন?

        জিব্রাইল (আঃ) তৎক্ষণাৎ মহানবী (সঃ)-কে বললেন- "ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনি পড়ুন-

 أعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ .

        এবং অগ্নি স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপকারীর দিকে ফুঁক দিন।" মহানবী (সঃ) তাই করলেন। এতে ঐ মূর্তিসহ দূরে পালাল। অতঃপর হযরত জিব্রাইল (আঃ) মহানবী (সঃ)-কে বললেন-"হে আল্লাহর প্রিয় রাসূল। যে মানবাকৃতির মূর্তিটি আপনার প্রতি অগ্নি প্রস্তর নিক্ষেপ করেছিল সে আসলে কোন মানুষ নয় বরং সে হচ্ছে অভিশপ্ত ইবলিশ। আল্লাহর দরবারে আপনার গমনের গতি রোধ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু সে তার কাজে ব্যর্থ হয়েছে এবং আমাদের থেকে সহস্র যোজন দূরে পালিয়েছে।"

        শয়তানের চক্রান্ত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে মহানবী (সঃ) আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন।

ইয়াহুদী নাসারাদের আত্মার অবস্থা

        ইমাম বায়হাকী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, হযরত (সঃ)-এর দ্রুতগামী বোরাক সামনে চলেছে। হঠাৎ তিনি ডান দিক থেকে শুনতে পেলেন কে যেন তাকে ডেকে বলছে-"হে মুহাম্মদ, একটু থামুন।"

        মহানবী (সঃ) এ ডাকে কোন সাড়া দিলেন না। এমন কি তিনি সেদিকে ফিরে তাকালেনও না। অতঃপর তার বা দিক থেকে আবার উক্ত রূপ আওয়াজ হলো-"হে মুহাম্মদ, একটু থামুন।" তিনি এ ডাকেও কোন সাড়া দিলেন না। এমনকি তিনি সেদিকে ফিরেও তাকালেন না। কিছুদূর যাবার পর মহানবী (সঃ)-এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। জিব্রাইল আমিন উত্তরে বললেন-"হে আল্লাহর প্রিয়তম নবী। ডান দিক হতে প্রথম যে শব্দ আপনি শুনতে পেয়েছেন তা হচ্ছে ইহুদীদের প্রেতাত্মা। আর বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয় বার যে শব্দ ভেসে এসেছে তা হচ্ছে নাসারাদের প্রেতাত্মা। যদি আপনি তাদের ডাকের সাড়া দিতেন, তাহলে আপনার উম্মতের অধিকাংশ ইহুদী ও নাসারা হয়ে যেত। আপনি উপরোক্ত ডাকে সাড়া না দিয়ে উত্তমই করেছেন।"

মদ্যপায়ীর অবস্থা

        এরপর মহানবী (সঃ)-এর সওয়ারী বোরাক যখন আরো কিছু সামনে অগ্রসর হলো তখন মহানবী (সঃ) এমন একদল লোকদেরকে দেখতে পেলেন, যাদের মুখ-মণ্ডলগুলো কালো বর্ণের, চক্ষুগুলো নীল বর্ণের, যা দেখতে খুব ভীতিকর অবস্থা। আর তাদের মুখের নিচের ঠোঁটগুলো যমীনের সাথে মিলালে আর উপরের ঠোঁটগুলো মাথার উপর রেখে দেয়া হয়েছে। আর তাদের মুখ হতে দুর্গন্ধময় পুঁজ ও রক্ত ঝড়ছে। যা দ্বারা সারা মাঠে বিভীষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা দেখে মহানবী (সঃ) হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন- "হে ভাই জিব্রাইল, এ লোকগুলো কারা?" তাদেরকে কেন এভাবে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। দুনিয়াতে তারা কি অন্যায় করেছিল? যার কারণে তাদেরকে এ ধরনের কঠিন শাস্তি প্রদান করা হচ্ছেঃ"

        জবাবে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হে আল্লাহর নবী। এরা দুনিয়াতে শরাব পান করত, মদ্য পান করত, গাঁজা খেত। তাই কেয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে এ কঠিন শাস্তির মধ্যে লিপ্ত রাখা হবে।"

মিথ্যা সাক্ষী দাতার অবস্থা

        এভাবে বিভিন্ন দৃশ্য দেখতে দেখতে মহানবী (সঃ) আরও সামনে এগিয়ে চললেন। সামনে এগিয়ে তিনি একদল লোককে মানব দেহবিশিষ্ট শূকরাকৃতিতে দেখতে পেলেন। তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তাদের জিহ্বা টেনে বের করে মাথার উপর দিয়ে নিয়ে অগ্নি শৃঙ্খলে সজোরে বেঁধে দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে আগুনের কাঁচি দিয়ে শিকল কেটে দুভাগ করা হচ্ছে আবার তা জোড়া দেয়া হচ্ছে এবং অগ্নি কাঁচি দিয়ে কেটে দু'ভাগ করা হচ্ছে। তাদের এরূপ কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।

        এই অভিশপ্ত দলটির প্রতি হৃদয় বিদারক শাস্তি দেয়া হচ্ছে দেখে দয়ার নবী বিহবল হলেন। এর কারণ সম্পর্কে সাথী আল্লাহর দূতকে কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর দূত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "এরা আল্লাহর অভিশাপে অভিশপ্ত। পৃথিবীর বুকে ফিৎনা ফ্যাসদ্দ ছড়াবার মানসে এরা নানারূপ কলা-কৌশল অবলম্বন করেছে। মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে জীবিকা অর্জন করেছে। মিথ্যা বলা তাদের মজ্জাগত স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। যে কোন ব্যাপারে তাদের মিথ্যা বলতে এতটুকুও বিবেকে বাধত না। তাই তাদের এ অশুভ পরিণতিতে ভুগতে হচ্ছে। এরা কিন্তু আপনার উম্মতের একটি রহমত বঞ্চিত দল।"

মুখরা রমণীর অবস্থা

        মহানবী (সঃ) বোরাকে চড়ে আরো সামনে এগিয়ে গেলেন। তিনি এমন একটি সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন যারা ছিল মহিলা। তাদের অগ্নি পোশাক পড়িয়ে আগুনের বেত্রাঘাত করা হচ্ছিল। আঘাতে আঘাতে তাদের দেহ জর্জরিত হয়েছিল। ব্যথা যন্ত্রনায় তারা বিকট চিৎকার করে চলেছিল। তাদের মর্ম বিদারী কান্নায় আকাশ-বাতাস থমথমে ভাব ধারণ করেছিল। তাদের মুখে তপ্ত লৌহ শলাকা ডুকানো হচ্ছিল।

        দয়ার নবী তাদের শাস্তির বহর দেখে ব্যথিত হলেন। তিনি স্বর্গীয় দূতকে এর তাৎপর্য ও কারণ জিজেস করলেন- "ভাই জিব্রাইল। ঐ যে একদল নারী আকাশ বিদারী চিৎকার করে চলেছে ওরা কারা? কি জঘন্য অপরাধে ওরা এত নির্যাতিত? ওরা দুনিয়ায় কি অপরাধ করে এসেছে? যার জন্য ওদের এ অভাবনীয় শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে?"

        আল্লাহর দূত আল্লাহর নির্দেশে বললেন- "হে নবী (সঃ)। আপনি ওদের কথা জিজ্ঞেস করছেন? ওরা পৃথিবীর বুকে আবোল-তাবোল কথার ফুল ঝুরি ছড়িয়ে বেড়িয়েছে। স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকিয়েছে। স্বামীকে অযথা হয়রানি করেছে। তাকে সমাজে কাপুরুষ প্রতিপন্ন করেছে। ওরা স্বামীর কথা শুনেনি। ওরা মুখরা, তাই ওদের অগ্নি বেত্রাঘাত করা হচ্ছে। মুখে আস্ত আগুন ভরে দেয়া হচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments