মা-বাবার অবাধ্য সন্তানের অবস্থা

গায়ক-বাদকের অবস্থা

        বোরাকে মহানবী (সঃ) এগিয়ে যাচ্ছেন। কিছু দূর অগ্রসর হলে হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর নির্দেশে বোরাক শ্লথ গতিতে চললো। তখন নবীবর দেখলেন যে, একদল নর-নারী কালো কুৎসিত বর্ণের। তারা আগুনের পোশাক পড়ে আছে। তাদের বুকে আগুনের পাথর চাপা দেয়া হয়েছে। আগুনের তাপে তারা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। আবার সাথে সাথে তাদের পূর্বাকৃতি দেয়া হচ্ছে এবং পুনঃ পুনঃ আগুনে জ্বলছে, পুড়ছে। আবার তাদের পূর্বাকৃতি হচ্ছে। তাদের মুখে কানে সীসা গলিয়ে ভরে দেয়া হচ্ছে। মুখের গহ্বরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। হাতের তালুতে অগ্নি শলাকা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা আকাশ ফাটা চিৎকার করছে।

        মহানবী (সঃ) এ করুণ দৃশ্য অবলোকন করে আল্লাহর দূতের কাছে এ দুর্ভাগ্যদের পরিচয় জানতে চাইলেন। আল্লাহর দূত জিব্রাইল এ হতভাগাদের পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন- "ওগো প্রিয় রাসুল! এ আপনার একদল উম্মতের কাণ্ড। এরা গায়ক ও বাদক সম্প্রদায়। এরা কুরআন হাদীসের নির্দেশ অমান্য করে গান গেয়েছে, বাজনা বাজিয়েছে। এরা যৌনোত্তেজনামূলক গান বাদ্য করেছে বলে আজ তাদের এ দুর্গতি, এ মর্মান্তিক পরিণতি।

মা-বাবার অবাধ্য সন্তানের অবস্থা

        মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন- "আমাকে নিয়ে বোরাক আরো সামনে অগ্রসর হলে আমি দেখতে পেলাম বিরাট একদল মানুষদেরকে আগুনে জ্বালানো হচ্ছে। তারা আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই বর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তারপর পুনরায় তাদেরকে জীবন দান করা হচ্ছে। আবার আগুনে জ্বালিয়ে আযাব দেয়া হচ্ছে। এভাবে তাদেরকে পরপর আযাব দেয়া হচ্ছে, যা থেকে তারা কোন রেহাই পাচ্ছে না। মহানবী (সঃ) বলেন- আমি তাদের এ ভীতিপূর্ণ কঠিন আযাব দেখে হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম- "ভাই জিব্রাইল! কি কারণে তাদের এত কঠিন আগুনের আযাব প্রদান করা হচ্ছে? এ লোকগুলো কারা? তারা একবার জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেলে পুনরায় তাদেরকে আবার জীবিত করে আবার পূর্বের ন্যায় শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে?

        উত্তরে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "এরা হলো আপনার উম্মতের ঐ সকল নারী পুরুষ, যারা তাদের পিতা-মাতার অবাধ্য ছিল। পিতা-মাতাকে তারা নির্যাতন করতো ও কষ্ট দিত, তাই তাদেরকে কেয়ামত পর্যন্ত এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।

দাম্ভিকের অবস্থা

        মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন- "আমাকে নিয়ে বোরাক আরো একটু সামনের দিকে অগ্রসর হলে এমন কিছু সংখ্যক লোকদের অবস্থা আমাকে দেখানো হলো যাদেরকে বড় বড় পর্বতের ন্যায় বড় দু'দুটি পাথরের দ্বারা পিশানো হচ্ছে। যাতে তাদের হাড্ডি মাংস একত্র হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হচ্ছে আবার পুনরায় তাদেরকে ঐ শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। তাদের এ অবস্থা অবলোকন করে মহানবী (সঃ) হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন- "হে জিব্রাইল। এদেরকে এ ধরনের শাস্তি কেন দেয়া হচ্ছে। এ লোকগুলো কারা?"

        এ প্রশ্নের জবাবে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হে আল্লাহর নবী। এরা আপনারই উম্মতের ঐ সকল লোক, যারা দুনিয়ার নিজেকে খুব বড় মনে করে অহংকার করত এবং মর্যাদা ও তাকাববুরী লিপ্ত ছিল। আজ তাদেরকে সে অহংকারের পরিণাম স্বরূপ এ ধরনের কঠিন শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত এ কঠিন শাস্তির মধ্যে তাদেরকে লিপ্ত রাখা হবে। কারণ একমাত্র মহান আল্লাহ-ই অহংকার করতে পারেন অন্য কেউ নয়।"

রোগমুক্তি নাকামীর অবস্থা

        মহানবী (সঃ) যখন বাইতুল মাকদাসের দিকে এগিয়ে গেলেন তখন তিনি পথি মধ্যে একদল যুবককে শ্বেত, কুষ্ট ও বসন্ত রোগে আক্রান্ত অবস্থায় দেখতে পেলেন। তারা পথের মাঝে পড়ে ব্যথা-যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর গগণবিদারী চিৎকার করে চারদিক কাঁপিয়ে তুলছে। তাদের এ করুণ ও শোচনীয় অবস্থা অবলোকন করে মহানবী (সঃ)-এর মন বিচলিত হলো। দুরারোগ্য রোগে তাদের গায়ের গোশত পচে খসে পড়ছে। এ দেখে দয়ার নবীর গা শিউরে উঠছে। তিনি সঙ্গী ফেরেশতা প্রধানকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন।

          উত্তরে ফেরেশেতা জিব্রাইল বললেন- "হে আল্লাহর প্রিয় হাবীব। এরা আপনার এমন একদল উম্মত, যারা পৃথিবীতে নানারূপ রোগ যন্ত্রনায় দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছে, অথচ তারা তাদের রোগ মুক্তির জন্য শাফী আল্লাহর কাছে কোনরূপ কামনা করেনি। তারা ছিল রোগ মুক্তি নাকামীর দল। রোগারোগ্যের জন্য তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কামনা করা বুঝেও বুঝেনি এবং কামনা না করাকেই তারা তাদের পরহেজগারী বলে মনে করতো। ঐ সব রোগেই তারা মৃত্যু বরণ করেছে। তাই মৃত্যুর পর তাদের শ্বেত, কুষ্ঠ ও বসন্ত রোগের শিকার হতে হয়েছে এবং অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে। তারা যদি তাদের রোগ মুক্তির জন্যে আল্লাহর নিকট দোয়া পাঠ করতো তাহলে তাদের এরূপ রোগ যন্ত্রনা ভোগ করতে হতো না।

Post a Comment

0 Comments