বেহেশতের কথা শ্রবণ

        মাদায়েন এলাকায় থাকতেই মহানবী (সঃ)-এর কানে একটি কথা ভেসে এলো। তিনি শুনতে পেলেন কে যেন আল্লাহকে উচ্চঃস্বরে ডেকে বলছে- "হে মাবুদ! তোমার শক্তি-ক্ষমতা অসীম, অনন্ত। তোমার দয়া করুণাও অফুরন্ত। তাই তুমি দয়া করে আমার সীমানায় অজস্র অসংখ্য নেয়ামত দান করেছ। এগুলো ভোগ করার মত ভোগাধিকারী আমার সীমানায় পাঠিয়ে দাও। তোমার দেয়া নেয়ামত রাজী আমি তাদের খাইয়ে ধন্য হই, প্রীত হই। আমি তাদের শুভ দর্শন লাভ করে মুগ্ধ হই।"

        মহানবী (সঃ) সাথী জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন যে, উপরোক্ত কথাগুলো হলো অনন্ত শান্তিধাম বেহেশতের।

আল্লাহর কথা শ্রবণ

        অতঃপর মহানবী (সঃ) আর একটি কথার মধুর আওয়াজ শুনতে পেলেন। তা ছিল আল্লাহর কালাম। তিনি বেহেশতকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন- "হে বেহেশত। তুমি কোনরূপ চিন্তা কর না। তোমার জন্যে প্রত্যেক মুসলমান মুসলিম ঈমানাদার নেককার পুরুষ ও নারীদেরকে মনোনীত করে রেখেছি, যারা আমার ও আমার রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছে এবং আমার সাথে শরীক করেনি। আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে স্বীকার করেনি। যে আমাকে ভয় করবে সে নিরাপদ থাকবে। যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে তা দিয়ে দেব। যে আমাকে ফরজ দিবে আমি তাকে তার পুরস্কার দেব। যে আমার উপর ভরসা করবে, আমি তাকে বেশি পরিমাণ দান করব। আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, আমি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করি না।

দোজখের চাহিদা শ্রবণ

        অতঃপর মহানবী (সঃ) চলতে চলতে এমন এক স্থানে পৌঁছলেন, যেখানে অতীব ভীতজনক এক বিরাট ও বিকট শব্দ শুনতে পেলেন এবং দুর্গন্ধ অনুভব করলেন। নবী (সঃ) হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর কাছে এই আওয়াজ কিসের জানতে চাইলে হযরত জিব্রাইল (আঃ) আরজ করলেন- "এটা দোজখের শব্দ। দোজখ আরজী পেশ করছে- হে আল্লাহ! আমার সাথে যে অঙ্গীকার করেছেন তা আমাকে দান করুন। কেন না আমার শিকল আগুনের লেলিহান শিখা, অতীব গরম পানি, পুঁজ, রক্ত ও শাস্তি বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার গভীরতা ও উত্তাপ অতি চরম সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে।

        আল্লাহ্ পাক জবাব দিলেন- "দুনিয়ায় যত অবিশ্বাসী, কাফির ও মুশরিক নর-নারী রয়েছে এবং যারা প্রতিফল তথা কিয়ামত দিবসকে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের সবাইকে তোমাদের জন্যে ঠিক করে রেখেছি।

        এটা শুনে দোজখ বলল- "আমি সন্তুষ্ট হলাম।"

আল্লাহর জবাব শ্রবণ

        দোজখের উপরোক্ত চাহিদার কথা শুনে আল্লাহ তায়ালা যা বললেন, তার বিস্তারিত মহানবী বর্ণনা করেন যে, দোজখের প্রত্যুত্তরে মহান আল্লাহ তায়ালা বললেন- "হে আমার সৃষ্ট জাহান্নাম। তুমি বিচলিত হয়ো না। তোমার বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই। আমার বিরুদ্ধাচারণ যারা করবে, আমার নির্দেশ অমান্য যারা করবে, তাদের শিগগীর আমি শাস্তি দেয়ার জন্যে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারা তোমার পেটে অনন্তকাল দুঃখ-কষ্ট ভোগ করবে। ওর থেকে তাদের কোন নিস্তার নেই। একটু সবুর করো, ওরা পাপে জর্জরিত হোক। নিশ্চয়ই পাপীদের জন্য আমি জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি।

যুবক বেশে ইসলাম

        আরো একটু এগিয়ে গিয়ে তিনি একজন সুশ্রী যুবক দেখতে পেলেন। দামী পোশাক পরিচ্ছেদে সে পথে সুগন্ধি ছড়িয়ে বিনম্রভাবে এগিয়ে আসছে হযরতের দিকে। তার চলনে শালীনতা, বলনে নম্রতা, আর দেহে ভদ্রতার ছাপ রয়েছে। সে হযরত (সঃ)-এর অতি কাছে এসে তাকে সশ্রদ্ধ সালাম করে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হঠাৎ করে যুবকের এ অলৌকিক অদৃশ্য হওয়ায় হযরত (সঃ)-এর মনে দারুণ বিস্ময় জাগল। তিনি সঙ্গী জিব্রাইলকে যুবকের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে জিব্রাইল আমিন বললেন- "আপনি যে যুবকটিকে ফিটফাট পরিচ্ছেদে এই মাত্র দেখলেন, আবার তাকে চোখের পলকে অদৃশ্য হওয়া দেখলেন। সে আসলে কোন মানুষ নয় বরং মানুষ রূপে ইসলাম ধর্ম। তার আকর্ষণে আপনার মন-প্রাণ আকৃষ্ট হয়েছে । তার প্রতি আপনার স্নেহের উদ্রেক হয়েছে, আপনার হৃদয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আপনার প্রকৃত অনুসারীরাও ইসলামের প্রতি অনুরূপ আকৃষ্ট হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।"

Post a Comment

0 Comments