ফেরেশতাদের তৃতীয় মনজিল
মহানবী (সঃ) দ্বিতীয় মনজিল সফর করে তৃতীয় মনজিলের দিকে অগ্রসর হলেন। অনেক জায়গা অতিক্রম করে তিনি এমন একস্থানে উপনীত হলেন। যেখানে 'রূহ' নামে একজন ফেরেশতার সাথে দেখা হলো। তার মাথার উপর এক লক্ষ চেহারা। প্রত্যেক চেহারায় এক লক্ষ মুখ। আর প্রতিটি মুখে এক লাখ ভাষা। ঐ ফেরেশতা একনিষ্ট মনে আল্লাহর প্রশংসাস্কৃতি করছেন। তার তাসবীহ পাঠের চোটে নিচের সব আকাশ-জমিন কাঁপছে। তার প্রতিটি মুখ নিঃসৃত শব্দে এক একজন করে ফেরেশতা বের হচ্ছে। তাদের সংখ্যা অগণিত। ঐ ফেরেশতা ও অন্যান্য বহির্গত ফেরেশতারা মুসলিমদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করছেন। এসব দেখে মহানবী (সঃ) ঐ রূহ ফেরেশতাকে সালাম করলেন। তিনি সালামের জবাব দিলেন। অতঃপর মহানবী (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন- "হে রূহ ফেরেশতা। আমার মনে হচ্ছে আপনি আল্লাহর আরশের অতি নিকটবর্তী রয়েছেন, তাই না?"
ফেরেশতা উত্তরে বললেন- "না তা নয়। আপনি সুদূর মক্কা হতে এখানে এসেছেন এ দূরত্বকে মহা সমুদ্রের এক বিন্দু পানি মনে করুন। আল্লাহর আরশ এবং আমার মাঝে এমন একটি মহাসাগর নয় বরং সাতটি মহাসাগর রয়েছে। মানুষ যেমন আল্লাহর কুদরতের পরিসীমা করতে পারে না। তেমনি ফেরেশতারাও আল্লাহর সৃষ্টির পরিমাপ করতে সক্ষম নয়। তাদেরকে যে কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে তারা তা দ্বারা অন্য কিছু জানে না।"
হযরত মিকাইল (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ
অতঃপর মহানবী (সঃ) আলোচনা শেষ করে সামনে এগিয়ে গেলেন। কিছুদূর যাবার পর তিনি একজন অপরূপ আকৃতির ফেরেশতা দেখতে পেলেন। তিনি ছিলেন হযরত মিকাইল (আঃ)। তিনি আল্লাহর ভয়ে অবিরাম কাঁদছেন। মহানবী (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন- "ভাই! আপনার দায়িত্ব কি? আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কোন কর্তব্যে নিয়োজিত করেছেন?"
হযরত মিকাইল (আঃ) বললেন- "সাগরের পানির পরিমাণ নিরূপন, বৃষ্টি বর্ষণ, প্রাণীর নির্ধারিত জীবিকা বণ্টন ও যথাস্থনে সরবরাহকরণ এ সবই আমার দায়িত্বাধীনে রাখা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশে আমি এ পবিত্র দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।"
ফেরেশতাদের চতুর্থ মনজিল
মহানবী (সঃ) তৃতীয় মনজিল হতে সামনে অগ্রসর হলেন। এমন সময় তার কাছে একটি নূরের ফলক পাঠানো হল। ঐ ফলকটি একজন ফেরেশতা বহন করছে। যার চেহারায় উজ্জ্বল্যে সারা মালায়ে আলা উদ্ভাসিত হয়েছে। ঐ ফেরেশতা মহানবী (সঃ)-কে উপরোক্ত ফলকে আরোহণ করতে অনুরোধ করলেন। মহানবী (সঃ) ফেরেশতার অনুরোধ ক্রমে ঐ ফলকে উপবেশন করলেন। তখন উক্ত ফেরেশতা হযরত (সঃ)-কে নিয়ে মুহূর্তে সত্তর হাজার পর্দা অতিক্রম করলেন। প্রতি ছ'টি পর্দার মধ্যে দূরত্ব পাঁচশো বছরের। এমনি সত্তর হাজার পর্দা অতিক্রম করে মহানবী (সঃ)-কে একটি স্বর্ণভূমিতে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে একজন ফেরেশতা প্রহরী ছিল। সে আমাকে একটি মুক্তোর পর্দার কাছে নিয়ে গেলো এবং তা উন্মুক্ত করার আদেশ দিলো।
সেখানে পর্দা উন্মুক্ত করার কথা শুনে ভেতরের প্রহরী ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল- "আপনি কে?"
স্বর্ণভূমির প্রহরী ফেরেশতা প্রত্তুরে বলল- "আমি স্বর্ণভূমির ফেরেশতা।"
আবার ভেতর থেকে আওয়াজ ভেসে এলো- "আপনার সাথে আর কে?"
মহানবী (সঃ)-এর সাথী ফেরেশতা বলল- "আমার সঙ্গে ইহ ও পরকালের ইমাম মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) রয়েছেন। আল্লাহ তাকে আপন সান্নিধ্যে ডেকেছেন, তাই তিনি আমার সাথে এখানে আগমন করেছেন।"
কথা শুনামাত্রই ভেতরের ফেরেশতা আল্লাহু আকবার ধ্বনি তুললো এবং পর্দা উন্মোচন করে দিলো। অতঃপর মহানবী (সঃ) ভেতরে প্রবেশ করলেন। ফেরেশতারা তাকে অভিনন্দিত করলো এবং একখানি সোনার আরাম কেদারায় উপবেশন করালো।
মহানবী (সঃ) আরাম কেরাসায় নির্বিঘ্নে উপবেশন করার পর তা আল্লাহর নির্দেশে চলতে লাগলো। অসংখ্য সূরের পর্দা ভেদ করার পর মহানবী (সঃ) একটি সাদা বরফ ভূমিতে উপনীত হালেস। সেখানে অসংখ্য ফেরেশতা আল্লাহর গুণ-গানে নিবৃত রয়েছে। তারা ছিল সবাই কাতার বন্দী। তারা পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত দলবদ্ধ হয়ে আল্লাহর গুণকীর্তন করছে আর " ছুব্বুহুন কুদ্দুসুন" তাসবীহ ধবনিতে চারদিক মতোয়ারা করে তুলছে।
তাদের কন্ঠের তাসবীহ শুনে মহানবী (সঃ) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর দরবারে এ মুনাজাত করলেন- "হে রহমান, হে রাহীম, তুমি আমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করো। আমি এ দৃশ্য দেখছি। আমার ভয় করছে। আমি কি আরশে মায়াল্লায় এসেছি প্রভু।"
এমন সময় অদৃশ্য হতে আওয়াজ হলো- "আমার প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ। আরশে আলীম এখনো অনেক দূরের পথ। এরা একটি নূরের কাতার। এদের মধ্যে ইসরাফীল ফেরেশতাও রয়েছে। ক্ষণকালের মধ্যেই আপনি তাকে দেখতে পাবেন।"
হযরত ইসরাফীল (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ
মহানবী (সঃ) আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইসরাফীল (আঃ)-কে দেখলেন। তার পদ যুগল সাত স্তবক জমীনের নীচে এবং মাথ্য আরশে আলীমে ঠেকেছে। তার ডানা এতো বিরাট যে, তা মনে হচ্ছে সারা জাহানকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। তার মুখে সিঙ্গা। সিঙ্গা মুখে তিনি আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষা করছেন। তার দৈহিক আকৃতি সত্যিই বিরাট। সাত-সাগরের পানি তার গায়ে ঢাললেও তার বিন্দু পরিমাণ মাটিতে গড়িয়ে পড়বে না। এতে বড়ো শুক্তর অধিকারী হয়েও তিনি আল্লাহর ভয়ে দিবা-রাতের মধ্যে একাধিকবার বেহুশ হন এবং শনুকের ন্যায় বেঁকে কুঁকড়ে যান। তিনি আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় সদা অতন্দ্র প্রহরী।
0 Comments