মসআলাঃ কোন ব্যক্তি নিজ শহরের আবাদী হইতে তিন মনজেল চলিবার ইচ্ছা করিলে সে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী মোসাফের। যতক্ষণ পর্যন্ত আবাদীর মধ্যে দিয়া চলিবে তখন পর্য্যন্ত মোসাফের হইবে না। যদি ষ্টেশন নিজস্ব লোকালয়ের অন্তর্গত হয় তবে আবাদীর হুকুমই হইবে। আর লোকালয়ের অন্তর্গত না হইলে সেখানে পৌঁছলেই মোসাফের হইবে।
মসআলাঃ তিন মনজেল উক্ত স্থানকে ধরা হবে, পদব্রজে কোন ব্যক্তি বেশীর ভাগ যেখানে তিন দিনে পৌঁছিয়া থাকে। আমাদের দেশে নদী বা পাহাড়ে সফর করিতে হয় না, এইহেতু ইংরাজী আটচল্লিশ মাইল হিসাবে উহার অনুমান করা হইয়াছে।
মসআলাঃ কোন স্থান এত দূরে যে উট ও মানুষের চলানুসারে তিন মঞ্জেল হয়। কিন্তু দ্রুতগামী ঘোড়ার গাড়ী বা গরুর গাড়ীতে আরোহণ করিলে দুই দিনে এবং রেলে অল্প সময়ে পৌঁছিলেও শরীয়াত অনুযায়ী সে মোসাফের হইবে।
মসআলাঃ যে ব্যক্তি শরীয়তানুযায়ী মোসাফের হইবে, সে জোহর, আসর ও এশার ফরজ নামায দুই দুই রাকাত করিয়াপড়িবে। ঐগুলি পূর্ণ চার রাকাত পড়া গুনাহের কার্য।
মসআলাঃ যদি ভুল বশতঃ চারি রাকাত পড়িয়া ফেলে তবে দ্বিতীয় রাকাতের পর বসিয়া আত্তাহিয়্যাতু পড়িয়া থাকিলে দুই রাকাত ফরজ হইবে বাকি দুই রাকাত নফল হইবে এবং সেজদা সহু করিতে হইবে। আর যদি দুই রাকাতের পর না বসে তবে চারি রাকাতই নফল হইয়া যাইবে। ফরজ নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে। একাকী নামায পাঠকারীর এইরূপ হুকুম, কিন্তু যদি ইমাম মোসাফের হয় এবং মোক্তাদী মুকীম হয় তবে মুকীমের নামাযও বাতিল হইবে।
মসআলাঃ যদি রাস্তায় কোথাও অবস্থান করে, তবে সেখানে পনর দিনের কম অবস্থানের নিয়ত করিলে সে বরাবর মোসাফের থাকিবে এবং চার রাকাত বিশিষ্ট নামায দুই রাকাত করিয়া আদায় করিবে। আর যদি পনর বা ততোধিক দিন অবস্থানের নিয়ত করে সে মোসাফের থাকিবে না। পরে আবার নিয়ত পরিবর্তন করিয়া পনর দিনের পূর্বেই সফর করিবার ইচ্ছা করিলেও মোসাফের হইবে না। নামায পূর্ণ আদায় করিতে হইবে। পুনরায় যখন সেখান হইতে রওয়ানা হইবে এবং উক্ত স্থান হইতে গন্তব্যস্থল তিন মঞ্জেল হইলে তখন আবার মোসাফের হইবে।
মসআলাঃ তিন মঞ্জেল যাওয়ার নিয়ত করার পর প্রথম বা দ্বিতীয় মঞ্জেলে নিজের বাড়ী থাকিলে মোসাফের হইবে না।
মসআলাঃ তিন মঞ্জেল যাইবার ইচ্ছা করিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইল এবং ইহাও নিয়ত করিল, অমুক গ্রামে পনর দিন থাকিব, এমতাবস্থায় নামায পূর্ণ পড়িবে আর সেই গ্রামে যাইয়াও যদি পনর দিন থাকিবার ইচ্ছা না হয়, তবুও মোসাফের হইবে না, পূর্ণ্য নামায পড়িতে হইবে। (বেঃ জেঃ দ্রঃ)
মসআলাঃ নামায পড়া অবস্থায় নামাযের ভিতরের পনর দিনের অবস্থানের নিয়ত করা হইলে মোসাফের হইবে না উক্ত নামায পূর্ণ আদায় করিতে হইবে।
মসআলাঃ যদি কেহ কোন স্থানে যাইতে ইচ্ছা করে এবং দুই পথ থাকে, প্রথমটি দিয়া যাইলে কসরের হুকুম হয় দ্বিতীয়টিতে উক্ত হুকুম হয় না। এমতাবস্থার প্রথম পথ দিয়া গেলে কসর হইবে, এবং দ্বিতীয়টিতে কসর হইবে না।
মসআলাঃ এইরূপ নদীপথে গেলে কসর হয় স্থল পথে কসর হয় না। কাজেই নদী পথে কসর পড়িবে স্থল পথে পূর্ণ সমাজ পড়িবে। (আলমগিরী)
মসআলাঃ দুই চারি দিনের জন্য রাস্তায় কোথাও অবস্থান করিতে হইলে, তৎপর এমন ঘটনা ঘটিল যে যাওয়া হইল না। প্রতিদিন শুধু এইরূপ নিয়ত পরিবর্তন হইতে থাকে যে কাল, পরশু যাইব, এই অবস্থায় পনর দিন, বিশ দিন, একমাস বা ততোধিক দিন থাকিতে হইল, কিন্তু পূর্ণ পনর দিন থাকার নিয়ত কখনও না করিলে যত দিনই অতিবাহিত হউক না কেন মোসাফের থাকিবে।
মসআলাঃ তিন মঞ্জেলের নিয়ত করিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইয়া কিছু দূর যাওয়ার পরে কোন কারণে নিয়ত পরিবর্তন হইলে ও গৃহে ফিরিয়া আসিলে যখন হইতে ফিরিবার নিয়ত করিয়াছে তখন হইতে মোসাফের হইবে না।
মসআলাঃ তিন মঞ্জেল চলিবার পর এমন স্থানে পৌঁছিল উহাই তাহার নিজ বাড়ী, তবে মোসাফের থাকিবে না।
মসআলাঃ যদি কাহারো নামায সফরে কাজা হয়, তবে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়া জোহর, আসর ও এশার নামাজ দুই রাকাত করিয়াই কাজা আদায় করিবে। আর সফরের পূর্বে জোহরের নামায কাজা হইয়া থাকিলে সফরের অবস্থায় উহার কাজা চারি রাকাতই আদায় করিবে।
মসআলাঃ বিবাহের পর যদি স্ত্রী বরাবর শ্বশুরালয়ে থাকে তবে তাহার আসল বাড়ী শ্বশুরালয় হইবে। আর যদি তিন মঞ্জেল অতিক্রম করিয়া পিতৃগৃহে যায় এবং পনর দিন থাকিবার নিয়ত না থাকে তবে মোসাফের হইবে। মোসাফেরের নিয়মানুসারে নামায আদায় করিবে।
মসআলাঃ যাহারা জাহাজে চাকুরী করে, জাহজ তাহাদের আসলবাড়ী বা একামতের বাড়ী হইতে পারে না। কাজেই তাহাদের হুকুম মোসাফেরের ন্যায় হইবে। অবশ্য গন্তব্য স্থান যদি আটচল্লিশ মাইলের বেশী হয় তবে কসর পড়িতে হইবে। অন্যথায় পূর্ণ নামায আদায় করিবে। এখন গোয়ালন্দ হইতে চাঁদপুর গামী জাহাজীদের কসর পড়িবার মসলা খোলাসা হইয়া গেল। কারণ উহার রাস্তা ৪৮ মাইলের বেশী হয়। যাহারা দূরদেশগামী জাহাজে চাকুরী করে (যথা লন্ডন, জার্মানী, আমেরিকা ইত্যাদি) তাহারাও কসর পড়িবে।
মসআলাঃ আর যাহারা এমন জাহাজে কাৰ্য্য করে, যাহা প্রায় ঘাটে বাঁধা থাকে বা ৪৮ মাইল দূরত্বের সফর করে না তাহরা পূর্ণ নামায পড়িবে। এ বিষয়টি আমি হিন্দুস্থান ও বাংলার মুফতীগণের তাহকীক অনুযায়ী লিখিলাম।
মসআলাঃ নৌকার চলন্ত অবস্থায় নামাযের সময় আসিলে চলন্ত নৌকাতেই নামায আদায় করিবে। দাঁড়াইয়া পড়ায় মাথা ঘুরিলে বসিয়া পড়িবে।
মসআলাঃ রেল গাড়ীতে নামায পড়ারও একই হুকুম। চলন্ত রেলে নামায পড়া দুরস্ত। আর যদি দাঁড়াইয়া মাথা ঘুরে বা পড়িয়া যাওয়ার আশঙ্কা হয় তবে বসিয়া পড়িবে।
মসআলাঃ নামায পড়া অবস্থায় রেল, জাহাজ ঘুরিয়া গেলেও কেবলা অপর দিকে হইলে নামাজের মধ্যে ঘুরিয়া কেবলার দিকে মুখ করিবে।
মসআলাঃ যদি এমন পীড়িত হয় যাহার জন্য বসিয়া নামায পড়া দুরস্ত, তবুও তাহার জন্য গরুর গাড়ীতে নামায পড়া দুরস্ত নয়। যদি গরুর গাড়ী থামানো থাকে, আর গাড়ীর জোয়াল গরুর কাঁধে থাকে তবুও নামায দুরস্ত নয়। গরু পৃথক করার পর নামায পড়া উচিত। ঘোড়ার গাড়ীরও ঐ একই হুকুম। যতক্ষণ পর্যন্ত ঘোড়া খুলিয়া পৃথক না করা হইবে ততক্ষণ পর্য্যন্ত উহাতে নামায পড়া দুরস্ত হইবে না।
মসআলাঃ যদি কাহারও বসিয়া নামায পড়া দুরস্ত হয়, তবে তাহার জন্য পাল্কী বা ডুলিতে নামায পড়া দুরস্ত। কিন্তু পাল্কী যখন বাহকের কাঁধে থাকে তখন দুরস্ত নয়। মাটিতে নামাইয়া লইবে। তৎপর নামায পড়িবে। সুস্থ ব্যক্তির পাল্কীতে বসিয়া নামায পড়া দুরস্ত হইবে না।
মসআলাঃ- যদি উট বা গরুর গাড়ী হইতে নামিলে জান বা মালের আশঙ্কা হয় তবে না নামিলেও নামায দুরস্ত হইবে।
মসআলাঃ এক মৌজা হইতে অন্য মৌজার আজান শোনা যায়, এমন দুই মৌজাকে এক বুঝিতে হইবে এবং উভয় স্থানে পনরদিন অবস্থানের ইচ্ছা করিলে মুকীম হইয়া যাইবে।
মসআলাঃ মোসাফেরের পিছনে মাকীমের একতেদা সর্বসময় দুরস্ত আছে ওয়াক্তিয়া নামায বা কাজা নামায হউক ইহাতে কোন আসে যায় না। মোসাফেরের ইমাম তখন দুই রাকাত পড়িয়া সালাম ফিরাইবে; মুকীম মোক্তাদী দাঁড়াইয়া বাকী নামাযগুলি আদায় করিয়া লইবে। উহাতে কেরাত পড়িবে না, চুপ করিয়া আলহামদু সুরা পড়া আন্দাজ দাঁড়াইয়া থাকিবে। কেননা সে প্রথম হইতে নামাযে ছিল কাজেই প্রথম বৈঠকে ঐ মোক্তাদীর জন্য ইমামের অনুসরণ করা ফরজ হইবে। মোসাফের ইমামের জন্য মোস্তাহাব এই যে, দুই দিকে সালাম ফিরাইবার সঙ্গে সঙ্গেই মোক্তাদীদিগকে স্বীয় মোসাফিরীর কথা জানাইয়া দিবে। নামায শুরু করার অগ্রে বলিয়া দেওয়া অতি উত্তম।
রেলের মসলা
মসআলাঃ রেলে পানি পাওয়া অসুবিধা হইলে তাইয়াম্মুম করিবে।
মসআলাঃ যদি রেল দাঁড়াইয়া থাকে এবং ষ্টেশনে পানি পাওয়া যায়, তখন তাইয়াম্মুম নষ্ট হইবে। যদি অজু না করিতেই গাড়ী ছাড়িয়া দেয়, আবার তাইয়াম্মুম করিয়া নামায পড়িবে।
মসআলাঃ যদি রেলে বি-ধর্মী পানি দেয় তবে ঘৃণা না করিয়া ঐ পানিতে অজু করিবে, তাইয়াম্মুম দুরস্ত হইবে না। যদি সে পানি না দেয় তাইয়াম্মুম দুরস্ত হইবে।
মসআলাঃ বেশীর ভাগ মনে হইল, ষ্টেশনে পানি পাওয়া যাইবে নামাযের সময় থাকিবে, কিন্তু তাইয়াম্মুম দ্বারা নামায আদায় করিল ইহা জায়েজ হইবে তবে মোস্তাহাবের খেলাফ হইবে।
মসআলাঃ এক মাইলের কম ষ্টেশন রহিয়াছে, সেখানে পানি পাইবার আশা আছে, কিন্তু ভয় হয়, ঐ ষ্টেশন পর্যন্ত পৌছিলে নামাযের সময় থাকিবে না, কাজা হইয়া যাইবে, এমতাবস্থায় তাইয়াম্মুম করিয়া নামায পড়িবে না। ষ্টেশনে পৌছিয়া অজু করিয়া কাজা আদায় করিবে। আর যদি সেখানে পানি না পাওয়া যায় তবে তাইয়াম্মুম করিয়া কাজা আদায় করিবে।
মসআলাঃ রেলে প্রস্রাব পায়খানার যে কল আছে উহার পানি পাক, উহাতে অজু ও গোসল দুরস্ত হইবে, এইরূপ পানি থাকিলে তাইয়াম্মুম দুরস্ত হইবে না। তবে এই পানি ঐ ব্যক্তি ব্যবহার করিবে যাহার সেই শ্রেণীর টিকিট আছে।
মসআলাঃ রেল, ষ্টেশনে দাঁড়াইয়া আছে, পানি সন্ধান করার পূর্বে তাইয়াম্মুম দুরস্ত হইবে না।
মসআলাঃ রেলে বসিবার তক্তা বা গদীর উপর ধুলা জমিয়া থাকিলে উহার উপর তাইয়াম্মুম দুরস্ত হইবে। গদী, তক্তা পাক কিনা সন্দেহ করিবার দরকার নাই। তবে নীচের তক্তা, যাহাতে চলাফেরা করা হয় সেখানে যেন তাইয়াম্মুম না করা হয়।
0 Comments