পরনিন্দুকের অবস্থা

        অতঃপর পথ চলতে চলতে এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে নবী (সঃ)-এর সাক্ষাত হলো, যাদের নখগুলো ছিল তামার। তারা ঐ নখ দ্বারা নিজেদের বক্ষ্য ও চেহারা ছিলে ফেলছিল। নবী করীম (সঃ) হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর কাছে তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন- "তারা মানুষের গোশ্ত খেত। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত করত এবং দোষ বলে বেড়াত। পরনিন্দাকারীদের শস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

ولا يغتب بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ .

        অর্থাৎঃ "তোমরা একে অপরের পেছনে নিন্দা করো না। এরা অন্যের গোপন বিষয় খোঁজ করো না। কোন ব্যক্তিকে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়াকে ভালবাসে? প্রকৃতপক্ষে তোমরা তা ঘৃণাই করে।" (সুরা-হুজরাত, আয়াত-১২)

ডাকাত লুটেরার অবস্থা

        বোরাক আরো একটু সম্মুখে অগ্রসর হলে রাসূলে আকরাম (সঃ), এক ভয়ানক ঝোপ-জঙ্গল দেখতে পেলেন। যেগুলো কাটাদার বৃক্ষ দ্বারা পরিপূর্ণ, আর ঐ সকল বৃক্ষরাজির শাখা-প্রশাখা এবং কাটাগুলো অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। কোন পথিক ঐ পথ দিয়ে যাতায়াত করলে ঐ কাটাদার বৃক্ষগুলোর শাখা-প্রশাখা পথিকের কাপড়-চোপড়ে এসে জড়িয়ে যাচ্ছে এবং তাদের মাথায় ঐ কাটাগুলো ঢুকে যাচ্ছে। তাতে পথচারীদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। লোকদের এ অবস্থা দেখে মহানবী (সঃ) হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন- "হে জিব্রাইল। এ কাটাদার বৃক্ষগুলো কিভাবে এখানে লাগানো হল যা দ্বারা পথিকদের এরূপ কষ্ট হচ্ছে।"

        উত্তরে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)। এ বৃক্ষসমূহ কোন বৃক্ষ নয়; বরং এগুলো আপনার উম্মতের মাঝে ঐ সকল ব্যক্তিদের রূহ আপনাকে দেখানো হচ্ছে, যারা দুনিয়ায় বসে ডাকাতি করত এবং মুসাফিরদের ধন সম্পদ চুরি করত। পরকালে তাদেরকে এ ধরনের শাস্তি প্রদান করা হবে।"

পরধন আত্মসাৎকারীর অবস্থা

        রাসূল করীম (সঃ) আরো কিছু দূর অগ্রসর হয়ে জনৈক অশীতিপর বুড়োকে দেখতে পেলেন। রোগাটে প্রাচীন ব্যক্তি দেহের সমগ্র শক্তি ব্যয় করে একটি কাঠের বোঝা বেঁধে মাথায় তোলার চেষ্টা করছে কিন্তু হাজারো প্রচেষ্টা চালিয়েও সে তা মাথায় তুলতে পারছে না। বহন করতে অসমর্থ হয়েও সে আরো কাঠ ওতে বাঁধছে। আরো বোঝা ভারী করে চলেছে। 'এ কাণ্ড দেখে রাসুলুল্লাহ (সঃ) আশ্চর্যন্বিত হলেন এবং সাথী জিব্রাইল আমিনকে জিজ্ঞেস করলেন- "ভাই জিব্রাইল। এ লোভী বোকা লোকটি কে? এর মতো অতি লোভী বোধ হয় এ বিশ্বভ্রহ্মাণ্ডে নেই।"

        উত্তরে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "আসলে ঐ লোকটি হচ্ছে আপনার উম্মত। পরধন আত্মসাৎকারী লোভী। পৃথিবীতে লোকে তার কাছে তাদের ধন-সম্পদ গচ্ছিত রেখেছে। সে তা আর ফিরিয়ে দেয়নি। সে ছিল নেহায়েত অর্থলোভী, বিপথগামী, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। এ শাস্তি তাকে কিয়ামত পর্যন্ত ভোগ করতেই হবে।

অহংকারীদের অবস্থা দর্শন

        মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন- "আমাকে নিয়ে বোরাক আরো একটু সামনের দিকে অগ্রসর হলে এমন কিছু সংখ্যক লোকদের অবস্থা আমাকে দেখানো হলো যাদেরকে বড় বড় পর্বতের ন্যায় বড় দু'দুটি পাথরের দ্বারা পিশানো হচ্ছে। যাতে তাদের হাডিড মাংস একত্র হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হচ্ছে আবার পুনরায় তাদেরকে ঐ শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। তাদের এ অবস্থা অবলোকন করে মহানবী (সঃ) হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন- "হে জিব্রাইল। এদেরকে এ ধরনের শাস্তি কেন দেয়া হচ্ছে? এ লোকগুলো কারা?"

        এ প্রশ্নের জবাবে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হে আল্লাহর নবী! এরা আপনারই উম্মতের ঐ সকল লোক, যারা দুনিয়ার নিজেকে খুব বড় মনে করে অহংকার করত এবং মর্যাদা ও তাকাববুরী লিপ্ত ছিল। আজ তাদেরকে সে অহংকারের পরিণাম স্বরূপ এ ধরনের কঠিন শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত এ কঠিন শাস্তির মধ্যে তাদেরকে লিপ্ত রাখা হবে। কারণ একমাত্র মহান আল্লাহ-ই অহংকার করতে পারেন অন্য কেউ নয়।"

কোরআন হাদীস অপব্যাখাকারীদের অবস্থা

        অতঃপর মহানবী (সঃ) এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন। যাদের জিহ্বা ও ঠোঁট ধারালো কেচি দ্বারা কর্তন করা হচ্ছে এবং কর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবার তা ভাল হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসছে এবং পুনরায় কর্তন করা হচ্ছে। এ শাস্তি সামান্য সময়ের জন্য বন্ধ হয় না। একইভাবে চলছে। এদের এমতাবস্থা দেখে নবী করীম (স) জিজ্ঞেস করলেন- "এরা কারা?"

        তদুত্তরে জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "এরা হলো আপনার উম্মতের পথ ভ্রষ্টাকারী ওয়ায়েজ বা বক্তা। এরা কোরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করত।

        জিব্রাইল (আঃ)-এর কথাতে মহানবী (সঃ) হতবাক হলেন। মুখে তার কোন কথা ফুটল না।

সুদখোরের অবস্থা

        এরপর বোরাক আরো একটু সামনে অগ্রসর হলে রাসূলে আকরাম (সঃ) এমন কিছু হিংস্র লোক দেখতে পেলেন, যাদের পেটগুলো গম্বুজের ন্যায় উচু এবং পেটগুলো শিশার ন্যায় এমন ভারী পরিষ্কার যে, এ পেটগুলোর ভেতর সাপ, বিচ্ছু চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। তৎপর ঐ বড় পেটওয়ালা ব্যক্তিরা যখন দাঁড়াতে চায় তখন পেটের ওজনে দাঁড়াতে পারে না। এরপর এক ভয়ানক হিংস্র ঘোড়া তাদের পেটগুলো পা দিয়ে পদদলিত করছে। যাতে ঐ ব্যক্তিরা ঘোড়ার পায়ের আঘাতে উহ, আহ্, করে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে এবং আহাজারী করছে।

        মহানবী (সঃ) এ ভয়ানক দৃশ্য দেখে জিজ্ঞাসা করলেন-"হে জিব্রাইল, এরা কারা এবং এদেরকে কেন এভাবে শস্তি দেয়া হচ্ছে?"

        এ প্রশ্নের জবাবে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন-"হে রাসুল (স)। এরা আপনার উম্মতের মাঝে ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে সুদ খেত এবং সুদের কারবার করত। এদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত এ ধরনের শাস্তি দেয়া হবে। অতঃপর কিয়ামতের ময়দানে এ অবস্থায়-ই তাদেরকে মহান আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে।"

কুমারী মেয়ের অবস্থা

        মহানবী (সঃ)-কে নিয়ে বেহেশতী বোরাক সামনে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এক জায়গায় আল্লাহর দূত বোরাক থামিয়ে দিলেন এবং মহানবী (সঃ)-কে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে বললেন। নবীবর দেখলেন যে, একদল স্ত্রীলোককে তাদের মাথার চুলগুলো দিয়ে পদ কষে বাঁধা হয়েছে আর আগুনের বেত্রাঘাত করা হচ্ছে। কঠিন অগ্নি বেত্রাঘাতে তাদের শরীরের চামড়া খসে পড়ছে। তারা চিৎকার করে আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে তুলছে। মহানবী (সঃ) জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন-"ওগো জিব্রাইল। বলুন এরা আবার কোন হতভাগীর দল? এদের শাস্তির মাত্রা এত বেশি কেন? এরা কি অপরাধ করেছে যার জন্য এদের এ দুগর্তি?"

        আল্লাহর নির্দেশে জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "এরা এমন এক নাপাক ব্যভিচারিণীর দল, যারা বিয়ের পূর্বে পর পরুষের সঙ্গে দেহদান করেছে। ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে এবং তার ফলশ্রুতি হিসেবে অবৈধ গর্ভবর্তী হয়েছে। জারজ সন্তান জন্ম দিয়েছে। অতঃপর সামাজিক দুর্নামের ভয়ে সেই অবৈধ সন্তান গোপনে হত্যা করেছে। সুতরাং তাদের এ যন্ত্রাণাদায়ক শাস্তি কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।"

Post a Comment

0 Comments