কি কি কারণে নামায ভঙ্গ করা যায় কিংবা ভঙ্গ হয়



    মসআলাঃ     যে রেল গাড়িতে আসবাব পত্র রাখা হইয়াছে বা ছেলেপুলে আরোহন করিয়াছে সেই গাড়ি যদি নামায পড়ার সময় ছাড়িয়া দেয়, তাহলে নামায ভঙ্গ করিয়া গাড়িতে বসিবে। (নামাযের ওয়াক্ত বাকি থাকুক বা নাই থাকুক) যদি নামাযের সময় না থাকে, তবে কাজা আদায় করিবে।

     মসআলাঃ     সম্মুখে সাপ আসিলে তাহার ভয়ে নামায ভঙ্গ করা দূরস্ত।

     মসআলাঃ    রাত্রে মুরগী খোলা থাকিলে এবং বিড়ালে মুরগী খাইবার ভয় হইলে এমতাবস্থায় নামায ভঙ্গ কার দুরস্ত।

     মসআলাঃ     নামায পড়া অবস্থায় জুতা চুরি হইবার ভয় হইলে নামায ভঙ্গ করিতে পারিবে।

     মসআলাঃ     নামায পড়া অবস্থায় যদি জ্বলন্ত উনানে পাকের হাঁড়ি থাকে এবং এমন কোন জিনিষ উৎলাইয়া পড়িবার ভয় হয়, যাহার মূল্য তিন চারি আনা হইবে তবে নামায ভঙ্গ তার দুরন্ত আছে। মোট কথা, এমন কোন জিনিষ নষ্ট হওয়ার ভয় হয়, যাহার মূল্য তিন চারি আনা হয় তাহার হেফাজতের জন্য নামায ভঙ্গ করা দূরস্ত।

    মসআলাঃ     যদি নামাযের মধ্যে প্রস্রাব পায়খানার বেগ বেশী হয় তবে নামায ভঙ্গ করিবে।

    মসআলাঃ     যদি কোন অন্ধ যাইতে থাকে, আর তাহার সম্মুখে কূপ থাকে এবং তাহাতে পড়িয়া যাইবার ভয় হয়, তাহাকে রক্ষা করার জন্য নামায ভঙ্গ করা ফরজ। যদি নামায় ভঙ্গ না করে সে (অন্ধ) কূপে পড়িয়া মারা যায় তবে গুনাহগার হইবে।

    মসআলাঃ     কোন ছোট ছেলের কাপড়ে আগুন লাগিয়া গেল, আর সে জ্বলিতে লাগিল তাহার রক্ষার্থে নামায ভঙ্গ করা ফরয।

    মসআলাঃ     মাতা-পিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী কোন বিপদে পড়িয়া থাকিলে ফরজ নামায ভঙ্গ করা ওয়াজেব।

    মসআলাঃ     নফল বা সুন্নাত নামায পড়া কালে মাতা-পিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, কেহ ডাকে, কিন্তু তাদের জানা নাই যে অমুক নামায পড়িতেছে। এমতাবস্থায় নামায ভঙ্গ করিয়া তাদের উত্তর দেওয়া ওয়াজেব। বিপদে পড়িয়াই ডাকুন আর বিনা দরকারেই উভয়ের জন্য একই হুকুম। যদি নামায ভঙ্গ করিয়া জওয়াব না দেয় তবে গুনাহ হইবে। যদি নামায পড়ার কথা জানা সত্ত্বেও তাঁহারা ভাকে তবে নামায ভঙ্গ করিবে না। কিন্তু যদি প্রয়োজনে ডাকে ও কষ্ট পাইবার ভয় থাকে তবে ভঙ্গ করিবে।

    মসআলাঃ    মোক্তাদী স্বীয় ইমামকে লোকমা  দিলে জরুরী আন্দাজ কেরাত পড়া হউক বা না হউক নামায ফাসেদ নষ্ট হইবেনা।

   মসআলাঃ      জরুরী কেরাতের পরিমাণ পড়া শেষ হইলে মোক্তাদী দিগকে লোকমা দিতে বাধ্য না করিয়া রুকু করাই উচিত। যতক্ষণ পর্য্যন্ত বিশেষ জরুরী না হইবে ততক্ষণ পর্যন্ত লোকক্কা দেওয়া মোক্তাদিগণের উচিত নহে ইহা মাকরুহ। ইমাম ভুল পড়িয়া আগে বাড়িতেছে বা রুকু না করিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া আছে ইহাকেই বিশেষ জরুরী বুঝিতে হইবে। যদি বিনা জরুরীতে বলিয়াও দেয় নামায ফাসেদ হইবে না।

    মসআলাঃ     কোন ব্যক্তি কোন নামাযীকে লোকমা দেয়, আর লোকমা দাতা তাহার মোক্তাদী না হয়, নামাজী লোকমা গ্রহণ করিলে তাহার নামায ফাসেদ হইবে। আর যদি অন্যের লোক্কা গ্রহণ না করিয়া নিজের ইয়াদ অনুযায়ী পড়িতে থাকে তবে নামায ফাসেদ হইবে না।

    মসআলাঃ     মোক্তাদী যদি অন্যের পড়া শুনিয়া বা কোরআন শরীফ দেখিয়া ইমামকে লোকমা দেয় তবে তাহার নামায ফাসেদ হইবে। আর ইমাম তাহার লোকক্কা গ্রহণ করিলে তাহারও নামায ফাসেদ হইবে।

    মসআলাঃ     নামায অবস্থায় কোরআন মজীদ দেখিয়া এক আয়াত পড়িলেও নামায ফাসেদ নষ্ট হইবে। আর যে আয়াত দেখিয়া পড়িল, তাহা পূর্ব হইতেই ইয়াদ ছিল, নামায ফাসেদ হইবে না। আর যদি পূর্ব হইতে ইয়াদ না থাকে এবং এক আয়াতের কম কোরআন শরীফ দেখিয়া পড়ে নামায ফাসেদ হইবে না।

    মসআলাঃ    - স্ত্রীপুরুষ এক সঙ্গে এইরূপ ভাবে দাঁড়াইল, যাহাতে একের অঙ্গ অপরের বরাবর হয় তবে নামায ফাসেদ হইবে। এমন কি যদি সেজদার সময় স্ত্রীলোকের মাথা পুরুষের পায়ের বরাবর হয় তবুও নামায ফাসেদ হইবে।

    মসআলাঃ     নিম্নের কারণগুলি দ্বারা নামায ফাসেদ হইবে। যথা

    ১। স্ত্রীলোক, যুবতী, বুড়ী অথবা সহবাসের উপযোগী না বালেগা হইলে নামাযে পুরুষের বরাবর হইলে নামায ফাসেদ হইবে। আর যদি কম বয়সের না- বালেগা হয় তবে নামায ফাসেদ হইবে না।

    ২। স্ত্রী পুরুষ উভয়ে নামাযে বরাবর হইলে নামায ফাসেদ হইবে কিন্তু একজন নামাযে ও অপরজন নামাযের বাহিরে বরাবর হইলে নামায ফাসেদ হইবে না।

    ৩। যদি নামাযে উভয়ের মাঝখানে কোন আড়াল না থাকে তবে নামায ফাসেদ হইবে। যদি উভয়ের মাঝখানে কোন পর্দা সোৎরা অথবা মাঝে এতটা পরিমাণ জায়গা ফাঁক থাকে যাহাতে একজন মানুষ বিনা কষ্টে দাঁড়াইতে পারে তবে নামায ফাসেদ হইবে না।

    ৪। স্ত্রীলোকের মধ্যে নামায সহীহ্ হওয়ার শর্ত বর্তমান থাকিলে নামায ফাসেদ হইবে। আর পাগল, হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় পুরুষের বরাবর হইলে নামায ফাসেদ হইবে না।

    ৫। নামাযের একটি রোকন আদায় করিতে যতটুকু সময় লাগে ততক্ষণ উভয়ে বরাবর অবস্থায় থাকিলে নামায ফাসেদ হইবে। ইহার কমে ফাসেদ হইবে না। যেমন, এতটা সময় রহিল যাহাতে রুকু প্রভৃতি আদায় হয় না। এই কম সময়ের সমান হইবার জন্য নামায ফাসেদ হইবে না। প্রকাশ থাকে যে, নামাযের রোকন চারিটি যথাঃ- দাঁড়ান, কেরাত পাঠ, রুকু ও সেজদা, এবং রোকনের পরিমাণ এই যে তিনবার সুবহানাল্লাহ বলার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

    মসআলাঃ     যদি কাহার মুখ হইতে কোন অক্ষর সঠিকভাবে উচ্চারণ না হয় যেমন বড় হের স্থলে ছোট হে, আয়েনের স্থলে অলিফ অথবা সে. সোয়াদ এবং সীন এর স্থলে সবগুলিকেই সীন উচ্চারন করে, তবে শুদ্ধ করিয়া পড়িবার জন্য মল্ক করা বিশেষ দরকার। যদি শুদ্ধ করিয়া পড়িবার জন্য চেষ্টা না করে তবে গুনাহগার হইবে। তাহার কোন নামাযই সহী হইবে না। আর বাস্তবিক পক্ষে চেষ্ট করার পরও যদি শুদ্ধ না হয় তবে ক্ষমার যোগ্য হইতে পারে।

    মসআলাঃ     যদি আইন, বড়হে ইত্যাদি সবঅক্ষর উচ্চারণ করিতে পারে কিন্তু বেপরোয়া ভাবে বড় হে'র স্থলে লামআলাফ এবং আইনের স্থলে হামাজাহ্ সর্বদা পড়িতে থাকে, কোন খেয়াল না করে তবে গুনাহগার হইবে ও নামায সহীহ হইবে না।

   মসআলাঃ     যদি কেহ না জানে কিংবা নূতন মুসলমান হয় তবে সে সব জায়গায় "সুবহানাল্লাহ" "সুবহানাল্লাহ" পড়িলে ফরয আদায় হইয়া যাইবে। কিন্তু নামায শিক্ষা করিতে থাকিবে। শিক্ষা করিতে আলস্য করিলে কঠিন গুনাহগার হইবে।

    মসআলাঃ     ইচ্ছা করিয়া বা ভুলে নামাযের মধ্যে কথা বলিলে নামায নষ্ট হইবে।

    মসআলাঃ     নামাযে আহ্ বা উহ্ অথবা উস বা হায় বলিলে কিম্বা উচ্চৈস্বরে ক্রন্দন করিলে নামায নষ্ট হইবে। তবে যদি বেহেস্ত বা দোজখের কথা স্মরণ করতঃ অন্তরে কোন ভাব. উদয় হইয়া মুখে শব্দ বাহির হয় তবে নামায নষ্ট হইবে না।

     মসআলাঃ     বিনা প্রয়োজনে খুক্ খুক্ করিয়া কাশিলে বা গলা সাফ করিতে এক আধ শব্দ আওয়াজ হইলে নামায নষ্ট হইবে। অবশ্য নাচারি অবস্থায় কাশিলে ক্ষতি হইবে না।

     মসআলাঃ     নামাযে হাঁচি দিয়া "আলহামদুলিল্লাহ" পড়িলে নামায নষ্ট হইবে না তবে না বলাই উচিত। যদি অপর কাহারও হাঁচির আওয়াজ শুনিয়া নামাযী নামাযের মধ্যে "ইয়ারহামুকাল্লাহ" বলিয়া উত্তর দিলে তবে তাহার নামায নষ্ট হইবে।

     মসআলাঃ     কোরআন শরীফ দেখিয়া পড়িলে নামায নষ্ট হইবে।

     মসআলাঃ     নামাযের মধ্যে কেবলার দিক হইতে সিনাহ (বক্ষস্থল) ঘুরিয়া গেলে নামায নষ্ট হইবে। কেবল মুখ বা ঘাড় ঘুরিলে নামায নষ্ট হইবে না, তবে নামাযে এরূপ করা নিষেধ।

     মসআলাঃ     নামাযের মধ্যে কাহারো সালামের জওয়াবে "ওয়া আলায়কুমুস্সালাম” বলিলে নামায নষ্ট হইবে।

     মসআলাঃ    নামাযের মধ্যে কিছু পানাহার করিলে নামায নষ্ট হইবে। এমন কি তিল বা সুপারীর টুকরা উঠাইয়া খাইলেও নামায নষ্ট হইবে। যদি বাস্তবিক পক্ষে খাদ্যের কণা প্রভৃতি কোন বস্তু দাঁতে লাগিয়া থাকে এবং নামাযের মধ্যে উহা খাইয়া ফেলে যদি উহা ছোলার পরিমাণ কম হয় তবে নামায দুরস্ত হইবে। আর ছোলার সমান বা বেশী হইলে নামায নষ্ট হইবে।

মসআলা নামাযের মধ্যে কোন সুসংবাদ শুনিয়া "আলহামদুলিল্লাহ" বলিলে বা দুঃসংবাদ শুনিয়া "ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন" পড়িলে নামায নষ্ট হইবে।

     মসআলাঃ     নামাযে মধ্যে সন্তান আসিয়া দুধ খাইলে নামায নষ্ট হইবে। যদি দুধ বাহির না হয় তবে নামায নষ্ট হইবে না।

     মসআলাঃ     "আল্লাহু আকবার" বলিবার সময় আল্লাহুর আলেফকে লম্বা অথবা আকবার এর আলেফকে লম্বা করিয়া উচ্চারণ করিলে নামায নষ্ট হইবে। এই প্রকারে আকবারের বে'কে বাড়াইয়া পড়িলেও নামায নষ্ট হইবে।

    মসআলাঃ     কোন পুস্তক বা চিঠিতে দৃষ্টি পতিত হইলে মুখে না পড়িয়া মনে মনে মর্ম বুঝিতে পারিলে নামায নষ্ট হইবে না। আর যদি মুখে পড়ে তবে নামায নষ্ট হইবে।

    মসআলাঃ    নামাযীর সম্মুখ দিয়া কোন লোক, কুকুর, বিড়াল বা বকরী প্রভৃতি চলিয়া যাইলে নামায নষ্ট হইবে না। কিন্তু যাতায়াতকারী মানুষের কঠিন গুনাহ হইবে। এই কারণে এইরূপ স্থানে নামায পড়া উচিত, যেখানে কেহ সম্মুখে না আসিতে পারে ও মানুষের চলাফেরার কষ্ট না হয়। আর যদি কোন খোলা জায়গায়নামায পড়ে তবে এক হাত লম্বা ও এক অঙ্গুলী মোটা একটি কাঠি নিজের সম্মুখে এইরূপ ভাবে পুঁতিবে যেন বাম বা ডাইন চক্ষু বরাবর হয়। আর কোন কাঠি না পুঁতিয়া উঁচু কোন বস্তু সামনে রাখিলেও দূরস্ত হইবে।

    মসআলাঃ     দরকার বশতঃ কেবলার দিকে এক আধ কদম আগে বাড়িলে অথবা পিছনে হটিলে সিনাহ কেবলা দিক হইতে না ঘুরিয়া যাওয়া পর্য্যন্ত নামায দুরস্ত হইবে। কিন্তু সেজদার জায়গা হইতে আগে বাড়িয়া গেলে নামায হইবে না।

    মসআলাঃ     স্ত্রীলোকের পাতলা কাপড় পরিয়া নামায পড়া, যাহাতে তাহার ঘাড় ও মাথার চুল নজর আসে, নামায় হইবে না। (বেঃ জেঃ ১০ম খণ্ড)

    মসআলাঃ     কোন স্ত্রীলোক নামায পড়িতেছে এমতাবস্থায় তাঁহার সন্তান স্তন চুষিলে যদি দুধ বাহির হইয়া পড়ে তবে নামায নষ্ট হইবে কিন্তু অজু নষ্ট হইবে না। তবে তিনবার স্তন চুষিলে দুধ বাহির হউক আর নাই হউক তাহার নামায নষ্ট হইবে। (আলমগিরী)

Post a Comment

0 Comments