পীড়িত ব্যক্তির নামায কী ভাবে পড়তে হবে

    মসআলাঃ-     নামায কোন অবস্থাতেই ছাড়িবে না। যতক্ষণ পর্য্যন্ত দাঁড়াইয়া পড়িবার শক্তি থাকে দাঁড়াইয়া নামায পড়িবে। যখন দাঁড়াইতে না পারিবে বসিয়া পড়িবে। বসিয়া রুকু করার পর দুই সেজদা করিবে। এবং রুকুতে এতটা ঝুঁকিবে যেন মাথা হাঁটুর বাহিরে না যায়।

     মসআলাঃ -আর যদি রুকু সেজদা করিবার ক্ষমতাও না থাকে তবে রুকু সেজদাকে মাথার ইশারা দ্বারা আদায় করিবে। এবং সেজদার জন্য রুকুর চেয়ে বেশী ঝুঁকিবে।

     মসআলাঃ    সেজদা করিবার জন্য বালিশ প্রভৃতি কোন উচ্চ বস্তু রাখার বা উহার উপর সেজদা করা ভাল নয়। যখন সেজদা করিবার শক্তি না থাকে তখন মাথার ইশারা দ্বারাই নামায আদায় করিবে। বালিশের উপর সেজদা করিবার দরকার নাই।

     মসআলাঃ     যদি দাঁড়ানোর শক্তি থাকে কিন্তু দাঁড়াইলে বিশেষ কষ্ট হয় অথবা পীড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা হয় তবে বসিয়া নামায পড়া দুরস্ত।

     মসআলাঃ     যদি দাঁড়াইতে পারে কিন্তু রুকু সেজদা করিতে অক্ষম হয় তবে হয় দাঁড়াইয়া রুকু সেজদা মাথার ইশারায় করিবে, না হয় বসিয়া ইশারার সঙ্গে রুকু সেজদা করিয়া নামায আদায় করিবে। উভয়ই ইচ্ছাধীন কিন্তু বসিয়া পড়া উত্তম।

     মসআলাঃ    যদি বসিবারও শক্তি না থাকে তবে ঘাড়ের পিছনে কোন বালিশ ঠেস দিয়া এমন ভাবে শুইবে যেন মাথা খুব উঁচু হয় এমন কি বসার নিকটবর্তী হয় এবং পা কেবলার দিকে লম্বা করিয়া দিবে। আর যদি কিছু ক্ষমতা থাকে তবে কেবলার দিকে পা না করিয়া বরং হাঁটু উঁচু করিয়া রাখিবে তৎপর মাথার ইশারায় নামায আদায় করিবে এবং সেজদার সময় মাথা বেশী নীচু করিবে। আর যদি শরীরে বালিশ দ্বারা ঠেস দিয়া না শুইতে পারে, তবে মাথা সিনা পর্যন্ত উঁচু করিবে ও কেবলার দিকে পা সম্পূর্ণ লম্বা করিয়া শুইবে এবং মাথার নীচে কোন উচ্চ বালিশ রাখিবে যেন মুখ কেবলার দিকে হয়, আকাশের দিকে না থাকে। তৎপর মাথার ইশারায় নামায আদায় করিবে। রুকুর ইশারা কম ও সেজদার ইশারা কিছু বেশী করিবে।

    মসআলাঃ     যদি চিৎ হইয়া না শুইয়া ডাহিনে বা বাম করটে কেবলার দিকে মুখ করিয়া শয়ন করিয়া মস্তকের ইশারা দ্বারা রুকু সেজদা করিয়া নামায পড়ে হয় তাহাও জায়েজ হইবে। কিন্তু কেবলার দিকে পা করিয়া চিৎ হইয়া শয়ন করিয়া নামায পড়াই ভাল।

    মসআলাঃ     যদি মস্তকের ইশারা দ্বারা নামায পড়িবার শক্তি না থাকে তবে নামায পড়িবে না চক্ষু বা ভুর ইশারায় নামায় হয় না। এইরূপ অবস্থায় এক দিবা রাত্রির বেশী হইলে উক্ত সময়ের নামায মাফ হইয়া যাইবে, সুস্থ হওয়ার পর কাজা পড়াও ওয়াজেব নহে। আর যদি এক দিবা রাত্রির মধ্যেই পুনঃ ইশারা করিয়া নামায পড়িবার শক্তি ফিরিয়া আসে তবে ইশারা দ্বারাই উক্ত নামায সমূহের কাজা আদায় করিবে এবং এ আশা করিবে না যে, যখন সম্পূর্ণ সুস্থ হইবে তখন আদায় করিব, কেননা মৃত্যু হইলে গুনাহগার হইয়া মরিবে।

    মসআলাঃ     এই প্রকার যদি কোন সুস্থ ব্যক্তি অজ্ঞান হইয়া যায় তবে অজ্ঞান অবস্থা এক দিবারাত্রির বেশী না হইলে কাজা পড়া ওয়াজেব। আর এক দিবারাত্রির বেশী হইলে কাজা পড়া ওয়াজেব নহে।

   মসআলাঃ    যদি সর্বাঙ্গ পক্ষঘাত বা অবশ হয় এবং পানি দ্বারা এস্তেঞ্জা করিতে না পারে তবে কাপড় বা ঢিলা দ্বারা মুছিয়া ফেলিবে। নিজে তায়াম্মুম করিতে না পারিলে অপরের সাহায্যে তায়াম্মুম করিয়া নামায পড়িবে। আর যদি ঢিলা বা কাপড় দ্বারা মুছিবার শক্তিও না থাকে তবুও নামায কাজা না করিয়া ঐ অবস্থায়ই নামায পড়িবে। অন্য লোকে তাহার গুপ্তস্থান দেখা ও মুছিয়া দেওয়া দুরস্ত নহে। মা, বাপ, ছেলে কেহই দেখিতে বা মুছিতে পারিবে না। অবশ্য স্ত্রী তদীয় স্বামীর ও স্বামী তদীয় স্ত্রীর গুপ্তস্থান দেখা দুরস্ত আছে।

    মসআলাঃ     সুস্থ অবস্থায় কিছু নামায কাজা হওয়ার পর পীড়িত হইলে উক্ত অবস্থায় যে ভাবে নামায পড়িতে ক্ষমতা থাকে সেইভাবেই নামাযের কাজা আদায় করিবে। কখনও দাঁড়াইয়া পড়ার অথবা বসিয়া রুকু সেজদা করিবার শক্তি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করিবে না। ইহা সমস্তই শয়তানী খেয়াল মাত্র। যথা সময়ে নামায পাঠ করা ও বিলম্ব না করাই দ্বীনদারের কাজ।

    মসআলাঃ    যদি পীড়িত ব্যক্তির বিছানা নাপাক হয় এবং উহা বদলাইতে তাহার কষ্ট হয় তবে উক্ত বিছানায় নামায পড়া দুরস্ত।

    মসআলাঃ    হেকিম বা ডাক্তার কাহারও চক্ষু অপারেশন করিলে এবং নড়াচড়া করিতে মানা করিলে শুইয়া নামায পড়িতে থাকিবে।

    মসআলাঃ     যদি কোন ব্যক্তির কেরাত লম্বা হওয়ার কারণে দাঁড়াইয়া থাকিতে ক্লান্তি ও কষ্ট বোধ হইতে থাকে তবে তাহাকে কোন দেওয়ালে, বৃক্ষে বা কোন লাঠি প্রভৃতিতে ভর দেওয়া মাকরুহ হইবে না। তারাবীহের নামাযে দুর্ব্বল এবং বৃদ্ধ লোকদের প্রায়ই ইহার প্রয়োজন হইয়া থাকে।

    মসআলাঃ    যে ফরজ নামাযের পর সুন্নাতে মোয়াক্কেদা নামায আছে ফরয পড়িবা মাত্রই ছোট মোনাজাত করিতে হইবে। বিলম্বে মোনাজাত করিলে মাকরুহ তাহরীমা হইবে।

    মসআলাঃ     যে ফরজ নামাযের পরে সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নামায নাই সেই ফরজ নামায বাদ ডাহিন বা বাম দিকে ফিরিয়া দেরী করিয়া মোনাজাত মোস্তাহাব।

Post a Comment

0 Comments