চার রংয়ের পোষাক দর্শন
বোরাকে মহানবী (সঃ) সামনে এগিয়ে চললেন। আরও কিছু দূর যাবার পর তার সামনে চার রংয়ের পোশাক রাখা হলো। (ক) সাদা (খ) গোলাপী (গ) কালো এবং (ঘ) সবুজ। 'মহানবী (সঃ)-কে এর থেকে একটি রং বাছাই করতে বলা হলো। তিনি রং চতুষ্টয়ের মধ্যে সাদা রংটিই পছন্দ করলেন এবং সাদা রংয়ের পোশাকটি গ্রহণ করলেন।
হযরত জিব্রাইল (আঃ) মহানবী (সঃ)-এর সাদা রং পছন্দ করাকে আল্লাহ মনোনীত বলে মন্তব্য করলেন। তিনি বললেন- "হে প্রিয় রাসূল! আপনি যে রংটি পছন্দ করেছেন তা আল্লাহর নিকটও অধিক পছন্দীয়। অন্য তিনটি রংয়ের পোশাক আল্লাহর নিকট এখন আপনার জন্যে পছন্দনীয় নয়। কারণ গোলাপী রংয়ের পোশাক মুসলিম জাতির জন্যে নয়, তা অমুসলিম ইহুদী খৃষ্টানদের জন্যে। যদি আপনি এ রং পছন্দ করতেন তাহলে আপনার উম্মতের অনেকে ইহুদী, খৃষ্টান হয়ে যেত। আপনি শ্বেত বর্ণের পোশাক পছন্দ করায় আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এ দুশ্চিন্তা হতে রেহাই দিলেন। আর কালো পোশাক হচ্ছে দোজখীর জন্যে নির্ধারিত। যদি আপনি এ রং পছন্দ করতেন, তাহলে আপনার অধিকাংশ উম্মতই দোজখী হতো। আপনার শ্বেত বদের পোশাক পছন্দ করায় আল্লাহ তায়ালা এ সম্ভবনা থেকেও আপনাকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন।
আর সবুজ পোশাক হচ্ছে জান্নাতীদের জন্যে নির্দিষ্ট। কিন্তু তা আপনার অনুসারীদের পৃথিবীতে পরার জন্য নয়। বরং তাদের তা বেহেশতে পরার জন্যে। অতএব আপনি তা দুনিয়াতে পছন্দ না করে উত্তমই করেছেন। আপনার শ্বেত ধবধবে পোশাক পছন্দ করায় আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত খুশী হয়েছেন।
পুরমা সুন্দরী রূপে দুনিয়া দর্শন
মহানবী (সঃ) বোরাকে দ্রুত বেড়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি অনিন্দ সুন্দরী এক ষোড়শী তন্বী যুবতীকে মহামূল্য হীরে, মুক্তো, পান্না পরিহিত অবস্থায় দেখতে পেলেন। সে মহানবী (সঃ)-কে নিজের দেহের অপরূপ রূপ প্রদর্শন করে গোপন কথা জানতে চাইল কিন্তু নিষ্পাপ নবী ঐ সুসজ্জিত নারীর সৌন্দর্যের দিকে আদৌ ভ্রুক্ষেপ করলেন না। বরং তিনি বোরাককে তাগাদা দিয়ে একটু দ্রুত ঐ স্থান অতিক্রম করলেন।
কিছু দূর যাবার পর তিনি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলকে ঐ মহিলার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "আপনি যে তাকে রমণী মনে করেছেন আসলে সে কোন রমণী নয়। দুনিয়া আপনার কাছে সেজে গুজে রূপসী নারীর রূপ ধরে এসেছিল। সে আপনাকে প্রতারণা ও প্রবঞ্চণা দিতে চেয়েছিল। যদি আপনি তার দিকে লক্ষ্য করতেন আর তার মনের গোপন কথা শুনতেন, তাহলে আপনার প্রিয় উন্মতেরা দুনিয়ার মোহে পড়ে পরলোকের কথা ভুলে যেত।
কুৎসা বৃদ্ধা রূপে দুনিয়া দর্শন
মহানবী (সঃ) ও আল্লাহর প্রেরিত দূত জিব্রাইল কথোপকথন করে এগিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে জনৈক কুৎসিত বৃদ্ধা এসে তাদের পথের ধারে দাঁড়াল। সে কিছুই চাচ্ছে না বটে, কিন্তু তার কালো কুচকুচে চেহারা দেখলে ভয়ে দূরে পালাতে হয়। মহানবী (সঃ) বন্ধুবর জিব্রাইল এর কাছে এ বৃদ্ধার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। জিব্রাইল (আঃ) উত্তরে বললেন- "আপনার কাছে একটু আগে যে মোহনীয় রূপসী রমণী আপনাকে প্রফুল্ল করতে এসেছিল এ সেই রমনী। অর্থাৎ যে দুনিয়া আপনার কাছে এসে আপনাকে প্রবঞ্চণা দিতে চেয়েছিল। সেই দুনিয়ারই এ আসল রূপ। আপনি তার রূপ-লাবণ্যের দিকে তাকান নি বলে এখন নিরাশ হয়ে আপনাকে তার মূল স্বরূপ প্রদর্শন করলো।
মাদায়েন বা মিসর দর্শন
এবার বোরাক আল্লাহর হুকুমে মিসরের অভিমুখে রওয়ানা হলো। কয়েক কদম অগ্রসর হওয়ার পরই বোরাক মিসরের পবিত্র ভূমিতে এসে পৌঁছল। এখানে এসে মহানবী (সঃ) মন-মাতানো সুগন্ধি অনুভব করলেন, তখন তিনি জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন- "হে জিব্রাইল! এ সুগন্ধি কোথা হতে আসছে? জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হে নবী! এখানে আল্লাহর এক প্রিয় বান্দীর কবর আছে সেখান থেকে এ সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। সে আল্লাহর প্রিয় বান্দীর ঘটনা সম্পর্কে মহানবী (সঃ) জানতে চাইলে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- বর্ণিত আছে, মিসরে যখন ফিরাউনের কর্তৃত্ব চলছিল, তখন ফেরাউনের কন্যাকে চিরুনী দেয়ার জন্য আল্লাহর এক বান্দী নিযুক্ত ছিল। সে একসময় ফেরাউনের কন্যাকে চিরুনী করছিল। এমন সময় হঠাৎ তার হাত থেকে চিরুনী খসে মাটিতে পড়ে গেল। উক্ত মহিলা মাথা নিচু করে যমিন হতে চিরুনী উঠানোর সময় তার মুখ থেকে হঠাৎ করে এ শব্দটি বের হল-
. بِسْمِ اللهِ نَبَى فِرْعَوْنَ
অর্থাৎঃ আল্লাহর নাম উঁচু হউক আর ফেরাউনের মুখ কালো হউক। ফেরাউনের কন্যা উক্ত বান্দির এ কথা শুনামাত্র চেঁচিয়ে উঠল- হে খাদেমাহ! তুমি ইহা কি বললে? তুমি কার নাম উচু হওয়ার কথা বলছ এবং তাঁর সাথে আমার পিতা ফেরাউনের মুখ কালো হওয়ার কথা বলছ? একথা বলে ফেরাউনের কন্যা বান্দিকে অনেক ধমকালো। এরপর কাঁদতে কাঁদতে ফেরাউনের নিকট গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলল। মেয়ের কথা শোনা করা মাত্র ফেরাউন রেগে উত্তপ্ত হয়ে গেল এবং সাথে সাথে উক্ত বান্দিকে ডেকে পাঠাল এবং জিজ্ঞেস করল- "হে বান্দি! তুমি কি এই এই কথা বলেছ?"
জবাবে উক্ত বান্দি বলল- "হ্যাঁ, আমি এভাবে বলেছি।" ইহা শুনামাত্র ফেরাউন আরো রাগান্বিত হয়ে গিয়ে গোলামদেরকে আদেশ করল- "একটা বিরাট কড়াই নিয়ে উহা তেল দ্বারা পূর্ণ করে আগুনে গরম করতে থাক। অতঃপর তেল যখন খুব উত্তপ্ত হয়ে যাবে তখন ঐ খাদেমাকে তার সন্তানসহ ঐ উত্তপ্ত তেলের মধ্যে ছেড়ে দাও।"
গোলামরা আদেশ অরে কাজ করল। তারা বিরাট এক কড়াই আগুনের উপর রেখে উহাকে তেল দ্বারা পূর্ণ করল এবং জ্বালাতে থাকল। তারপর যখন তেল খুব উত্তপ্ত হয়ে ফুটতে থাকল তখন ফেরাউন প্রথমে ঐ ফুটন্ত তেলের ভিতর সে আল্লাহর বান্দীর বড় ছেলেকে তার সামনে ছেড়ে দিল। তারপর তার মেঝ ছেলেকে ঐ তেলের মধ্যে নিক্ষেপ করল। এসব উক্ত মহিলা নীরব দর্শকের ন্যায় সচক্ষে দেখছিল। যখন তার দুগ্ধ পোষ্য কোলের সন্তানকে তাক কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ছেড়ে দিল, তখন তার চোষে অশ্রু আসল। তার চোখে অশ্রু আসার পরই ঐ কড়াইর ফুটন্ত তেলের ভিতর থেকে তার ছোট ছেলে মাথা উঠিয়ে বলল- হে মা। এটা ফুটন্ত তেল নয়, এটা ফুলের বাগিচা। এটা জান্নাতুল ফেরদৌসের বাগান। এর চেয়ে মজাদার আর কিছুই নেই। এখানে আমাদের মহান আল্লাহ স্বয়ং উপস্থিত আছেন। হে মা। তুমি তাড়াতাড়ি এর মধ্যে ঝাপিয়ে পড়। এখানে তোমার প্রভু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমার জন্য অপেক্ষমান রয়েছেন। অবশেষে আল্লাহর এ প্রিয় বান্দী ঐ ফুটন্ত তেলের মাঝে লাফিয়ে পড়ে আখিরাতের চির শাস্তি লাভ করলেন।
জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হে আল্লাহর পয়গাম্বর। আপনি এখানে যে সুগন্ধী অনুভবম করছেন তা হলো ঐ জান্নাতুল ফেরদৌসের সুগন্ধী। এটা যদিও মিসরের ভূমি, তথাপিত এটা জান্নাতুল ফেরদৌসের একটি অংশ।
0 Comments