চতুর্থ আকাশের দর্শনীয় বস্তুসমূহ কী কী

চতুর্থ আকাশে অবস্থান

        মহানবী (সঃ) তৃতীয় আকাশের সফর শেষে চতুর্থ আকাশের দিকে রওয়ানা হলেন। সেখানেও পূর্বের ন্যায় চতুর্থ আকাশের দরজাও পূর্বের ন্যায় বন্ধ ছিল। চতুর্থ আকাশের দ্বার রক্ষীর সাথেও হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তর হলো যেমন হয়েছিল পূর্বেকার দ্বার রক্ষীদের সাথে। অবশেষে চতুর্থ আকাশের দ্বার রক্ষী দরজা খুললে মহানবী (সঃ) ভিতরে প্রবেশ করলেন তাদের সাথে ছিল বিভিন্ন সম্মানিত ফেরেশতাগণ।

        চতুর্থ আকাশের ফেরেশতাগণ মহানবী (সঃ)-এর আগমনের সংবাদ পেয়ে দলে দলে তাকে দেখতে এসে ভীড় জমাতে লাগল। তারা মারহাবা এবং খোশ আমদেদ জানিয়ে মহানবী (সঃ)-এর যিয়ারত দ্বারা নিজকে ধন্য করলো। চতুর্থ আকাশেও মহানবী (সঃ)-কে এ গর্বিত নূরানী উপঢৌকন প্রদান করা হলো যার উপরে নূরানী হরফে লিখা ছিল-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنزَلَ عَلَى عَبْدِهِ الْكِتَابِ .

হযরত ইদ্রিস (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ

        চতুর্থ আকাশে মহানবী (সঃ) এক জায়গায় দেখলেন যে, জনৈক মহাপুরুষ সোনার চেয়ারে বসে আছেন। তার পরনে রয়েছে অমূল্য পোশাক। তাতে লেখা-

لا إلهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ.

        এরূপ মাধুরীর অধিকারী আল্লাহর নবীকে দেখে হযরত রাসূল (সঃ) সাথী জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন- "ভাই জিব্রাইল! এ মহামানবের পরিচয় দিয়ে আমায় কৃতার্থ করুন।" প্রভুরে হযরত জিব্রাইল বললেন- "হে আল্লাহর রাসূল। ইনি হচ্ছেন হযরত ইদ্রিস নবী। তাকে আল্লাহ তায়ালা জীবিতাবস্থায় আসমানে উত্তোলন করেন। আপনি তাকে সালাম করুন।"

        মহানবী (সঃ) তাকে সালাম করলেন। তিনিও তার সালামের প্রত্যুত্তর দিলেন এবং হযরতকে খোশ আমদেদ জানালেন। মহানবী (সঃ) বললেন- "ভাই ইদ্রিস। আপনাকে আল্লাহ তায়ালা আমার আগেই বেহেশতে প্রবেশ করিয়েছেন। অতএব বেহেশতের সুখ-শান্তির কথা আপনি কিছু ব্যক্ত করুন।"

        মহানবী (সঃ)-এর বাণী শুনে হযরত ইদ্রিস (আঃ) উত্তর দিলেন- "ওগো সাইয়েদুল। মোরসালীন। আমি এখনো বেহেশতে প্রবেশ করতে পারিনি। তবে আমি বেহেশতের দরজাগুলো দেখেছি। তাতে লেখা রয়েছে- "মুহাম্মদ (সঃ)-এর আগে কোন নবী এবং তার উম্মতের আগে অপর কোন নবীর উম্মতই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।"

চতুর্থ আকাশের দর্শনীয় বস্তুসমূহ

        মহানবী (সঃ) চতুর্থ আসমানে পৌঁছার পর দেখতে পেলেন এখানে নূরানী ফেরেশতাগণ নামাজে তাশহুদের কায়দায় বসে তাসবীহ পাঠ করছেন- 

        এই চতুর্থ আকাশে হযরত আজরাঈল (আঃ)-এর সাথে মহানবী (সঃ)-এর সাক্ষাত লাভ হয়। মহানবী তাকে খুব চিন্তিত অবস্থায় একটি কুবরীতে বসা দেখতে পান। হযরত জিব্রাইল (আঃ) তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন- "হে আল্লাহর নবী। ইনি হযরত আজরাঈল (আঃ)। ইনি দোস্তকে দোস্ত থেকে, বাপকে বেটা থেকে, স্বামীকে স্ত্রী থেকে পৃথক করে থাকেন।"

        এবার হযরত আজরাঈল (আঃ) মহানবী (সঃ)-কে দেখে মুচকি হেসে বললেন- "হে রাসূল (স)। মহান আল্লাহর কাছে আপনার সমতুল্য সম্মানিত আর কেউ নেই। আপনি আল্লাহর হাবীব। আপনার উম্মতগণ হলো, শ্রেষ্ঠ উম্মত। আমি তাদের প্রতি বড়ই মেহেরবান।"

        তখন মহানবী (সঃ) হযরত আজরাঈল (আঃ)-কে প্রশ্ন করলেন- "হে ভাই আজরাঈল। আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?"

        জবাবে আজরাঈল (আঃ) বললেন- "মহান আল্লাহ আমাকে তার মাখলুকাতের আত্মাসমূহ কবজ করার জন্য নিয়োজিত করেছেন। অতএব আমি আমার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছি কি না? তারই জন্য আমি সর্বদা চিন্তিত।"

         মহানবী (সঃ) পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলেন- "হে ভাই আজরাঈল! আপনি কি এস্থানে বসেই আত্মা কবজ করে থাকেন না যথাস্থানে গিয়ে রূহ কবজ করেন।"

        উত্তরে হযরত আজরাঈল বললেন- "আমি আমার সহকর্মীদের দ্বারা আত্মাসমূহ কবজ করে থাকি। তারা মানুষের রূহসমূহকে টেনে কণ্ঠনালী পর্যন্ত নিয়ে আসে। এরপর আমি এখান থেকে তা হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করি।"

        মহানবী (সঃ) বলেন- "আমি তখন আজরাঈলের হাত ধরে অনুরোধ করি, হে ভাই আজরাঈল (আঃ) আমার উম্মতের আত্মা এভাবে কবজ করবেন না; বরং, তাদের উপর যেন দয়া করা হয়।"

        উত্তরে তিনি বললেন- "হ্যাঁ আপনার উম্মতের মধ্যে যারা ঈমানদার তাদের আত্মা এমনভাবে কবজ করা হবে যেমন, দুগ্ধপোষ্য শিশু তার মায়ের কোলে দুধ পান করতে করতে নিদ্রা যায়। তার কোন খেয়াল থাকে না। এরূপভাবে তাদের আত্মা কবজ করা হবে।"

        তৎপর মহানবী (সঃ) তথায় চন্দ্র ও সূর্য প্রত্যক্ষ করেন। কারণ চন্দ্র ও সূর্য চতুর্থ আসমান হতেই দুনিয়ায় কিরণ দান করে থাকেন।

Post a Comment

0 Comments