দ্বিতীয় আকাশে অবস্থান
মহানবী (সঃ) প্রথম আকাশ পরিভ্রমণ করে হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশের প্রবেশ দ্বারে উপনীত হলেন। হযরত জিব্রাইল দ্বার রক্ষীকে দ্বার খোলার জন্যে অনুরোধ করলেন। দ্বিতীয় আকাশের দ্বার রক্ষী হযরত ইস্রাফীল জিজ্ঞেস করলেন- "আপনি কে?"
জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "আমি জিব্রাইল।"
"আপনার সাথে আর কে?"
"আমার সঙ্গে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আছেন।"
দ্বার রক্ষী ফেরেশতা প্রশ্ন করলেন- "তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে?"
জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হ্যাঁ তাকে আল্লাহ তায়ালা ডেকে পাঠিয়েছেন।"
তৎক্ষণাৎ দ্বিতীয় আসমানের প্রবেশ দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেল এবং ফেরেশতা অভ্যর্থনা জানিয়ে বললো- "আগন্তুককে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তার শুভাগমন সত্যি মোবারক হোক। "মহানী (সঃ) ভেতরে প্রবেশ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ লক্ষ ফেরেশতার কণ্ঠেধ্বনিত হলো- "মারহাবা, মারহাবা। "মহানবী (সঃ) ও তাদের অভ্যর্থনার ও সালামের জবাব দিলেন।
হযরত ঈসা ও ইয়াহিয়া (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ
মহানবী (সঃ) দ্বিতীয় আকাশের ফেরেশতাদের সাথে সাক্ষাত করলেন। তিনি একটু সামনে অগ্রসর হলেন এবং দেখতে পেলেন যে, এক স্থানে সোনার কুবমাতে দু'জন শক্তিশালী, স্বাস্থ্যবান লোক বসে আছেন। তাদের দেহের রৌশনাতে সারা আকাশ আলোকজ্জ্বল হয়েছে। এসব দেখে হযরত (সঃ) সাথী জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন- "হে আল্লাহর দূত। এরা কারা? এদের পরিচয় আমাদের বলুন।"
হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "এরা হচ্ছেন হযরত ঈসা ও হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) নামের দু'জন প্রখ্যাতি নবী। হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন ধৈর্যশীল নবী, মরিয়ম তনয়, বিনা পিতার সৃষ্ট রূহুল্লাহ। তিনি ভবিষ্যদ্বানী করতে পারতেন। কে কি গৃহে খেয়েছে তা তিনি নিদ্বিধায় বলতে পারতেন। পাখি, মাটি দ্বারা তৈরি করে আকাশে ওড়াতে পারতেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি জন্মান্ধ ও শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করতে পারতেন। তিনি আজীবন একটি বস্ত্র গায়ে দিয়ে কাটিয়েছেন। তিনি কোন ঘর-বাড়ি তৈরি করেন নি। বরং পাহাড়, পর্বত, বন, বাদাড়, মাঠ-ঘাট, যেখানে সেখানে তিনি যাযাবরী জীবন যাপন করতেন। এ সংসার বিরাগী নবী জীবনে কখনো সুস্বাদু খাবার গ্রহণ করেন নি। তিনি চিরকুমার ছিলেন। তিনি আল্লাহর ধ্যানে এতই বিভোর ও বিমগ্ন থাকতেন যে একদা একটি পর্বতের চূড়ায় তিনি মহান আল্লাহর যিকরে ছিলেন তখন প্রবল বেগে শিলা-বৃষ্টি বর্ষিত হচ্ছিল। মহা ঝড়-ঝঞ্ছা বয়ে যাচ্ছিল তা সত্ত্বেরও তিনি অধীর হন নি বা ধ্যান ভেঙ্গে নিরাপদ আশ্রয় নেননি। তার এই অভূতপূর্ব ধৈর্য দেখে আকাশের ফেরেশতা এভাবে আল্লাহর দরবারে আকুল আবেদন জানালো যে, "হে রহমানীর রাহীম! তোমার জন্য একান্ত নিবেদিত প্রাণ নবী ঈসা (আঃ) ধ্যানস্থ রয়েছেন। অথচ তার উপর দিয়ে হাজার মাইল বেগে ঘূর্ণি ঝড়, সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে। তুমি তার প্রতি তোমার করুনা বর্ষণ করো।"
ফেরেশতাদের এ আবেদন শুনে আল্লাহ তায়ালা বললেন- "হে আমার তাবেদার ফেরেশতাকূল। তোমরা যা দেখছো তাই বলছো। আসলে ঈসা (আঃ) সে প্রবল ও তীব্র ঝড় ঝাপটা সয়ে চলেছে এবং ধ্যানে একাগ্রতা অবলম্বন করেছে। তার ফলে তাকে জান্নাতুল। ফেরদৌসে হুরের সাথে বিয়ে দেয়া হবে। এ উপলক্ষ্যে তোমাদের মতো ফেরেশতা তার বিয়ের দাওয়াতে ভোজন করবে। এতে কি তোমরা সন্তুষ্ট নও এবং আমার ঈস্য খুশী হয়ে না।
হযরত জিব্রাইল (আঃ) এভাবে হযরত ঈসা (আঃ)-এর পরিচয় প্রদান করে বলেন- "হে আল্লাহর রাসূল। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হলেন হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)। তিনি হযরত যাকারিয়া নবীর পুত্র। এ কোমল প্রাণ খোদা ভীরু লোকটি অতি ছোট বেলা হতেই আল্লাহকে ভয় করে কেঁদে সারা হতেন। তিনি নিরালায় থাকতে ভালোবাসতেন আর অঝোরে অশ্রু ফেলতেন।
একবার শিশুকালে তার স্নেহময়ী মাতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন- "আব্বু। তুমি এখনো ছোট খোকা, অথচ তুমি আল্লাহর ভয়ে এত কেন কাঁদো? তোমার এখনো কোন পাপ হয়নি।"
হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) উত্তরে বললেন- "আম্মি। আমার শ্রদ্ধেয়া আমি। আমি জানি যে, শিশু কালের পাপ ধর্তব্য নয়। কিন্তু আমি আপনার উনুন ধরাবার পদ্ধতি দেখে ভয়ে জড়সড় হয়েছি এবং আল্লাহর ভয়ে কেঁদে ব্যাকুল হচ্ছি। আপনি উনুন ধরাতে গিয়ে প্রথম ছোট ছোট জ্বালানি কাঠ নিক্ষেপ করেন অতঃপর বড় বড় কাঠ। হয়তো আল্লাহ তায়ালা দোজখে সর্ব প্রথম ছোট শিশুদের ফেলবেন তারপর বয়স্ক লোকদের। এখন আমার কি উপায় হবে। এ কারণেই আমি কেঁদে বুক ভাসাই।"
পরিশেষে হযরত জিব্রাইল (আঃ) আমাদের মেরাজ গমন প্রিয় মহানবী (সঃ)-কে বললেন- "আপনি এদের দু'জনকেই সালাম করুন।" মহানবী (সঃ) তাদের দু'জনকেই সালাম করলেন। তারাও সালামের জবাব দিয়ে বললেন-
مرحبا بالنبي الصالح والابن الصالح .
অর্থাৎঃ "হে ন্যায়দানী ভাই, হে পূণ্যবান নবী! খোশ আমদেদ।"
দ্বিতীয় আকাশের দর্শনীয় বস্তুসমূহ
হযরত ঈসা (আঃ) ও ইয়াহিয়া (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভের পর মহানবী (সঃ) সামনের দিকে অগ্রসর হন এবং দ্বিতীয় আকাশের আজব আজব দর্শনীয় বস্তু তিনি পর্যবেক্ষণ করেন। যেমন- মহানবী (সঃ) দেখতে পান, যার ৭০টি মাথা, প্রত্যেক মাথায় ৭০টি মুখ। প্রত্যেক মুখে ৭০টি জিহ্বা, প্রত্যেক জবানে তিনি শুনতে পান।
سُبْحَانَ الْخَالِقِ العَظِيمِ سُبْحَانَ الْعَظِيمِ الْأَعْظَمِ .
হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "এই ফেরেশতার নাম কাসেম। মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে বান্দাদের রিযিক পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত করেছেন। তিনি তার সহযোগি ফেরেশতাদের দ্বারা প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে তাদের স্ব-স্ব রিযিক পৌঁছায়েছেন।
এরপর মহানবী (সঃ) দ্বিতীয় আকাশে এমন একদল নূরানী ফেরেশতাদের দেখতে গেলেন যারা সারিবদ্ধ হয়ে রুকুর মধ্যে পাঠ করছে-
سبحان الوَارِثِ الواسع . سُبْحَانَ الْغَنِي الَّذِي يُدْرِكُ إِلَّا إِنَّا بُصَارِ وَلَا بَدْ رِكَهُ سُبْحانَ العَظِيم العليم.
0 Comments