সপ্তম আকাশে অবস্থান
মহানবী (সঃ) ষষ্ঠ আকাশ ভ্রমণ শেষ করে অগণিত ফেরেশতাসহ সপ্তম আকাশে এসে পৌঁছেন। এখানেও এসে সপ্তম আকাশের দ্বার রক্ষীর সাথে এবং হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর অনুরূপ প্রশ্নোত্তর হয়েছিল যা পূর্বেকার দ্বার রক্ষীদের সাথে হয়েছিল। এ আকাশের দ্বার রক্ষীর নাম যোহাইল। অবশেষে সপ্তম আকাশের দ্বার রক্ষী যোহাইল দরজা খুলে দিলে মহানবী (সঃ) সপ্তম আকাশে আরোহণ করলেন।
মহানবী (সঃ) এ আকাশের সুজন নৈপূন্য দেখে অবাক হলেন কারণ প্রতিটি আকাশটি ছিল আলাদা আলাদা ধাপ পর্দার্থের তৈরি। প্রথম আকাশ মুক্তো দিয়ে, দ্বিতীয় আকাশ স্বচ্ছ আয়নার মত জমাট পানি দিয়ে, তৃতীয় আকাশ লোহা দিয়ে, চতুর্থ আকাশ রূপা, পঞ্চম আকাশ স্বর্ণ, যস্ত আকাশ হীরাকুত দিয়ে নির্মিত হয়েছে। আর এ সপ্তম আকাশ তৈরি করা হয়েছে খাঁটি মূর্তি দিয়ে।
এ আকাশ এতে নূরানী ছিল যে, চোখের দৃষ্টি যেন স্থির থাকতে পারছে না। আর এ আকাশের ফেরেশতাগণও এতো নূরানী ছিল যে, যাদের জবান মোবারকে খুব উত্তেজনা ও আগ্রহের সাথে তাসবীহ জারী ছিল। তাদের সামনে অগ্রসর হয়ে তাদের সালাম করল। তারা মহানবী সম্পর্কে তার সালামের জবাব অত্যন্ত মহব্বতের সাথে আদায় করেন। সপ্তম আকাশে মহানবী (সঃ)-কে নূরানী রূহানী খিলআত বা উপঢৌকন প্রদান করা হলো যার উপর লেখা-
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمُسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَا الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيهِ مِنْ أَيَّاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البصير
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ
মহানবী (সঃ) সামনে এগিয়ে গেলেন তখন তিনি একজন সুদর্শন সুশ্রী লোক দেখতে গেলেন। তার চেহারা অনেকটা হযরতের চেহারার মতো। তিনি বাইতুল মামুরের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছেন। হযরত সাথী জিব্রাইল (আঃ)-এর কাছে এ ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "ইনি আপনার পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। তাকে আপনি সালাম করুন।"
মহানবী (সঃ) তার কাছে গিয়ে তাকে সালাম করলেন। সালামের জবাবে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) জবাব দিলেন-
مرحبا بالشي الصالح والابن الصالح .
অর্থাৎ : নেককার পুত্র নেককার নবী। আপনার অশেষ ধন্যবাদ। হে আল্লাহর অতি প্রিয় হাবীর! আপনার এ শুভাগমনে আমারই গৌরব বর্ধিত হয়েছে। পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে আপনি আপনার উম্মতের কাছে আমার সালাম জানাবেন এবং একটি সুসংবাদ পৌঁছাবেন- "বেহেশত হচ্ছে একটি সুশোভিত উদ্যান, চির শান্তি নিকেতন। বেহেশতী ফল, বেহেশতীদের উপদেয় খাবার। এ বাগানের কোন কোন স্থান এখনো বৃক্ষশূন্য। সেখানে আপনার উম্মতকে গাছ লাগাতে বলবেন। আর বেহেশতে গাছ লাগাবার দোয়া হল-
سبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلا الله وَاللهُ أَكْبَرُ ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ .
মহানবী (সঃ) তার বংশীয় ও ধর্মীয় পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর উপরোক্ত দোয়া গ্রহণ করলেন। পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করে উক্ত দোয়া তার সাহাবীদের কাছে ব্যক্ত করে বললেন- "যে ব্যক্তি উল্লেখিত পাঁচশো অমৃত ফল বৃক্ষ রোপিত হবে।"
সপ্তম আকাশে দর্শনীয় বস্তুসমূহ
মহানবী (সঃ) সপ্তম আকাশে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সামনে দু'দল বিপরীত আকৃতির লোক দেখলেন। এক দলের সৌন্দর্য অতি মনোরম, অন্য দলের চোহারার অর্ধাংশ কালো আর অর্ধাংশ সাদা। সেখানে তিনটি প্রবাহমান ঝর্ণা রয়েছে। যারা ঐ ঝর্ণার পানিতে গোসল করছে। তাদের চেহারার কালিমা দূর হচ্ছে।
এ বিস্ময়কর দৃশ্য দেখে মহানবী (সঃ) সাথী জিব্রাইল (আঃ)-এর নিকট এর তাৎপর্য জিজ্ঞেস করলেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হে আল্লাহর প্রিয় নবী। এ সুন্দর জ্যোতিময় লোকগুলো হচ্ছে তারা, যারা আপনার উম্মতের মধ্যে ইনসান ধর্ম গ্রহণ করে আপনার ও আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আর যারা ইনসান ধর্ম গ্রহণ করে সৎ কাজ ও অসৎ কাজও করেছে তাদের চেহারা কালিমা লিপ্ত হয়েছে এবং অর্ধাংশ প্রোজ্জ্বলও হয়েছে। আর তিনটি বাংলার প্রথমটি তাওবার, দ্বিতীয়টি মাগফিরাতের, এবং তৃতীয়টি রহমতের। আপনার উম্মতের মধ্যে এ সম্প্রদায় তাদের পাপ মোচনের জন্য এ ঝর্ণায় গোসল করছে। তাই তাদের চেহারায় এমন এ অপরূপ সুন্দর রূপ ধারণ করেছে। হে আল্লাহর নবী, এসব আপনার পদমর্যাদা ও সম্মানের জন্যই তৈরি করা হয়েছে।
0 Comments