সুন্নত ও নফল নামাজ


    মসআলাঃ- ফজরের সময় ফরজের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়া সুন্নাত। হাদীস শরীফে ইহার জন্য বিশেষ তাকীদ আসিয়াছে। ইহাকে কখনও ছাড়িতে নাই। যদি কোন দিন এরূপ বিলম্ব, হয় যে নামাযের সময় একরূপ চলিয়া যায়, তবে শুধু দুই রাকাত ফরয পড়িবে। কিন্তু সূর্যোদয় হওয়ার পর উক্ত দুই রাকাত সুন্নাতের কাজা আদায় করিবে। ইহার সময় হলো সূর্য্য মাথার উপরে আসার পূর্ব পর্য্যন্ত।

    মসআলাঃ    জোহরের সময় প্রথম চারি রাকাত সুন্নাত, তৎপর চারি রাকাত ফরয, তৎপর দুই রাকাত সুন্নাত পড়িবে। জোহরের এই সুন্নাত ছয় রাকাত নামায বিশেষ জরুরী, ইহা পড়ার জন্য বিশেষ তাকীদ আছে। বিনা দরকারে ছাড়িয়া দিলে গুনাহ হইবে।

    মসআলাঃ     আসরের সময় চারি রাকাত সুন্নাত পড়িবে। তৎপর চারি রাকাত ফরয পড়িবে। তবে আসরের সুন্নাতের জন্য বিশেষ তাকীদ নাই। যদি কেহ না পড়ে তবে গুনাহ হইবে না।

    মসআলাঃ     মাগরিবের সময় প্রথম তিন রাকাত ফরয, তৎপর দুই রাকাত সুন্নাতও বিশেষ জরুরী, না পড়িলে গুনাহ হইবে।

    মসআলাঃ     এশার সময় মোস্তাহাব এই যে প্রথম চারি রাকাত সুন্নাত তৎপর চারি রাকাত ফরয তৎপর দুই রাকাত সুন্নাত তৎপর ইচ্ছা হইলে দুই রাকাত নফল পড়িবে। এই হিসাবে এশার নামাযে ছয় রাকাত সুন্নাত হইল। যদি কেহ এত রাকাত না পড়ে তবে প্রথম চারি রাকাত ফরয তৎপর দুই রাকাত সুন্নাত তৎপর বেতর পড়িবে। এশার এই দুই রাকাত সুন্নাত পড়াও বিশেষ জরুরী, না পড়িলে গুনাহ হইবে। বেতরের পর দুই বাকাত নফল পড়িবে।

    মসআলাঃ     রমজান মাসে তারাবীহের নামায সুন্নাত। ইহার সম্বন্ধে বিশেষ তাকীদ আছে, ইহা ছাড়িয়া দেওয়া গুনাহ। এশার ফরজ ও সুন্নাতের পর দুই দুই রাকাতের নিয়ত বাঁধিয়া কড়ি রাকাত নামায পড়িতে হয় কুড়ি রাকাত আদায় করার পর বেতের পড়িবে,

        বিশেষ দ্রষ্টব্য (যে সুন্নাত পড়া জরুরী তাহাকে সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ বলে এবং দিবারাত্রে ইহা বার রাকাত। যথা:- ফজরের দুই রাকাত, জোহরের প্রথম চারি রাকাত, ও পরে দুই রাকাত, মগরিবের দুই রাকাত এবং এশার দুই রাকাত। এতদ্ব্যতীত রমজান মাসের তারাবিহের নামায এবং কোন কোন আলেমের মতে তাহাজ্জুদের নামায ও সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ।

     মসআলাঃ     অজু করার পর দুই রাকাত নফল নামায পড়াকে তাহইয়াতুল অজু বলে। হাদীস শরীফে ইহার বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ আছে তবে, যে সময় নফল নামায পড়া মাকরুহ তখন পড়িবে না।

     মসআলাঃ    এশরাকের নামায, ফজরের নামাজান্তে জায়নামাযে বসিয়া দরুদ শরীফ বা কলেমা শরীফ অথবা আল্লার জেকরে মশগুল থাকিবে, জায়নামায হইতে উঠিবে না, দুনিয়ার কোন কার্য্যে লিপ্ত হইবে না। যখন সূর্য্য এক নেজা পরিমাণ উপরে উঠিবে অর্থাৎ যখন সূর্য্যের দিকে দৃষ্টি করিলে চক্ষু ঝলসিয়া যাইবে, এমন সময় দুই রাকাত বা চার রাকাত নামায পড়িলে, একটি হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাইবে। যদি ফজরের নামাযের পর কোন দুনিয়ার কার্যে লাগিয়া যায় আর সূর্য্য উচ্চে উঠার পর এশারাকের নামাজ পড়ে তবুও দূরস্ত হইতে তবে সওয়াব কম হইবে। সূর্য্য উদয়ের সময় হইবে ২০ মিনিট পরে এশরাকের সময় হয়।

    মসআলাঃ     আবার সূর্য্য অতি উচ্চে হইলে এবং সূর্য্যের তাপ প্রখর হইলে কম পক্ষে দুই রাকাত বা চার রাকাত কিংবা আট রাকাত অথবা বার রাকাত নামাজ পড়িবে। ইহাকে চান্তের বা দোহার নামাজ বলে। ইহাতেও বহু সওয়াব আছে। 

   মসআলাঃ   - মগরিবের ফরয ও সুন্নতের পর কমপক্ষে ছয় রাকাত এবং বেশীর কুড়ি রাকাত নামায় পড়িবে, ইহাতে আওয়াবীন নামায বলে।

    মসআলাঃ     অর্দ্ধ রাত্রিতে উঠিয়া নামায পড়িলে বড়ই সওয়াব পাওয়া যায়, উহাকে তাহাজ্জুদের নাময বলে। এই নামায আল্লাহ তায়ালার নিকট বড়ই মকবুল বা পছন্দনীয়, এবং দিবা রাত্রির অন্যান্য সকল নফল নামায হইতে ইহার সওয়াব বেশী হইয়া থাকে। তাহাজ্জুদের নামায কম পক্ষে চার রাকাত ও বেশী বার রাকাত। যদি শেষ রাত্রে উঠিবার সাহস বা অভ্যাস না তাকে তবে এশাবাদ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়িয়া লওয়া উচিত।

صلوة الليل إلى قوله ولو جعله ثلاثا فالا وسط افضل انصافا فالاخر افضل در المختار

        দুরুলমুখতারের এবারতের দ্বারায় বুঝা যায়, রাত্রিকে তিনভাগ করিয়া রাত্রির মধ্য ও শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ পড়া আফজাল বা অতি উত্তম। কেহ যদি প্রথম রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়িয়া লয় জায়েজ হইবে। কাহারো যদি রাত্রে উঠিবার সাহস না হয়, তাহাজ্জুদ ছাড়িয়া দেওয়া অপেক্ষা জায়েজ হিসাবে পড়িয়া লইলে চলিবে। তবে আফজলের সওয়াব হইতে মাহরুম হইবে অর্থাৎ দর্জা কম হইবে।

    মসআলাঃ সালাতুত-তাসবীহ সম্বন্ধে হাদীস শরীফে আছে যে ইহাতে অসীম সওয়াব হইয়া থাকে। হযরত (দঃ) তাঁহার চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে এই নামায শিক্ষা দিয়া বলিয়াছিলেন যে, এই নামাজ পড়িলে আগের পরের নূতন, পুরাতন ও ছোট বড় সমস্ত গুনাহ মাফ হইয়া যাইবে। আরও বলিয়াছিলেন যে সম্ভবপর হইলে রোজ একবার না হইলে সপ্তাহে একবার, তাহা না হইলে প্রতিমাসে একবার তাহা না হইলে প্রতি বছরে একবার, তাহাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে একবার পড়িবে। নামায পড়িবার নিয়ম এই যে, প্রথমে চারি রাকাতের নিয়ত করিয়া সানা, আলহামদুলিল্লাহে ও অপর একটি সুরা পাঠ শেষ করিয়া রুকুতে যাইবার আগে সুবহানাল্লাহে ওয়াল হামদুলিল্লাহে ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লহ আকবার" পনর বার পড়িবে, তৎপরে রুকুতে যাইয়া "সুবন না রাব্বিয়াল আজীম" বলার পর দশবার, রুকু হইতে উঠিয়া "সামি আল্লাহু লেমান হামিদা" বলার পর দাঁড়ান অবস্থায় দশবার, তৎপর সেজদায় যাইয়া "সুবহানা রাব্বিয়েল আলা" বলার পর দশবার, সেজদাহ হইতে মাথা উঠাইয়া বসা অবস্থায় দশবার বলিয়া দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াইয়া যাইবে। এইরূপ দ্বিতীয় রাকাতও পড়িবে এবং যখন দ্বিতীয় রাকাতের 'আত্তাহিয়াতু' পড়িবার জন্য বসিবে তখন প্রথমেই উক্ত দোওয়া দশবার পড়িয়া লইবে তারপর "আত্তাহিয়াতু' পড়িবে। এইরূপ ভাবে চারি রাকাত নামায আদায় করিবে। সালাতুৎ তাসবীহ নামায পড়িবার নিয়মের মধ্যে মতভেদ আছে। কোন কোন কিতাবে অন্য প্রকার পদ্ধতিও লিখিত আছে।

    মসআলাঃ     দিনের বেলায় নফল নামায পড়িলে দুই দুই রাকাত বা চার চার রাকাত করিয়া নিয়ত করিবে। দিনে এক সঙ্গে চার রাকাতের বেশী নিয়ত করা মাকরুহ। আর রাত্রে একসঙ্গে ছয় বা আট রাকাতের নিয়ত করিলে দুরস্ত হইবে। রাত্রে ইহার বেশী রাকাতের নিয়ত মাকরুহ হইবে।

    মসআলাঃ     সুন্নাত আর নফলের সকল রাকাতেই আলহামদুর সঙ্গে সুরা মিলান ওয়াজেব। ইচ্ছা করিয়া না মিলাইলে গুণাহগার হইবে। আর যদি ভুলে না মিলায় তবে সহু সেজদা দিতে হইবে।

   মসআলাঃ     যখন কেহ নফল নামাযের নিয়ত করে তখন তাহা পূর করা ওয়াজেব, যদি ভঙ্গ করে তবে গুনাহগার হইবে। কোন নামায ভঙ্গ করিলে তাহার কাজা আদায় করিতে হইবে। নফলের প্রত্যেক দুই দুই রাকাত পৃথক, চার বা ছয় রাকাতের নিয়ত করিলেও শুধু দুই রাকাত পূর্ণ করাই ওয়াজেব। এই প্রকারে কেছ চারি রাকাতের নিয়ত করিয়া দুই রাকাত পূর্ণ করাই ওয়াজেব। এই প্রকারে কেহ চারি রাকাতের নিয়ত করিয়া দুই রাকাত আদায় করার পর সালাম ফিরাইলে কোন গুণাহ হইবে না।

   মসআলাঃ      নফল নামায বসিয়া পড়াও দুরস্ত আছে, তবে ইহাতে অর্দ্ধেক সওয়াব হয় বলিয়া দাঁড়াইয়া পড়া উত্তম। যদি ব্যারামের কারণে দাঁড়াইতে অক্ষম হয় তবে পূর্ণ সওয়াব পাইবে। কিন্তু ফরয ও সুন্নাত নামায ওজর ব্যতীত বসিয়া পড়া দুরস্ত নহে। ফরয শব্দের মধ্যে ওয়াজের নামায কেও সামিল ধরিতে হইবে, কেন না কার্যতঃ ওয়াজেবের হুকুম ফরযের সমতুল্য।

    মসআলাঃ      যদি নফল নামায বসিয়া আরম্ভ করিয়া কয়েক রাকায়াত পড়ার পর দাঁড়াইয়া পড়ে তাহাও দুরস্ত।

    মসআলাঃ      নফল নামায দাঁড়াইয়া আরম্ভ করিয়া প্রথম রাকাতে বা দ্বিতীয় রাকাতে বসিয়া পড়িলে দুরস্ত হইবে।

Post a Comment

0 Comments