তৃতীয় আকাশে অবস্থান
মহানবী (সঃ) দ্বিতীয় আকাশ থেকে অবসর হওয়ার পর হযরত জিব্রাইল (আঃ) হজুর (সঃ)-কে নিয়ে তৃতীয় আকাশের দিকে রওয়ানা হলেন। তাদের সাথে ছিল আরো অনেক মহাসম্মানিত ও সাধারণ ফেরেশতাগণ। মহানবী (সঃ) মহা সমারোহে তৃতীয় আকাশের দরজায় পৌঁছলেন তৃতীয় আকাশের দ্বার রক্ষী ফেরেশতা যার নাম খায়লোন। তিনিও হযরত জিব্রাইল। (আঃ)-কে ঐ ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন। যেমনিভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় আকাশের দ্বার রক্ষী। ফেরেশতাগণ প্রশ্ন করেছিলেন।
হযরত জিব্রাইল (আঃ) তৃতীয় আসমানের দ্বার রক্ষীর অনুমতিতে মহানবী (সঃ) তৃতীয় আকাশে প্রবেশ করলেন। এখানেও ফেরেশতাগণের সমাগম প্রথম ও দ্বিতীয় আকাশের সমাগম থেকে আরো অনেক বেশি ছিল। তাদের নূরানী বেশ ভূষা এবং তাসহীব ও তাহলীল ছিল মন-মাতানো। সবাই মহানবী (সঃ)-কে দেখার জন্য অত্যন্ত উদ্গ্রীব ছিল। তারা মহানবী (সঃ)-এর সাক্ষাত লাভে ধন্য হওয়ার জন্য চতুর্দিক থেকে দলে দলে উপস্থিত হতে লাগলো। মহানবী (সঃ) ফেরেশতাদের সাক্ষাত শেষে দেখতে পেলেন একদল ফেরেশতা সিজদারত অবস্থায় নিম্ন বর্ণিত দোয়াটি পাঠ করছে-
سعانَ الخَالِقِ الَّذِي إِلَّا مَعْرُ وَلا مَلْحاء اللهُ إِلَّا إِلَيْهِ سُبْحَانَ الْعَلِي الْأَعْلَى.
মহানবী (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন- "হে জিব্রাইল (আঃ)। এরা কারা?"
উত্তরে হযরত জিব্রাইল (আঃ) মহানবী (সঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন- "হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)। এ সকল ফেরেশতাদের কাজ এটাই। সুতরাং আপনি মহান আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে আপনার উম্মতদের ইবাদতের কৌশল হিসাবে নামাজের মধ্যে এভাবে সিজদা এজ হওয়ার জন্য ফরিয়াদ করুন।"
মহানবী (সঃ) অনুরূপ দোয়া করলেন। সুতরাং নামাজের মধ্যে সিজদা করা ফরজ হয়। অতঃপর মহান আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ হতে তৃতীয় আসমানে মহানবী (সঃ)-কে গৌরব জনক রূহানী উপঢৌকন ও লেবাস দ্বারা সম্মানিত করা হল। যার উপর নূরানী হরফে বিভিন্ন ধরনের প্রশংসা বাক্য লিখা ছিল।
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ
মহানবী (সঃ) তৃতীয় আকাশে জনৈক সুদর্শন পুরুষকে দেখতে পেলেন। তার মনোমন্ধকর রূপে ও দীপ্তিমান চেহারায়ও আসমান আলোকিত। তার দিকে যে কোন ধরনের দর্শক একবার তাকালে সে তার চেহারায় বিমুগ্ধ ও বিমোহিত না হয়ে পারে না। এ সৌম্য শান্ত সমাহিত লোকটিকে দেখে মহানবী (সঃ) সাথী আল্লাহর দূতকে জিজ্ঞেস করলেন- "হে জিব্রাইল! এমন তাক লাগাবার মতো চেহারা বিশিষ্ট লোকটি কে?"
হযরত জিব্রাইল (আঃ) জবাব দিলেন- "ইনি হলেন, হযরত ইউসুফ (আঃ)। ইনি ঐ ব্যক্তি যাকে মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেও সব কিছু দিয়েছেন আর এখনো তার ইজ্জত এবং সম্মানের কোন কমতি নেই। ইনি সেই ইউসুফ (আঃ) যার সৌন্দর্যের সম্মুখে সমগ্র দুনিয়ার সৌন্দর্য বিমলিন। হে আল্লাহর নবী। আপনি তাকে সালাম করুন।" মহানবী (সঃ) তাকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাবে বললেন-
مرحباً بالسيم الصالح والأمن العالم.
অর্থাৎঃ নেককার ভাই ও নেককার নবী। আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
মহানবী (সঃ) হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর রূপ সম্পর্কে বর্ণনা করেন- "আমার ভাই হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে সারা জাহানের অর্ধেক রূপ-লাবণ্য দেয়া হয়েছে আর বাকী অর্ধেক সারা জাহানের লোকদের দেয়া হয়েছে। অথবা তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপে রূপায়ন করা হয়েছে।"
তৃতীয় আকাশের দর্শনীয় বস্তুসমূহ
মহানবী (সঃ) তৃতীয় আকাশে আরো দর্শনীয় আশ্চর্য বস্তুসমূহ প্রত্যেক্ষ করেন। তবে এ আকাশে একদল ফেরেশতাকে সিজদারত অবস্থায় তাসবীহ পাঠ করতে দেখেন। ফেরেশতাদের উক্ত আমলের জন্য হযরত জিব্রাইলের অনুরোধে, নির্দেশে রাসূল (সঃ) মহান আল্লাহর দরবারে আরজ করলে
উম্মতে মুহাম্মদীর নামাজের মধ্যে তা ফরজ করা হয়। অতঃপর মহানবী (সঃ) আরো একটু সম্মুখে অগ্রসর হলে তিনি চতুর্থ আকাশে এক বিশাল সমুদ্র দেখতে পান যার নাম বাহরুল্লাকাম। হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে বিশ্বব্যাপি যে মহাপ্লাবন হয়েছিল। ঐ সময় মহান আল্লাহর নির্দেশে এ সমুদ্র থেকেই সামান্য কিছু পানি দুনিয়াতে পতিত হয়েছিল।
0 Comments