একটি সবুজ ক্ষেত পরিদর্শন

        মহানবী (সঃ) বলেন- "বোরাক আরো কিছু দূর চলে যাবার পর আমাকে আলামে বারযাখ দেখানো হলো। প্রথমেই আমি একটি সুন্দর সবুজ বর্ণের ক্ষেত দেখতে পেলাম। সেখানে একদল লোক দামী পোশাক পড়ে এদিক সেদিক বিচরণ করছে এবং এক প্রকার বীজ বুনছে। বীজ বুনার সঙ্গে সঙ্গে তাতে শস্য উৎপাদিত হচ্ছে আবার তা পাকছে। তারা তা কাটছে, সাথে সাথে মাড়াই করে তা বিন্যাস্ত করে সাজিয়ে রাখছে। এ কাণ্ড-কারখানা দেখে সাথী জিব্রাইলকে জিজ্ঞেস করলাম-"ভাই জিব্রাইল এরা কারা?"

        উত্তরে জিব্রাইল বললেন- "হে আল্লাহর প্রিয় নবী! এরা আপনার নেককার উম্মতের পবিত্রাত্মা। যারা আল্লাহর রাহে নিজেদের জান মাল অকাতরে দান করেছেন। তাদের আত্মাই এখানে শাস্তিতে বিরাজ করছে। আপনার এই বান্দারা দুনিয়াতে দান খয়রাত করত। সেই দানকৃত মাল আজ এরূপ বীজে পরিণত হয়েছে। কিয়ামতের বিশাল মাঠে রোপিত হয়েছে এবং আল্লাহর রহমতের পানির বদৌলতে শস্যে রূপান্তরিত হয়েছে। অতঃপর তা সুবিন্যাস্ত করে স্তরে স্তরে গুদামে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। আপনি এসব ত্বরিৎ ব্যবস্থা দেখে আপনার উম্মতদের জানিয়ে দেবেন যে, যারা দুনিয়ার বুকে অকাতরে ও মুক্ত হস্তে আল্লাহর রাহে ধন সম্পদ ব্যয় করবে। তারা এরূপ বিরাট পণ্যের অধিকারী হবে এবং বেহেশতে পরম সুখে ও চরম পুলকে বসবাস করবে। তাদের অর্জিত অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে খরচ করলে তা তাদের জন্যে ছদকায়ে জারারিয়োর কাজ করবে। তাদের মৃত্যুর পরও এই অর্থ তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত স্বরূপ কাজ করবে। এর ফলে তারা অনন্ত শান্তি নিকেতনে বেহেশতে প্রবেশ করবে এবং চির শান্তি উপভোগ করবে।

        আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণনা করেন-

وَمَا الْقَدِّمُوا لِانْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ نَجِدُوهُ عِنْدَ اللهِ .

        অর্থাৎঃ "হে উম্মতে মুহাম্মদী। তোমরা আখিরাতের সাওয়াবের আশায় দুনিয়াতে যা কিছু খরচ করবে। তার ফল তোমরা এভাবেই দেখতে পাবে। যাতে তোমরা সন্তুষ্ট হতে সক্ষম হও।"

একদল বেনামাজির সাক্ষাত

        হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সঃ) বলেছেন-"সবুজ ক্ষেত থেকে বোরাক কিছু দূর এগিয়ে যাবার পর আমাকে একদল বেনামাজি দেখানো হল। দেখলাম তারা অসহ্য শাস্তি ও যন্ত্রণা ভোগ করছে। তাদের মধ্যে নর-নারী দুই শ্রেণীর লোকই রয়েছে। তাদের অত্যন্ত উত্তপ্ত মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে এবং বিরাট পাথর তাদের বুকে কঠিনভাবে চাপা দেয়া হচ্ছে এর ফলে তাদের দেহ ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে থাকে। আবার তা ভাল হচ্ছে আবার তাদের পাথর মেরে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। এ অভাবনীয় শাস্তি দেখে আমি আমার সাথী জিব্রাইলকে তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম এবং এহেন অমানুষিক শাস্তি দেয়ার কারণেও জানতে চাইলাম।"

        আমার প্রশ্নোত্তরে জিব্রাইল আমিন বললেন- "হে আল্লাহর নবী। আপনার উন্মতের মধ্যে যারা সময় মত নামাজ আদায় করেনি। নামাজে অলসতা করেছে ঐ সময় ঘুমে বা গালাগালে কাটিয়ে দিয়েছে। তাদেরই কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এরা বেনামাজী তাই তাদের এই অশুভ পরিণতি।" মহানবী (সঃ) বলেন- "বেনামাজীর এহেন শোচনীয় পরিণতি দেখে আমি ভারী মর্মাহত হলাম।"

একদল যাকাত অনাদায়কারীর সাক্ষাত

        মহানবী (সঃ) বলেন- "এরপর আমাকে একদল লোকের সাথে সাক্ষাত করানো হল। যাদের উলঙ্গাবস্থায় যৌনাঙ্গে এক লৌহ শলাকা বিদ্ধ করানো হয়েছে এবং সর্বাঙ্গে অগ্নি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা এত ক্ষুধার্ত ছিল যে, চোখের সামনে তৃণ, প্রস্তর, ইষ্টক, কাঁসা, দোযখের যাক্কুম যা কিছু পাচ্ছে তাই নির্বিচারে ভক্ষণ করছে, অথচ এসবে তাদের পেট ভরছে না। আমি এসব দেখে আশ্চর্য বোধ করলাম এবং আমি জিব্রাইলকে জিজ্ঞেস করলাম-এর মূল কারণ কি?

        জিব্রাইল আমিন আমার প্রশ্নের জবাবে বললেন- "এরা আপনার উম্মতের একটি দল। এরা তাদের যাকাতের অর্জিত ধন-দৌলতের ঠিক মত যাকাত প্রদান করে নি। তারা নিজেরা পেট পুরে খেয়েছে কিন্তু সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। এ কারণেই তাদের প্রতি ভীষণ শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে আর তাদের সাংঘাতিক ক্ষুধার্ত রাখা হচ্ছে। তারা মহা বিচারের পূর্ব পর্যন্ত অভুক্ত ও ক্ষুধার্ত থাকবে এবং অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করবে।"

        ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা যাকাত আদায় করে না তাদের সমন্ধে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন-

         অর্থাৎ: "আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্টদেশকে দগ্ধ করা হবে। এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে। সুতরাং এক্ষণে জমা করে রাখার আস্বাদ কর।"

ব্যভিচারে লিপ্ত নর-নারীর অবস্থা

        এরপর মহানবী (সঃ) এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে একটি পাতিলে রান্না করা গোশত রাখা হয়েছে এবং আর একটি পাতিলে কাঁচা গোশত রাখা হয়েছে। অথচ লোকগুলো রান্না করা গোশ্ত না খেয়ে কাঁচা গোশ্ত খেতে শুরু করেছে। এটা দেখে নবী (সঃ) জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন- "এরা কারা?"

        তদুত্তরে জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "এরা আপনার উম্মতের সে সক লোক যাদের নিকট হালাল বা বৈধ স্ত্রীগণ ছিল। অথচ তারা তাদেরকে বাদ দিয়ে বেগানা মহিলার সাথে ব্যভিচারে বা যৌন কাজে লিপ্ত হয়েছে। এভাবে যে সব মহিলাগণ নিজ স্বামী ব্যতীত অপর পুরুষদের সাথে যৌন কাজ বা জ্বিনায় লিপ্ত হয় বা রাত অতিবাহিত করে তারাও ঐ অপরাধের শামিল।

Post a Comment

0 Comments