আল্লাহ মৎস্যকে কিভাবে সৃষ্টি করেছে


আল্লাহ্ বলেনঃ

وَ هُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا.

    * সেই আল্লাহ্ যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্র বাধ্যগত করেছেন যা থেকে তোমরা খাদ্য মাংস খাও।

(সূরা নাহালঃ আয়াত নং ১৪এর অংশ)


        আল্লাহ্ সমুদ্রে আর নদী-নালায় কত বিচিত্র গঠনের ও আকৃতির মৎস্য সৃষ্টি করেছেন, তার প্রতি লক্ষ্য কর। এদের সৃষ্টি নৈপুণ্যে আল্লাহর অসীম কুদরত লক্ষ্য করা যায়। মৎস্যকে আল্লাহ্ পানিতে বসবাসকারী করে সৃষ্টি করেছেন বলে তাদের পা আর ফুসফুস সৃষ্টি করেন নি। কেননা, মাছ পানির মধ্যে থাকা কালে শ্বাস নেয় না। পায়ের বদলে আল্লাহ্ তাদের দেহে ডানা সৃষ্টি করেছেন বা দ্রুত সঞ্চালন করে যেদিকে ইচ্ছা যেতে পারে। মাছের শরীরে আল্লাহ্ খুব শক্ত ধরনের খোলস সৃষ্টি করেছেন। এগুলি একটির কতকাংশ অপরটির মধ্যে প্রবিষ্ট। এদ্বারা তাদের দেহ আবৃত এবং রক্ষিত থাকে। যেসব মাছের দেহে খোলস হয় না, সেগুলির শরীরে একটা সিলকার ন্যায় থাকে অথবা তাদের চামড়া খুব পুরু ও মজবুত, যা তাদের পুরোপুরি রক্ষা করার কাজে আসে।

        মাছের চোখ কান নাক সবই আছে। এর সাহায্যে সে তার আহার তালাশ করে খায় আর বিপদের সময় আত্মরক্ষা করে। সুতরাং দেখ সমুদ্র আর নদী- নালার মধ্যে বসবাসকারী প্রাণীগুলিকে আল্লাহ্ কিভাবে প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন যার দ্বারা তারা খাদ্যের সংস্থান করে আর বিপদ থেকে আত্মরক্ষার পুরো কাজে আসে। আল্লাহ্ ভালই জানেন যে, মাছ পরস্পরকে খায়, এজন্য তাদের পোনা বাচ্চা জন্মে অসংখ্য। আর তাদের স্ত্রী বা পুরুষ জাতের কোন পার্থক্য নেই। যেমন স্থলচর প্রাণীর মধ্যে স্ত্রী-জাতীয়গুলির ডিম বা বাচ্চা দেয়। মাছের বেলায় রয়েছে তার ব্যতিক্রম, সব মাছই ডিম দেয়। আর প্রত্যেক মাছের পেটেই একটা বা দুটো করে ডিমের ছড়া থাকে, যাতে অসংখ্য বাচ্চা পয়দা হয়। আবার কতগুরি মাছের দু'হাত দু'পা থাকে। তাদের পুরুষ ও স্ত্রী-জাতীয় মিলনে বংশ সৃষ্ট হয়।

        কচ্ছপ জাতীয় অন্যান্য কতগুলি পানিতে বসবাসকারী প্রাণী ডিম দেয়। সূর্যের তাপে তাদের ডিম ফুটে। তা থেকে একটি মাত্র বাচ্চা জন্মে। পানির ভিতরে ডিম তা দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে মাছের ডিম ছাড়ার সাথে সাথে তাদের বাচ্চাগুলির জীবন লাভ হয়। তাতে একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা পয়দা হয়, তারা নিজেদের প্রতিপালনে কারো মুখাপেক্ষী হয় না। কেননা স্থলচর প্রাণীর ন্যায় সমুদ্রের আর নদী-নালার প্রাণীদের পক্ষে ডিমে তা দিয়ে কয়েকদিন বসে তারপর বাচ্চা ফুটলে তাদের আহার করান অসম্ভব ব্যাপার। আল্লাহ্ এজন্য তাদেরকে এসব কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। মাছের পোনা ফুটে অসংখ্য। কিন্তু এক মাছ অন্য মাছ খেয়ে ফেলে। তাই অনেকই নষ্ট হয়ে যায়।

        মাছের দ্রুতগতির প্রতি লক্ষ্য কর। কত দ্রুত তারা লেজ সঞ্চালন করে। পানির মধ্যে তাদের গতি কত সুন্দর ও সাবলীলভাবে নৌকার ন্যায় সাঁতার কেটে পা আর পাখা দ্বারা পানি সরিয়ে অগ্রসর হ'েয় যায়। মাছের দেহের হাড় কাটা খুবই হালকা, চিকন এবং ফাঁপা কেননা, সাঁতার কাটার জন্য এমনই হওয়া বাঞ্ছনীয়। কোথাও কোন হাড় ভেংগে গেলে আবার তা মাংসের সাহায্যে সেরে উঠে। মাছের দাঁতের সংখ্যা বহু তবে খুব ঘন সন্নিহিত হওয়াতে একটিই মনে হয়। আর চর্বণের সময় সবগুলি দাঁতই এক সঙ্গে কাজ করে বলে বেশী চিবানোর দরকার হয় না।

শামুক

        সমুদ্রে আল্লাহ্ বহু দুর্বল্ল প্রাণীও সৃষ্টি করেছেন। সেগুলি ভালো করে চলাফেরাও করতে পারে না যেমন শামুক আর ঝিনুক প্রভৃতি। তাদের আত্মক্ষার জন্য আল্লাহ্ খুব সুদৃঢ় দুর্গের ন্যায় আশ্রয় সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যেগুলি পাথরের ন্যায় শক্ত। সেটাই তার ঘর-বাড়ী। এর ভিতরের অংশ যেটা শরীরের সাথে সংযুক্ত, সেটা নরম। যাতে তার শরীরে আঘাত না লাগে তাই শক্ত আবরণ। শামুক অনেক প্রকার। কতগুলি এমন যে, সেগুলি একদম খোলা জায়গায় থাকে আর নিজের আত্মরক্ষারও কোন ব্যবস্থা করতে পারে না এ কারণে এগুলিকে আল্লাহ্ পাহাড় আর ময়দানে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা বাঁচতে পারে। সেই পাহাড়ের নিঃসৃত পানিই তাদের খাদ্য।

        এদের কতগুলি দেখতে খুবই সুন্দর আর তারার ন্যায় উজ্জ্বল। এরা খাবার জন্য নিজ আবরণের বাইরে মুখ বের করে খায় আবার কোনো ভয়ভীতি দেখা দিলে হঠাৎ মুখ ভিতরে নিয়ে যায়, আর ছিদ্রের মুখ এমনভাবে বন্ধ করে ফেলে যাতে তার ভিতরে কিছু যেতে না পারে। এভাবে সে চারদিক দিয়ে বেষ্টিত হয়ে পড়ে।

        আল্লাহর কুদরত দেখ! কিভাবে আল্লাহ্ তার ঘর নির্মাণ করেছেন আর তার আত্মরক্ষার কি কৌশল তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। মোটকথা, আল্লাহ্ কাউকে বঞ্চিত করেন নাই; প্রত্যেককেই তার প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন। আল্লাহ্ তার সকল সৃষ্টিকেই পুরোপুরি রক্ষা করে থাকেন, তারা পাহাড়ে, টিলায় বা সমুদ্রে যেখানেই বাস করুক না কেন?

রংগীন মাছ

        মাছও নানা প্রকারের দেখতে পাওয়া যায়। কতগুলি সমুদ্রের তলা থেকে খাদ্য আহরণ করে। আবার কতগুলি নদী বা সমুদ্রের কূলে অল্প পানিতে নিজেদের আহার খোঁজ করে নেয়। কতগুলি মাছের গায়ে বিচিত্র নকশা আর রং হয়ে থাকে। এগুলি খাদ্যের কারণেই তৈরী হয়। যেমন তৃণভোজী পশুর পেটে পরিষ্কার দুধ সৃষ্টি হয়।

        রংগীন মাছ যখন অনুভব করে যে, তার দেহের রং-এ কোন পরিবর্তন ঘটছে তখন সে তার পেট থেকে বিশেষ ধরনের দ্রব্য বের করে পরিষ্কার করে ফেলে, তারপর পানির ভিতরে গিয়ে তা পরিবর্তন করে। এসব হাজার হাজার কুদরতের কারিগরি আর রহস্য এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না।

ডানাওয়ালা মাছ

        কতগুলি মাছের ডানা হয়। আর চামচিকার ন্যায় এদিক-সেদিক স্থলচর পাখীর মতোই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়।

        কতগুলি মাছ অতি ক্ষুদ্র আর অসহায় ধরনের। এগুলি নদী-নালায় বেশী পরিমাণ জন্মে। এগুলির জন্যও আল্লাহ্ আত্মরক্ষার উপায় করে দিয়েছেন। কোন কোন মাছের দুই পাশে সূচালো আর বিষাক্ত কাঁটা রয়েছে, তাদের ধরতে গেলে তারা মানুষের শরীরে হঠাৎ কাঁটা ফুটিয়ে দেয়। এজন্য সহসা কেউ তাদের ধরতে যায় না। কুদরতের এসব রহস্য আর বৈচিত্র্য এতই রয়েছে যে, তা লিখে শেষ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এখানে যা সামান্য কিছু লিখলাম এটা আল্লাহ্র অফুরন্ত কুদরত আর হিকমতের প্রতি ইশারা মাত্র। এর প্রতি লক্ষ্য করলেই চিন্তা আর দৃষ্টির সামান্য বিকাশ ঘটে।

Post a Comment

0 Comments