নামাযের কতগুলি বিবিধ মাসআলা


        ০ অল্প কর্ম দ্বারা নামায বাতিল হয় না। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে অল্প কর্মও মাকরূহ। প্রয়োজন এই: সম্মুখ দিয়ে গমনকারী ব্যক্তিকে সরিয়ে দেয়া, বিচ্ছু দংশন করবে বলে আশংকা হলে সেটিকে এক অথবা দুই আঘাতে মেরে ফেলা এবং অপরিহার্য হলে শরীর চুলকানো। হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) উকুন ও মাছি নামাযের মধ্যে ধরে ফেলতেন এবং হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) উকুন মেরে ফেলতেন। হাই তোলার সময় মুখে হাত রাখা উত্তম। নামাযে অল্প কর্ম থেকেও বিরত থাকা পূর্ণতার স্তর। এ কারণেই জনৈক বুযুর্গ নামাযে শরীর থেকে মাছি সরাতেন না এবং বলতেন: আমি নিজেকে এ বিষয়ে অভ্যস্ত করি না।

        ০ নামাযে থুথু নিক্ষেপ করলে নামায বাতিল হবে না। কারণ, এটা অল্প কর্ম। থুথুর কারণে আওয়াজ সৃষ্টি না হলে তাকে কালাম গণ্য করা হবে না। এতদসত্ত্বেও নামাযে থুথু নিক্ষেপ করা মাকরূহ। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাঃ) যেভাবে থুথু নিক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছেন, সেভাবে থুথু নিক্ষেপ করা মাকরূহ নয়। সেমতে জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার মসজিদে থুথু দেখে অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। এর পর তিনি খেজুরের একটি ডাল দ্বারা থুথু ঘষে দিলেন এবং সামান্য জাফরান এনে সেখানে লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমাদের মধ্যে কে পছন্দ করে যে, তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করা হোক? সকলেই বলল: এটা কেউ পছন্দ করে না। তিনি বললেন: তোমরা যখন নামাযে প্রবেশ কর, তখন আল্লাহ তাআলা তোমাদের ও কেবলার মাঝখানে থাকেন। কতক রেওয়ায়েতে আছে- তোমাদের সামনে থাকেন। অতএব সামনের দিকে থুথু নিক্ষেপ করা উচিত নয়; ডান দিকেও উচিত নয়; বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু নিক্ষেপ করবে। (এটা মসজিদের বাইরে নামায পড়লে।) বেগতিক হলে নিজের কাপড়ে থুথু নিক্ষেপ করবে এবং কাপড়টি ঘষে দেবে।

        * মুক্তাদীর দন্ডায়মান হওয়ার সুন্নত তরীকা এই, মুক্তাদী একজন হলে ইমামের ডান দিকে সামান্য পেছনে সরে দাঁড়াবে। একা ব্যক্তি কাতারের পেছনে দাঁড়াবে না; বরং হয় কাতারের মধ্যে ঢুকে পড়বে; না হয় কাতার থেকে কাউকে নিজের সাথে টেনে নেবে। যদি একাই দাঁড়িয়ে যায়, তবে তার নামায মাকরূহ হবে।

        * যেব্যক্তি পরবর্তী রাকআতসমূহে ইমামের সাথে শরীক হয়, তাকে মসবুক বলা হয়। মসকবুক যে রাকআতে শরীক হয়, সে রাকআতই তার নামাযের শুরু। ইমাম নামায শেষ করলে এর উপর ভিত্তি করে সে অবশিষ্ট নামায পড়ে নেবে। তকবীরে তাহরীমার পর রুকুর তকবীর বলে যদি ইমামকে রুকুতে পাওয়া যায় এবং তার সাথে স্থিরভাবে রুকু করা যায়, তবে সেই রাকআত পাওয়া গেল বলে ধরতে হবে। যদি ইমামের সাথে সস্থিরে রুকু করার পূর্বেই ইমাম রুকু থেকে উঠে পড়ে, তবে সেই রাকআত ফওত হয়ে গেল বলে ধরতে হবে। যদি ইমামকে সেজদায় অথবা তাশাহহুদে পাওয়া যায়, তবে মসবুক ব্যক্তি কেবল তকবীরে তাহরীমা বলে ইমামের সাথে শরীক হয়ে যাবে- পরবর্তী তকবীর বলবে না।

        ০ যেব্যক্তি নামায পড়ার পর নিজের কাপড়ে নাপাকী দেখে, তার জন্য পুনরায় নামায পড়া মোস্তাহাব। নামাযের অভ্যন্তরে নাপাকী দেখলে নাপাক কাপড় পৃথক করে ফেলবে এবং নামায পূর্ণ করে নেবে। তবে নতুন করে নামায পড়া মোস্তাহাব। একবার জিবরাঈল এসে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে নামাযের মধ্যে খবর দিলেন, আপনার জুতায় নাপাকী লেগে আছে। তিনি তৎক্ষণাৎ জুতা খুলে ফেললেন, কিন্তু নতুনভাবে নামায পড়েননি।

        ০ রুকু, সেজদা ও অন্যান্য আমলে ইমামের অগ্রবর্তী হওয়া মুক্তাদীর পক্ষে জায়েয নয়। এমনিভাবে এসব কাজ ইমামের সাথে সাথে করাও উচিত নয়; বরং এসব কাজে মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করবে এবং পরে আদায় করবে। এক্তেদার অর্থ এটাই। যদি ইচ্ছাপূর্বক ইমামের সাথে সাথে এসব কাজ করে, তবে নামায বাতিল হবে না। যেমন, ইমামের সমান সমান দাঁড়ালে নামায বাতিল হয় না। সুতরাং কেউ ইমামের আগে রোকন আদায় করলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। রসূলুল্লাহ (সাঃ) এ সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন:

ما يخشى الذي يرفع راسه قبل الامام ان يحول الله راسه راس حمار -

        অর্থাৎ, যেব্যক্তি ইমামের পূর্ব (সেজদা থেকে) মাথা উত্তোলন করে, সে কি ভয় করে না, আল্লাহ তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করে দেবেন?

        ইমাম থেকে এক রোকন পেছনে থাকা নামায বাতিল করে না। উদাহরণতঃ ইমাম রুকু থেকে দাঁড়িয়ে গেল, কিন্তু মুক্তাদী এখনও রুকু করল না। তবে এতটুকু পেছনে থাকা মাকরূহ। যদি ইমাম সেজদায় মাথা রেখে দেয় এবং মুক্তাদী তখনও রুকুতে না যায়, তবে মুক্তাদীর নামায বাতিল হয়ে যাবে।

        যেব্যক্তি নামাযে উপস্থিত হয়, সে অন্য ব্যক্তিকে নামাযে খারাপ কিছু করতে দেখলে তা থেকে বারণ করার অধিকার রাখে। কোন মূর্খ ব্যক্তি এরূপ করলে তাকে নম্রভাবে শিখিয়ে দেবে, যেমন কাতার সোজা করা, একা ব্যক্তি কাতারের পেছনে দাঁড়ালে তাকে নিষেধ করা, ইমামের পূর্বে মাথা উত্তোলন করলে তাকে মানা করা। হযরত ইবনে মসউদ (রাঃ) বলেন: যেব্যক্তি কাউকে খারাপভাবে নামায পড়তে দেখে নিষেধ করে না, সে গোনাহে তার সাথে শরীক হবে। বেলাল ইবনে সাদ বলেন: গোপনে ত্রুটি করলে যে করে সে-ই দায়ী হবে; কিন্তু প্রকাশ্য ত্রুটির সংশোধন কেউ না করলে তার ক্ষতি ব্যাপক হয়ে যায়। হাদীসে আছে, হযরত বেলাল (রাঃ) নামাযের কাতার সোজা করতেন এবং মুসল্লীদের পায়ের ঘিঁটে দোররা মারতেন। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন: নামাযে তোমার ভাইদের খোঁজ কর। যদি তাদেরকে না দেখ, তবে রুগ্ন হলে দেখতে যাও এবং সুস্থ হলে জামাআত তরক করার কারণে তিরস্কার কর। মসজিদে প্রবেশ করে কাতারের ডান দিকে যাওয়া উচিত। রসূলে করীম (সাঃ)-এর আমলে ডান দিকে এত বেশী লোক থাকত যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে বাম দিক উপেক্ষিত হওয়ার অভিযোগ পেশ করা হল। ফলে তাকে বলতে হল: যেব্যক্তি মসজিদের বাম দিক আবাদ করবে, তার দুটি সওয়াব হবে। কাতারে কোন নাবালেগ ছেলেকে দেখলে তাকে সরিয়ে বয়স্ক ব্যক্তি তার স্থলে দাঁড়াতে পারে।

Post a Comment

0 Comments