বিশ্ব নবী সঃ ষষ্ঠ আকাশে কি কি দেখেছিলেন

ষষ্ঠ আকাশে অবস্থানঃ

        মহানবী (সঃ) যখন পঞ্চম আকাশের সফর শেষ করলেন। তখন এক বিরাট মহা-সমারোহে মিছিল সহকারে তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে ষষ্ঠ আকাশের দরজায়। পৌঁছলেন। এখানকার দ্বার রক্ষীর নাম ছিল রোয়াইল (আঃ) তিনিও হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর সাথে পূর্ববৎ প্রশ্ন করলেন। প্রশ্নোত্তর শেষে হযরত জিব্রাইল (আঃ) যখন দ্বার রক্ষী কর্তৃক ৬ষ্ঠ আসমানের দরজা খোললেন। তখন ষষ্ঠ আকাশে পৌঁছে তিনি অনেক অত্যাচার্য জ্যোতির্ময় বরকতের নিদর্শনসমূহ দেখতে পেলেন। এ আকাশে মহান আল্লাহ তা'য়ালার অনেক মাখলুক বিদ্যামান ছিল। ঘষ্ঠ আকাশের সকল ফেরেশতারা মহানবী (সঃ)-কে স্বাগতম জানালো এবং মহানবীর দর্শন লাভ করে ধন্য হল। অতঃপর ষষ্ঠ আসমানের গৌরবময় নিয়ামত ও উপঢৌকন দ্বারা মহানবী (সঃ)-কে সম্মানিত করা হল। যে নূরারী উপঢৌকনের উপর সোনালী অক্ষরে লেখা ছিল-

لقَدْ جَاءَ كُمْ رَسُولٌ مِنْ الْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَاءَ مِثْمَ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ .

        অর্থাৎঃ "হে বিশ্বাসীগণ। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন। যা তোমাদের কষ্ট দেয়। তা তার নিকট গুরুতর। তিনি তোমাদের মঙ্গলের জন্যে লোলুপ, তিনি মু'মিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, অনুগ্রহপরায়ণ।" (সূরা তাওবা, আয়াত ১২৮)

হযরত মূসা (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ

        এ আকাশের পুরস্কার লাভ ও ফেরেশতাদের অভিনন্দন পরস্পর মোস্তফা (সঃ) একজন দীর্ঘদেহী লোককে দেখতে পেলেন। এ গৌর বর্ণ বিশিষ্ট লোকটির মাথায় এক ঝাকড়া চুল কাঁধ তুই ছুই করছে। তিনি আল্লাহর দরবারে অত্যন্ত বিনীতভাবে মুনাজাত করছেন- "হে রহমান, হে রাহীম। আমি এতকাল মনে করেছিলাম যে, দুনিয়ার বুকে বনী ইসরাইলের সবচেয়ে বড় সম্প্রদায় এবং আমিই শ্রেষ্ঠ নবী। কিন্তু এ যুবককে দেখে আমার সে ধারনার নিরাময় হলো। এখন দেখছি এ যুবকই সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং আমার মনে হয় তার উম্মত ও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্প্রদায়। 

        এ ধরনের মোনাজাত শুনে মহানবী (সঃ) জিব্রাইল (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন- "ভাই, জিব্রাইল। ইনি কে? আমার ধারনা মতে ইনি একজন উচ্চ পর্যায়ের রাসূল হবেন।"

        হযরত জিব্রাইল (আঃ) উত্তরে বললেন- "ইনি নবী ইসরাইলের নবী হযরত মূসা নবী। যিনি মহান আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় রাসূল বা পয়গম্বর। তাদে সালাম করেন। এ কথা শুনে আমাদের প্রিয় নবী সম্মুখে অগ্রসর হয়ে হযরত মূসা (আঃ)-কে সালাম অভিবাদন জানালেন। হযরত মূসা (আঃ) ও অত্যন্ত মহব্বত এর সাথে মহানবী (সঃ)-এর সালামের জবাব দিয়ে বললেন-

مرحبا بالنبي الصالح والابن الصالح .

        অর্থাৎ: নেককার নবী ও নেককার ভাইয়ের জন্য খোশ আমদেদ।

        অতঃপর মহানবী (সঃ) এখানে থেকে কিছু দূর যেতে না যেতেই তার কানে কান্নার আওয়াজ ভেসে এল। তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং সাথী দূতকে জিজ্ঞেস করলেন- "হে আল্লাহর দূত। এ করুণ কান্নার আওয়াজ কোথেকে ভেসে আসছে? এর অন্তনিহিত কারণই বা কি? আকাশে ক্রন্দন ধ্বনি কেন?"

        আল্লাহর দূত হযরত জিব্রাইল (আঃ) জবাব দিলেন- "হ্যাঁ এ কারু কান্নারই আওয়াজ। এ সাধারণ লোকের কান্না নয়, এ হচ্ছে আপনি একটু আগে যে নবীবর মূসার সাথে দেখা করেছেন তারই হৃদয় নিংড়ানো কান্না। আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল এবং আপনার অধিকাংশ উম্মত বেহেশতী হবে এই কারণেই তিনি কাঁদছেন। তবে তিনি হিংসায় জ্বলে পুড়ে থাক হয়ে কাঁদছেন না। বরং তিনি তার উম্মতের জন্য বড় মেহনত করেছেন। হেদায়েত করার জন্য চেষ্টা করেছেন তা সত্ত্বেও তারা নাফরমানী করেছেন এবং এর ফলে তাদের অধিকাংশই বেহেশত হতে বঞ্চিত হবে, দোজখে প্রবেশ করবে। এ কারণেই তিনি মনের দুঃখে ও ক্ষোভে কাঁদছেন।

        কোন কোন হাদীসে আছে যে, আল্লাহর তায়ালা হযরত মূসা ইবনে ইমবানকে নবীরূপে প্রেরণ করেন এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। শেষ নবীর অশেষ গুণ, সীমাহীন মর্যাদার কথা শুনে হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে আবেদন করেন- "হে আল্লাহ। তুমি যদি আমাকে বনী ইসরাইলের নবী রূপে প্রেরণ না করে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মতরূপে প্রেরণ করতে তাহলে আমার জন্ম সার্থক হতো।" 

ষষ্ঠ আকাশের দর্শনীয় বস্তুসমূহ

        মহানবী (সঃ) বর্ণনা করেন যে- 'ঘষ্ঠ আকাশের ফেরেশতাগণ এত দীর্ঘকায় ফেরেশতাদেরকে দেখিনি। আর তাদের জবানে এত জোরে শোরে আল্লাহর যিকির জারী ছিল। যদি আল্লাহ আমার শ্রবণ শক্তির হেফাজত না করতেন তাহলে আল্লাহ জানেন আমার অবস্থা কি হতো। আমি তাদের এ অবস্থা দেখে জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম- "হে জিব্রাইল। এরা কোন ধরনের ফেরেশতা? যাদের তাসবীহ ও তাহলীলের মাধ্যমে সাত আকাশ, সাত যমিন যেন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। জবাবে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "হে আল্লাহর নবী। তাদের নাম হলো কাররুবিউন।

        মহানবী (সঃ) বললেন- আমি তাদের সালাম দিলাম। কিন্তু তারা আমার সালামের প্রতি মোটেই দৃষ্টিপাত করলেন না বরং তারা তাদের যিকিরের মধ্যেই একাগ্রচিত্তে মশগুল আছেন। যেমন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-

لا يَعْصُونَ الله مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُوسُرُونَ .

        তারা অবশ্য ইশারা ইঙ্গিতে আমার সালামের জবাব দিয়েছিল কিন্তু মহান আল্লাহর ভয়ে তারা মুখ খুলেনি এবং কিছুই বলে নি। অবশেষে হযরত জিব্রাইল আমীন (আঃ) তাদেরকে বললেন- "হে ফেরেশতাগণ! তোমাদের কি জানা নেই; কেমন প্রিয় ব্যক্তি তোমাদেরকে সালাম করেছেন? দেখ ইনি হলেন শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)। আর আনি হলেন সেই অশেষ যমানার নবী যার উপর মহান আল্লাহ তার বড় বড় ইহসান ও রহমত নাযিল করেছেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) যখন তাদেরকে এ শুভ সংবাদ শুনালেন তখন সে "কাররুবির্তন' ফেরেশতাগণ অত্যন্ত মহব্বত সহকারে আমার সালামের জবাব দিলেন এবং আমার সাক্ষাত লাভে ধন্য হলেন।

Post a Comment

0 Comments