নবী করীম (সা:) এর প্রতি দরূদ পাঠ করা আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশ

        নবী করীম (সা:) এর প্রতি দরূদ পাঠের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব এতই অধিক যে, দরূদ পাঠ করা ব্যতীত নামাজ হয় না। নামাজ আদায় করতে হবে কেবলমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে, মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর এ মহান নবীকে মর্যাদার সর্বাধিক উচ্চস্তরে উপনীত করেছেন বিধায় নামাজের মধ্যেও তাঁর হাবীবের প্রতি দরূদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান মালিক আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে দু'হাত উঠিয়ে দোয়া করার পূর্বেও নবী করীম (সা:) এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে হয়। মৃত মানুষের আত্মার মাগফিরাতের জন্যে দোয়া করার পূর্বেও দরূদ পাঠ করতে হয়। এর কারণ হলো, রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করলে মহান আল্লাহ তা'য়ালা খুবই খুশী হন এবং দরূদ পাঠকারীর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তার দোয়া কবুল করেন।

        মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী করীম (সা:) এর প্রতি দরূদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন-

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ طَ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا 

        নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরূদ পাঠান; (অতএব) হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরাও নবীর প্রতি দরূদ পাঠাতে থাকো এবং (তাঁকে) উত্তম অভিবাদন (পেশ) করো। (সূরা আহযাব-৫৬) 

        পবিত্র কুরআনের গবেষকগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে নবীর প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবীর প্রতি সীমাহীন করুণা বর্ষণকারী। তিনি তাঁর প্রশংসা করেন। তাঁর কাজে বরকত দান করেন। তাঁর নাম বুলন্দ করেন। তাঁর প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন।

        ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, তাঁরা তাঁকে সর্বাধিক ভালোবাসেন। তাঁর জন্য আল্লাহ তা'য়ালার কাছে দোয়া করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তাঁকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন। তাঁর শরীয়াতকে প্রসার ও বিস্ত বৃতি দান করেন এবং তাঁকে মাকামে মাহমুদ তথা সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছে দেন।

        মহান আল্লাহ তাঁর নবী সম্পর্কে এ কথা বলার কারণ হলো, বিশ্বনবী (সা:) যখন মক্কায় ইসলামী আন্দোলনের সূচনা করলেন তখন ইসলামের শত্রুরা নিজেদের মনের আক্রোশ প্রকাশের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ দিয়ে চলছিল এবং তারা নিজেরা এ কথা মনে করছিল যে, এভাবে কাদা ছিটিয়ে তারা তাঁর নৈতিক প্রভাব নির্মূল করে দেবে। অথচ এ নৈতিক প্রভাবের ফলে ইসলাম ও মুসলমানরা দিনের পর দিন এগিয়ে চলছিল। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করে এ কথা জানিয়ে দিলেন, 'ইসলামের শত্রুরা আমার নবীর বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে তাঁকে অপদস্ত করার যতই প্রচেষ্টা করুক না কেনো, শেষ পর্যন্ত তারাই ব্যর্থ হবে। কারণ আমি আল্লাহ তাঁর প্রতি মেহেরবান এবং সমগ্র বিশ্বজাহানের আইন ও শৃংখলা ব্যবস্থা আমারই নির্দেশে যেসব ফেরেশতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তারা সবাই তাঁর সহায়ক ও প্রশংসাকারী। আমি যেখানে তাঁর নাম বুলন্দ করছি। আমার ফেরেশতারা তাঁর প্রশংসাবলীর আলোচনা করছে সেখানে তাঁর নিন্দাবাদ করে তারা কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। আমার রহমত ও বরকত তাঁর সহযোগী এবং আমার ফেরেশতারা দিনরাত দোয়া করছে, হে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন! মুহাম্মাদ (সা:) এর মর্যাদা আরো বেশি উঁচু করে দাও এবং তাঁর আদর্শকে আরো বেশি প্রসারিত ও বিকশিত করো। এ অবস্থায় ইসলাম বিরোধিরা মুহাম্মাদ (সা:) এর কি ক্ষতি করতে পারে'?

        ঈমানদারদের প্রতি দরূদ পাঠানোর যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার অর্থ হলো, 'হে লোকেরা! মুহাম্মাদ (সা:) এর বদৌলতে তোমরা যারা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করেছো, তারা তাঁর মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁর মহাঅনুগ্রহের হক আদায় করো। তোমরা মূর্খতার অন্ধকারে পথ ভুলে বিপথে চলছিলে, এ মহান ব্যক্তি তোমাদের জ্ঞানের আলোক বর্তিকা দান করেছেন। তোমরা নৈতিক অধঃপতনের মধ্যে ডুবেছিলে, এ ব্যক্তি তোমাদের সেখান থেকে উঠিয়েছেন এবং তোমাদের এমন যোগ্যতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন যার ফলে আজ অন্যরা তোমাদের ঈর্ষা করে। তোমরা বর্বর ও পাশবিক জীবন যাপন করছিলে, এ ব্যক্তি তোমাদের সর্বোত্তম মানবিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাজে সুসজ্জিত করেছেন। তিনি তোমাদের ওপর এসব অনুগ্রহ করেছেন বলেই দুনিয়ার ইসলাম বিরোধিরা এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আক্রোশে ফেটে পড়েছে। নয়তো দেখো, তিনি কারো সাথে ব্যক্তিগতভাবে কোনো অশোভন আচরণ করেননি। সুতরাং এখন তোমাদের কৃতজ্ঞতার অনিবার্য দাবি হচ্ছে এই যে, তারা এ আপাদ-মস্তক কল্যাণ ব্রতী ব্যক্তিত্বের প্রতি যে পরিমাণ বিদ্বেষ পোষণ করে ঠিক একই পরিমাণ বরং তাঁর চেয়ে বেশি ভালোবাসা তোমরা তাঁর প্রতি পোষণ করো। তারা তাঁকে যে পরিমাণ ঘৃণা করে ঠিক ততটাই বরং তাঁর চেয়ে বেশীই তোমরা তাঁর প্রতি অনুরক্ত হবে। তারা তাঁর যতটা নিন্দা করে ঠিক ততটাই বরং তার চেয়ে বেশী তোমরা তাঁর প্রশংসা করো। তারা তাঁর যতটা অশুভাকাংখী হয় তোমরা ঠিক ততটাই বরং তার চেয়ে বেশি শুভাকাংখী হয়ে যাও এবং তাঁর পক্ষে সেই একই দোয়া করো যা আল্লাহ তা'য়ালার ফেরেশতারা দিনরাত • তাঁর জন্য করে যাচ্ছে, 'দুই জাহানের রব্ব! তোমার নবী যেমন আমাদের প্রতি বিপুল অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও তাঁর প্রতি অসীম ও অগণিত রহমত বর্ষণ করো, তাঁর মর্যাদা পৃথিবীতেও সবচেয়ে বেশি উন্নত করো এবং আখেরাতেও তাঁকে সকল নৈকট্যলাভকারীদের তুলনায় অধিক নৈকট্য দান করো'।

        উল্লেখিত আয়াতে মুসলমানদেরকে দু'টো বিষয়ের আদেশ দেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে, 'সাল্লু আলাইহি' অর্থাৎ তাঁর প্রতি দরূদ পড়ো। অন্যটি হচ্ছে, 'ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা' অর্থাৎ তাঁর প্রতি সালাম ও প্রশান্তি দান করো।

        'সালাত' শব্দটি যখন 'আলা' অব্যয় সহকারে বলা হয় তখন এর তিনটি অর্থ হয়।

        এক. কারো অনুরক্ত হয়ে পড়া, ভালোবাসা সহকারে তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং তার প্রতি ঝুঁকে পড়া।

        দুই. কারো প্রশংসা করা।

        তিন, কারো পক্ষে দোয়া করা।

        'সালাত' শব্দটি যখন আল্লাহ তা'য়ালার জন্য বলা হবে তখন এ কথা সুস্পষ্ট যে, তৃতীয় অর্থটির জন্য এটি বলা হবে না। কারণ আল্লাহ তা'য়ালার অন্য কারো কাছে দোয়া করার ব্যাপারটি একেবারেই অকল্পনীয়। তাই সেখানে অবশ্যই তা হবে শুধুমাত্র প্রথম দু'টো অর্থের জন্য। কিন্তু যখন এ শব্দ বান্দাদের তথা মানুষ ও ফেরেশতাদের জন্য বলা হবে তখন তা তিনটি অর্থেই বলা হবে। তার মধ্যে ভালোবাসার অর্থও থাকবে, প্রশংসার অর্থও থাকবে এবং দোয়া ও রহমতের অর্থও থাকবে। সুতরাং মুমিনদের নবী করীম (সা:) এর পক্ষে 'সালু আলাইহি'-এর আদেশ দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, তোমরা তাঁর ভক্ত-অনুরক্ত হয়ে যাও তাঁর প্রশংসা করো এবং তাঁর জন্য দোয়া করো।

        'সালাম' শব্দেরও দু'টো অর্থ হয়। এক. সব ধরণের বিপদাপদ ও অভাব অনটন মুক্ত থাকা। এর প্রতিশব্দ হিসেবে আমাদের এখানে সালামতি বা নিরাপত্তা শব্দের ব্যবহার আছে। দুই, শান্তি, সন্ধি ও অবিরোধিতা। সুতরাং নবী করীম (সা:) এর পক্ষে 'সাল্লিমু তাসলিমা' বলার একটি অর্থ হচ্ছে যে, তোমরা তাঁর জন্য পূর্ণ নিরাপত্তার দোয়া করো। আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে যে, তোমরা পুরোপুরি মনে প্রাণে তাঁর আন্দোলনের কাজে সহযোগিতা করো, তাঁর বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকো এবং তাঁর আদেশ পালনকারীতে পরিণত হও।

        এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম নবী করীম (সা:) কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালামের পদ্ধতি তো আপনি আমাদেরকে বলে দিয়েছেন, (অর্থাৎ নামাজে 'আস্সালামু আলাইকা ইয়া আইয়্যুহান নীবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ' এবং দেখা সাক্ষাতে আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ বলা) কিন্তু আপনার প্রতি সালাত পাঠানোর পদ্ধতি কি?

        এসব প্রশ্নের উত্তরে নবী করীম (সা:) সাহাবায়ে কেরামকে বিভিন্ন ধরনের দরূদ শিক্ষা দিয়েছিলেন। বর্তমানে দরূদ সম্পর্কে বেশ কিছু বই-পুস্তক বাজারে দেখা যায় এবং এসব বই-পুস্তকে নানা ধরনের দরূদের উল্লেখ রয়েছে। যেমন দরূদে হাজারী, দরূদে লাখী, দরূদে মুস্তফা, দরূদে আকবর, দরূদে শেফা ইত্যাদি নামে বহু ধরনের দরূদ এবং এসব দরূদের ফযিলত উক্ত বই-পুস্তকে লিখা হয়েছে। হাদীস গবেষকগণ উল্লেখিত দরূদের একটি দরূদও হাদীসের সমগ্র কিতাবেও সন্ধান করে পাননি। তাঁরা বলেছেন, এসব দরূদ ও বর্ণিত ফযিলত সকল কিছুই কল্পিত বৈ আর কিছুই নয়। নবী করীম (সা:) সাহাবায়ে কেরামকে যে সকল দরূদ শিখিয়েছেন তা সকলই হাদীসের কিতাবসমূহে মওজুদ রয়েছে এবং আমরা হাদীসের বিভিন্ন কিতাব থেকে কয়েকটি দরূদ এখানে উল্লেখ করছি।

        স্বয়ং আল্লাহর নবীর শেখানো দরূদের যে কি মর্যাদা, তা কল্পনাও করা যায় না। সুতরাং এসব দরুদের ফযীলত, কল্যাণকারীতা উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন মনে করি। কারণ এসব দরূদের ফযীলত ও সওয়াব অফুরন্ত। যে কোনো বিপদাপদে এসব দরূদ পাঠ করলে মহান আল্লাহ তা'য়ালা তার ওপরে অসীম রহমত অবতীর্ণ করবেন এবং নবী করীম (সা:) খুশী হবেন। হযরত কা'ব ইবনে উজরাহ্ (রা:) কে নবী করীম (সা:) এই দরূদ শিখিয়েছিলেন-

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ - وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّ عَلَى آلِ مُحَمَّدٌ كَمَا بَارِكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ

        আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদান কামা বারিকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

        এ দরূদটি সামান্য শাব্দিক পার্থক্য সহকারে হযরত কা'ব ইবনে উজরাহ্ (রা:) থেকে বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে ইমাম আহমাদ, ইবনে আবী শাইবাহ, আব্দুর রাজ্জাক, ইবনে আবী হাতেম ও ইবনে জারীরে উল্লেখ করা হয়েছে।

        হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) এর বর্ণনা থেকে ইবনে জারীর হযরত আবু হুমাইদ সা'ঈদী (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে-

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِه وَذُرِّيَّته كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِه وَذُرِّيَّتِه كَمَا بَارِكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ

        আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয ওয়া জিহি ওয়া যুর রিয়াতিহি কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয ওয়া জিহি ওয়া যুর রিয়াতিহি কামা বারাকতা আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। 

(মুআত্তা, ইমাম মালেক, মুসনাদে আহমাদ, বোখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

        হযরত আবু মাসউদ বদরী (রা:) থেকে এ দরূদ বর্ণিত হয়েছে-

 اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارِكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ -


        আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ফিল আলিমিনা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। (মালেক, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ, ইবনে জারীর, ইবনে হিব্বান ও হাকেম)

        হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে এ দরূদ বর্ণিত হয়েছে-

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدُكَ وَ رَسُولُكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارِكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ

        আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীম। 
(আহমাদ, বুখারী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)

        হযরত বুরাইদাতাল খুযাই (রা:) থেকে এ দরূদ বর্ণিত হয়েছে-

اللَّهُمَّ اجْعَلْ صَلوتُكَ وَرَحْمَتِكَ وَبَرَكَاتِكَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا جَعَلْتَهَا عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ

        আল্লাহুম্মাজ আল সলাতুকা ওয়া রাহমাতিকা ও বারকাতিকা আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা জাআলতাহা আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। 
(আহমাদ, আব্দ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে মারদুইয়া)

        হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে এ দরূদ বর্ণিত হয়েছে-

 اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّد وَ عَلَى آلِ مُحَمَّد وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّد وَ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَرَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ

        আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিওঁ ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা ওয়া বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ফিল আলিমিনা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। (নাসাঈ)

        হযরত তালহা (রা:) থেকে এ দরূদ বর্ণিত হয়েছে-

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّد وَ عَلَى آلِ مُحَمَّد كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ - وَبَرِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ

        আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। (ইবনে জারীর)

        উল্লেখিত দরূদগুলোয় শব্দের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সবগুলোর অর্থ একই। এসব দরূদগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এ বিষয়গুলো ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে।

        প্রথমত এসব দরূদ নবী করীম (সা:) মুসলমানদেরকে পাঠ করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, 'আমার ওপরে দরূদ পাঠ করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, তোমরা আল্লাহ তা'য়ালার কাছে এ মর্মে দোয়া করো, হে আল্লাহ তা'য়ালা! তুমি মুহাম্মাদ (সা:) এর ওপর দরূদ পাঠাও'। এক শ্রেণীর স্বল্প জ্ঞানসম্পন্ন লোক এ ব্যাপারে আপত্তি করে বলে যে, 'এটা তো বড় অদ্ভূত ব্যাপার, আল্লাহ তা'য়ালা তো আমাদেরকে বলছেন, তোমরা নবীর ওপরে দরূদ পাঠ করো, কিন্তু অপর দিকে আমরা আল্লাহ তা'য়ালাকে বলছি যে, তুমি দরূদ পাঠাও'।

        অথচ রাসূল (সা:) লোকদেরকে এ কথা বলেছেন যে, 'তোমরা আমার প্রতি সালাতের হক আদায় করতে চাইলেও করতে পারো না। তাই আল্লাহ তা'য়ালারই কাছে দোয়া চাও যেন তিনি আমার প্রতি দরূদ পাঠান'। এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন, আমরা নবী করীম (সা:) এর মর্যাদা বুলন্দ করতে পারি না। আল্লাহ তা'য়ালাই বুলন্দ করতে পারেন। আমরা তাঁর অনুগ্রহের প্রতিদান দিতে পারি না। আল্লাহ তা'য়ালাই তার প্রতিদান দিতে পারেন। আমরা তাঁর বাণীসমূহ উচ্চমাপে পৌঁছানোর এবং তাঁর আদর্শকে সম্প্রসারিত করার জন্য যতই চেষ্টা চালাই না কেনো, আল্লাহ তা'য়ালার মেহেরবানী এবং তাঁর দেয়া সুযোগ ও সহায়তা ব্যতীত তাতে কোনো প্রকার সাফল্য অর্জন করতে পারি না। এমন কি নবী করীম (সা:) এর প্রতি ভক্তি ভালোবাসাও আমাদের অন্তরে আল্লাহরই সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। অন্যথায় শয়তান কত রকম প্ররোচনা দিয়ে তাঁর প্রতি আমাদের মন-মস্তিষ্ক বিরূপ করে তুলতে পারে। মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে তা থেকে হেফাজত করুন।

        সুতরাং নবী করীম (সা:) এর ওপর দরূদ পাঠের হক আদায় করার জন্য আল্লাহ তা'য়ালার কাছে তাঁর প্রতি সালাত বা দরূদের দোয়া করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন বলে সে যেন আল্লাহ তা'য়ালার সমীপে নিজের অক্ষমতা স্বীকার করতে গিয়ে বলে, হে আল্লাহ তা'য়ালা! তোমার নবীর ওপর সালাত বা দরূদ পাঠানোর যে কর্তব্য আমার প্রতি দেয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করার সামর্থ আমার নেই। আমার পক্ষ থেকে তুমিই তা সম্পন্ন করে দাও এবং তা করার জন্য আমাকে যেভাবে কাজে নিয়োগ করতে হয় তা তুমি নিয়োগ করো।

        দ্বিতীয়ত রাসূল (সা:) এর ভদ্রতা ও মহানুভবতার ফলে তিনি কেবল নিজেকেই এ দোয়ার জন্য নির্দিষ্ট করে নেননি। বরং নিজের সাথে তিনি নিজের পরিজন স্ত্রী ও পরিবারকেও শামিল করে নিয়েছেন। 'স্ত্রী ও পরিবার' অর্থ সুস্পষ্ট আর 'পরিজন' শব্দটি নিছক রাসূল (সা:) এর পরিবারের লোকদের জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং এসব শব্দের মধ্যে এমন সব লোকও এসে যায় যারা তাঁর অনুসারী এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে। পরিজন অর্থে মূলে আরবী 'আল' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষার দৃষ্টিতে 'আল' ও 'আহল'-এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে, কোন ব্যক্তির 'আল' হচ্ছে এমনসব লোক যারা হয় তার সাথী, সাহায্যকারী ও অনুসারী, তারা তার আত্মীয় বা অনাত্মীয় হোক বা না হোক অবশ্যই তার আত্মীয়। পবিত্র কুরআনের ১৪ টি স্থানে 'আলে ফেরআউন' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো জায়গায়ও 'আলে' অর্থ ফেরাউনের পরিবারের লোকেরা নয়। বরং এমন সকল লোক যারা হযরত মূসার মুকাবিলায় ফেরাউনের সমর্থক ও সহযোগী ছিল। (দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখুন সূরা আল বাকারাহ, ৪৯-৫০, সূরা আলে ইমরাণ-১১, আরাফ-১৩০, মুমিনুন-৪৬)

        সুতরাং এমন সমস্ত লোকই 'আলে' মুহাম্মাদ (সা:) এর বহির্ভূত হয়ে যায় যারা বিশ্বনবী (সা:) এর আদর্শ অনুসরণ করে না, হতে পারে সে নবীর রক্তের আত্মীয়। পক্ষান্তরে এমন সকল লোকও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় যারা নবী করীম (সা:) এর আদর্শ অনুসরণ করে, কিন্তু তারা নবীর রক্তের কোনো আত্মীয় নয়, তবুও তারা নদীর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তবে নবী পরিবারের এমন প্রত্যেকটি লোক সর্বতোভাবেই 'আলে' মুহাম্মাদ (সা:) এর অন্তর্ভুক্ত হবে যারা তাঁর সাথে রক্তের সম্পর্কও রাখে আবার তাঁর আদর্শও অনুসরণ করে।

        নবী করীম (সা:) যেসব দরূদ শিখিয়েছেন তার প্রত্যেকটিতে অবশ্যই এ কথা রয়েছে যে, তাঁর প্রতি এমন অনুগ্রহ করা হোক যা ইবরাহীম (আ:) ও তাঁর পরিবার- পরিজনদের ওপর করা হয়েছিল। এ বিষয়টি বুঝতে এক শ্রেণীর লোকদের বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। একশ্রেণীর লোক এর বিভিন্ন জটিল ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু গবেষকগণ এর কোনো একটি ব্যাখ্যাও গ্রহণ করেননি। তারা ব্যাখ্যা দেন যে, যারা নবুয়‍্যাত ওহী ও কিতাবকে হেদায়েতের উৎস বলে মেনে নেয় তারা সবাই হযরত ইবরাহীম (আ:) এর নেতৃত্বের প্রশ্নে একমত। এ ব্যাপারে মুসলমান, খৃষ্টান ও ইয়াহূদীদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সুতরাং রাসূল (সা:) এর বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, যেভাবে হযরত ইবরাহীম (আ:) কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা সকল নবীর অনুসারীদের নেতায় পরিণত করেছেন, অনুরূপভাবে আমাকেও পরিণত করুন। এমন কোনো ব্যক্তি যে নবুয়‍্যাত মেনে নিয়েছে সে যেন আমার নবুয়‍্যাতের প্রতি ঈমান আনা থেকে বঞ্চিত না হয়।

        বিশ্বনবী (সা:) এর ওপরে দরূদ পাঠ করা সুন্নাত। তাঁর নাম উচ্চারিত হলে তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করা মুস্তাহাব। বিশেষ করে নামাযে দরূদ পড়া সুন্নাত। এ বিষয়ে আলেম সমাজ একমত। সমগ্র জীবনকালে নবী করীম (সা:) এর ওপরে একবার দরূদ পাঠ করা ফরজ। এ ব্যাপারে আলেমদের ঐকমত্য রয়েছে। কারণ আল্লাহ তা'য়ালা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু এরপর দরূদের ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ইমাম শাফেঈ (রাহ:) বলেন, নামাযে একজন মুসল্লী যখন শেষবার তাশাহুদ পড়ে তখন সেখানে সালাতুন আলান নবী পড়া ফরজ। কোনো ব্যক্তি এভাবে না পড়লে তার নামায হবে না। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে থেকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:), হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা:), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) ও হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:), তাবেঈদের মধ্যে থেকে শা'বী (রাহ), ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (রাহ:), মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব কুরযী (রাহ:) ও মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রাহ:) এবং ফকীহদের মধ্যে থেকে ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ (রাহ:) ও এ মতের প্রবক্তা ছিলেন। শেষের দিকে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহ:) ও এ মত অবলম্বন করেন।
    
        ইমাম আবু হানিফা (রাহ:), ইমাম মালেক (রাহ:) ও অধিকাংশ উলামা এ মত পোষণ করেন যে, দরূদ সমগ্র জীবনে শুধুমাত্র একবার পড়া ফরজ। এটি কালেমায়ে শাহাদাতের মত। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ইলাহ বলে মেনে নিয়েছে এবং নবী করীম (সা:) কে নবী বলে মেনে নিয়েছে সে ফরজ আদায় করেছে। অনুরূপভাবে যে একবার দরূদ পাঠ করেছে সে নবীর ওপর সালাত পাঠ করার ফরজ আদায়ের দায়িত্ব মুক্ত হয়ে গেছে। এরপর তার ওপর আর কালেমা পড়া ফরজ নয় এবং দরূদ পড়াও ফরজ নয়।

        আলেমদের একটি দল নামাযে দরূদ পড়াকে সকল অবস্থায় ওয়াজিব বলে গণ্য করেন। কিন্তু তাঁরা তাশাহুদের সাথে তাকে শৃংখলিত করেন না।

        আলেমদের আরেকটি দলের মতে প্রত্যেক দোয়ায় দরূদ পড়া ওয়াজিব। আরো কিছু চিন্তাবিদ নবী করীম (সা:) এর নাম উচ্চারিত হলে দরূদ পড়া ওয়াজিব বলে অভিমত পোষণ করেন। আরেক দল আলেমদের মতে এক মজলিশে রাসূল (সা:) এর নাম যতবারই উচ্চারিত হোক না কেনো, দরূদ পড়া কেবলমাত্র একবার ওয়াজিব হবে।

        শুধুমাত্র ওয়াজিব হবার ব্যাপারে এ মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তবে দরূদের ফযীলত ও তা পাঠ করলে প্রতিদান ও সওয়াব পাওয়া এবং তার একটি অনেক বড় সৎকাজ হবার ব্যাপারে তো সমস্ত মুসলিম উম্মাহ্ একমত। এমন প্রত্যেকটি মুসলমানের অন্তর থেকেই তো স্বাভাবিকভাবেই দরূদ বের হবে, যার মধ্যে এ অনুভূতি থাকবে যে, বিশ্বনবী (সা:) আল্লাহ তা'য়ালার পরে আমাদের প্রতি সবচেয়ে বড় অনুগ্রহকারী। মানুষের হৃদয়ে ঈমান ও ইসলামের মর্যাদা যত বেশী হবে তত বেশী মর্যাদা হবে তার হৃদয়ে বিশ্বনবী (সা:) এর অনুগ্রহেরও। আর মানুষ যত বেশী এ অনুগ্রহের মর্যাদা দিতে শিখবে তত বেশিই যে নবী করীম (সা:) এর ওপরে দরূদ পাঠ করবে। সুতরাং অধিক দরূদ পাঠ করা ঈমানের একটি মাপকাঠি। এটি পরিমাপ করে জানিয়ে দেয় বিশ্বনবী (সা:) এর আদর্শের সাথে মানুষের সম্পর্ক কতটা গভীর এবং ঈমানের নিয়ামতের কতটা সম্মান তার অন্তরে আছে। এ কারণেই নবী করীম (সা:) বলেছেন-

مَنْ صَلَّى عَلَى صَلواةَ لَمْ تَزِلُ الْمَلَائِكَةِ تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا صَلَّى عَلَى 

        যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে ফেরেশতারা তার প্রতি দরূদ পাঠ করে যতক্ষণ সে দরূদ পাঠ করতে থাকে। (আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)

مَنْ صَلَّى عَلَى وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا -

         যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা'য়ালা তার প্রতি দশবার দরূদ পাঠ করেন। (মুসলিম) অর্থাৎ আল্লাহ তা'য়ালা তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করেন।

 أُولَى النَّاسِ بِي يَوْمِ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَى صَلَواةٌ

        কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকার সবচেয়ে বেশি হকদার হবে সেই ব্যক্তি যে আমার ওপর সবেচেয়ে বেশি দরূদ পড়বে। (তিরমিযী)

الْبَخِيلُ الَّذِي ذَكَرْتُ عِنْدَهُ فَلَم يَصَلِّ عَلَى

        আমার কথা যে ব্যক্তির সামনে আলোচনা করা হয় এবং সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না সে কৃপণ। (তিরমিযী)

        সুতরাং সকল মুসলমানের উচিত নবী করীম (সা:) এর প্রতি অধিক দরূদ পাঠ করা। তবে এ দরূদ পাঠই শুধুমাত্র মুক্তির মাধ্যম নয়। মানুষকে অবশ্যই মহান আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে, আল্লাহ তা'য়ালার বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। তাহলে দরূদ পাঠও উপকারে আসবে। আল্লাহ তা'য়ালার বিধান না মেনে বা ইসলামী বিধান ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম না করে শুধু মাত্র দরূদ পাঠ করলে কিয়ামতের দিন যদি রাসূল (সা:) এ কথা বলেন যে, 'যখন আমার আদর্শকে অপমানিত করা হচ্ছিলো, যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেয়া জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে উৎখাত করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিলো, ইসলামের সৈনিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কল্পিত অভিযোগ তুলে তাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছিলো, আর তোমরা ঘরের কোণে বা মসজিদে বসে বসে দরূদ পাঠ করছিলে, বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করোনি, আজ তোমাদের ওসব দরূদে আমার কোনোই প্রয়োজন নেই' তখন কি উপায় হবে? ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করা হলো ফরজ, এই ফরজ আদায় করে তারপর যতবেশি দরূদ পাঠ করা যাবে আল্লাহ তা'য়ালাও সন্তুষ্ট হবেন এবং জান্নাত ততবেশি তার কাছে এগিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।

Post a Comment

0 Comments