এ বিষয়টি কিভাবে সংঘটিত হয়, তা অবলোকন করলে বিস্ময়ে বিমূঢ় হতে হয়। অন্যান্য বিষয়ের দিকে দৃষ্টি না দিয়েও এই একটি মাত্র বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিলেই আল্লাহর রুচিবোধ, সৌন্দর্যবোধ, শৈল্পিক নান্দনিক সৌন্দর্যবোধ কত যে বিস্ময়কর; কত যে প্রশংসামূলক, তা দেখে যেমন হতবাক হতে হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর প্রশংসা করেও শেষ করা যাবে না। ফুলসমূহের চলৎশক্তি নেই; তারা চলাফেরার মাধ্যমে একটি আরেকটির সাথে গিয়ে মিলিত হতে পারে না। এ জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাতাসের মাধ্যমে, পানির মাধ্যমে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ্রমর, মৌমাছি ও সুদর্শন দৃষ্টি-নন্দন প্রজাপতির মাধ্যমে ফুলের পুরুষ কেশরকে স্ত্রী কেশরের সাথে মিলিত হবার ব্যবস্থা করেছেন। এই কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব মহান আল্লাহ সর্বভূক প্রাণী আরশোলা-তেলাপোকাকে দেননি। কারণ তাঁর বান্দারা এই ফুলের সৌরভ গ্রহণ করে, ফুল দেখতে সুন্দর আর এ জন্য ফুলের ওপর বিচরণ করে সে কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন দৃষ্টি নান্দনিক প্রজাপতির ওপরে এবং মৌমাছি আর ভ্রমরের ওপরে।
কি অপূর্বদর্শন এই ভ্রমর আর প্রজাপতি। এদেরকে দেখলে মনে হয় যেন কোন এক নিপুণ শিল্পী দীর্ঘদিন সাধনা করে তার দেহে অপূর্ব সৌন্দর্যের পশরা অঙ্কন করেছে। শত সহস্র প্রজাপতি; একটি প্রজাতির সাথে আরেকটি প্রজাতির রংয়ের কোন মিল নেই। আল্লাহ সুন্দর এবং ফুলও সুন্দর, এই সুন্দর ফুলগুলোর ওপরে কুৎসিত দর্শন এবং নোংরা কোন প্রাণী বিচরণ করে পরাগায়ন ঘটালে সৌন্দর্য ও রুচিবোধ ক্ষুন্ন হতো। ফুলের সৌন্দর্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মহান আল্লাহ অপূর্ব সুন্দর প্রজাপতিকেই নির্বাচিত করেছেন, তারা গোটা বিশ্বব্যাপী পরাগায়ন ঘটাবে। মহান আল্লাহর রুচিবোধ যে কত সুন্দর, কত মার্জিত ও উন্নত রুচি, তা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই প্রকাশ ঘটেছে। আল্লাহকে কেউ যদি চিনতে চায়, কেউ যদি তাঁর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে অবগত হতে চায়, তাহলে তাকে আল্লাহর সৃষ্টির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে। তাঁর সৃষ্টির অপূর্ব সৌন্দর্য আর সামঞ্জস্যতা দেখে মুখ থেকে নিজের অজান্তেই উচ্চারিত হতে থাকবে-আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন-সমস্ত প্রশংশা একমাত্র আল্লাহর জন্য-যিনি গোটা জাহানের রব।
পৃথিবীর সমস্ত ফলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখা যায়, এমন কোন একটি ফলও পাওয়া যাবে না, যে ফলের ওপরে আবরণ নেই। সমস্ত ফলের ওপরে আবরণ রয়েছে। মনে হয় যেন মানুষ আল্লাহর সম্মানিত মেহমান, আর মেহমানের সামনে তিনি খাদ্যগুলো পরিবেশন করছেন অত্যন্ত যত্নের সাথে। আবরণহীন ফলের ওপরে নানা ধরনের কীট-পতঙ্গ বসবে; তারা মলমূত্র ত্যাগ করবে, ফলগুলো রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবে এবং তা খেতে রুচি হবে না। এ জন্য আল্লাহ তা'য়ালা প্রতিটি ফলের ওপরেই আবরণ সৃষ্টি করেছেন। যেন ফলের গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে এবং খেতেও রুচিতে না বাধে। একটি বেদানার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, বেদানার দানাগুলোর ওপরে বেশ কয়েকটি আবরণ রয়েছে। ওপরের আবরণটি সবচেয়ে ঘন আর মোটা। তারপরের আবরণগুলো পাতলা। এগুলো ছিন্ন করার পরেই রসে ভরা দানাগুলো বের হবে। নারিকেলের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, তার প্রথম আবরণটি খোসার আকারে বিদ্যমান এবং সেটা খুবই মোটা। এরপর রয়েছে একটি খোলা জাতিয় শক্ত আবরণ। এসব ছিন্ন করার পরই পাওয়া যাবে সুস্বাদু নারিকেল আর শরবত। ছোট্ট একটি ফল আঙ্গুর, তার ওপরেও আবরণ রয়েছে। চালের ওপরেও রয়েছে অনেকগুলো আবরণ। এসব সৃষ্টির সাথে কতটা উন্নত রুচি জড়িত, তা সৃষ্টির ধরণ দেখলেই অনুমান করা যেতে পারে।
সত্যের অনুসারী সত্যানুসন্ধিৎসু দৃষ্টি সম্পন্ন একজন মানুষ নিখিল বিশ্বের অনু-পরমাণু থেকে শুরু করে চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র থেকে ঐ বিশাল আকাশ পর্যন্ত এবং বৃক্ষ-তরু-লতা, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর ও বৈচিত্রপূর্ণ প্রাণীজগতের অপূর্ব গঠন প্রণালী তার দৃষ্টির সামনে দেখতে পায়, তখন তার মুখ থেকে নিজের অগোচরেই বেরিয়ে আসে-আল হাম্দু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন-সমস্ত প্রশংসা একমাত্র ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল জাহানের রব। এ ধরনের লোকদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ বলেছেন-
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ لايات الأولى الأَلْبَابِ الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقٍ السمواتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَاذَا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির ব্যাপারে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে সেসব বিচক্ষণ-জ্ঞানী লোকদের জন্য অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে, যারা উঠতে, বসতে ও শুতে-যে কোন অবস্থাতেই আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি সংগঠন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ওঠে-আমাদের রব্ব! এসব কিছু তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করোনি। তুমি উদ্দেশ্যহীন কাজের বাতুলতা থেকে পবিত্র। (সূরা আল ইমরাণ-১৯০-১৯১)
মানুষ নিজেকেও সুন্দর করে সাজাতে জানতো না। কোরআন শরীফ বলছে, মহান আল্লাহ এই মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য পোষাক অবতীর্ণ করেছেন, পাখির দেহে একটির পর আরেকটি পালক সজ্জিত করে পাখির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন। পাখির পালকগুলো যেন সুন্দর ঝকঝকে থাকে, পালকে কোন ময়লা-আবর্জনা যেন স্থির থাকতে না পারে, এ জন্য আল্লাহ ঐ পালকের গোড়া থেকে ক্রীম জাতিয় এক প্রকার পিচ্ছিল পদার্থ নির্গত করার ব্যবস্থা করেছেন। পালকধারী প্রাণীগুলো তা নিজের মুখ দিয়ে পালকের গোড়া থেকে টেনে টেনে ঐ পিচ্ছিল পদার্থ সমস্ত পালকে ছড়িয়ে দেয়। এ ব্যবস্থা যদি আল্লাহ না করতেন, তাহলে হাঁস, মুরগী, কবুতর এবং অন্যান! যেসব পাখি মানুষ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে, সেসব প্রাণী দেখতে শুষ্ক মৃতের মতো হতো। মানুষের খেতে তা রুচিতে বাধতো। এই সৌন্দর্য আর রুচিবোধের যিনি পরিচয় দিলেন তিনিই হলেন আল্লাহ এবং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।
বস্ত্রহীন থাকলে মানুষকে ভীষণ কদাকার ও কুৎসিত দেখাবে। এ জন্য আল্লাহ পোষাক অবতীর্ণ করেছেন। এই পোষাকের মাধ্যমে মানুষ নিজের লজ্জাস্থান আবৃত রাখবে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেন-
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ اَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْاتِكُمْ وَرِيْشًا -
হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যেন তোমাদের দেহের লজ্জাস্থানসমূহকে আবৃত করতে পারো। এটা তোমাদের জন্য দেহের আচ্ছাদন ও শোভা বর্ধনের উপায়ও। (সূরা আল আ'রাফ-২৬)
এই পোষাক অবিন্যস্তভাবে ব্যবহার করলে অরুচিকর দে-গবে। এ জন্য তা পাক-পবিত্র, পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, মহান আল্লাহ সূরা মুদ্দাচ্ছিরের মাধ্যমে তাও শিক্ষা দিয়েছেন। অজ্ঞতার কারণে তাদানীন্তন যুগে একশ্রেণীর লোকজন বস্ত্রহীন হয়ে কা'বাঘরকে তাওয়াফ করতো। বিষয়টি ছিল চরম অরুচিকর এবং অসামাজিক। এ কুপ্রথা বন্ধ করে পোষাকে সজ্জিত হয়ে ইবাদাতের হক আদায় করতে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন-
يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
হে আদম সন্তান! প্রতিটি ইবাদাতের ক্ষেত্রে তোমরা নিজেদের ভূষণে সজ্জিত হয়ে থাকো। (সূরা আল আরাফ-৩১)
এভাবে মানুষের রুচিবোধ, সৌন্দর্যবোধ, ভদ্রতা, শালিনতা, কোন কিছু চাওয়ার পদ্ধতি, আহার করার শালীন পদ্ধতি, হাঁটা-উঠা-বসা এক কথায় মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক যেন সৌন্দর্যময় ও উন্নত রুচি গড়ে ওঠে, তা মহান আল্লাহ শিখিয়েছেন। তিনি স্বয়ং সুন্দর এবং সবচেয়ে প্রশংসামূলক রুচির অধিকারী, মানুষকেও তিনি তাঁর কোরআনের মাধ্যমে রুচি ও সৌন্দর্যবোধ শিখিয়েছেন। মানুষকে তিনি সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
মানুষকে অতীব উত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করেছি। (সূরা আত-তীন-৪)
মানুষকে এমন সুন্দর করে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, যার সাথে অন্য কোন সৃষ্টির কোন তুলনা হয় না। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُورَكُمْ
তিনি পৃথিবী ও আকাশমন্ডলকে সত্যতার ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন আর তোমাদের আকার-আকৃতি অত্যন্ত সুন্দর করে নির্মাণ করেছেন। (সূরা আত তাগাবুন-৩)
শারীরিক কাঠামোয় যেখানে যা প্রয়োজন, সেখানে তাই সংযোজন করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অদ্ভুত সুন্দর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন-
الَمْ نَجْعَل لَّهُ عَيْنَيْنِ وَلِسَانًاو شَفَتَيْنِ
আমি তাকে দুটো চোখ, একটি জিহ্বা এবং দুটো ওষ্ঠ দেইনি? (সূরা বালাদ-৮-৯)
মানুষের শারীরিক কাঠামো ও গঠন প্রণালী দেখে কারো এ কথা বলার মতো ধৃষ্টতা নেই যে, কান দুটো মাথার দু'পাশে না দিয়ে তা বগলের নিচে দিলে ভালো হতো। চোখ দুটো কপালের নিচে টানা টানা করে না দিয়ে কপালের ওপরে গোল বৃত্তের মতো করে দিলে ভালো হতো। নাকটা ঠোঁটের ওপরে না দিয়ে নাভীর ওপরে দিলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতো। ফুলের পাঁপড়ীগুলো ভিন্ন ধরনের হলে আরো সুন্দর দেখাতো। চতুষ্পদ প্রাণীর লেজ পেছনের দিকে না দিয়ে তা পিঠের ওপরে থাকলে ভালো হতো। এ ধরনের অমূলক কথা বলার ধৃষ্টতা এবং দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারবে না। আল্লাহর সৃষ্টিতে অসামঞ্জস্য রয়েছে, এমন চিন্তাও করা যায় না। যেখানে যা প্রয়োজন, আল্লাহ তাই করেছেন।
কথিত আছে, আল্লাহর একজন ওলী পথ দিয়ে যেতে যেতে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বিশ্রামের জন্য একটি বট গাছের নিচে শুয়ে পড়লেন। হঠাৎ করে বট গাছের ফল তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। তিনি চিন্তা করলেন, এত বড় একটি বিশাল গাছ, আর তার ফলগুলো কতই না ছোট্ট। মনে মনে তিনি আল্লাহকে বললেন, 'তোমার সৃষ্টিতে তো কোন অসামঞ্জ্য নেই-এ কথা অবশ্যই সত্য। কিন্তু বেল গাছ এই বট গাছের তুলনায় কত ছোট অথচ তার ফলগুলো বেশ বড়। আর বট গাছ কত বিশাল কিন্তু তার ফল খুবই ছোট। বিষয়টা আমার কাছে কেমন যেন,
আল্লাহর সেই ওলী মনে মনে আল্লাহকে যে কথাগুলো বলছিলেন, তা শেষ না হতেই বাতাসের এক ঝাপটা এসে বট গাছের ওপর দিয়ে বয়ে গেল। বাতাসের ঝাপটায় বট গাছের একটি ছোট্ট ফল গাছের নিচে শায়িত সেই ব্যক্তির নাকের ওপরে এসে পতিত হলো। সাথে সাথে আল্লাহর ওলী উঠে সিজদায় গিয়ে বলতে লাগলেন, 'হে আল্লাহ! আমাকে তুমি ক্ষমা করো। আমার কল্পনা অনুযায়ী এই বট গাছের ফল যদি গাছ অনুসারে বড় হতো, তাহলে আজ আমার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেতো এবং তোমার বান্দারা সূর্যের প্রখর তাপে নিঃশেষে জ্বলে পুড়ে গেলেও কেউ এই গাছের নিচে ছায়ায় বিশ্রামের জন্য আসতো না।'
সুতরাং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। তিনিই সমস্ত প্রশংসার অধিকারী। তাঁর সৃষ্টিতে কোথাও কোন অসামঞ্জ্যতা নেই। মহান আল্লাহ বলেন-
الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَوتِ طَبَاقًا مَا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِنْ تَفُوت - فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِنْ فطُورٍ ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيْرٌ
তিনিই স্তরে স্তরে সজ্জিত সপ্ত আকাশ নির্মাণ করেছেন। তোমরা মহাদয়াবানের সৃষ্টিকর্মে কোন ধরনের অসঙ্গতি পাবে না। দৃষ্টি আবার ফিরিয়ে দেখো, কোথাও কোন দোষ-ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হয় কি? বার বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করো, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত, শ্রান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে। (সূরা আল মুল্ক- ৩-৪)
মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, তারা সৃষ্টির এই অপরূপ দর্শনে আত্মহারা হয়ে ওঠে। নারীর সৌন্দর্য অবলোকনে অস্থির চিত্তে তারা কবিতা রচনা করে। প্রজাপতির রঙ দেখে মুগ্ধ হয়ে তারা প্রশংসামূলক গীত রচনা করে। আকাশের নীল রঙ, সাগরের তরঙ্গমালা, বনানীতে বাতাসের হিন্দোল, দূরনিহারিকা কুঞ্জের পলায়নপর আলো, শশধরের মায়াবী কিরণ, দক্ষিণা মলয় সমিরণ, ফুলের মন-মাতানো সৌরভ আর পাখির কলকাকলীতে মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য প্রশংসামূলক কবিতা রচনা করে। কিন্তু এসবের যিনি মূল স্রষ্টা, যিনি পাখির কন্ঠে গান দিয়েছেন, অরণ্যের মাঝে যিনি সবুজাভা দান করেছেন, সাগর তরঙ্গে যিনি রজত শুভ্র কিরীট দান করেছেন, নক্ষত্রপুঞ্জে যিনি আলোর দ্যুতি সৃষ্টি করেছেন, চাঁদের মাঝে যিনি স্নিগ্ধ কিরণ দিয়েছেন, সমিরণ মাঝে যিনি প্রশান্তির স্পর্শ-আবেশ সৃষ্টি করেছেন, ফুলের পাঁপড়ীকে যিনি মাধুরী আর সুষমামন্ডিত করেছেন তাঁর প্রশংসা করতে ভুলে যায়। সৃষ্টির ব্যাপারে প্রশংসায় কোন কার্পণ্য নেই, কিন্তু স্রষ্টার প্রশংসায় জিহ্বায় জড়তা নেমে আসে। সুতরাং, আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য দর্শন করে যারা তাঁর প্রশংসা করতে কার্পণ্য করে, তারা নিকৃষ্ট রুচি আর হীন মানসিকতারই পরিচয় দিয়ে থাকে।
0 Comments