আল্লাহ তা'য়ালা এই পৃথিবীকে মানুষের জন্য বিছানা হিসেবে বিছিয়ে দিয়েছেন, দূর-দূরান্তে মানুষ যেন গমন করতে পারে, সে জন্য নানা ধরনের পথ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এই পৃথিবীর ভূ-ভাগকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নানা ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গঠন করেছেন। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ হলো অক্সিজেন, ২৭ শতাংশ সিলিকন, ৮ দশমিক ১ শতাংশ এ্যালুমিনিয়াম, ৫ শতাংশ লোহা, ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ শতাংশ সোডিয়াম, ২ দশমিক ৬ শতাংশ পটাসিয়াম, ২ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য উপাদান ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এখানে মানুষ যেন তার প্রয়োজনীয় জীবিকা অর্জন করতে সক্ষম হয় সে ব্যবস্থাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন করেছেন। আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তিনি অনুর্বর যমীনকে উর্বর করেছেন, যেন মানুষ ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়। যমীনে নানা ধরনের উদ্ভিদ সৃষ্টি করার ব্যবস্থা করেছেন যেন নিরামিষাশী প্রাণীকুল এসব আহার করে তাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে পারে। মানুষকে বলা হয়েছে এসব আহার করো আর আমারই দাসত্ব করো। আমিই তোমাদের রব এবং শুধু আমারই প্রশংসা করো। আমার আইন ব্যতিত অন্য কারো আইন-বিধান অনুসরণ করো না। তোমরা লক্ষ্য করে দেখো, কিভাবে আমি এই পৃথিবীর যমীনকে তোমাদের জন্য কল্যাণকর করে দিয়েছি। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَالْأَرْضَ مَدَدْ نَهَا وَالْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُونَ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ
যমীনকে আমি বিস্তৃত করে দিয়েছি এবং যমীনের ওপর পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছি, প্রত্যেক বস্তু আমি সুপরিমিতভাবে (Balanced) সৃষ্টি করেছি এবং এসবের মধ্যে তোমাদের জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তোমাদের জন্য আর সেই অসংখ্য সৃষ্টির জন্য যাদের রিফ্টদাতা তোমরা নও।
(সূরা হিজর-১৯-২০)
মাটি চারটি পর্বে বিভক্ত
বিজ্ঞানীগণ বলেন, এ পৃথিবী প্রধানত চারটি পর্বে বিভক্ত। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা অভ্যন্তরের পর্বকে ইনার কোর (Inner Core) নামে অভিহিত করা হয়েেেছ। এই ইনার কোর (Inner Core) কঠিন লোহা দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। ইনার কোরের ব্যাসার্ধ প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। (Outer Core) আউটার কোর (Inner Core) ইনার কোরকে আবৃত করে রেখেছে। এই আউটার কোর তরল লোহা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। এর সাথে ২০ ভাগ মত নিকেল রয়েছে। এই আউটার কোরের পুরুত্ব (Thickness) প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার। এই আউটার কোরের ওপরের পর্বকে ম্যান্টেল (Mantle) নামে অভিহিত করা হয়েছে। ম্যান্টেল (Mantle) প্রধানত অক্সিজেন, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও লোহার তৈরী যৌগিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। এই ম্যান্টেলের পুরুত্ব প্রায় ২৯২০ কিলোমিটার।
বিজ্ঞানীগণ বলেন, এই ম্যান্টেল কোরের ওপরের স্তরকে ক্রাষ্ট (Crust) বলা হয়। গোটা পৃথিবীর মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ এই ক্রাষ্টের ওপরেই অবস্থান করছে। এই ক্রাষ্টের পুরুত্ব প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার এবং সমুদ্র তলদেশে প্রায় ১০ কিলোমিটার। ম্যান্টেলের ওপর অংশের ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত একটু ভিন্ন গুণাবলী সম্পন্ন। ক্রাষ্ট এবং ম্যান্টেলের ওপরের অংশের এই এলাকা সম্মিলিতভাবে লিথোস্ফিয়ার (Lithosphere) প্রস্তুত করে। লিথোস্ফিয়ার (Lithosphere) অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে গঠিত এবং সাতটি বিরাটাকারের খন্ডে বিভক্ত। এগুলোকে কন্টিনেন্টাল প্লেটস (Continental Plates) নামে অভিহিত করা হয়েছে। আবার লিথোস্ফিয়ারের নিচের অংশকে এ্যাসথেনোস্ফিয়ার (Asthenosphere) নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের তাপমাত্রা ৪০০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং যতই ওপরের দিকে আসা যাবে ততই এর তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। পৃথিবীর ভূ-ভাগের ওপরের অংশের এই তাপমাত্রা .০৬ ওয়াট প্রতি বর্গমিটারে। এই পৃথিবীর ভেতর থেকে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসার সময় এ্যাসথেনোস্ফিয়ারে কনভেকশন কারেন্ট (Convection Current) প্রস্তুত করে।
এই কারেন্ট বা স্রোত যমীনের ওপরের অংশে ধাক্কা দেয় এবং তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ্যাসথেনোস্ফিয়ারের এই কনভেকশন কারেন্টের কারণে কন্টিনেন্টাল প্লেটগুলো অত্যন্ত ধীর গতিতে চলতে থাকে। পৃথিবীর সাতটি মহাদেশ এই সাতটি প্লেটের ওপরে অবস্থিত, এ কারণে মহাদেশগুলো অত্যন্ত ধীর গতিতে চলতে থাকে। এই প্লেটগুলো যখন চলতে থাকে তখন এর কিনারাগুলো একটির সাথে আরেকটি ক্রিয়া করে থাকে। বিজ্ঞানীগণ বলেন, এই ক্রিয়া চার ধরণের হতে পারে। যখন একটি প্লেট আরেকটি প্লেটকে ধাক্কা দেয় এবং একটি অন্যটির নীচে' চলে যেতে পারে না, যে এলাকায় এটা ঘটে সে এলাকাকে কলিসন জোন (Collision Zone) বলে। এলাকায় প্লেটের কিনারা বাঁকা হয়ে পর্বতমালার সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানীগণ বলেন, হিমালয় পর্বত এই প্রক্রিয়াতেই সৃষ্টি হয়েছে। আর যখন একটি প্লেট অন্য প্লেটের নীচে চলে যায় তখন ভূমিকম্প হতে পারে, আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নি উদগিরণ হতে পারে। আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা দিয়ে পর্বতমালার সৃষ্টি হতে পারে যেমন হয়েছে আন্দিজ পর্বতমালা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই প্রক্রিয়াতেই পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন মানব জাতির কল্যাণের জন্য। এই কাজটি যিনি সম্পাদন করেছেন, তিনিই হলেন রব্ব। শুধু তাঁরই প্রশংসা করতে হবে।
0 Comments