নবী-রাসূলদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন বা উদাসীন থেকে মহান আল্লাহর প্রতি যদি কোনো মানুষ ঈমান আনে তাহলে তার সে ঈমানের সামান্যতম মূল্যও নেই। নবী- রাসূলের প্রতি ঈমান না এনে বা তাঁর আনুগত্য না করে কোনো মানুষের পক্ষে মহান আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব নয়। কারণ, মানুষকে যে সীমিত জ্ঞান দেয়া হয়েছে তা প্রয়োগ করে মানুষের পক্ষে জানা কোনোক্রমেই সম্ভব নয় যে, তারা কিভাবে এবং কোন্ পদ্ধতিতে মহান আল্লাহর গোলামী বা দাসত্ব করবে। আর ঠিক এ কারণেই মহান মালিক আল্লাহ নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং এটা তাঁদেরই দায়িত্ব যে, মানুষকে আল্লাহর দাসত্ব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া। তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণে কোনো মানুষ যদি অস্বীকার করে, তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে বা তাদেরকে সহযোগিতা না করে তাহলে সে মানুষের পক্ষে আল্লাহর গোলাম হওয়া সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন-
يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي لَا فَمَنِ اتَّقَى وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
হে আদম সন্তানরা, যখনি তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে এমন কোনো রাসূল আসবে, যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াত পড়ে শোনাবে, তখন যারা (সে অনুযায়ী) আমাকে ভয় করবে এবং (নিজেদের) সংশোধন করে নিবে, তাদের কোনোই ভয় থাকবে না, তারা কখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না। (সূরা আল আ'রাফ-৩৫)
সকল ব্যাপারে মানুষ যদি নবী-রাসূলের মুখাপেক্ষী না হয় এবং তাঁদের কাছ থেকে জীবনের প্রত্যেক দিক ও বিভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে তাহলে সে মানুষ নিজেকে ঈমানদার বলে দাবী করলেও তা মহান আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। না বুঝে বা যুক্তিহীনভাবে 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্' বলার অবকাশ ইসলাম দেয়নি, প্রেরিত নবী-রাসূলের নাম পরবর্তী অংশে অবশ্যই যুক্ত করতে হবে এবং প্রেরিত নবী-রাসূলকে স্বীকৃতি দিয়েই মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে। পবিত্র কুরআনে সূরা নামূলে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবার রাণী ইসলামী জীবন বিধান পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করার পর তিনি যখন মুসলমান হবেন তখন তিনি এভাবে ঘোষণা করলেন-
رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي وَأَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
হে আমার মালিক, আমি এতদিন আমার নিজের ওপর জুলুম করে এসেছি, আজ আমি আনুগত্যের স্বীকৃতি দিয়ে সুলাইমানের সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ওপর ঈমান আনলাম। (সূরা নামল-৪৪)
তৎকালীন নবী হযরত সুলাইমান (আ:) কে অস্বীকার করে সাবার রাণী যদি মহান আল্লাহর ওপর ঈমান আনতেন তাহলে তার সে ঈমান গ্রহণ করা হতো না। ফিরআউনের যাদুকররা যখন অনুভব করলো, হযরত মূসা (আ:) মহান আল্লাহর নবী-রাসূল এবং তিনি যে পথের দিকে আহ্বান করছেন সেটিই একমাত্র সত্য পথ। তখনি তাঁরা ঈমান আনলো এবং ঘোষণা দিলো এভাবে-
قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ لَا رَبِّ مُوسَى وَهَارُوْنَ
তারা সবাই সমস্বরে বলে উঠলো, আমরা সৃষ্টিকুলের মালিকের ওপর ঈমান আনলাম, যিনি মূসা ও হরুনের মালিক। (সূরা আল আ'রাফ-১২১-১২২)
সুতরাং নবী-রাসূলের আনুগত্য না করে মহান আল্লাহর আনুগত্য করার অবকাশ নেই। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পূর্বশর্ত হলো নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। মানুষ মহান আল্লাহর বিধানের সম্মুখে নিজেকে সোপর্দ করে দিয়ে 'মুসলিম' হয়েছে, এ কথার সাক্ষীও দিবেন নবী-রাসূলগণ। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
مِنْ قَبْلُ وَفِي هَذَا لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ
যেনো তোমাদের রাসূল তোমাদের (মুসলিম হবার) ওপর সাক্ষ্য প্রদান করতে পারে। (সূরা হজ্জ-৭৮)
কিয়ামতের ময়দানে প্রত্যেক উম্মতকে দলে দলে বিভক্ত করে তাদের চূড়ান্ত হিসাব গ্রহণ করার সময় প্রত্যেক উম্মতের নবী-রাসূলকে সাক্ষী করা হবে। নবী-রাসূলগণ সাক্ষী দিবেন তাদের উম্মত তাদের প্রতি ঈমান এনে তাদের আনীত বিধান অনুসরণ করেছিলো কিনা। পবিত্র কুরআন ঘোষণা করছে-
وَإِذَا الرُّسُلُ أَفَتَتْ ط
যখন নবী-রাসূলদের সকলকে নির্ধারিত সময়ে (এক জায়গায়) একত্রিত করা হবে। (সূরা মুরসালাত-১১)
وَجَائَءَ بِالنَّبِيِّنَ وَالشُّهَدَاءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
নবীদের ও অন্যান্য সাক্ষীদের এনে উপস্থিত করা হবে, তাদের সবার সাথে ন্যায়বিচার করা হবে, তাদের কারো ওপর জুলুম করা হবে না। (সূরা যুমার-৬৯)
নবী-রাসূলের আনীত বিধান মানুষ অনুসরণ করেছে কিনা এ ব্যাপারে কিয়ামতের দিন স্বয়ং নবী আল্লাহর দরবারে সাক্ষী দিবেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে (তোমাদের কাজকর্মের) সাক্ষ্যদাতা হিসাবে একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যেমনি করে ফিরআউনের কাছেও আমি একজন রাসূল পাঠিয়েছিলাম।
(সূরা মুয্যাম্মিল-১৫)
নবী-রাসূলের দায়িত্ব হলো মানুষের কাছে মহান আল্লাহর বিধান পৌছে দেয়া আর মানুষের দায়িত্ব হলো নবী-রাসূলদের অনুসরণ করা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُوْلَ جِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُم مَّا حُمِّلْتُمْ طَ وَإِنْ تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا طَ وَمَا عَلَى الرَّسُوْلِ إِلَّا الْبَلَغُ الْمُبِينُ
(হে নবী) আপনি (এদের) বলে দিন, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো আল্লাহর রাসূলের (হ্যাঁ), তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও (তাহলে জেনে রেখো), আল্লাহর দ্বীন পৌঁছানোর যে দায়িত্ব তার ওপর দেয়া হয়েছে তার জন্যে সে দায়ী, (অপরদিকে আনুগত্যের) যে দায়িত্ব তোমাদের ওপর দেয়া হয়েছে তার জন্যে তোমরা দায়ী, যদি তোমরা তার কথামতো চলো তাহলে তোমরা সঠিক পথ পাবে, রাসূলের কাজ হচ্ছে (আল্লাহর কথাগুলো) ঠিক ঠিক মতো পৌঁছে দেয়া। (সূরা আন্ নূর-৫৪)
মানুষ রাসূলের আনুগত্য করে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে কিনা এ ব্যাপারে জবাবদীহী করতে হবে, রাসূলের আনুগত্য না করলে কারো পক্ষে শেষ বিচারের দিনে সফল হওয়া বা মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَآئِكَ هُمُ الْفَائِرُوْنَ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে বেঁচে থাকে, তারাই হচ্ছে সফলকাম। (সূরা আন্ নূর-৫২)
শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর রাসূলের আনুগত্য না করলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ তা'য়ালা বিষয়টি এভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছেন-
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ جِ فَإِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ إِنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ جِ
যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে আপনার অনুবর্তন করবে আপনি তার প্রতি স্নেহের আচরণ করুন, আবার যদি কেউ আপনার সাথে নাফরমানী করে তাহলে আপনি তাকে বলে দিন, তোমরা যে আচরণ করছো তার (পরিণামের) জন্যে আমি কিন্তু মোটেও দায়ী নই। (সূরা আশ্ শুআরা-২১৫-২১৬)
মুমিন হবার পূর্ব শর্তই হলো নবী করীম (সা:) এর আনুগত্য করা, মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنتُمْ مُّؤْمِنِينَ
আল্লাহ তা'য়ালা এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে মুমিন হয়ে থাকো। (সূরা আনফাল-১)
নবী করীম (সা:)-এর আনুগত্য থেকে মুহূর্তকালের জন্যেও মুখ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না। শুধুমাত্র নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত এ ধরনের কিছু দিকে রাসূলের আনুগত্য করা হলো আর জীবনের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি ও অন্যান্য দিকে অন্য করো আনুগত্য করা হবে, এ ধরনের সুযোগ ইসলামে নেই। প্রত্যেক মুহূর্তে এবং জীবনের সকল দিক ও বিভাগে কেবলমাত্র নবী করীম (সা:) এরই আনুগত্য করতে হবে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ তা'য়ালা ও রাসূলের আনুগত্য করো, কখনো তাঁর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না, বিশেষ করে যখন তোমরা সব কিছু শুনতেই পাচ্ছো। (সূরা আনফাল-২০)
পবিত্র কুরআনে যেখানেই মহান আল্লাহর আনুগত্য করার আদেশ দেয়া হয়েছে, সাথে সাথেই রাসূলেরও আনুগত্য করার আদেশ দেয়া হয়েছে। নবী করীম (সা:) এর আনুগত্য না করে নিজেরা পরস্পরে মতপার্থক্য ও নানা দল উপদলে বিভক্ত হবার পরিণতি হলো বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানরা সবথেকে বেশি লাঞ্ছিত ও অপমানিত। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا طَ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
তোমরা আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, নিজেদের মধ্যে পরস্পর ঝগড়া বিবাদ করো না, অন্যথায় তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। (সূরা আনফাল-৪৬)
মহান আল্লাহকে ভয় করার এবং মুমিন হবার অনিবার্য দাবী হলো নবী করীম (সা:) এর আনুগত্য করা। মুখে আল্লাহর আনুগত্যের ঘোষণা দিয়ে রাসূল (সা:) এর আনুগত্য থেকে বিরত থাকার অর্থ নিজেকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো রাসূলের, (বিদ্রোহ করে) কখনো তোমরা নিজেদের কাজকর্ম বিফলে যেতে দিয়ো না। (সূরা মুহাম্মাদ-৩৩)
নবী করীম (সা:) যা কিছু আদেশ করেন তা থেকে বিরত থাকা এবং তিনি যা করতে আদেশ করেন তা অবশ্যই পালন করা ঈমানের মূল ভিত্তি আর এ বিষয়টি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ قِ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا جِ وَاتَّقُوا اللَّهَ طَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
আল্লাহর রাসূল তোমাদের যা কিছু অনুমতি দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং তিনি যা কিছু নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো। (সূরা হাশর-৭)
আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি ঈমান আনার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে নবী করীম (সা:) এর প্রতি ঈমান আনা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ جِ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوْا فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো, তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথভাবে ঈমান আনো এবং নিজেরা সাবধান হয়ে চলতে পারো, তাহলে তোমাদের জন্যে মহাপুরস্কার রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান-১৭৯)
মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার বিষয়টি নবী করীম (সা:) এর প্রতি ঈমান আনার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُوْلِهِ -
(খাঁটি ঈমানদার তো হচ্ছে তারা,) যারা আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে।
(সূরা আন্ নূর-৬২)
মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে যে সকল আয়াতে তাঁর প্রতি ঈমান আনার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন পাশাপাশি নবী করীম (সা:) এর প্রতিও ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُوْلِهِ وَالنُّوْرِ الَّذِي أَنزَلْنَا طَ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ -
অতএব তোমরা আল্লাহ তা'য়ালা, তাঁর রাসূল এবং আমি যে আলো (কুরআন) তোমাদের দিয়েছি তার ওপর ঈমান আনো, তোমরা যা কিছুই করো না কেনো আল্লাহ তা'য়ালা তা ভালো করেই জানেন।
(সূরা তাগাবুন-৮)
পবিত্র কুরআনের এ ধরনের বহু আয়াত প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি ঈমান আনার সাথে সাথে নবী করীম (সা:)-এর প্রতি ঈমান আনাও বাধ্যতামূলক এবং আল্লাহর আনুগত্যের প্রশ্নেও রাসূল (সা:)-এর মর্যাদা মহান আল্লাহ এতটাই বৃদ্ধি করে দিয়েছেন যে, নবী করীম (সা:)-এর আনুগত্য করার অর্থই হচ্ছে মহান আল্লাহর আনুগত্য করা। আর তাঁর নাফরমানী করার অর্থই হলো আল্লাহ তা'য়ালার নাফরমানী করা। এ প্রসঙ্গে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে-
وَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهُ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهِ -
হযরত আবু হুরাইরা (রা:) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহ তা'য়ালারই আনুগত্য করলো (পক্ষান্তরে) যে ব্যক্তি আমার সাথে নাফরমানী করলো সে আল্লাহ তা'য়ালার সাথেই নাফরমানী করলো। (বুখারী, মুসলিম)
যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে অথচ নবী করীম (সা:)-এর আনুগত্য করে না, তাদেরকে পবিত্র কুরআন কাফির বলে আখ্যায়িত করেছে। কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা ঘোষণা করেছেন-
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ جِ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
(হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলো, এ আহ্বান সত্ত্বেও তারা যদি এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (আপনি জেনে রাখুন) আল্লাহ তা'য়ালা কখনো কাফিরদের পছন্দ করেন না।
(সূরা আলে ইমরান-৩২)
মহান আল্লাহকে ভালোবাসার পূর্ব শর্ত এবং নিজের গোনাহ মহান আল্লাহ তা'য়ালার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়ার পূর্ব শর্তও নবী করীম (সা:) এর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য করা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
قُلْ إِنْ كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
(হে নবী) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার কথা মেনে চলো, তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
(সূরা আলে ইমরান-৩১)
0 Comments