পৃথিবীপৃষ্ঠে মানবজাতির ইতিহাস জানা মতে, শুধু বর্তমান মানবগোষ্ঠীই সব চেয়ে বেশী জ্ঞান-বিজ্ঞান আহরণ ও আবিষ্কারে সফলতা লাভ করতে সমর্থ হয়েছে। ফলে প্রতিক্ষণে মহাবিশ্বের সকল দিক ও পরতে বিদ্যান ব্যক্তিবর্গের সাধনায় অগণিত-অসংখ্য জ্ঞানের নিদর্শন সৃষ্টি হয়ে মানবগোষ্ঠীকে সর্বতোভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। সূরা ইউনুসের ১০১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
قُلِ النُّظُرُوا مَاذَا فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا تُغْنِي الْأَيْتُ وَالنُّذُرُ عَنْ قَوْمٍ لَا يُؤْمِنُونَ
(হে রাসূল! আপনি) বলুন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার প্রতি লক্ষ্য করো। নিদর্শনাবলী ও ভীতি প্রদর্শন অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উপকারে আসে না।
বর্তমান বিজ্ঞানীদের অভিমত হলো, মহাবিশ্ব যেন জ্ঞানের সাগরে ডুবে আছে। আর সে জন্যই বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আনইস্টাইন ঘোষণা করলেন, মহাবিশ্বে মহাজ্ঞানের সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে দু'একটা বালুকণা মাত্র নাড়া-চাড়া করে গেলাম, এর বেশী আর কিছুই করতে পারিনি। মানুষের জ্ঞানের এই অসহায়ত্বের দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য সূরা আরাফে মহান আল্লাহ বলেন-
أَوَلَمْ يَنْظُرُوا فِي مَلَكُوتِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ الله مِنْ شَيْءٍ وَ أَنْ عَسَى أَنْ يَكُونَ قَدِ اقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ
তারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার সম্পর্কে এবং এর সম্পর্কেও যে, সম্ভবত তাদের নির্ধারিত কাল নিকটবর্তী। সুতরাং এরপর তারা আর কোন্ কথায় ঈমান আনবে?
এই পৃথিবী সৃষ্টির কলাকৌশল সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُوْنَ لَهُ أَنْدَادًا - ذَالِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ
হে রাসূল! আপনি আপনার উম্মতদেরকে জানিয়ে দিন, তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাচ্ছ? তিনি তো জগতসমূহের পালনকর্তা। (হামীম সেজদা: ৯)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
فَقَضُهُنَّ سَبْعَ سَمَوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَى فِي كُلِّ سَمَاءِ أَمْرَهَا وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ذَالِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ -
অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দুই দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার বিধান ব্যক্ত করলেন আর আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং সুরক্ষিত করলাম। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (সূরা হামীম সেজদা-১২)
বিজ্ঞানের অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা পবিত্র কোরআনে প্রস্তাবিত প্রায় প্রত্যেকটি বৈজ্ঞানিক তথ্যকেই "শপথের” আকারে অবতীর্ণ করেছেন। এটা সম্ভবতঃ গুরুত্ব বৃদ্ধির কারণেই হয়ে থাকবে। বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো বিজ্ঞান যদি সত্যি সত্যিই কোন সঠিক বিষয় উদ্ঘাটনে সফলতা লাভ করে থাকে তাহলে তা ঐ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বাণীকেই বেশী ফুটিয়ে তুলবে, তাতে কোনই সন্দেহ নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
والْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً - وَيَخْلُقُ مَالَا تَعْلَمُونَ
তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছুই, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
মহ। বিশ্বের সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোথায় কোন্ বস্তু সৃষ্টি হয়েছে, কার কি কাজ বা কার কি পরিণতি তার সরাসরি কোন জ্ঞান পূর্ব হতেই বিজ্ঞানের ছিল না। বিজ্ঞান তার চলার পথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে যখন যতটুকু আবিষ্কার করতে সমর্থ হয়েছে, কেবল ততটুকুই বলতে পারে; এর বাইরে বিজ্ঞান পুরোপুরি অন্ধ। এমনকি কোন বস্তু কখন আবিষ্কার হবে তাও বিজ্ঞান জানে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-
قُلْ لا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
(হে রাসূল! আপনি তাদেরকে) বলে দিন! আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না তারা কখন উত্থিত হবে। (সূরা নামল-৬৫)
পবিত্র কোরআন যে মহান আল্লাহর পবিত্র বাণীসম্ভার তা এ গ্রন্থের মধ্যে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ পরবর্তী সময়ে বাস্তবে প্রতিফলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। বর্তমান বিশ্বে একমাত্র কোরআনই এমন এক অদ্বিতীয় অত্যাশ্চর্য গ্রন্থ হিসেবে মানব সমাজে স্বীকৃতি লাভ করেছে যা কুদরতী বাণী এবং একক অনন্যের অধিকারী বলে কম্পিউটার কর্তৃকও প্রমাণিত হয়েছে।
0 Comments