
বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বিশ হাজার কোটি তারার মধ্যে একটি মধ্যম ধরনের তারা হলো সূর্য। এই সূর্যকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীর সৌরজগৎ গড়ে উঠেছে। সৌরজগতে যতো কিছু রয়েছে তার নিরানব্বই দশমিক পঁচাশি ভাগই সূর্যের দখলে রয়েছে। এই সূর্যের থেকেও লক্ষ কোটি গুণ উজ্জ্বল আলো সম্পন্ন কোয়াসার ঊর্ধ্ব জগতে বিদ্যমান রয়েছে। মহাবিশ্বের পরিমাপে সূর্য অত্যন্ত নগণ্য প্রকৃতির নক্ষত্র যার উজ্জ্বলতাও অত্যন্ত নগণ্য। সূর্যের থেকেও পঞ্চাশ গুণ বড় এবং চল্লিশ লক্ষ গুণ উজ্জ্বল একটি নক্ষত্রের নাম বিজ্ঞানীগণ দিয়েছেন, 'ইটা ক্যারিনা'। মহাশূন্যে অসংখ্য গ্যালাক্সি রয়েছে এবং নিত্য নতুন গ্যালাক্সি সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের এক একটি গ্যালাক্সির ভেতরে সূর্যের থেকেও বিশাল আকৃতির অগণিত নক্ষত্র প্রবেশ করার পরও অসংখ্য জায়গা শূন্য রয়ে যাবে। সূর্যের চেয়ে বিশালাকৃতির আরেকটি তারকার নাম হলো 'বেটলজিয়ুজ'। এই বেটলজিযুজ নক্ষত্রের মধ্যে বর্তমান সূর্যের মতো পঞ্চাশ কোটি সূর্য অবস্থান করতে পারে। এ ধরনের অসংখ্য নক্ষত্র আল্লাহ তা'য়ালা গ্যালাক্সির ভেতরে সৃষ্টি করে রেখেছেন। সূর্যের চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ উজ্জ্বল তারকা ঊর্ধ্বাকাশে রয়েছে এসব এক একটি তারকা একটির কাছ থেকে আরেকটি কত দূরে অবস্থিত? একটি তারকা থেকে আরেকটি তারকায় পৌছতে সহস্র সহস্র বিলিয়ন আলোকবর্ষের প্রয়োজন হবে। অথচ আলোর গতি হলো প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। পৃথিবী থেকে তের লক্ষ গুণ বড় হলো সূর্য, আর এ ধরনের পঞ্চাশ কোটি সূর্যের থেকেও বড় হলো বেটলজিযুজ তারকা।
মহাকাশে ব্লাকহোল
এসব তারকার থেকেও বিশাল দানব আল্লাহ তা'য়ালা সৃষ্টি করে রেখেছেন। বিজ্ঞানীগণ সেগুলোর নাম দিয়েছেন 'ব্লাকহোল বা অন্ধকূপ'। এই ব্লাকহোল সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَّوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ
শপথ সে পতন স্থানের, যেখানে নক্ষত্রসমূহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তোমরা যদি জানতে তা এক মহা গুরুত্বপূর্ণ শপথ। (সূরা ওয়াকিয়া-৭৫-৭৬)
এই ব্লাকহোল বা অন্ধকূপ এক অদৃশ্য দানবীয় শক্তি। নক্ষত্র তা যতো বড়ই হোক না কেন, পরিভ্রমণ করতে করতে তা এই ব্লাকহোলের রেঞ্জের মধ্যে বা আওতায় এসে গেলে, এমনভাবে শোষণ করে নেয় যে, তার আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ধরনের ব্লাকহোল মহাশূন্যে দু'একটি নয়, আল্লাহ তা'য়ালা অসংখ্য ব্লাকহোল সৃষ্টি করেছেন। বিজ্ঞানীগণ বলেন, আমাদের এই পৃথিষী কোনভাবে যদি ব্লাকহোলের আওতায় এসে পড়ে, তাহলে মুহূর্তের ভেতরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। ব্লাকহোল এই বিশাল পৃথিবীকে সংকুচিত করে এমন এক ক্ষুদে পিন্ডে পরিণত করবে যে, এর ব্যাসার্ধ হবে মাত্র এক সেন্টিমিটার। এই সৌরজগতের আয়তনের সমান একটি ব্লাকহোল শত লক্ষ কোটি সূর্যকে মুহূর্তে সংকুচিত করে নিঃশেষ করে দিতে পারে।
মহাকাশে কোয়াসার
মহাকাশের রহস্যময় আবেগদীপ্ত জ্যোতিষ্কের নাম বিজ্ঞানীগণ দিয়েছেন 'কোয়াসার'। এই কেয়াসারের আলো এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সমস্ত নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা স্নান-করে দিয়েছে। অথচ সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের কোয়াসার থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময়ের প্রয়োজন হয় দেড় শতকোটি বছর। আর দূরতম কোয়াসার থেকে আলোকরশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছতে সময়ের প্রয়োজন হবে এক হাজার কোটি বছর। বিজ্ঞানীগণ অনুমান করেছেন, বর্তমান পৃথিবীর বয়স হলো চারশত ষাট কোটি বছর। তাহলে দূরতম কোয়াসার পৃথিবীতে পৌঁছবে আরো পাঁচশত কোটি বছর পরে। এই বিশাল ও উজ্জ্বল আলো সম্পন্ন কোয়াসারের সংখ্যা মহাকাশে অগণিত। এক একটি ধুমকেতুর কাছে ঐ বিশালার্কের সূর্য ছোট্ট একটি বালুকণার মতো। সৃষ্টির শুরু থেকে এসব বিশাল আকৃতির জগৎ সেকেন্ডে শতকোটি কিলোমিটার গতিতে বিরামহীনভাবে একদিকে ছুটে চলেছে। কিয়ামত পর্যন্ত এভাবে ছুটতেই থাকবে, ধ্বংস না পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। তবুও তা গন্তব্যে পৌছতে সক্ষম হবে না। মহান আল্লাহ অসংখ্য সৃষ্টিজগতের রব। শুধুমাত্র তিনি মহাকাশেই কত বিশাল জায়গা সৃষ্টি করেছেন, তা কল্পনাও করা যায় না।
আদিতে আকাশ ও পৃথিবী সংযুক্ত ছিল
বিজ্ঞানীদের ধারণানুসারে আমাদের এ মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ হতে প্রায় ১৫০০ কোটি বছর পূর্বে প্রচণ্ড ঘনায়নকৃত এক মহাসূক্ষ্ম বিন্দুতে Big Bang নামক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে। সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
অবিশ্বাসীরা কি লক্ষ্য করে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী (একে অপরের সাথে) পরস্পর সংযুক্ত ছিল, পরে আমি তাদের পৃথক করে দিয়েছি এবং প্রতিটি জীবন্ত জিনিসকে আমি সৃষ্টি করেছি পানি হতে। তারপরও কি তারা বিশ্বাস করবে না?
Big Bang বিন্দু হতে পর্যায়ক্রমে ৪টি ধাপ অতিক্রম করার পর 'শক্তি' পদার্থ কণার ধুয়ার অস্তিত্ব লাভ করে এবং মধ্যাকর্ষণের প্রভাবে গুচ্ছ গুচ্ছভাবে বিভক্ত হয়ে নবীন মহাবিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে, যা পরবর্তীতে 'নেবুলা' নামে পরিচিতি লাভ করে। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে-
ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اعْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِمِينَ
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আসো-ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বললো, আমরা এলাম অনুগত হয়ে। (হা-মীম সাজদা-১১)
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন-هُوَ الَّذِي يُرِيكُمْ أَيْتِهِ তিনিই (আল্লাহ( তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখান। (মু'মিন-১৩)
শত-সহস্র লক্ষ মাইল ব্যাসের নক্ষত্রসমূহ মহাকাশে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উত্তপ্ত ধূলা-বালি, অগ্নিশিখা ও মৌলিক পদার্থের গলিত মিশ্রণ দিয়ে শত-শত আলোকবর্ষ এলাকা পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমান বিজ্ঞান এ ভয়ঙ্কর প্রতিকূল পরিবেশ জয় করার জ্ঞান এখনও লাভ করতে পারেনি।
0 Comments