নবী করীম (সাঃ)-এর নামায আদায়ের পদ্ধতি কেমন ছিল

        যে বিষয়টি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তী আইয়ামে মুজতাহিদীন ও সাল্ফে সালেহীন করেননি, তা মুসলমানদের করা উচিত নয়। নিয়্যতের ব্যাপারে নামায আদায়কারীর কর্তব্য হলো, যে ওয়াক্তের নামায আদায় করা হবে এবং ফরজ, সুন্নাত, ওয়াজিব ও নফল নামায যে কয় রাকাআ'ত আদায় করা হবে, মনে মনে তার নিয়্যত বা ইচ্ছা পোষণ করেই নামায আদায়ের জন্য তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ 'আল্লাহু আকবার' বলে দাঁড়াবে। এই নিয়্যত হতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা।

        তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ মুখে আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করে নামায শুরু করা ফরজ। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দাঁড়াতেন তখন বলতেন, আল্লাহু আকবার। 

        কোনো ধরনের অসুবিধা না থাকলে নামায দাঁড়িয়েই আদায় করতে হবে। হযরত ইমরাণ ইবনে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেছেন, আমি অর্শ রোগের রোগী ছিলাম, এ কারণে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নামায আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন- দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। এতে যদি সক্ষম না হও তাহলে বসে বসে নামায আদায় করবে। এতেও সক্ষম না হলে শুয়ে শুয়ে নামায আদায় করবে। (বোখারী)

        হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ'স রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কেউ বসে নামায আদায় করলে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করার অর্ধেক সওয়াব লাভ করবে। (মুসলিম) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাকবীরের সময়, কখনও তাকবীরের পরে অথবা তাকবীরের পূর্বে হাত উঠাতেন। (বোখারী-আবু দাউদ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত উঠানোর সময় হাতের আঙ্গুলসমূহ একটির থেকে আরেকটির সামান্য ব্যবধান রাখতেন এবং লম্বা করে হাত উঠাতেন। তিনি দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠাতেন। আরেক বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন।

  (বোখারী, তিরমিযী, আবু দাউদ) 

        তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত উঠানোর পরে বাম হাতের পিঠ ও কজির ওপর ডান হাত রাখা অথবা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি আঁকড়ে ধরতে হবে। এভাবে হাত বুকের ওপর অথবা নাভি বরাবর রাখতে হবে। হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় স্থানেই হাত রেখে নামায আদায় করেছেন। এরপর সিজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে এবং ছানা পাঠ করতে হবে। ছানা পাঠ করার বিষয়টি আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি। এরপর আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ শাইতানির রাজিম এবং বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করতে হবে। সূরা ফাতিহা সাত আয়াত বিশিষ্ট সূরা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধির স্থিরভাবে প্রত্যেক আয়াতে থেমে থেমে তিলাওয়াত করতেন। তিনি এক আয়াতের সাথে আরেক আয়াতকে মিলিয়ে বিরতিহীনভাবে পাঠ করতেন না। সূরা ফাতিহা ব্যতীত নামায হয় না, নামাযের প্রত্যেক রাকাআতেই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। এই সূরা পাঠ শেষে আমীন বলতে হবে। হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমাদের কেউ আমীন বললে আকাশের ফেরেস্তাগণও আমীন বলে থাকেন। দুইজন লোকের একজনের আমীন অন্যজনের আমীনের সাথে মিলিত হলে যে আমীন বলবে তার পূর্ববর্তী (ছোট) গোনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বোখারী-মুসলিম)

        এরপর পবিত্র কোরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পাঠ করতে হবে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেছেন- আমাদেরকে সূরা ফাতিহা পাঠ এবং কোরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পাঠ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (আবু দাউদ)

        সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে পবিত্র কোরআনের অন্য যে কোনো সূরা বা আয়াত পাঠ করা ওয়াজিব। প্রত্যেক রাকাআ'তেই সূরা ফাতিহা পাঠ করে আমীন উচ্চারণ করে বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে অন্য সূরা বা কোরআনের অন্য কোনো আয়াত পাঠ করতে হবে। তবে যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাআ'তেই সূরা ফাতিহা পাঠ ও আমীন উচ্চারণ করে অন্য সূরা বা আয়াত পাঠ করতে হবে। যোহর ও আসরের ফরজ চার রাকাআ'তের শেষের দুই রাকাআ'ত, মাগরিবের ফরজ তিন রাকাআ'তের শেষের, এক রাকাআ'ত ও ইশার ফরজ চার রাকাআ'তের শেষের দুই রাকাআ'তে শুধু মাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করে আমীন উচ্চারণ শেষ করে রুকু সিজদায় যেতে হবে।

        রুকু সিজদায় কিভাবে যেতে হবে, রুকুর তাসবীহ্, সিজদার তাসবীহ্, প্রথম সিজদার পরে সোজা হয়ে বসে কোন্ কোন দোয়া পাঠ করতে হবে, তা ইতোপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে প্রত্যেক বার উঠা, নিচু হওয়া, দাঁড়ানো ও বসার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন। (আবু দাউদ)

        হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেছেন- আমি দেখেছি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করার জন্য দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমার সময় তাঁর দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়েছেন এবং রুকুর তাকবীর বলার সময়ও এমন করতেন। রুকু থেকে সোজা হওয়ার সময়ও এমন করতেন এবং সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় তিনি হাত উঠাতেন না। (বোখারী)

        আল্লাহর রাসূল রুকু সিজদায় হাতের আঙ্গুল পৃথক রাখতেন এবং আর সিজদার সময় একত্রে মিলিয়ে রাখতেন। রুকু থেকে সোজা হয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু মাত্র সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ বলেননি, সেই সাথে অন্যান্য দোয়াও পাঠ করেছেন। তিনি রুকু সিজদায় দুই হাতের তালু হাঁটুর ওপর রাখতেন এবং তাঁর পবিত্র বাহুদ্বয় বগল থেকে পৃথক রাখতেন। 
(ইবনে মাজাহ্)

        রুকু সিজদাহ্ ধীর স্থিরভাবে প্রশান্তির সাথে কিভাবে আদায় করতে হবে, এ বর্ণনাও আমরা হাদীস থেকে ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি। হযরত যায়েদ ইবনে ওয়াহাব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, হযরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এক ব্যক্তিকে নামায আদায় করতে দেখলেন। লোকটি রুকু-সিজদাহ্ যথাযথভাবে আদায় করছিলো না। তিনি লোকটিকে বললেন, তোমার নামায আদায় করা হয়নি। এভাবে নামায আদায় করে যদি তুমি মৃত্যুবরণ করো তাহলে তোমার মৃত্যু হবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা'য়ালা যে প্রকৃতি ও স্বভাবে ওপর সৃষ্টি করেছেন সেই স্বভাব ও প্রকৃতির বিপরীত পরিবেশে। (বোখারী)

        রুকুর তাসবীহ্ যথা নিয়মে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সাথে পাঠ করে সোজা হওয়ার সময় হাদীসে বর্ণিত দোয়াসমূহ পাঠ করতে হবে। এরপর আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় যাওয়ার সময় মন-মানসিকতা কেমন থাকবে, সিজদার পদ্ধতি ও সিজদায় কোন্ তাস্বীহ পাঠ করতে হবে, তা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে দুই হাঁটু নামাযের স্থানে রেখে দুই হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে কিবলামুখী করে হাতের তালু দুই কানের পাশে রাখতেন। কপাল ও নাক সিজদার স্থানে দুই হাতের মাঝখানে রাখতেন। দুই পায়ের আঙ্গুলের মাথা বাঁকিয়ে কিবলামুখী করে দুই পায়ের গোড়ালী মিলিয়ে পায়ের পাতা সোজা রাখতেন। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)

        তিনি যখন সিজদা করতেন তখন কপাল ও নাক যমীনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতেন। এ সময় তাঁর পবিত্র বাহুদ্বয় দেহের থেকে এতটা পৃথক রাখতেন যে, বাহুর শুভ্রতা পরিলক্ষিত হতো। তিনি সিজদায় কখনো হাতের তালু ঘাড় বরাবর কখনো কান বরাবর রেখেছেন। হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- বান্দা যখন সিজদা করে তখন তার সাথে তার সাতটি অঙ্গ সিজদা করে। তার মুখমন্ডল, তার দুই হাতের তালু, তার হাঁটু ও তার দুই পা। (বোখারী)

        সিজদার সময় হাতের কনুইসহ হাতের কব্জি পর্যন্ত লম্বা করে বিছিয়ে না দিয়ে কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত উঁচুতে রাখতে হবে এবং দুই বাহু পেটের দুই পাশ থেকে দূরে রাখতে হবে। আর দুই হাতের তালুর ওপর দেহের ভার রেখে দুই বাহুকে পৃথক রাখতে হবে। রুকু ও সিজদায় পিঠ সোজা রাখতে হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি যখন সিজদা করবে তখন হাতের তালু দুটো যমীনে স্থাপন করবে এবং দুই কনুই ওপরে উঠিয়ে রাখবে। (বোখারী, আবু দাউদ) প্রথম সিজদা আদায় করে ধীর-স্থির ও প্রশান্তির সাথে আল্লাহু আকবার বলে সোজা হয়ে বসে হাদীসে বর্ণিত দোয়াসমূহ পাঠ করে পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে। হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, সিজদাহ্ দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। কারণ সিজদার মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর অত্যন্ত নিকটবর্তী হয়। আল্লাহ তা'য়ালা সিজদার দোয়া বেশী বেশী কবুল করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় দুই ধরনের দোয়া বেশী বেশী করতেন। সে দোয়া হলো, মহান আল্লাহর প্রশংসামূলক দোয়া ও প্রার্থনামূলক' দোয়া। হাদীসে বর্ণিত এসব ঘোয়া আমার লেখা 'রাসূলূল্লাহ (সাঃ) মোনাজাত' নামক বইতে বিস্তারিফ উল্লেখ করেছি।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তুলনামূলকভাবে ফরজ নামাযে রুকু, সিজদাহ্ ও সূরা-ক্বিরাআ'ত ছোট করতেন। কিন্তু তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামাযে দীর্ঘ করতেন। এসব নামাযে তিনি বড় বড় সূরা তিলাওয়াত করতেন। রুকু, সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করতেন। প্রথম সিজদা থেকে উঠে তিনি বাম পা পেতে তার ওপর বসতেন এবং ডান পায়ের পাতা দাঁড় করিয়ে কেবলামূখী রাখতেন। এ সময় তিনি দুই হাত পবিত্র উরুর ওপর রাখতেন। হাতের কনুই উরুর ওপর এবং কজি থেকে হাতের তালু পর্যন্ত হাঁটুর ওপর রাখতেন। দোয়া পাঠ শেষে আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদা দিতেন।

        দ্বিতীয় সিজদার পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের দ্বিতীয় রাকাআ'তের জন্য সরাসরি উঠে দাঁড়িয়েছেন না কিছুক্ষণ বসে তারপর উঠে দাঁড়িয়েছেন, এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি কিছুক্ষণ বসে তারপর উঠে দাঁড়িয়েছেন। অপর দিকে বিপুল সংখ্যক সাহাবী আল্লাহর রাসূলের নামাযের বৈশিষ্ট্য ও পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে নামাযের প্রথম রাকাআ'তের দ্বিতীয় সিজদার পরে কিছুক্ষণ বসার বিষয়টি উল্লেখ করেননি।

        দ্বিতীয় রাকাআ'তে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আউযু বিল্লাহ ও বিস্মিল্লাহ পাঠ করে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন কিনা এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, নামাযের গোটা কিরাআতকে যদি একটি কিরাআতের সমষ্টি ধরা হয় তাহলে প্রথম রাকাআতে যে আউযু বিল্লাহ ও বিস্মিল্লাহ পড়া হয়েছে, এটাই যথেষ্ট অর্থাৎ দ্বিতীয় বা পরবর্তী রাকাআ'তসমূহে এসব আর পড়তে হবে না। কেউ বলেছেন, যদি প্রত্যেক রাকাআতের কিরাআতকে স্বতন্ত্র কিরাআত ধরা হয়, তাহলে প্রত্যেক রাকাআতেই সূরা ফাতিহার পূর্বে আউযু বিল্লাহ ও বিস্মিল্লাহ পড়তে হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের প্রথম রাকাআত সাধারণত দীর্ঘ করতেন এবং পরবর্তী রাকাআতসমূহ প্রথম রাকাআতের তুলনায় সংক্ষিপ্ত করতেন।

        অর্থাৎ প্রথম রাকাআতে বড় বড় সূরা বা আয়াত পাঠ করতেন। দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তিনি বসতেন। এ সময় বাম হাতের তালু হাঁটুর ওপর বিছিয়ে দিতেন এবং ডান হাতের তালু মুষ্টিবদ্ধ করে বৃদ্ধাঙ্গুলি মধ্যমার ওপর রেখে গোলাকার বৃত্তের মতো বানিয়ে শাহাদাত আঙ্গুলি ওপরের দিকে উঠিয়ে দোয়া পড়তেন এবং শাহাদাত আঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করতেন। এ সময়ে তিনি ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। এই বৈঠকেও তিনি বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার ওপর বসতেন এবং ডান পায়ের পাতা দাঁড় করিয়ে পায়ের আঙ্গুলগুলো বাঁকা করে কিবলামুখী রাখতেন। তিনি নামাযে সব সময় এভাবেই বসতেন কিনা এ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বা চার রাকাআত নামাযে দুই রাকাআত আদায় করে বসতেন এবং তাশাহুদ পাঠ করতেন। তিনি প্রথম তাশাহুদ সংক্ষিপ্ত করতেন। হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কোরআনের মতোই তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন। (বোখারী-আবু দাউদ)

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকাআত নামায আদায় করে বসে তাশাহুদ পাঠ করতেন। হাদীসের কিতাবসমূহে বেশ কয়েকটি তাশাহুদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে- যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো-

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ محمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولَهُ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ . لا أشهد أن

        অর্থাৎ- সকল মর্যাদাব্যঞ্জক ও সম্মানজনক সম্বোধন মহান আল্লাহর জন্যে। সমস্ত শান্তি, কল্যাণ ও প্রাচুর্যের মালিক আল্লাহ তা'য়ালা। সর্বপ্রকার পবিত্রতার মালিকও তিমি। হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দাহ্ ও রাসূল।

        চার বা তিন রাকাআত নামাযে তিনি দুই রাকাআত আদায় করে তাশাহুদ পাঠ করে আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাঁড়ানোর সময় পায়ের পাতার বুক এবং হাঁটু যমীনে ঠেকিয়ে দুই উরুতে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। কেউ বলেছেন, এ সময় তিনি দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন আবার কেউ বলেছেন, তিনি হাত না উঠিয়েই সরাসরি নাভি বা বুকের ওপর রাখতেন। এরপর তিনি অবশিষ্ট ফরজ দুই রাকাআত বা এক রাকাআত নামায শুধু মাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করেই রুকু-সিজদায় যেতেন।

        কিন্তু যোহরের চার রাকাআত সুন্নাত নামাযের প্রত্যেক রাকাআতেই সূরা ফাতিহার পরে অন্য সূরা পড়তে হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও মতভেদ রয়েছে। নবী করীম । সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো সাধারণ রীতির ব্যতিক্রমও করতেন। যেমন, ফজর নামাযে দীর্ঘ সূরা বা আয়াত পড়া ছিলো তাঁর সাধারণ রীতি। কিন্তু কখনো কখনো তিনি ছোট সূরাও পড়েছেন। তাঁর সাধারণ রীতি ছিলো, সকল নামাযেই প্রথম অংশ শেষের অংশের তুলনায় দীর্ঘ করতেন। তিনি সবথেকে দীর্ঘ করতেন রাতে অহাজ্জুদ নামাযে।

        নামাযের শেষ বৈঠকে তিনি কিভাবে বসতেন, এ সম্পর্কে হাদীসের কিতাবসমূহে। মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কেউ বলেছেন, তিনি দেহের পেছনের মধ্যাংশ যমীনের ওপর রেখে বসতেন এবং দুই পা ডান দিকে বের করে দিতেন। কেউ বলেছেন, যখন শেষ রাকাআতে বসতেন, তখন বাম পা একটু সম্মুখে এগিয়ে নিতেন এবং ডান পা সোজা রেখে দেহের পেছনের মধ্যাংশের ওপর শুর করে বসতেন। কেউ বলেছেন, শেষ বৈঠকে তিনি তাঁর বাম পা উরু ও ডান জব্বার মাঝখানে রাখতেন এবং ডান পায়ের পাতা বিছিয়ে দিতেন।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ বৈঠকে বসার ধরন সম্পর্কে ইমাম আহমাদ (রাহঃ) বলেছেন, তিনি প্রথম বৈঠক ও শেষ বৈঠকের মধ্যে পার্থক্য করার জন্যেই এমন করতেন। প্রথম বৈঠকের পর পুনরায় এক রাকাআত বা দুই রাকাতের জন্যে উঠে দাঁড়াতে হবে, এ কারণে তিনি পায়ের পাতার ওপর বসে দাঁড়ানোর জন্যে প্রস্তুত থাকতেন। আর শেষ বৈঠকের পরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি থাকেনা বিধায় তিনি অত্যন্ত প্রশান্তির সাথে পরিপূর্ণ দেহ স্থির করে বসতেন।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন নামায আদায় করে, সে যেনো আল্লাহর প্রশংসা ও মহত্ব বর্ণনা করে এবং তাঁর নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করে। এরপর যেনো সে. ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো দোয়া করে। (আবু দাউদ)

        তিনি একজন সাহাবীকে নামাযে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, প্রশংসা এবং নবীয় প্রতি দরুদ পাঠ করতে শুনে বললেন- দোয়া করো কবুল হবে এবং চাও দেয়া হবে। (নাসায়ী)

        শেষ বৈঠকে তাশাহুদ ও দরুদ পাঠ করার পরে সালাম ফিরানোর পূর্বে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ধরনের দোয়া করতেন। এসব দোয়া হাদীসের কিতারসমূহে মওজুদ রয়েছে। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বিভিন্ন দরুদ শিক্ষা দিয়েছেন। এর মধ্যে দুইটি দরুন্দ উল্লেখ করছি-

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بِارَكَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

        অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করো, তাঁর সম্মান-মর্যাদা ও প্রশংসা বৃদ্ধি করো। তাঁর অনুসারী বংশধরদের প্রতিও অনুরূপ করো, যেমনটি করেছিলে তুমি ইবরাহীম ও তাঁর অনুসারী বংশধরদের প্রতি। নিশ্চয়ই তুসি সপ্রশংসিত ও মহাসম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর অনুসারী বংশধরদের বরকত দান করো, যেমন বরকত দান করেছিলে ইবরাহীম ও তাঁর অনুসারী বংশধরদের। নিশ্চয়ই তুমি সপ্রশংসিত মহাসম্মানিত।

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلى أَزْوَاجِه وَذَرَ يَتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

        অর্থাৎ- হে আল্লাহ তা'য়ালা। তুমি মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ ও সন্তানগণের প্রতি রহমত নাযিল করো যেমনটি করেছিলে ইবরাহীমের বংশধরের প্রতি। আর তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর স্ত্রীগণের এবং সন্তানগণের প্রতি বরকত নাযিল করো যেমনটি করেছিলে ইবরাহীমের বংশধরগণের প্রতি, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় সম্মানীয়।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে তাশাহুদ ও দরুদ পাঠ করার পরে এই দোয়া পাঠ করতে শিখিয়েছিলেন।

 اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

        অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের প্রতি অনেক যুলুম করেছি, তুমি ব্যতীত আর কেউ তা ক্ষমা করতে পারে না। তুমি আমাকে তোমার পক্ষ থেকে ক্ষমা দান করো এবং আমার প্রতি রহম করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বাধিক ক্ষমাশীল ও

        এই দোয়াও তিনি স্বয়ং পাঠ করেছেন এবং অন্যদের শিখিয়েছেন-

 اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

        অর্থাৎ- হে আল্লাহ তা'য়ালা! আমি তোমার আশ্রয় চাই কবর আযাব থেকে এবং দোযখের আযাব হতে, জীবন মৃত্যের ফিৎনা থেকে এবং মাসীহে দাজ্জালের ফিৎনা হতে। (বোখারী, মুসলিম)

للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

        অর্থাৎ-হে আল্লাহ তা'য়ালা! আমি তোমার আশ্রয় চাই কবর আযাব থেকে, আশ্রয় চাই মাসীহে দাজ্জালের ফিৎনা থেকে, আশ্রয় চাই জীবন মৃত্যুর ফিৎনা থেকে, হে আল্লাহ তা'য়ালা! আমি তোমার আশ্রয় চাই পাপাচার ও ঋণভার হতে। (বোখারী, মুসলিম)

        দোয়া পাঠ শেষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্ বলে প্রথমে ডান দিকে সালাম ফিরাতেন। এ সময় তাঁর ডান গালের শুভ্রতা পরিলক্ষিত হতো। এরপর তিনি বাম দিকে সালাম ফিরাতেন এবং এসময়ও তাঁর বাম গালের শুভ্রতা পরিলক্ষিত হতো।
(আবু দাউদ-তিরমিযী) 

        চোখ খোলা রেখে নামায আদায় করা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রীতি ছিলো। তবে এ সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদদের বক্তব্য হলো, নামাযে চোখ খোলা রেখে যদি খুশু-খুযু এবং মনোযোগ ঠিক রাখা যায়, তাহলে চোখ খোলা রাখাই উত্তম। আর যদি চোখ খোলা রাখলে নানা ধরনের দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে এবং নামাযে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে চোখ বন্ধ রাখা দোষণীয় নয়। বরং শরীয়াতের মূলনীতি অনুযায়ী এই অবস্থায় চোখ বন্ধ রাখাই উত্তম ও পছন্দনীয়। নামায শেষ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন দোয়া নিজে পাঠ করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে পাঠ করার কথা বলেছেন। এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করছি।

أَسْتَغْفِرُ اللهَ اسْتَغْفِرُ اللهَ أَسْتَغْفِرُ اللهَ اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلامُ ومِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالإِكْرَامِ

        আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি (তিনবার) হে আল্লাহ তা'য়ালা! তুমি শান্তিময় আর তোমার কাছে থেকেই শান্তির আগমন, তুমি কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান এবং কল্যাণময় তুমি। (মুসলিম)

لا إِلَهَ إِلَّا وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شيء قدير - اللَّهُمَّ لَا مَانِعَا لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطَى لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَالْجَدَّ مِنْكَ الْجَدُّ

        আল্লাহ তা'য়ালা তুমি ব্যতীত দাসত্ব লাভের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্রই তাঁর, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ তা'য়ালা! তুমি যা প্রদান করো তা বাধা দেয়ার কেউ-ই নেই, আর তুমি যা দিবে না তা দেয়ার মতো কেউ-ই নেই। তোমার গযব থেকে কোনো বিত্তশীল বা পদমর্যাদার অধিকারীকে তার ধন-সম্পদ বা পদমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না। (বোখারী, মুসলিম)

لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لأَشَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لا حَولَ وَلاَ قَوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ - لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ - لَهُ النَّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لا إله إلا اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ

        আল্লাহ তা'য়ালা তুমি ব্যতীত দাসত্ব লাভের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি প্রত্যেক বিষয়েই শক্তিশালী। কোনো পাপকাজ ও রোগ, শোক বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই আর সৎ কাজ করারও ক্ষমতা নেই আল্লাহ তা'য়ালা ব্যতীত। আল্লাহ তা'য়ালা তুমি ব্যতীত দাসত্ব লাভের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই, আমরা একমাত্র তারই দাসত্ব করি, নেয়ামত সমূহ তাঁরই, অনুগ্রহও তাঁর এবং উত্তম প্রশংসা তাঁরই। আল্লাহ তা'য়ালা ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান একমাত্র তার জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফেরদের কাছে তা অপ্রীতিকর। (মুসলিম)

سبْحَانَ الله وَالْحَمْدُ للهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

        আল্লাহ তা'য়ালার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য। আল্লাহ তা'য়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ।

لا إله إلا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

        আল্লাহ তা'য়ালা তুমি ব্যতীত দাসত্ব লাভের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্রই তাঁর, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (মুসলিম) 

        হাদীসে দেখা যায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের মধ্যে সাত স্থানে দোয়া করতেন। তাকীরে তাহরীমার পরে অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধার পরে, রুকু সিজদায়, রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে, সিজদায়, দুই সিজদার মাঝখানে অর্থাৎ এক সিজদা দিয়ে বসে, তাশাহুদ-দরুদ পাঠ করে সালাম ফিরানোর পূর্বে ও বিতিরের নামাযে সূরা-কিরাআত শেষে। তিনি সিজদায় গিয়েই সবথেকে বেশী দোয়া করতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখন কোথায় কোন্ দোয়া করেছেন এবং দিন ও রাতে কোন্ কোন্ দোয়া পাঠ করতেন তা আমার লেখা 'রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মোনাজাত' নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।

        নামাযে সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদিদের দিকে ফিরে অথবা কিবলার দিকে ফিরে সম্মিলিতভাবে দুই হাত উঠিয়ে দোয়া বা মোনাজাত করার যে প্রথা বর্তমানে দেখা যায় তার কোনো প্রমাণ হাদীস গ্রন্থসমূহে পাওয়া যায় না। অনেকে শুধু মাত্র ফজর ও আসর নামাযের পর মুক্তাদিদের দিকে ফিরে মোনাজাত করে থাকেন। কিন্তু এই পদ্ধতির পক্ষেও হাদীসে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরজ নামাযের সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীদের দিকে ফিরে বসতেন।

        নামায সংক্রান্ত হাদীসে যতগুলো দোয়ার উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়, তা সবই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের মধ্যেই করেছেন এবং নামাযের মধ্যে করার জন্যেই নির্দেশ দিয়েছেন। বান্দা যে সময় পর্যন্ত নামাযে মশগুল থাকে, সে সময় তো প্রকৃতপক্ষে তার রব-এর প্রশংসা ও মহত্ব বর্ণনা এবং চাইতে থাকে। এ সময় তো বান্দা মহান আল্লাহর নিকটবর্তী হয় এবং নামাযরত অবস্থায়ই দোয়া করার উপযুক্ত সময়। এ সময় দোয়া কবুলের সময় এবং এটাই সর্বোত্তম পন্থা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের মধ্যেই দোয়া করেছেন। দোয়া করার রীতির ক্ষেত্রেও একমাত্র তাঁকেই অনুসরণ করতে হবে এবং নিজেরা কোনো রীতি আবিষ্কার করা যাবে না।

        তবে যে কোনো সময়ই মানুষ মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে বা চাইতে পারে। দোয়া করার পূর্বে পবিত্র অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করে মহান আল্লাহর প্রশংসা, দরুদ ইত্যাদি পাঠ করে দোয়া করতে হবে। এভাবে দোয়া করা হলে সেটা পৃথক একটি ইরাদাতের পরে দোয়া করা হলো। নামাযের সাথে আর এর সম্পর্ক রইলো না। মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলকে নামায থেকে কল্যাণ, বরকত লাভ করার ও নামাযের শিক্ষা জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার তওফীক এনায়েত করুন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখানো পদ্ধতি অনুসারে নামায আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

Post a Comment

0 Comments