মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমগ্র সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা এবং একচ্ছত্র অধিপতি। আল্লাহ তা'য়ালা যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন এসব সকল সৃষ্টির জন্যে তিনি যেমন পরম করুণাময় তেমনি তিনি যে মহান ব্যক্তিত্বকে সর্বশেষ ও বিশ্বনবী হিসাবে প্রেরণ করেছেন তাঁকেও তিনি সমগ্র সৃষ্টির জন্যে করুণা হিসাবেই প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর প্রিয় নবীকে লক্ষ্য করে বলেছেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
হে নবী, আমি আপনাকে সৃষ্টিকুলের 'জন্যে রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া-১০৭)
আক্ষরিক অর্থেই নবী করীম (সা:) ছিলেন সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য করুণার মূর্ত প্রতীক তথা মহান আল্লাহর অসীম রহমত বিশেষ। মাতৃগর্ভে থাকাকালে পিতাকে হারিয়েছেন, শিশুকালে মমতাময়ী মা'কে হারিয়েছেন, মাত্র আট বছর বয়সে স্নেহদাতা দাদাকে হারিয়েছেন। পরম শ্রদ্ধেয় চাচা আবু তালেবের স্নেহের ছায়াতলে বড় হয়েছেন। তাঁর সারাটি জীবনই দুঃখ আর কষ্টের বাস্তব উপখ্যান। সকল দুঃখ তিনি ভোগ করেছেন, কিন্তু কখনো কাউকেই সামান্যতম কষ্ট দেননি। কাউকে আঘাত করা তো অনেক দূরের ব্যাপার, কারো প্রতি কখনো রূঢ় আচরণ করেননি। কখনো কটু কথা পবিত্র মুখে উচ্চারণ করেননি। কাউকে অভিশাপ বা বদদোয়া দেননি। অন্যের কষ্ট তিনি ভাগ করে নেননি বরং কষ্টের সবটুকুই তিনি নিজ কাঁধে উঠিয়ে অন্যকে ভারমুক্ত করে সকল কষ্ট লাঘব করেছেন।
নারী সমাজকে অমর্যাদা, ঘৃণা, লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের অতল গহ্বর থেকে উঠিয়ে মর্যাদার আসনে আসীন করে দিয়েছেন। ক্রীতদাসদের গোলামীর জিঞ্জির মুক্ত করে স্বাধীন করে দিয়েছেন। যুদ্ধবন্দীদের প্রতি করুণার বাহু বিছিয়ে দিয়েছেন। অভাবী দরিদ্রদের খাদ্য পৌঁছে দিয়ে নিজে অভুক্ত থেকেছেন। অবহেলিত বিধবাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। ইয়াতিমদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করেছেন। রোগীর সেবা করেছেন এবং অসহায় মানুষের সহায় হয়েছেন। ছোটদের গভীর স্নেহের বাঁধনে বন্ধু বানিয়েছেন এবং বড়দের একান্ত সম্মানে আপ্লুত করেছেন। জীবনের শত্রুকে হাতের নাগালে পেয়েও ক্ষমার অনুপম সাগরে সিক্ত করেছেন। অবলা প্রাণীর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং অন্যদেরকেও প্রাণীর প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণ করতে শিখিয়েছেন। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। নবী করীম (সা:) এর এসব অতুলনীয় গুণ-বৈশিষ্টের বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন-
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنتُمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ فَإِنَّ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ط عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
(হে মানুষ,) তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে এক রাসূল এসেছেন, তোমাদের কোনোরকম কষ্ট ভোগ তাঁর কাছে দুঃসহ, তিনি তোমাদের একান্ত কল্যাণকামী, ঈমানদারদের প্রতি তিনি হচ্ছেন স্নেহপরায়ণ ও পরম দয়ালু। এরপরও যদি এরা (এমন 'একজন কল্যাণকামী রাসূলের কাছ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আপনি (তাদের খোলাখুলি) বলে দিন, আল্লাহ তা'য়ালাই আমার জন্যে যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই; (সমস্যায় সঙ্কটে আমি তাঁর ওপরই ভরসা করি এবং তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের একচ্ছত্র অধিপতি। (সূরা তাওবা-১২৮-১২৯)
মহান আল্লাহ তা'য়ালা অন্যান্য যেসকল নবী-রাসূল প্রেরণ করেছিলেন তাঁরা তাওদীদের দাওয়াত দিতে গিয়ে নিজ জাতি এমনকি সবথেকে নিকটতম লোকদের কাছ থেকেও অবর্ণনীয় নির্যাতন, নিপীড়ন ও লাঞ্ছনা সহ্য করেছেন। কিন্তু নির্যাতন যখন সকল সীমা অতিক্রম করেছে তখন কোনো কোনো নবী-রাসূল মহান আল্লাহর কাছে বদোয়া করতে বাধ্য হয়েছেন। যেমন হযরত নূহ (আ:) নিজ জাতির বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর কাছে অভিযোগ করেছেন-
قَالَ نُوْحٌ رَّبِّ إِنَّهُمْ عَصَوْنِي وَاتَّبَعُوا مَنْ لَّمْ يَزِدْهُ مَالُهُ وَوَلَدُهُ إِلَّا خَسَارًا ج وَمَكَرُوا مَكْرًا كُبَّارًا ج
নূহ বললো, হে আমার মালিক, আমার জাতির লোকেরা আমার কথা অমান্য করেছে, (আমার বদলে) তারা এমন কিছু লোকের অনুসরণ করেছে যাদের ধন- সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদের বিনাশই বৃদ্ধি করেছে, তারা সত্যের বিরুদ্ধে সাংঘাতিক ধরনের এক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। (সূরা নূহ-২১-২২)
অবাধ্যতার চরম সীমা অতিক্রম করার পরে হেদায়াতের সকল আশা যখন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে তখন হযরত নূহ (আ:) মহান আল্লাহর কাছে নিজ জাতির ধ্বংস কামনা করে আবেদন করেছেন-
وَقَالَ نُوحٌ رَّبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِيْنَ دَيَّارًا - إِنَّكَ إِنْ تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلَا يَلدُوا إِلَّا فَاجِرًا كَفَّارًا - رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ طَ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارَاعِ
নূহ (আরও) বললো, হে আমার মালিক, এ যমীনের অধিবাসী (যালিমদের) একজন (গৃহবাসী)-কেও তুমি (আজ শাস্তি থেকে) রেহাই দিয়ো না, (আজ) যদি তুমি এদের (শাস্তি থেকে) অব্যাহতি দাও, তাহলে এরা (পুনরায়) তোমার বান্দাদের পথভ্রষ্ট করে দেবে (শুধু তাই নয়), এরা (ভবিষ্যতেও) দুরাচার পাপী কাফির ছাড়া কাউকেই জন্ম দিবে না। হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে তোমার ওপর ঈমান এনে যারা আমার (সাথে ঈমানের এই) ঘরে আশ্রয় নিয়েছে, এমন সব ব্যক্তিদের এবং সব ঈমানদার পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষমা করে দাও, যালিমদের জন্যে চূড়ান্ত ধ্বংস ছাড়া কিছুই তুমি বৃদ্ধি করো না। (সূরা নূহ-২৬-২৮)
এবার নবী করীম (সা:), যাঁকে মহান আল্লাহ তা'য়ালা 'করুণার মূর্ত প্রতীক' হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন তাঁর জীবনের দিকে লক্ষ্য করি। নিজ জন্মস্থান মক্কায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শিয়াবে আবি তালেবে নির্যাতিত হলেন, তায়েফে গেলেন সেখানেও লোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার হলেন। মদীনার জীবনে ওহূদ ও অন্যান্য স্থানে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হলেন। মক্কায় পবিত্র কা'বা ঘরে তিনি নামাজে দাঁড়িয়েছেন, দুশমনরা তাঁর পবিত্র কন্ঠে রশি পেঁচিয়ে দু'দিক থেকে টেনে ধরেছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে চোখ দু'টো কোঠর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। নামাজে তিনি সিজদায় গিয়েছেন, উটের পচা নাড়িভূড়ি তাঁর মাথার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তিনি যে পথ দিয়ে হেঁটেছেন সে পথে কাঁটা বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ওহুদের ময়দানে দাঁত মুবারক শহীদ হয়েছে, তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন। জীবনের এই চরম মুহূর্তেও তিনি নিজ জাতির জন্য আতঙ্কিত হয়েছেন, আল্লাহ তা'য়ালা তাদের ওপর গযব নাযিল করেন কিনা। এ আশঙ্কায় তিনি মহান মালিকের কাছে নিজ জাতির জন্যে দোয়া করেছেন-
اللَّهُمَّ اهْدِ قَوْمِي فَإِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
'হে আমার আল্লাহ, আমার জাতিকে হিদায়াত দাও, ওরা জানে না'।
অর্থাৎ আমি যে নবী, আমি ওদের কল্যাণকামী তা ওরা বুঝতে পারেনি, এ জন্যেই আমার প্রতি ওরা আঘাত করেছে। ওরা বুঝে না, তুমি ওদের ওপর গযব দিও না।
নবী করীম (সা:) মক্কা বিজয় করলেন। অত্যাচারী জালিমদের আঙ্গিনায় প্রতিশোধের খড়গ কৃপাণ নিয়ে তিনি এবং নির্যাতিত সাহাবায়ে কেরাম মক্কায় উপস্থিত হননি। এক সময় যারা ছিলেন জালিম অত্যাচারী তাদের আঙ্গিনায় করুণার সিন্ধু প্রবাহিত হলো। যারা তাঁকে হত্যা করার জন্য তাঁর ঘর পরিবেষ্টন করেছিল, তারাও সেদিন সেই করুণার সাগরে অবগাহন করার সুযোগ লাভ করলো। ইসলাম পূর্ব আরবে এক ঘৃণ্য প্রথা শতাব্দী ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত ছিল, কোনো ব্যক্তি যদি নিহত হতো, তাহলে তার গোত্রের লোকজন মনে করতো যে, হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য। নিহত ব্যক্তির হত্যাকারীকে যদি তারা ধরতে না পারতো, তাহলে তার নাম পরিচয় তারা লিখে রাখতো। ক্ষেত্র বিশেষে তারা প্রতীজ্ঞা করতো, হত্যাকারীর মাথার খুলিতে তারা মদ পান করবে। বংশের লোকদেরকে তারা প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করতো। আরবদের বিশ্বাস ছিল, কেউ কাউকে হত্যা করলে সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ গ্রহণ না করলে নিহত ব্যক্তির আত্মা সাদা রংয়ের পাখি হয়ে পাহাড়-পর্বতে উড়তে থাকে আর বলতে থাকে, 'আমাকে পান করাও! আমাকে পান করাও!' আবার কারো ধারণা ছিল, যে ব্যক্তি নিহত হয় তার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করলে সে ঐ জগতে জীবিত থাকে। আর প্রতিশোধ গ্রহণ না করলে ঐ জগতে সে মরে যায়।
আবার কারো ধারণা ছিল, হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ না করলে নিহত ব্যক্তির কবর অন্ধকারে ছেয়ে থাকে। প্রতিশোধ গ্রহণ করা হলে তার কবর আলোকিত হয়। এই সকল অমূলক বিশ্বাসের কারণে যুদ্ধের আগুন কখনো নির্বাপিত হয়নি। এভাবে যুদ্ধ করা বা প্রতিশোধ গ্রহণ করা ছিল তাদের কাছে এক সম্মানজনক ব্যাপার।
বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে নবী করীম (সা:) ঘোষণা করলেন, 'এক আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক এবং অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আজ তিনি তাঁর অঙ্গিকার পূর্ণ করেছেন। তিনি তাঁর গোলামকে সাহায্য করেছেন এবং সত্যের শত্রুদেরকে স্তব্ধ করেছেন। সকল অহংকার এবং পূর্বের রক্তের বদলা, রক্তের বাঁধন সবই আমার পায়ের নীচে দলিত হলো। আজ এসব কিছুই আমার পায়ের নীচে কবর দিলাম'।
নবী করীম (সা:) তাঁর ভাষণের সমাপ্তিতে সামনে বিশাল জনসমুদ্রের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তাঁর পবিত্র সুন্দর চোখ দু'টো যেন করুণার সিন্ধুর মতই হয়ে এলো। তিনি দেখলেন, ঐ লোকগুলো তাঁর মুখের দিকে আজ অসহায়ের মতই এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখের ভাষায় ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব আর ক্ষমার আকুতি।
নির্যাতিত নবী দেখছেন, ঐ তো-ঐ লোকগুলোর সাথেই তারা মিলে মিশে আজ একাকার হয়ে তাঁর সামনে বসে আছে, যে লোকগুলোকে সত্য গ্রহণের অপরাধে তারা জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপরে চিৎ করে শুইয়ে বুকের ওপর পাথর চাপা দিয়েছে। হযরত বিলাল (রা:) এর গলায় রশি বেঁধে কাঁটা ও পাথরের ওপর দিয়ে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়েছে, বিলালের দেহের গোস্ত চামড়া ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়েছে। খাব্বাবের শরীরে এখনো সে ক্ষত দগদগ করছে। শিয়াবে আবু তালিবে দিনের পর দিন অনাহারে থাকতে বাধ্য করেছে। ঐ তো সেই লোকগুলো। অনাহারের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তাঁর প্রিয় খাদিজা ঐ যে ভেঙ্গে পড়লেন, তাঁর আশ্রয়দাতা চাচা আবু তালিব ভেঙ্গে পড়লেন, আর উঠতে পারলেন না। আবু জাহিলের সাথে মিলে সুমাইয়াকে যারা হত্যা করেছিল তারাও তো অবনত মস্তকে বসে আছে।
তাঁর প্রিয় চাচা হামজার কলিজা যারা চিবিয়ে ছিল, তারাও আছে। তাঁর গর্ভবতী মেয়ে যয়নবকে আঘাত করে উটের ওপর থেকে নীচে ফেলে গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছিল, তারাও বসে আছে। তাঁকে যারা সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে তারাও মাথা নীচু করে বসে আছে। তাঁকে যারা হত্যা করার জন্য অগ্রসর হয়েছিল, তাঁর সেই প্রাণের শত্রুও অবনত মস্তকে বসে আছে। বদর ওহুদ খন্দকে যারা রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল, তারাও তাঁর সামনে বসে আছে।
বিশ্বনবী (সা:) তাদের দিকে তাঁর পবিত্র নয়নযুগল- করুণার সিন্ধু প্রবাহিত করলেন। তারপর গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলেন, 'তোমাদের কি জানা আছে, আজ আমি তোমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করবো?'
সমবেত অপরাধীগণ সমস্বরে বলে উঠলো, 'আপনি আমাদের সম্মানিত ভাই, আমাদের মর্যাদাবান ভাতিজা!'
করুণার সাগরে প্লাবন সৃষ্টি হলো। তরঙ্গের পরে তরঙ্গ আছড়ে পড়লো প্রাণের শত্রুদের ওপর। নবী করীম (সা:) মমতা সিক্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, 'আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আজ তোমরা সবাই মুক্ত'।
ইউরোপের লেখকদের চোখে এই দৃশ্য কি ধরা পড়েনি? আপনারা পরাজিত জাতির সাথে কি ধরনের আচরণ করেছেন এবং করেন, পৃথিবীবাসীর তা জানা আছে। যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে আমেরিকা হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে কি করেছে, পৃথিবীর মানুষ সে নৃশংস ঘটনা কি কখনো ভুলে যাবে? বিশ্বনবী (সা:) মক্কা বিজয় পর্যন্ত পৌঁছলেন, এর পেছনে কি তাঁর কোনো উচ্চাশা কার্যকর ছিল? আপনাদের একজন লেখক জোসেফ হেল বলেছেন, 'Thus Mohammad attained the summit of his ambition. অর্থাৎ এভাবে মুহাম্মাদ (সা:) তাঁর উচ্চাকাংখার চরম শিখরে উপনীত হন'।
ইসলাম বিদ্বেষী এ লোকটি কিভাবে নবী করীম (সা:) এর উচ্চাশার কথা বললেন, ভাবতে অবাক লাগে। আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব তিনি পালন করলেন মাত্র, এখানে উচ্চাকাংখা এলো কোত্থেকে? তিনি মক্কার লোকদের সাথে যে ব্যবহার করলেন, যে ভঙ্গিতে তিনি মক্কায় প্রবেশ করলেন, এগুলো কি একজন উচ্চাকাংখী মানুষের চারিত্রিক অলংকার? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা:) বলেন, 'আমি দেখলাম, রাসূল (সা:) বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। এ সময়ে তিনি উটের ওপরে বসা অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে এতই কৃতজ্ঞশীল ছিলেন যে, তিনি মাথা নীচু করেছিলেন। তাঁর পবিত্র মাথা এতটাই নীচু হয়েছিল যে, তাঁর পবিত্র দাড়ি মোবারক উটের পিঠ স্পর্শ করছিলো'। একজন উচ্চাকাংখা পোষণকারী ব্যক্তি বিজিত এলাকায় কখনো এই ভঙ্গীতে প্রবেশ করেন?
তাঁর যদি উচ্চাকাংখাই থাকবে তাহলে তিনি অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করলেন কেন? চাচা আবু তালিব জীবিত থাকতেই তো মক্কার নেতৃবৃন্দ তাকে অর্থ বিত্ত, সুন্দরী নারী দিতে চেয়েছিল। তাঁকে দেশের শাসকের পদে অভিষিক্ত করতে চেয়েছিল। উচ্চাকাংখা থাকলে তখনই তো তিনি তাদের প্রস্তাবে রাজী হতেন। তারা যে জেনে বুঝেই নবী করীম (সা:) এর ক্ষেত্রে এই ধরনের ধৃষ্টতা পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করে থাকেন এতে কোন সন্দেহ নেই। বিশ্বনবী (সা:) এর ক্ষেত্রে ইংরেজি Ambition শব্দ বা বাংলা 'উচ্চাকাংখা' শব্দ ব্যবহার করা চরম ধৃষ্টতার শামিল।
0 Comments