মিরাজের পূর্বে নবী করীম (সা:) এর মাধ্যমে বহু সংখ্যক মু'জিযা আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর বান্দাদের দেখিয়েছেন। অগণিত মানুষ দেখেছে আল্লাহর রাসূলের পবিত্র হাতের ইশারায় আকাশের চন্দ্র দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পুনরায় তা পূর্বের ন্যায় ধারণ করেছে। এ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন-
اقتربَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ -
কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা ক্বামার-১)
অসংখ্য অগণিত মু'জিযার মধ্যে নবী করীম (সা:) এর জীবনে মিরাজ ছিলো অন্যতম মু'জিযা এবং এটি তাঁর জীবনেতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শুধু তাঁকেই নয়, মহান আল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ নবী-রাসূলদের এমন অসংখ্য নিদর্শন দেখিয়েছেন, যা সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। এসব নিদর্শনের মাধ্যমে নবীদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রত্যক্ষভাবে সৃষ্টি জগৎ ও বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানদান করেছেন। যে সকল নবী-রাসূলকে অতিন্দ্রীয় নিদর্শন দেখানো হয়েছে তাদের সকলের বিষয়টির ধরন একরূপ ছিল না। বিভিন্ন পদ্ধতিতে তাদেরকে প্রত্যক্ষ নিদর্শন দেখানো হয়েছে। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে নিয়োজিত করার সময় দর্শনের যাবতীয় বস্তুভিত্তিক শর্তাবলীর আবরণ তাদের দৃষ্টির সামনে থেকে অপসারিত করা হয়েছে। স্থান এবং সময়ের সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা তাদের দৃষ্টিপথ ও যাত্রা পথ থেকে অপসারিত করা হয়েছে। ফলে তাঁরা এই মাটির পৃথিবীতে অবস্থান করে মহান আল্লাহর সৃষ্টি এমন অনেক কিছুই দেখেছেন যা সাধারণ মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরকে পৃথিবীর বাইরের জগতের সংবাদ অনুগ্রহ করে অবগত করেছেন এবং অনেক গোপন দৃশ্য দেখিয়েছেন।
এ ধরনের প্রত্যক্ষ দর্শনের মাধ্যমে একজন নবী-রাসূল মহান আল্লাহর ঐ সকল ক্ষমতা এবং সৃষ্টি দর্শন করেছেন যা সাধারণ মানুষ কখনো কল্পনাও করতে পারে না। তাঁরা ফেরেশতার সান্নিধ্য অনুভব করেছেন। মহান আল্লাহর অসংখ কুদরত দর্শন করেছেন। আকাশ এবং পৃথিবীর রহস্য তাদের সামনে উন্মোচন করা হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ:) কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা এই পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরের বহু কিছু দর্শন করিয়েছেন। তিনি তাঁর পিতাকে সত্য পথ প্রদর্শনের লক্ষ্যে বলেছিলেন-
يَا أَبَتِ إِنِّي قَدْ جَاءَنِي مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِي أَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا -
হে আমার পিতা, আমার কাছে (আল্লাহ তা'য়ালার সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে) যে জ্ঞান এসেছে তা তোমার কাছে আসেনি, অত:এব তুমি আমার কথা শোনো, আমি তোমাকে অভ্রান্ত পথ প্রদর্শন করবো।
(সূরা মারইয়াম-৪৩)
এ পৃথিবীতে সাধারণ ঈমানদার লোকদের জন্য যে কাজ করতে হয় তাহলো, ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনা। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবী- রাসূলদের প্রতি যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা যথাযথভাবে পালন করার জন্য তাদেরকে সেইসব নিগূঢ় সত্যকে নিজেদের চোখে বাস্তবে দর্শন করানো একান্ত কাম্য ছিলো, যে সকল বিষয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষকে বলে থাকেন এবং যেদিকে তাঁরা মানুষকে আহ্বান জানাতেন। সমগ্র পৃথিবীবাসীকে লক্ষ্য করে তাঁরা এ ঘোষণা দিয়েছেন, 'তোমরা যারা কেবলমাত্র ধারণা ও অনুমানের পেছনে ছুটে থাকো, আমরা কিন্তু ধারণা বা অনুমানের পেছনে ছুটি না। আমরা যা নিজ চোখে দেখেছি তাই তোমাদের সম্মুখে উপস্থাপন করছি। তোমাদের কাছে রয়েছে অমূলক ধারণা, আর আমাদের কাছে রয়েছে অভ্রান্ত জ্ঞান। তোমরা অন্ধ আর আমরা প্রত্যক্ষদর্শী দৃষ্টিমান'।
আর ঠিক এ কারণেই নবী-রাসূলগণের কাছে ফিরিশতাগণ প্রকাশ্যভাবে এসেছেন, সমগ্র আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত মহান আল্লাহর অকল্পনীয় বিশাল শাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় অংশ তাঁদেরকে প্রত্যক্ষ করানো হয়েছে। তাঁদেরকে জান্নাত- জাহান্নাম, নিজেদের চোখে দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের চিত্র তাঁদের দৃষ্টির সম্মুখে তুলে ধরা হয়েছে। নবুয়্যাতের পদে অভিষিক্ত হবার পূর্বেই তাঁরা ঈমান বিল গায়েবের পর্যায় অতিক্রম করেছেন এবং নবুয়্যাত লাভ করার পরে তাঁদেরকে ঈমান বিশ্ শাহাদাত তথা প্রত্যক্ষ ঈমানের নিয়ামত দানে ধন্য করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তা'য়ালা মৃতকে কিভাবে জীবিত করবেন এ বিষয়টি হযরত ইবরাহীম (আ:) কে দেখানো হয়েছে। এ ঘটনা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন বর্ণনা করছে-
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِ الْمَوْتَى ط قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِنْ طَ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي ط قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيَاطَ وَاعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
(আরো স্মরণ করো) যখন ইবরাহীম বললো, হে মালিক, মৃতকে তুমি কিভাবে (পুনরায়) জীবন দাও তা আমাকে একটু দেখিয়ে দাও; আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, কেনো (না দেখে) তুমি কি বিশ্বাস করো না? ইবরাহীম বললো, হ্যাঁ (প্রভু, আমি বিশ্বাস করি), কিন্তু (এর দ্বারা) আমার মন একটু সান্ত্বনা পাবে (এই যা); আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, (তুমি বরং এক কাজ করো), চারটি পাখী ধরে আনো, অত:পর (আস্তে আস্তে) এই পাখীগুলোকে তোমার কাছে পোষ মানিয়ে নাও (যাতে ওদের নাম তোমার কাছে পরিচিত হয়ে যায়), তারপর (তাদের শরীর কেটে কয়েক টুকরায় ভাগ করো,) তাদের (কাটা) এক একটি টুকরো এক একটি পাহাড়ের ওপর রেখে এসো, অত:পর ওদের (সবার নাম ধরে) তুমি ডাকো, (দেখবে জীবন্ত পাখীতে পরিণত হয়ে) ওরা তোমার কাছে দৌড়ে আসবে; তুমি জেনে রাখো, আল্লাহ তা'য়ালা মহাশক্তিশালী, বিজ্ঞ ও কুশলী। (সূরা আল বাকারা-২৬০)
মহান মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে নির্দেশ দিলেন মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ:) তা বাস্তবায়ন করার পর পাখীগুলোর নাম ধরে ডাক দিলেন, পাখীগুলো জীবন্ত হয়ে তাঁর কাছে ফিরে এলো। মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে একজন মানুষের কথা আলোচনা করেছেন কিন্তু তাঁর নাম পরিচয় উল্লেখ করেননি। কোনো কোনো গবেষক সে ব্যক্তিকে নবী বলে অনুমান করেছেন। এ মানুষটি নিজ বাহন গাধায় আরোহণ করে একটি বিধ্বস্ত জনপদ অতিক্রম করছিলো। এক পর্যায়ে তিনি বাহন থেকে নেমে সাথে থাকা খাদ্য ও পানীয় একদিকে রেখে গাধাটি পাশেই বেঁধে একস্থানে বসলেন। চারদিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'ধ্বংসপ্রাপ্ত এ জনপদকে মহান খালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পুনরায় কিভাবে জীবনদান করবেন!' আল্লাহ তা'য়ালা সে ব্যক্তি সম্পর্কে বলছেন-
أَوْ كَالَّذِي مَرَّ عَلَى قَرْيَةٍ وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوشِهَاجٍ قَالَ أَنِّي يُحْى هذه اللهُ بَعْدَ مَوْتِهَاجِ فَأَمَاتَهُ اللهُ مِئَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَه ط قَالَ كَمْ لَبِثْتَ طَ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا أَوْ فَانْظُرْ إِلَى طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهُ جِ كَيْفَ تُنْشِرُهَا ثُمَّ وَلَنَجْعَلَكَ آيَةً لِّلنَّاسِ وَانْظُرْ إِلَى العظام - بَعْضَ يَوْمٍ. وَانْظُرْ إلى حمارك قف نَكْسُوْهَا لَحْمَاطَ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ لا قَالَ أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ -
অথবা (ঘটনাটি) কি সেই ব্যক্তির মতো যে একটি বস্তির পাশ দিয়ে যাবার সময় যখন দেখলো, তা (বিধ্বস্ত হয়ে) আপন অস্তিত্বের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, (তখন) সে ব্যক্তি বললো, এ মৃত জনপদকে কিভাবে আল্লাহ তা'য়ালা আবার পুনর্জীবন দান করবেন, এক পর্যায়ে আল্লাহ তা'য়ালা (সত্যি সত্যিই) তাকে মৃত্যু দান করলেন এবং (এভাবেই তাকে) একশ বছর ধরে মৃত (ফেলে) রাখলেন, অত:পর তাকে পুনরায় জীবিত করলেন; এবার জিজ্ঞেস করলেন, (বলতে পারো) তুমি কতোকাল (মৃত অবস্থায়) কাটিয়েছো? সে বললো, আমি একদিন কিংবা একদিনের কিছু অংশ (মৃত অবস্থায়) কাটিয়েছি, আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, বরং এমনি অবস্থায় তুমি একশ বছর কাটিয়ে দিয়েছো, তাকিয়ে দেখো তোমার নিজস্ব খাবার ও পানীয়ের দিকে, (দেখবে) তা বিন্দুমাত্র পচেনি, তোমার গাধাটির দিকেও দেখো (তাও একই অবস্থায় আছে, আমি এসব এ জন্যেই দেখালাম), যেনো আমি তোমাকে মানুষদের জন্যে (পরকালীন জীবনের) একটি (জীবন্ত) প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি, এ (মৃত জীবের) হাড় পাঁজরগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখো, (তুমি নিজেই দেখতে পাবে) আমি কিভাবে তা একটার সাথে আরেকটার জোড়া লাগিয়ে (নতুন জীবন) দিয়েছি, অত:পর কিভাবে তাকে আমি গোস্তের পোশাক পরিয়ে দিয়েছি, অত:পর (এভাবে আল্লাহর দেখানো) এ বিষয়টি যখন তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো তখন বলে উঠলো, আমি (এটা) জানি, অবশ্যই আল্লাহ তা'য়ালা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সূরা আল বাকারা-২৫৯)
হযরত মূসা (আ:) এর সামনে থেকে জ্ঞানের জগতের আবরণ সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ফলে তিনি এমন জ্ঞানের অধিকারী হয়েছিলেন, যে জ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ মানুষ সামান্যতম ধারণাও করতে পারে না। মহান আল্লাহ তা'য়ালার অসীম ক্ষমতার ক্ষুদ্রতম একটি হযরত মূসা (আ:) এর সম্মুখে প্রকাশ করার সাথে সাথে তিনি জ্ঞানহারা হয়ে পড়েছিলেন। এরপর তাঁর হাতের লাঠিকে যখন বিশাল সর্পে পরিণত করা হলো তখন তিনি প্রথম দিকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তখনকার সে দৃশ্য মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে এভাবে অঙ্কন করেছেন-
وَأَنْ أَلْقِ عَصَاكَ طَ فَلَمَّا رَآهَا تَهْتَزُّ كَأَنَّهَا جَانٌّ وَلَّى مُدْبِرًا وَلَمْ يُعَقِّبْ طَ يَا مُوسَى أَقْبِلْ وَلَا تَخَفْ قَفَ إِنَّكَ مِنَ الْآمِنِينَ
(তাকে আরো বল হলো,) তুমি তোমার হাতের লাঠিটি যমীনে নিক্ষেপ করো; যখন সে তাকে দেখলো, তা (জীবন্ত) সাপের মতোই ছুটাছুটি করছে, তখন সে উল্টো দিকে ছুটতে লাগলো, পেছনের দিকে তাকিয়েও দেখলো না; (তার প্রতি তখন আদেশ করা হলো,) হে মূসা, তুমি এগিয়ে এসো, ভয় পেয়ো না। তুমি হচ্ছো নিরাপদ মানুষদেরই একজন। (সূরা আল কাছাছ-৩১)
এভাবে হযরত ইউসুফ (আ:), হযরত ইয়াকুব (আ:), হযরত নূহ (আ:) অর্থাৎ মহান আল্লাহ যে নবী-রাসূলকেই ইচ্ছা করেছেন তাদের দৃষ্টির সামনে থেকে প্রয়োজন অনুসারে আবরণ সরিয়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁরা অদৃশ্য জগতের বহু কিছু নিজ চোখে দেখে তাদের অনুসারীদেরকে সাবধান এবং সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
কিন্তু নবী করীম (সা:) এর ক্ষেত্রে বিষয়টি ছিলো ভিন্ন ধরনের। সকল নবী-রাসূলদের নেতা ছিলেন তিনি। বিশেষ কোনো এলাকা বা জাতির জন্য তাঁকে প্রেরণ করা হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডীতেও তাঁর নবুয়্যাত আবদ্ধ করা হয়নি। তাঁর নবুয়্যাত পৃথিবী থেকে কিয়ামতের ময়দানে অনন্তকাল পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি বিশ্বনবী নবী, তাঁকে সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীর মানুষের ওপরে যিনি সকল বিষয়ে নেতৃত্ব প্রদান করবেন, তাঁকে তাঁর পদের উপযুক্ত করে গড়ার জন্য যে ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন ছিলো মহান আল্লাহ তা-ই করেছিলেন। বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তাঁর জ্ঞানের পরিধি যতদূর বিস্তৃতি ঘটানো আবশ্যক ছিল মহান আল্লাহ তাই ঘটিয়েছেন। এ কারণেই তাঁর মিরাজ ছিল অন্য নবী-রাসূলের প্রত্যক্ষ দর্শনের থেকে ভিন্ন ধরনের। অন্য নবীদের ক্ষেত্রে যা করা হয়নি তাঁর ক্ষেত্রে তাঁর সর্বোচ্চ মর্যাদার সাথে সঙ্গতি রেখে তাই করা হয়েছে।
নবী করীম (সা:) এর মিরাজের ব্যাপারে যে পদ্ধতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ তাঁকে দৈহিকভাবে সরাসরি মহান আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে উপস্থিত করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে অজ্ঞতাবশতঃ অনেকেই বলেছেন, তাঁর মিরাজ হয়েছিল স্বাপ্নিকভাবে। তাদের এ কথা বলার পেছনে দু'টো কারণ বিদ্যমান। প্রথমটি হলো। কুরআন বুঝার দুর্বলতা এবং দ্বিতীয়টি হলো কুরআন ও রাসূলের প্রতি অধিক ভালোবাসার কারণে তাঁকে বিরোধিদের অপবাদ থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা। কেননা, বিজ্ঞান যখন ঘোষনা করেছে মানুষের পক্ষে কোনো কিছুর মাধ্যম ব্যতীত মহাকাশ ভ্রমণ করা অসম্ভব এবং বিজ্ঞান তা প্রমাণও করে দেখিয়েছে। তখন নবীর একশ্রেণীর প্রেমিকগণ ভেবে দেখেছেন, কুরআনে যেহেতু নবী করীম (সা:) এর শারীরিক মিরাজের কথা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়নি এবং বিজ্ঞানও প্রমাণ করে দিয়েছে শারীরিক মিরাজ হওয়া অসম্ভব। সেহেতু মিরাজ হয়েছিল স্বাপ্নিকভাবে এ কথা বলাই যুক্তিযুক্ত। রাসূল (সা:) দাবী করেছেন তাঁর মিরাজ হয়েছিল, অতএব রাসূলের দাবীকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে হলে স্বপ্নের আশ্রয় গ্রহণ ব্যতীত ভিন্ন কোনো পথ নেই। সুতরাং নবীর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসার কারণেই তাঁরা দাবী করেছেন, বিশ্বনবী (সা:) এর মিরাজ হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে।
0 Comments