পবিত্র কোরআনে আকাশ সম্পর্কে বহু তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। কিভাবে আকাশ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং কেমন করে তার সাংগাঠনিক শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং কোন পদ্ধতিতে আকাশকে কোন ধরনের স্তম্ভ ব্যতিত যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত রাখা হয়েছে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মানুষকে ধারণা দান করেছে। আকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে বিজ্ঞানীগণ এখন পর্যন্ত কোন স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হননি। তারা প্রকৃত অর্থে আকাশের কোন সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। মানুষ সসীম জ্ঞানের অধিকারী। কোন কিছু সম্পর্কে এরা সঠিক জ্ঞানার্জন করতে ব্যর্থ হলেই তার অস্তিত্ব অস্বীকার করা এদের স্বভাব। আকাশের ঠিকানা আবিষ্কারে ব্যর্থ কেউ কেউ আকাশের অস্তিত্ব অস্বীকার করে বলেছে, আকাশ বলতে কিছুই নেই। পৃথিবীর ধূলিকণা মহাশূন্যে বায়বিয় স্তরে পুঞ্জিভূত হয় এবং তার ওপরে সূর্যের আলো পতিত হবার ফলে তা নীল দেখায়। প্রকৃত অর্থে আকাশের কোন অস্তিত্ব নেই। অথচ এই আকাশের যিনি স্রষ্টা তিনি বলছেন-
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِيِّنَةِ الْكَوَاكِبِ
এই দুনিয়ার আকাশখানিকে তারকা প্রদীপ দিয়া সাজায়ে রেখেছি মনের মতন দেখো তুমি তাকাইয়া। (সূরা আস্ সা-ফফা-ত-৬)
উল্লেখিত আয়াতে পৃথিবীর আকাশ বলতে সেই আকাশকেই বুঝানো হয়েছে, যা আমাদের এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী। যে আকাশকে আমরা কোন কিছুর সাহায্য ব্যতিতই খালি চোখে দেখে থাকি। এই আকাশ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীগণ যে বিশ্বকে দেখে থাকেন এবং তাদের পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে যেসব বিশ্ব এখন পর্যন্ত মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়নি সেগুলো সবই দূরবর্তী আকাশ। কোরআনে আকাশ সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে 'সাব'আ' শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। যার সরল অনুবাদ করা হয়েছে 'সাত আকাশ'। আল্লাহর কোরআনের বক্তব্য মানুষের বোধগম্য ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে। যে শব্দ ব্যবহার করলে মানুষ সহজে বুঝতে সক্ষম হবে, সেই শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে। কোরআনে কোন জটিলতা রাখা হয়নি। আরবী পরিভাষায় 'আলিফ' বলতে অগণিত কিছু বোঝায়। এখন কেউ যদি এই আলিফ বলতে শুধুমাত্র একহাজার বুঝে, তাহলে সে তার জ্ঞান অনুযায়ী তা বুঝতে পারে। কিন্তু এই আলিফ দিয়ে আল্লাহর কোরআন অসংখ্য অগণিত বুঝিয়েছে।
যেমন সূরা কদরে লাইলাতুল কাদরি মিন আলফি শাহরে বলতে বুঝানো হয়েছে অসংখ্য অগণিত মাসের থেকেও উত্তম হলো কদরের রাত। আবার কিয়ামত সংঘটিত হবার প্রসঙ্গ উপস্থাপন করতে গিয়ে কোরআন 'সুর' শব্দ ব্যবহার করেছে। এই 'সুর' শব্দের অর্থ হলো শিঙ্গা। হযরত ইসরাফিল আলাইহিস্ সালাম শিঙ্গায় ফুঁ দিবেন, কিয়ামত শুরু হয়ে যাবে। সেই প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্তও কোন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রচারের জন্য ঢেড়া পিটিয়ে বা শিঙ্গা বাজিয়ে মানুষকে একত্রিত করা হয়। এখানো সৈন্যবাহিনীকে একত্রিত করার জন্য বিউগল বাজানো হয়। অর্থাৎ মানুষ এই শিঙ্গা শব্দটির সাথে পরিচিত, এ কারণে কোরআন শিঙ্গা শব্দই ব্যবহার করেছে। এদেশেও কথার মাঝে মানুষ সীমাহীন দূরত্ব বুঝাতে 'সাত সমুদ্দুর তের নদী-সাত তবক আসমান' ইত্যাদি বাক্য ব্যবহার করে থাকে। অমূল্য কোনকিছু বুঝাতে 'সাত রাজার ধন' বাক্যটি ব্যবহার করে। এ জন্য আল্লাহর কোরআন অসংখ্য আকাশকে বুঝাতে 'সাব'আ' বা সাত আকাশ শব্দ ব্যবহার করেছে, যেন মানুষ সহজে বুঝতে পারে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَلَقَدْ خَلَقْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعَ طَرَائِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غَافِلِينَ وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنُهُ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّا عَلَى ذَهَابِ بِهِ لَقَادِرُونَ
নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ওপরে অসংখ্য স্তর সৃষ্টি করেছি। আমি আমার সৃষ্টি সম্পর্কে মোটেও অমনোযোগী নই। আর আকাশ থেকে আমি ঠিক হিসাব মতো একটি বিশেষ পরিমাণ অনুযায়ী পানি বর্ষণ করেছি এবং তাকে ভূমিতে সংরক্ষণ করেছি। আমি তাকে যেভাবে ইচ্ছা অদৃশ্য করে দিতে সক্ষম। (সূরা মুমিনুন)
মহান আল্লাহ হলেন রাব্বুল আলামীন। তিনি অসংখ্য জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং এসব সৃষ্টি করেই তিনি অবসর গ্রহণ করেননি। তিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টি সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন রয়েছেন। কোনটি কিভাবে পরিচালিত হবে, কোন সৃষ্টির কি প্রয়োজন, এ সম্পর্কে তিনি মোটেও অমনোযোগী নন। তাঁর সৃষ্টি অসংখ্য জগৎ যেন যথা নিয়মে পরিচালিত হয়, এ ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। কোন কোন বিজ্ঞানী বলেন, সৃষ্টির সূচনাতেই আল্লাহ তা'য়ালা একই সঙ্গে এমন পরিমিত পরিমাণ পানি পৃথিবীতে বর্ষণ করেছিলেন যা পৃথিবী নামক এই গ্রহটির ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। এই পানি পৃথিবীর নিম্ন ভূমিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এভাবে পানিকে সংরক্ষণ করার কারণেই নদী, সাগর-মহাসাগর ও জলাধারের সৃষ্টি হয়েছে, ভূগর্ভেও বিপুল পরিমাণ পানি রিজার্ভ রয়েছে। এই পানিই চক্রাকারে উষ্ণতা, শৈত্য ও বাতাসের মাধ্যমে বর্ষিত হতে থাকে। মেঘমালা, বরফাচ্ছাদিত পাহাড়, সাগর, নদী-নালা ঝরণা ও কুয়া, ডিপ টিউবওয়েল এই পানিই পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দিয়ে থাকে।
0 Comments