মহান আল্লাহ তা'য়ালা নবী করীম (সা:) কে মর্যাদার কোন্ উচ্চ শিখরে উপনীত করেছেন দেখুন, পৃথিবীতে নবী-রাসূল প্রেরণের সূচনা যখন করেন তখন আদম (আ:) এর পর থেকে বিশ্বনবীর পূর্বে প্রেরিত সকল নবী-রাসূলের কাছ থেকেই এ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, 'তোমার পূর্বে যে নবী প্রেরণ করা হয়েছিলো এবং পরে যাঁকে প্রেরণ করা হবে, তাঁর প্রতি স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাঁকে সহযোগিতা করতে হবে'। কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন নবী করীম (সা:), যাঁকে এ ধরনের কিছু বলার প্রয়োজন আল্লাহ তা'য়ালা রাখেননি। কারণ তাঁর পরে আর কোনো নবী-রাসূল প্রেরণ করা হবে না। তাঁকে দিয়েই নবুয়াতের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে তাঁকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করা হবে বিধায় তাঁর কাছ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি গ্রহণের প্রযোজন হয়নি। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّنَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّنْ كتاب وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّه ط قَالَ أَ أَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَالِكُمْ إصْرِى طَ قَالُوا أَقْرَرْنَا طَ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ
আল্লাহ তা'য়ালা যখন তাঁর নবীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন (তখন তিনি বলেছিলেন, এ হচ্ছে) কিতাব ও (তার ব্যবহারিক) জ্ঞান কৌশল, যা আমি তোমাদের দান করলাম। অতপর তোমাদের কাছে যখন (আমার কোনো) রাসূল আসবে, যে তোমাদের কাছে রক্ষিত (আগের) কিতাবের সত্যায়ন করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার (আনীত বিধানের) ওপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ তা'য়ালা জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি (এ কথার) ওপর (আমার এ) অঙ্গীকার গ্রহণ করছো? তাঁরা বললো, হ্যাঁ আমরা (মেনে চলার) অঙ্গীকার করছি, আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো এবং আমিও তোমাদের সাথে (এ অঙ্গীকারের) সাক্ষী হয়ে রইলাম। (সূরা আলে ইমরান-৮১)
নবী করীম (সা:) এর পূর্বে সকল নবী-রাসূলের কাছ থেকেই মহান আল্লাহ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন এবং এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই তাঁর পরবর্তী নবী-রাসূল সম্পর্কে নিজেদের অনুসারীদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, 'আমার পরে যিনি আসবেন তোমরা তাঁকে অনুসরণ করবে'।
আল্লাহ তা'য়ালা নবী করীম (সা:) এর পূর্বের সকল নবী-রাসূলের কাছ থেকে এ অঙ্গীকার গ্রহণ করে বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে এ কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন-
فَمَنْ تَوَلَّى بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَائِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
অতপর যারা তা (অঙ্গীকার) ভঙ্গ করে (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারা অবশ্যই বিদ্রোহী (বলে পরিগণিত) হবে। (সূরা আলে ইমরান-৮২)
কিন্তু বিশ্বনবী (সা:) এর কাছ থেকে এই ধরনের কোনো অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়নি যে, 'আপনার পরে যিনি আসবেন আপনি আপনার অনুসারীদের জানিয়ে দিন, তাঁকে অনুসরণ করতে হবে'। এ ধরনের প্রতিশ্রুতি না নেয়াই এ কথার অকাট্য প্রমাণ যে, নবী করীম (সা:) এর পরে আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না এবং তিনিই সমগ্র পৃথিবীর জন্যে শেষ নবী-রাসূল। নবী-রাসূলের সিল মোহরের উচ্চ মর্যাদা মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে দান করেছেন। হযরত মূসা ও হযরত ঈসা (আ:) এর কাছ থেকেও এই প্রতিশ্রুতি আল্লাহ গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁরা তাদের অনুসারীদের এ কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, 'আমার পরে যিনি আসবেন তোমরা তাঁকে সমর্থন করবে, তাঁর প্রতি ঈমান এনে তাঁর আনীত বিধান অনুসরণ করবে'।
হযরত জাবির (রা:) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা:) বলেছেন-
وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّد بَيَدِهِ لَوْ بَدَالَكُمْ مُوسَى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيْلِ وَلَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِي لَاتَّبَعَنِي وَفِي رِوَايَةٍ مَّا وَسَّعَه إلا إتباعي
সে মহান সত্তার শপথ যার মুষ্ঠিতে মুহাম্মাদের প্রাণ রয়েছে, মূসাও যদি তোমাদের সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করেন এবং তোমরা তাঁর অনুসরণ করো, আর আমাকে পরিত্যাগ করো তাহলে তোমরা নিশ্চিতভাবে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। বাস্তবিকই মূসা যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নবুয়্যাতের সময় পেতেন, তাহলে তিনিও আমার অনুসরণ করতেন। অপর একটি সুত্রে বলা হয়েছে, তাঁর পক্ষে আমার অনুসরণ ভিন্ন কোনো উপায় থাকতো না। (দারেমী, মুসনাদে আহমদ)
নবী করীম (সা:) সম্পর্কে তাঁর পূর্বের নবী-রাসূলগণ নিজ অনুসারীদের যে নির্দেশ দিয়ে গেলেন, তা না মেনে তাঁরা নিজেদের নবীর নির্দেশও যেমন অস্বীকার করেছে এবং নবী করীম (সা:) কে অনুসরণ না করে বিদ্রোহীদের দলে শামিল হয়েছে। রাসূল (আ:) এর আনীত ইসলামী জীবন বিধান গ্রহণ না করে যারা বিকৃত আদর্শ অনুসরণ করছে বা নিজেদের আবিষ্কৃত জীবন বিধান অনুসরণ করছে, তাদের প্রতি সাবধান বাণী উচ্চারণ করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন-
فَغَيْرَ دِيْنِ اللَّهِ يَبْغُوْنَ وَلَه أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يرجعون
তারা কি আল্লাহর (দেয়া জীবন) ব্যবস্থার পরিবর্তে অন্য কোনো বিধানের সন্ধান করছে? অথচ আকাশ ও যমীনে যা কিছু আছে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, আল্লাহ তা'য়ালার (বিধানের) সামনে আত্মসমর্পণ করে আছে এবং প্রত্যেককে তো তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা আলে ইমরান-৮৩)
এবার দেখুন নবী করীম (সা:) কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা সাম্প্রদায়িকতা ও সকল সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে তুলে মর্যাদার সর্বোচ্চ সোপানে পৌছে দিলেন। তিনি তাঁকে ঘোষণা করতে বললেন-
قُلْ آمَنَّا بِالله وَمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَالنَّبِيُّونَ مِنْ رَّبِّهِمْ ص لَا تُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ رَ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُوْنَ
(হে নবী), আপনি বলে দিন, আমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি, ঈমান এনেছি আমাদের ওপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ওপর, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের অন্যান্য বংশধরদের প্রতি যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ওপরও (আমরা আরো ঈমান এনেছি), আমরা আরো ঈমান এনেছি, মূসা, ঈসা এবং অন্য নবীদের তাদের মালিকের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তার ওপরও, (আল্লাহর) এ নবীদের কারো মাঝেই আমরা কোনো ধরনের পার্থক্য করি না, (মূলত) আমরা সবাই হচ্ছি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী (মুসলমান) (সূরা আলে ইমরান-৮৪)
আল্লাহ তা'য়ালা নবী করীম (সা:)-এর মাধ্যমে সমগ্র মুসলিম মিল্লাতকেই এ নির্দেশ দিলেন যে, তাঁরা যেনো পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান পোষণ করে ঔদার্যতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে নিজেদেরকে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে রাখে। মুসলিম মিল্লাত পবিত্র কুরআনের এ শিক্ষা অনুসরণ করে বলেই এ পৃথিবীতে তাঁরা সবথেকে পরধর্ম সহিষ্ণু জাতি এবং অমুসলিম প্রতিবেশীকে এরা অতি সহজেই নিজেদের প্রতিবেশীর অধিকার বুঝিয়ে দেয়। নিজেদের নবীর নির্দেশ অমান্য করে যারা নবী করীম (সা:) এর আনীত আদর্শ ইসলামী জীবন বিধান গ্রহণ না করে ভিন্ন বিধান গ্রহণ করেছে, তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ جِ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
0 Comments