আল কোরআন হল পরশ পাথর

        পাপ-পংকিলতার আবর্তে নিমজ্জিত তদানীন্তন আরব সমাজকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজে পরিণত করেছিলেন। যে দর্শন দিয়ে তিনি সেই অধঃপতিত সমাজকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সমাজে পরিণত করলেন তার নাম হলো আল-কোরআন। সমাজের যে মানুষগুলো ছিল চোর-ডাকাত, তারা হয়ে গেল মানুষের সম্পদের আমানতদার। যারা ছিল নারীর সতীত্ব হরনকারী, তারা হয়ে গেল নারীর সতীত্বের প্রহরী। যারা মানুষকে শোষণ করতো, তারাই নিজেদের সঞ্চিত ধনরাশি উন্মুক্ত হস্তে বিতরণ করে দিতে লাগলো জনসাধারণের জন্যে। তাদের আদর্শ, চরিত্র ও আমানতদারিতার আমূল পরিবর্তন যে পরশ পাথরের ছোঁয়ায় সাধিত হলো তার নাম আল-কোরআন।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হেরা গুহা থেকে ফিরে আসলেন, • তখন সাথে করে নিয়ে আসলেন এক অমূল্য সম্পদ- পরশ পাথর। পবিত্র কোরআন হচ্ছে পরশ পাথর। কোরআন নামক পরশ পাথরের ছোঁয়া লাগলো লৌহসদৃশ মানব হযরত ওমরের শরীরে। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে এসেছিলেন। এ কোরআন নামক জীবন কাঠির ছোঁয়ায় তিনিই হয়ে গেলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানুষ। আল্লাহর রাসূল বললেন, আমার পরে কেউ নবী হবে না। যদি কেউ নবী হতো, তাহলে মহান আল্লাহ তা'য়ালা হযরত ওমরকে অবশ্যই নবী বানিয়ে দিতেন। পবিত্র কোরআন এ সমাজকে কোথা হতে কোথায় নিয়ে গেল। মৃতপ্রায় জাতিকে নবজীবন দান করলো এ পবিত্র কোরআন।

        সে পবিত্র কোরআনে কারীম আছে এই মুসলমানদের হাতে। এজন্য মুসলমান হলো সৌভাগ্যবান জাতি। আবার এ পবিত্র কোরআনকে যারা অমান্য করে, অনুসরণ করে না, তারা হলো সবচেয়ে বড় হতভাগা জাতি। যে জাতির কাছে আছে অকৃত্রিম কোরআন সে জাতি আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে হতভাগ্য। কারণ মানুষ কোরআন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। কোরআনকে বর্তমানে এক শ্রেণীর মানুষ বানিয়েছে তাবিজের কিতাব। তাবিজ লিখে গলায় ধারণ করা সম্পর্কে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাবিজ গলায় বা কোনো কিছুতে ঝুলালে আল্লাহ তা'য়ালার ওপর নির্ভরতা থাকে না, তাবিজের ওপর নির্ভর হয়ে যায়। কোনো নবী বা সাহাবী তাবিজ লিখেননি। তবে ঝাড়ফুঁক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও দিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরামও দিয়েছেন। হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত সত্য। পবিত্র কোরআন কোনো তাবিজের জন্য, জ্বিন-ভূত তাড়ানোর জন্য অবতীর্ণ হয়নি। সে যুগে মুসলমানের সংখ্যা ছিল কম। আর আজকের পৃথিবীতে প্রায় ১৫০ কোটি মুসলমান হলেও আজ তারা নিগৃহীত, নির্যাতিত, অবহেলিত, অত্যাচারিত। গোটা বিশ্বে বর্তমানে মুসলমানরা অত্যাচারিত হচ্ছে। পাখির মত গুলী করে শহীদ করা হচ্ছে মুসলমানদেরকে। হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে-

عَنْ ثَوْبَانَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوشِكُ الأُمَمِ أَنْ تُدَاعِى عَلَيْكُمْ كَمَا تُدَاعِى الأكِلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا فَقَالَ قَائِلُ وَمِنْ قِلَةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ ؟ قَالَ بَلْ انْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ وَلَكِنَّكُمْ غُشَاءُ كَفُثَاءِ السَّيْلِ وَلَيَنْزِعَنَّ اللَّهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ وَلَيَقْذِ قُنَّ قُلُوبَكُمُ الْوَهْنُ قَالَ قَائِلُ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا الْوَهْنُ قَالَ حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَّةُ الْمَوْتِ (ابوداؤد)

        হযরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শীঘ্রই আমার উম্মতের কাছে এমন একটি সময় আসবে, যখন দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি তাদের দিকে এমনভাবে ধাবিত হবে, যেমন ধাবিত হয় ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খাদ্যের দিকে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন কি আমরা সংখ্যায় খুবই নগণ্য থাকবো যে দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি আমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য অগ্রসর হবে? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- না, বরং সেদিন তোমাদের সংখ্যা অনেক থাকবে। কিন্তু তোমরা হবে বন্যার পানির ফেনা সমতুল্য। অবশ্যই আল্লাহ তা'য়ালা সেদিন তোমাদের মনে তাদের ভয় সৃষ্টি করে দিবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর হাবীব! আমাদের মনে এ দুর্বলতা ও ভীতি দেখা দেয়ার কি কারণ হবে? তিনি বললেন, যেহেতু সেদিন তোমরা দুনিয়াকে ভালোবাসবে এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করবে।

 (আবু দাউদ)

        এই হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এমন একটি সময় আসবে, যখন পৃথিবীতে মুসলিম নামে পরিচিত লোকের সংখ্যা হবে অগণিত। কিন্তু তাদের ঈমানী শক্তি থাকবে না, তারা পৃথিবীতে ভোগ-বিলাসকে প্রাধান্য দিবে। ইসলামের শত্রুদের আনুগত্য করে হলেও ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার চেষ্টা করবে। ইসলামের দুশমনরা সংখ্যায় অল্প হলেও তারাই মুসলমানদের ওপরে নির্যাতন করবে, মুসলমানদেরকে অবজ্ঞা, অবহেলা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে। কারণ, শত্রুর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জিহাদে অবতীর্ণ হয়ে শাহাদাতবরণ করাকে মুসলমানরা পসন্দ করবে না। দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে এমনভাবে মত্ত হয়ে থাকবে যে, তাদের চোখের সামনে অন্য মুসলিম নারী, শিশু, কিশোর, তরুণ-যুবক, বৃদ্ধ দুশমনদের হাতে লাঞ্ছিত-অপমানিত ও অত্যাচারিত হতে থাকবে, কিন্তু তারা মৌখিক প্রতিবাদও করবে না। মুসলমানরা নিজের যাবতীয় সহায়-সম্পদ, অর্থ-বিত্ত, শক্তি-মত্তা ইসলামের দুশমনদের অধীন করে দিবে। নিজেদের অর্থ-সম্পদ শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে শত্রুকে পরাজিত করার মন-মানসিকতা মুসলমানদের থাকবে না, যদিও তারা সংখ্যায় হবে বিপুল। পবিত্র কোরআনের বিধান অনুসরণ না করার কারণে আজ এই অবস্থা।

Post a Comment

0 Comments